সুরজিৎ সেনগুপ্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুরজিৎ সেনগুপ্ত
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম সুরজিৎ সেনগুপ্ত
জন্ম (১৯৫১-০৮-৩০)৩০ আগস্ট ১৯৫১
জন্ম স্থান চুঁচুডা হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২(2022-02-17) (বয়স ৭০)
মৃত্যুর স্থান কলকাতা , পশ্চিমবঙ্গ , ভারত
মাঠে অবস্থান স্ট্রাইকার
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৭০–৭১ খিদিরপুর ক্লাব
১৯৭২–৭৩
১৯৮১-৮৩
মোহনবাগান (৫৪)
১৯৭৪-৭৯ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব (৯৮)
১৯৮০ মহামেডান ক্লাব (২)
১৯৮৪ জর্জ টেলিগ্রাফ
জাতীয় দল
১৯৭৪ ভারত ৩২
১৯৭৮ ভারত
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

সুরজিৎ সেনগুপ্ত (৩০ আগস্ট ১৯৫১ ― ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ফুটবল খেলোয়াড় যিনি কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন, এশিয়ান গেমসে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বাংলার গৌরব পুরস্কার প্রদান করে।[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

সুরজিৎ সেনগুপ্ত ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ছোট থেকেই সুরজিৎ পড়াশোনায় যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি সংস্কৃতিমনস্ক। গানবাজনার প্রতি তার সমান আগ্রহ ছিল। ছেলেবেলায় একবার সুচিত্রা মিত্রর সঙ্গেও তবলায় সঙ্গত করেন। তবে ফুটবল খেলায় ছিল প্রবল নেশা। অশ্বিনী বরাটের (ভোলাদার) হাত ধরে হুগলিতে ফুটবল জীবন শুরু হয় তার। অনুশীলন চলত ব্যান্ডেলের কেওটা ত্রিকোণ পার্কে। খেলেছেন চুঁচুড়া বেঙ্গল ক্লাবে হুগলি ক্লাবেও। ফুটবলের আকর্ষণে চলে আসেন কলকাতায়। যোগ দেন কলকাতা লিগের লোয়ার ডিভিশন রবার্ট হার্ডসন ক্লাবে ।[২] এরপর ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে চলে আসেন খিদিরপুর ক্লাবে। তখন খিদিরপুর ক্লাবে কোচ ছিলেন অচ্যুত বন্দ্যেপাধ্যায় ৷ তাঁর প্রিয় ছাত্র হয়ে উঠেছিলেন সুরজিৎ ।[৩]

ক্রীড়া জীবন[সম্পাদনা]

খিদিরপুর ক্লাবে ফুটবল জীবন শুরু করার পর সুরজিৎ সেনগুপ্ত কলকাতার তিনটি বড় ক্লাবেই খেলেছেন রাইট উইঙ্গার হিসাবে। তার প্রথম বড় ক্লাব ছিল মোহনবাগান ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে হতে দুবছর খেলেন। এরপর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ হতে টানা ছয় বৎসর খেলেছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিনায়ক ছিলেন। তার নেতৃত্বে এক ঝাঁক ফুটবলার মহামেডান ক্লাবে যোগ দেন ।১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এক বছরেই খেলেছেন মহামেডান ক্লাবে। আর ওই বছরেই তিনি মহমেডানকে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়নও করেছিলেন।[২]পরের বৎসরেই চলে আসেন মোহনবাগানে এবং তিন বছর খেলেছেন তার পুরাতন ক্লাবে। [৪] কলকাতার ক্লাব ফুটবলে খেলার সঙ্গে তিনি রাজ্যের ও দেশের জাতীয় দলেও খেলেছেন। বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফিতে ১৯৭৫ -৭৯ খ্রিস্টাব্দ টানা পাঁচ বার খেলেছেন। এবং সর্ব মোট ছাব্বিশটি গোল করেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলা দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন। ফুটবলে সুরজিৎ-এর গুরু ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তারই অনুরোধে তিনি শেষের দিকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ টেলিগ্রাফ -এ যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি খেলা থেকে অবসর নেন।

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুরজিৎ দেশের হয়ে এশিয়ান গেমসে অন্তর্ভুক্ত হন এবং ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা ভারতীয় টিমে খেলেছেন। তেহরান, মালয়েশিয়া, ব্যাঙ্কক প্রভৃতি স্থানে খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[২]

সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিত্ব সুরজিৎ সেনগুপ্তের সঙ্গীত, শিল্পকলা ও সাহিত্যের প্রতি সমান আকর্ষণ ছিল। তিনি ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মী ছিলেন। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে কলকাতার আজকাল সংবাদপত্রের ক্রীড়া পত্রিকা খেলা-র সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নিজে ক্রীড়ামোদীদের জন্য অসংখ্য লেখা লিখেছেন আজকাল দৈনিকে এবং খেলা পত্রিকায়।[১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সুরজিৎ সেনগুপ্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ২০২২খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি। প্রথম দিকে কিছু উন্নতি হলেও শেষের দিকে ছিলেন ভেন্টিলেশনে। ১৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী শ্যামলী সেনগুপ্ত। একমাত্র পুত্র হলেন কৃতী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী স্নিগ্ধাদেব সেনগুপ্ত।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]