২০০৩ নম পেন দাঙ্গা
অপারেশন পোচেন্তং ১ ปฏิบัติการโปเชนตง 1 | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া সরকার | কম্বোডিয়ান দাঙ্গাকারী | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
থাকসিন সিনাওয়াত্রা | প্রযোজ্য নয় | ||||||
শক্তি | |||||||
১১০ বিশেষ বাহিনী ৪ যুদ্ধজাহাজ | ~১৩০০ দাঙ্গাকারী |
২০০৩ সালের জানুয়ারিতে, কম্বোডিয়ার সংবাদপত্রের একটি নিবন্ধ মিথ্যা অভিযোগ করেছিল যে একজন থাই অভিনেত্রী সুভানান্ত কঙ্গিং দাবি করেছেন আংকর ওয়ত থাইল্যান্ডের অন্তর্গত। কম্বোডিয়ার অন্যান্য মুদ্রণ ও বেতার মাধ্যম রিপোর্টটিকে তুলে ধরে এবং জাতীয়তাবাদী আবেগকে উস্কানি দেয়। ফলস্বরূপ ২৯ জানুয়ারি নম পেনে দাঙ্গা হয়েছিল, যেখানে থাই দূতাবাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং থাই ব্যবসায়িক বাণিজ্যিক সম্পত্তি ভাঙ্গা হয়েছিল। দাঙ্গার তাতৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে স্পর্শকাতর ঐতিহাসিক সম্পর্কে, পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও উভয় দেশের মধ্যে জড়িত রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে প্রতিফলিত হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিক
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিকভাবে, শ্যামদেশ (অধুনা থাইল্যান্ড) এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে, যেটি প্রদেশগুলোর জাতি রাষ্ট্রের পরিবর্তে শহরভিত্তিক রাষ্ট্র বিভাগে প্রতিফলিত হয়। এই শহর ভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো, রাজনৈতিক, সামরিক শক্তি ও করদ রাজ্যের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দ্বারা সাম্রাজ্যসমূহে কমবেশী একত্রিত ছিল। ১৪শ শতাব্দীতে, থাই শক্তিকেন্দ্র সুখোথাই থেকে দক্ষিণে আয়ুত্থাইয়া পৌঁছেছিল, যেখানে খ্মের সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ গঠিত হয়েছিল। এর শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়ুত্থাইয়া থেকে আঙ্করের প্রতি ভীতিপ্রদর্শন বেড়ে গিয়েছিল এবং ১৫শ শতাব্দীতে আঙ্কর নিজেই পরিত্যক্ত হয়েছিল।
অর্থনৈতিক
[সম্পাদনা]১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে থাইল্যান্ডের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতি হয়ে উঠেছিল। বিপরীতভাবে, কম্বোডিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করে রেখেছিল, কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধ, খ্মের রুজ সরকার এবং গণপ্রজাতন্ত্রী কাম্পুচিয়ার পরবর্তী সরকার, যা জাতিসংঘের স্বীকৃতি সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলস্বরূপ, থাই ব্যবসাগুলো কম্বোডিয়ার অর্থনীতি আংশিকভাবে প্রভাবিত করছিল এবং অসন্তোষ বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
সাংস্কৃতিক
[সম্পাদনা]কম্বোডিয়ার তুলনায় থাইল্যান্ডের অনেক বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এবং পাশ্চাত্য প্রভাবগুলোতে এটি আরও উন্মুক্ত। এই কারণগুলো থাইল্যান্ডকে কম্বোডিয়ার সংগীত ও টেলিভিশনে একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রভাব রাখতে সাহায্য করেছে। এটিতে অনেক কম্বোডীয়দের একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে থাইরা তাদের প্রতিবেশীদের প্রতি অহংকারী এবং বর্ণবাদী।
খ্মের ও থাইদের মধ্যে বিতর্ক ও ভুল বোঝাবুঝির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব ও দাবির ফলে প্রচুর অসন্তোষের সৃষ্টি হয়; যদিও থাইল্যান্ডের এবং কম্বোডিয়ার সংস্কৃতি প্রায় একই রকম। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্য কোনও দেশের সংস্কৃতি কম্বোডিয়ার মত থাইল্যান্ডের সংস্কৃতির সঙ্গে অনুরূপ নয়। থাইদের প্রতি খ্মেরদের দীর্ঘ অসন্তোষের মূল কারণ হল খেমার সাম্রাজ্যের সময় থেকে তাদের প্রতি প্রত্যাখানের অনুভূতি যদিও থাইরা ওই অঞ্চলে প্রভাবশালী রয়ে গেছে। দুই দেশের ইতিহাস এবং খেমার সাম্রাজ্যকালের বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। "এই অজ্ঞতা একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যার শিক্ষিত থাই এবং ক্ষমতাসীন শ্রেণীর সদস্যদের, খোম এবং খ্মের মধ্যে পার্থক্য করে, দুটি পৃথক জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করার প্রতিফলনে প্রতিফলিত হয়"। [১] তারা আরো জোরালোভাবে বলে যে, "খোম ছিল খেমার নয়, যারা আঙ্কর ওয়াট এবং আঙ্কর থম এ রাজকীয় মন্দিরের অঞ্চলগুলো নির্মাণ করেছিলেন এবং পৃথিবীর সত্যিকারের মহিমান্বিত প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলোর একটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯ শতকে, "খেমের রাজত্ব দুটি শক্তিশালী প্রতিবেশী, থাইল্যান্ড পশ্চিমে ও পূর্বে ভিয়েতনামের কবল থেকে অল্পের জন্য নিস্তার পায়"[২] এর ফলে অনেক খেমারের মধ্যে একটি ভয় সৃষ্টি হয়েছিল যে পার্শ্ববর্তী দেশটি খেমারের অস্তিত্ব দখল করতে এবং মুছে ফেলতে পারে।
দাঙ্গার কারণ
[সম্পাদনা]দাঙ্গা শুরু হবার সময় শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী অনুভূতি উপস্থিত ছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই। "জাতীয়তাবাদ বহু বছর ধরে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নিজস্ব অগণিত রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে শোষিত হয়েছে"। কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সিপিপির দাঙ্গা সুপরিকল্পনাতে একটি রাজনৈতিক উৎসাহ ছিল।[৩] মাম সোনাদোর গ্রেফতারের পর, "নম পেনের রাজ্যপাল চিয়া সোফারা, ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় সিপিপি রাজনীতিবিদকে (যাকে হু সেনকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবেপ্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য সম্মুখে করা হয়েছিল) বরখাস্ত করা হয়েছিল"। [৪] ঘটনাচক্রে অথবা নয়, ২০০৩ সালের দাঙ্গার পরবর্তী পরিণাম, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর জন্য লাভজনক ছিল।
দাঙ্গা
[সম্পাদনা]২৯ জানুয়ারী, দাঙ্গাকারকেরা নম পেনে থাই দূতাবাসে হামলা করে, ভবনটি ধ্বংস করে দেয়। উচ্ছৃঙ্খল জনতা প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা পরিবারের মালিকানাধীন থাই এয়ারওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল এবং শিন কর্পসহ থাই মালিকানাধীন ব্যবসায় প্রাঙ্গণগুলোতেও আক্রমণ চালায়। সম্মানিত রাজা ভূমিবল আদুলাদেজের জ্বলন্ত প্রতিকৃতি হাতে একজন কম্বোডিয়াবাসীর একটি আলোকচিত্র অনেক থাই লোককে প্রকুপিত করে।
থাই সরকার কম্বোডিয়ায় থাই নাগরিকদের উদ্ধার করতে সামরিক বিমান পাঠিয়েছিল যদিও, থাইল্যান্ড নিবাসী ব্যাংককে কম্বোডিয়ার দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন।
কম্বোডিয়ার থাই রাষ্ট্রদূতসহ কেউ কেউ, এ সময়, দাবী করেন যে ২৯ জানুয়ারি ২০০৩ দাঙ্গাটি সুপরিকল্পিত ছিল। কম্বোডিয়ার এবং থাইল্যান্ডবাসীরা একযোগে অনলাইন আলোচনায় বলেছিল, "বিক্ষোভের পেছনে হুন সেন এবং কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টির উপাদানগুলো ছিল"।[৫] এটা উল্লেখ করা উচিত যে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাঙ্গার মাত্র দুই দিন আগেই একটি বক্তৃতা করেছিলেন, যা থাইল্যান্ডের অভিনেত্রীর মন্তব্য বিষয়টি আরও চাঙ্গা করে দিয়েছিল। এছাড়া "ক্ষিপ্ত থাই রাষ্ট্রদূতের, কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে, মরিয়া ডাকগুলো দেওয়া সত্ত্বেও কম্বোডিয়ার সরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশ, উন্মত্ত জনটাকে শান্ত করার জন্য খুব সামান্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন"। থাই দূতাবাসটি, অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় এবং সিপিপি সদর দফতরের খুব কাছাকাছি ছিল।
দাঙ্গা পরবর্তী সময়কাল
[সম্পাদনা]থাই সরকার কম্বোডিয়ার সাথে দাঙ্গার পর দেশটির সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, তবে কেবল থাই ও কম্বোডীয় নাগরিকদের জন্যই। কোনও সময়ে সীমান্ত, বিদেশী বা পাশ্চাত্য পর্যটকদের জন্য বন্ধ ছিল না। থাই দূতাবাস ধ্বংসের জন্য কম্বোডিয়ার সরকার ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের পর সীমান্তটি ২০০৩ সালের ২১ মার্চ পুনরায় খোলা হয়েছিল। ২০০৬ সালে থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিরুদ্ধে এক সমাবেশে জাতিসংঘের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত আসদা জয়নামা এবং ভিয়েতনামের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত সুপাপং জয়নামাসহ প্রভাবশালী থাই কূটনীতিকরা অভিযোগ করেছিলেন যে ক্ষতিপূরণের মাত্র অর্ধেকই প্রকৃতপক্ষে প্রদান করা হয়েছিল। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।[৬] কম্বোডিয়ার সরকার থাই ব্যবসাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষতিপূরণের জন্য আলাদাভাবে বোঝাপড়া করতে রাজি হয়েছিল।
দাঙ্গার পরপরই, ১৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ঘটনা- এই পদ্ধতির অনিয়মগুলো এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাদের আটক অবস্থায় নজরদারি অস্বীকারের ঘটনা, সবার দৃষ্টিগোচর করতে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।[৭] বিহাইভ রেডিওর মালিক, মোম সোনাডো এবং রেক্সেমি আংকরের সম্পাদক-প্রধান-চ্যান সিভুথা উভয়কেই, একটি অপরাধ সংঘটিত করার উস্কানি, বৈষম্যের উদ্দীপনা এবং মিথ্যা তথ্য ঘোষণা করার অপরাধে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাদেরকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়[৮] এবং কোনো বিচার অনুষ্ঠিত হয় নি।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Kasetsiri, Charnvit (২০০৩)। "Thailand-Cambodia: A Love-Hate Relationship"। ১৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Theeravit, Khien (১৯৮২)। "Thai-Kampuchean Relations: Problems and Prospects": 561–572। ডিওআই:10.1525/as.1982.22.6.01p0388f।
- ↑ Chachavalpongpun, Pavin (২০১০)। "Glorifying the Inglorious Past: Historical Overhangs in Thai-Cambodian Relations"।
- ↑ Deth, Sok Udom (২০১৪)। "Factional politics and foreign policy choices in Cambodia-Thailand diplomatic relations" (পিডিএফ)।
- ↑ Hinton, Alexander (২০০৬)। "Khmerness and the Thai 'Other': Violence, Discourse and Symbolism in the 2003 Anti-Thai Riots in Cambodia"। Journal of Southeast Asian Studies। 37 (3): 445–468। ডিওআই:10.1017/s0022463406000737।
- ↑ "Sondhi plays PAD mediator"। Bangkok Post। মার্চ ৩০, ২০০৬। ২০ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Cambodian League for the Promotion and Defense of Human Rights"। ২৪ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Human Rights Watch