১৯৬২-এর রাজশাহী হত্যাকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৯৬২-এর রাজশাহী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহীপাবনা জেলার স্থানীয় হিন্দু, বৌদ্ধ, সাঁওতালদের গণহারে হত্যা করার ঘটনাটাকে বোঝানো হয়।[১][২] মূলত হিন্দুদের সম্পত্তি ও মেয়েদের ওপর আক্রমণ হয়।[৩] এই হত্যাকাণ্ডে তিন হাজারেরও অধিক অমুসলিম খুন হন।[৪]

পটভূমি[সম্পাদনা]

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানের সামরিক শাসক হন। আয়ুব খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান সরকার শুরু থেকেই বাঙালি হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এথনিক ক্লিনজিঙের পরিকল্পনা নেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ঘটনাবলী[সম্পাদনা]

১৯৬২ এর ২২শে মার্চ, পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় সাঁওতাল ও মুসলিমদের মাঝে দাঙ্গা শুরু হয়। সাঁওতালরা তীর ছুড়ে তিনজন মুসলিমকে মেরে ফেলে এবং ছ'জনকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। ১৬ই এবং ২০শে এপ্রিল, আবার দু'পক্ষের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়।[৫]

পূর্ববঙ্গের সংবাদপত্রে এসব ঘটনার অতিরঞ্জিত কাহিনী প্রকাশিত হতে থাকে। যদিও ঐসময় মালদায় হত্যাকাণ্ড বলতে যা বোঝায় (কয়েক হাজার মানুষকে মেরে ফেলা), সেসব কিছুই হয়নি। পাকিস্তান রেডিও থেকে গোটা পাকিস্তানেই এধরনের অতিরঞ্জিত কাহিনী প্রচার করা হয়।[৪] ২২শে এপ্রিল, লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল মহম্মদ আজম খান, যিনি সেসময় পূর্ববঙ্গের গভর্নর ছিলেন। সেই তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের কাল্পনিক গালগল্প বলতে থাকেন। পরেরদিন ২৩শে এপ্রিল, গোটা রাজশাহী বিভাগ-এ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ শুরু হয়।. জেলাশাসক দাঙ্গা ঠেকানোর জন্যে কোনো ব্যবস্থা নেননি। কয়েকদিন ধরে খুন, ধর্ষণ, লুঠপাট চলে। রাজশাহী রেলস্টেশনে পলায়নরত হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়। নাটোর রেলস্টেশন ও তার পাশের বাজারে পলায়নরত হিন্দুদের ওপর আক্রমণ হয়।[৬] পাবা উপজেলার পাবা থানার অন্তর্গত হুজুরিপাড়া ইউনিয়নের সরুষা গ্রামে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হয়।[৭] পাবা থানার অন্তর্গত ধাড়সা গ্রামেই ১,২০০ জন অমুসলিমকে হত্যা করা হয়।[৬] শুধুমাত্র রাজশাহী জেলাতেই ৫,০০০ অমুসলিমকে হত্যা করা হয়[৬]

ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের এক সহকারী, যিনি রাজশাহী জেলার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত ছুটে যান। তাঁকে রক্ষা করার জন্যে পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনী পাঠায়।[৪] পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ হয়ে গেছিল যে, ঢাকায় ভারতীয় ডেপুটি রাষ্ট্রদূতকে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখা হয়েছিল।[৮] ভারতীয় ডেপুটি রাষ্ট্রদূতের পক্ষে ঘটনার সংবাদ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। আপদকালীন মূহুর্তে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাজেশ্বর দয়াল, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ওনাকে রাজশাহী কিংবা পাবনায় ঢুকতে দেয়নি।[৮]

অমুসলিমদের ভারতে পলায়ন[সম্পাদনা]

১১,০০০রের ওপর সাঁওতাল ও রাজবংশী ভারতে পালিয়ে যায়।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Dey, Ishita (জুন ২০০৯)। "On the Margins of Citizenship: Principles of Care and Rights of the Residents of the Ranaghat Women's Home, Nadia District" (পিডিএফ)Refugee Watch। Kolkata: Mahanirban Calcutta Research Group (33): 4। আইএসএসএন 2347-405X। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪ 
  2. Sen, Uditi (২০১১)। "Spinster, Prostitute or Pioneer? Images of Refugee Women in Post-Partition Calcutta" (পিডিএফ)EUI Working Papers। Florence: European University Institute। 34আইএসএসএন 1830-7728। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৪ 
  3. Mukhopadhyay, Kali Prasad (২০০৭)। Partition, Bengal and After: The Great Tragedy of India। New Delhi: Reference Press। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 978-81-8405-034-9 
  4. Ray, Jayanta Kumar (সেপ্টেম্বর ১৯৬৮)। Democracy and Nationalism on Trial (First সংস্করণ)। Shimla: Indian Institute of Advanced Study। পৃষ্ঠা 216। 
  5. "Earlier Communal Disturbances" (পিডিএফ)Keesing's Contemporary Archives। পৃষ্ঠা 20186। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৪ – Stanford University-এর মাধ্যমে। 
  6. Lahiry, Pravash Chandra (১৯৬৪)। India Partitioned And Minorities In Pakistan। Writer's Forum। পৃষ্ঠা 54–55। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৪ 
  7. "Paba Upazila"Hello Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৪ 
  8. Ray, Jayanta Kumar (সেপ্টেম্বর ১৯৬৮)। Democracy and Nationalism on Trial (First সংস্করণ)। Shimla: Indian Institute of Advanced Study। পৃষ্ঠা 239। 
  9. "Annual Report of the Ministry of External Affairs for 1962-63"। Ministry of External Affairs, India। পৃষ্ঠা 20। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৪