হরিশঙ্কর বাসুদেবন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হরিশঙ্কর বাসুদেবন
জন্ম১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২
মৃত্যু১০ মে ২০২০ (বয়স ৬৮)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশালেখক ও অধ্যাপক
দাম্পত্য সঙ্গীতপতী গুহ-ঠাকুরতা
সন্তানমৃণালিনী বাসুদেবন
পিতা-মাতাএম. বাসুদেবন (পিতা)
শ্রীকুমারী মেনন (মাতা)

হরিশঙ্কর বাসুদেবন (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ - ১০ মে ২০২০) একজন ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও অধ্যাপক।[১]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

হরিশঙ্কর বাসুদেবনের জন্ম ভারতের কেরল রাজ্যে। পিতা মেথিল বাসুদেবন ছিলেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের ডি আর ডি ও অর্থাৎ প্রতিরক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠনের ইঞ্জিনিয়ার। মাতা শ্রীকুমারী মেনন। পিতার চাকরিসূত্রে হরিশঙ্করের স্কুলজীবন কাটে কেনিয়াতে। উচ্চ শিক্ষা কেমব্রিজে। তিনি কেমব্রিজের ক্রাইস্টস কলেজের স্নাতক । কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল - ভারত ও ইউরোপের গণতন্ত্র এবং উন্নয়ন, রুশ-ভারত সম্পর্ক এবং সমসাময়িক রাজনীতি ।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বিদেশে উচ্চশিক্ষাপর্বের পরে দেশকেই তার কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন তিনি। বিদেশ থেকে ফিরে দেশে শিক্ষকতা শুরু করেন কলকাতায়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ইতিহাস বিভাগের রিডার হিসাবে । তিনি শেষ পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ইউ জি সি'র এমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা কেন্দ্রর অধিকর্তা ছিলেন । তিনি তার অধ্যাপনা কালে ইউরোপের ইতিহাস, ভারত-রুশ সম্পর্ক বা বৌদ্ধিক চর্চার তথা চেতনার ইতিহাস(ইনটেলেকচুয়াল হিস্ট্রি) পঠনপাঠনে আলাদা মাত্রা এনেছিলেন। ভারতের বহু নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন । ২০০৩-০৫ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপনা করেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার সেন্ট্রাল এশিয়ান স্টাডিজে । ২০০৭-১১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের অধিকর্তা ছিলেন । ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ-এর প্রাক্তন সদস্য ছিলেন তিনি। (২০১১-১৫) [২]

যুক্ত থেকেছেন লন্ডনের কিংস কলেজ, আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউক্রেনের কিয়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। এনসিইআরটি-র সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সিলেবাস ও টেক্সটবুক ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন এক দশকের (২০০৫ -১৫)। রুশ-ভারত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রকের উপদেষ্টা পদের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ কলকাতা (আইডিএসকে) র প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি ।

হরিশঙ্কর বাসুদেবনের বিশেষ খ্যাতি ছিল রুশ ইতিহাস এবং রাজনীতির অধ্যয়নে তথা গবেষণায়। তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার আর্কাইভ পেয়েছিলেন গবেষণার জন্য। তার দুই সহকর্মী পূরবী রায় ও শোভনলাল দত্তগুপ্তের সহায়তায় তিনি ১৯১৭-৪৭ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে রুশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তথ্য ও দলিলের দুটি সংকলন এশিয়াটিক সোসাইটি হতে প্রকাশ করেন । সেই সূত্র ধরে পরবর্তীতে ১৯৯১-উত্তর ভারত-রুশ সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে লেখেন - 'শ্যাডোজ অব সাবস্ট্যান্স ,ইন্দো-রাশিয়ান ট্রেড অ্যান্ড মিলিটারি টেকনিক্যাল কো-অপারেশন' । তবে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে 'আফানাসি নিকিতিন' নামক রুশ পর্যটকের জীবন ও জীবনী-নির্মাণ বই -'ইন দ্য ফুটস্টেপস অব আফানাসি নিকিটিন' সবচেয়ে বেশি সময় নিয়ে লেখা । বই দুটি উচ্চ শিক্ষা মহলে সমাদৃত । এছাড়া কিছু গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন । [৩]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

সুপণ্ডিত হরিশঙ্কর চাইলে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে অধ্যাপনা ও গবেষণা করতে পারতেন । কিন্তু একবার বন্ধুবর মুশিরুল হাসানের আহ্বানে তিন বৎসরের জন্য দিল্লিতে থাকা ছাড়া কলকাতা ছেড়ে যান নি । ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে শহরটিকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছিলেন এবং মোটের ওপর কলকাতাও তাঁকে আপন করে নিয়েছিল । এই শহরের প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ তপতী গুহ-ঠাকুরতাকে জীবন সঙ্গিনী বেছে নিয়েছিলেন । তাঁদের একমাত্র কন্যা মৃণালিনী বাসুদেবন । বাংলা পড়তে অসুবিধা হলেও বাংলা মাধ্যম হতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা দরদ ছিল তার । ক্লাসে বোর্ডওয়ার্কের ফাঁকে ভাঙা ভাঙা মিষ্টি বাংলায় অনেক কিছু বলতেন। বাংলায় ইতিহাস চর্চায় আরো উপাদান ইন্টারনেটে থাকা কাম্য বলে মনে করতেন। বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের বিশাল মাপের দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে এক মিউজিয়াম সহ অনুসন্ধান কেন্দ্র গড়ার কাজের প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন ।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হরিশঙ্কর বাসুদেবন ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই মে কলকাতায় নোবেল করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "COVID-19 claims Hari Vasudevan, Bengal's foremost historian"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। Special Correspondent। ২০২০-০৫-১০। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১১ 
  2. "সংক্রমণ করোনার,প্রয়াত ইতিহাসবিদ"আনন্দবাজার পত্রিকা। নিজস্ব সংবাদদাতা। ২০২০-০৫-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১১ 
  3. "কলকাতার বড় মাপের চিন্তাবলয়ের প্রতিনিধি হরিশঙ্কর বাসুদেবন মিলিয়ে আসা আলোর পথ - কিংশুক চট্টোপাধ্যায়"আনন্দবাজার পত্রিকা। সম্পাদকীয়। ২০২০-০৫-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১৩