সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রথম দিকে শ্রেণীহীন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ভারতের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সমর্থনে ছিল, যেখানে এটি কংগ্রেস কমিটির অধিকাংশ নেতাই ডোমিনিয়ন মর্যাদার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে চেয়েছিল।[১] যদিও সুভাষচন্দ্র বসু ও মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর ভিন্ন মতবাদ ছিল, পরবর্তীতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৯৪২ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে "দেশপ্রেমিকদের দেশপ্রেমিক" বলে অভিহিত করেছিলেন।
সুভাষচন্দ্র বসু শিল্পায়নকে ভারতকে শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করার একমাত্র পথ হিসেবে দেখেছিলেন (এতে তিনি সোভিয়েত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সাফল্যের তথ্য দ্বারা সে সময়ের অন্যান্য অনেক ভারতীয় বুদ্ধিজীবীর মতো প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন)।
তিনি ১৯৪১ সালে জার্মানিতে পালিয়ে যান এবং হিটলারকে জোটের প্রস্তাব দেওয়ার পরে, অক্ষশক্তিরকে সহযোগিতা করার জন্য অভিযুক্ত হন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, যে ব্রিটেন নাৎসি নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউরোপীয় দেশসমূহের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল, কিন্তু এটি ভারত সহ তাদের ব্রিটেনের উপনিবেশসমূহকে স্বাধীনতা দেবে না। তিনি ১৯৩৭ সালে সুদূর প্রাচ্যের জাপানি সাম্রাজ্যবাদকে আক্রমণ করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন, যদিও তিনি জাপানি শাসনের অন্যান্য দিকগুলির জন্য কিছু প্রশংসা করেছিলেন।[২]
সুভাষচন্দ্র বসুর পূর্বের চিঠিপত্র (১৯৩৯ সালের আগে) নাৎসি জার্মানিতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বর্ণবাদী অনুশীলন ও বাতিলকরণের বিষয়ে তার গভীর অসম্মতি প্রতিফলিত করে।[৩] তিনি অবশ্য ১৯৩০-এর দশকে ইতালি ও জার্মানিতে যে স্বৈরাচারী পদ্ধতিসমূহ দেখেছিলেন (যদিও জাতিগত মতাদর্শ নয়) তার প্রশংসা করেছিলেন এবং ভেবেছিলেন যে সেগুলি একটি স্বাধীন ভারত গড়তে ব্যবহার করা যেতে পারে।[৪] তথাপি, কংগ্রেস পার্টির সভাপতি হিসেবে সুভাষচন্দ্র বসুর কার্যকাল (১৯৩৮-৩৯) কোনো বিশেষ গণতন্ত্রবিরোধী বা কর্তৃত্ববাদী গুণাবলী প্রতিফলিত করে। নীরদ সি. চৌধুরী, অ্যান্টন পেলিঙ্কা এবং লিওনার্ড গর্ডন মন্তব্য করেছেন যে বোসের দক্ষতা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবর্তে আলোচনার টেবিলে সবচেয়ে ভালভাবে চিত্রিত হয়েছিল। নীরদচন্দ্র চৌধুরী, অ্যান্টন পেলিঙ্কা ও লিওনার্ড গর্ডন মন্তব্য করেছেন যে সুভাষচন্দ্র বসুর দক্ষতা যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবর্তে আলোচনার টেবিলে সবচেয়ে ভালভাবে চিত্রিত হয়েছিল।
তিনি ১৯৩৯ সালের ত্রিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারকে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য ছয় মাসের সময়সীমা দেওয়ার দাবি করেন এবং যদি এটি করতে ব্যর্থ হয়, তবে একটি গণ আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার দাবি জানান। তিনি বিশ্বাস করতেন যে "...দেশটি অভ্যন্তরীণভাবে একটি বিপ্লবের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ক ছিল এবং আসন্ন আন্তর্জাতিক সংকট ভারতকে তার মুক্তি অর্জনের একটি সুযোগ দেবে, যা মানব ইতিহাসে বিরল।"[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Subhas Chandra Bose"। Sify। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "Japan's Role in the Far East" (originally published in the Modern Review in October 1937): "Japan has done great things for herself and for Asia. Her reawakening at the dawn of the present century sent a thrill throughout our Continent. Japan has shattered the white man's prestige in the Far East and has put all the Western imperialist powers on the defensive—not only in the military but also in the economic sphere. She is extremely sensitive—and rightly so—about her self-respect as an Asiatic race. She is determined to drive out the Western powers from the Far East. But could not all this have been achieved without Imperialism, without dismembering the Chinese Republic, without humiliating another proud, cultured and ancient race? No, with all our admiration for Japan, where such admiration is due, our whole heart goes out to China in her hour of trial" The Essential Writings of Netaji Subhas Chandra Bose Edited by Sisir K. Bose & Sugata Bose (Delhi: Oxford University Press) 1997 p. 190
- ↑ Bose to Dr. Thierfelder of the Deutsche Academie, Kurhaus Hochland, Badgastein, 25 March 1936 "Today I regret that I have to return to India with the conviction that the new nationalism of Germany is not only narrow and selfish but arrogant. The recent speech of Herr Hitler in Munich gives the essence of Nazi philosophy.... The new racial philosophy which has a very weak scientific foundation stands for the glorification of the white races in general and the German race in particular. Herr Hitler has talked of the destiny of white races to rule over the rest of the world. But the historical fact is that up till now the Asiatics have dominated Europe more than have the Europeans dominated Asia. One only has to consider the repeated invasions of Europe by Mongols, the Turks, the Arabs (Moors), the Huns, and other Asiatic races to understand the strength of my argument...." The Essential Writings of Netaji Subhas Chandra Bose Edited by Sisir K. Bose & Sugata Bose (Delhi: Oxford University Press) 1997 p. 155
- ↑ Satadru Sen (২৩ সেপ্টেম্বর ২০০০)। "Subhas Chandra Bose 1897-1945"। andaman.org। ৫ মার্চ ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "The Congress Resigns"। indhistory.com। ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২২।