সুখাইড় জমিদার বাড়ি

স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৪′০০″ উত্তর ৯১°০১′০০″ পূর্ব / ২৪.৯০০০° উত্তর ৯১.০১৬৭° পূর্ব / 24.9000; 91.0167
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুখাইড় জমিদার বাড়ি
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
ঠিকানাসুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন ধর্মপাশা উপজেলা
শহরসুনামগঞ্জ জেলা সিলেট বিভাগ
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৬ শতকের শেষ ভাগ
ওয়েবসাইট
২৪°৫৪′০০″ উত্তর ৯১°০১′০০″ পূর্ব / ২৪.৯০০০° উত্তর ৯১.০১৬৭° পূর্ব / 24.9000; 91.0167

সুখাইড় জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড়ের জমিদারদের দ্বারা(প্রায়) ৪০০ বছর আগের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর ঐতিহাসিক স্থাপনা ।[১][২]

সুখাইড় জমিদার বাড়ি উত্তর পূর্বে মেঘালয় রাজ্য,উত্তরে আসাম রাজ্য এবং পূর্ব দক্ষিণে ত্রিপুরা রাজ্য।

অবস্থান[সম্পাদনা]

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছর আগের মোগল আমলের সুখাইড় জমিদার বাড়িটি ভাটি বাংলার রাজমহল হিসেবে বহুল পরিচিত । সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৩৫ কি.মি. দূরে ঘাগলাজুর নদীর উত্তরপারে মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ এ বাড়িটির অবস্থান । দক্ষিণে ঘাগলাজুর নদী, উত্তরে বংশীকুন্ডা, পশ্চিমে ধর্মপাশা উপজেলা এবং পূর্বে জামালগঞ্জ উপজেলা[২]উত্তরে তাহিরপুর উপজেলা।

সুখাইড় জমিদার বাড়ি ইতিহাস[সম্পাদনা]

আনুমানিক ১৬৯১ সালে মোঘল শাসনামলে মহামানিক্য দত্ত রায় চৌধুরী হুগলী থেকে আসাম যাওয়ার পথে কালিদহ সাগরের স্থলভূমি ভাটির প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে সুখাইড়ে জায়গির কেনেন। ঐ সময় থেকেই সুখাইড়ে বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু করেনমহামাণিক্য। পাশে পাহাড়ী নদী বৌলাই, হাওরের থৈ থৈ ঢেউ, বন ঝোপ আর সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ থাকায় ১৬৯৫ সালে সুখাইড়ে ২৫ একর জমির ওপর বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন জমিদার মোহনলাল। কয়েক পুরুষের চেষ্টায় শেষ হয়েছিল বাড়ির নির্মাণকাজ।জমিদারি যুগে সুনামগঞ্জ ছিল ৩২ টি পরগনায় বিভক্ত। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর কারণে সুখাইড় জমিদার বাড়ি হাওর রাজ্যের রাজমহল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিল। এ জমিদারির বিস্তৃতি ছিল দক্ষিণে ঘাগলাজুর নদীর উত্তরপাড়, উত্তরে বংশীকুন্ডা, পশ্চিমে ধররমপাশা এবং পূর্বে জামালগঞ্জ। এক সময় এ বাড়ির মালিকানায় ছিল ধানকুনিয়া বিল, চারদা বিল, কাইমের দাইড়, সোনামোড়ল, পাশোয়া, ছাতিধরা, রাকলা, বৌলাই, নোয়ানদী, চেপ্টা এক্স হেলইন্নাসহ ২০ টি জলমহল।


কতিথ আছে জমিদারা বাড়ি দেখতে আসেছিলেন ইংরেজ প্রশাসক বেলেন্টিয়ার। বাঘ শিকারের জন্য তিনি গিয়েছিলেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। খবর এসেছে তিনটি বাঘ জিম্মি করে রেখেছে বেলেন্টিয়ারকে। পরে ঐ সময়ের জমিদার চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরী আইন লঙ্ঘন করে বাঘ তিনটিকে গুলি করে মেরে বেলেন্টিয়ারকে উদ্ধার করেন। এ জন্য চিত্তরঞ্জন রায় চৌধুরীকে একটি বন্দুক উপহার দেন ইংরেজ সাহেব।


মহামানিক্য দত্তের উত্তরাধিকারীরা “রায় চৌধুরী” উপাধিতে ভূষিত হওয়ার ইতিহাস জানাতে গিয়ে সুখাইড়ের জমিদারদের উত্তরাধিকারী মলয় রায় চৌধুরী জানান, তাদের পূর্বপুরুষের একজন সুখাইড়ে এসে সুন্দরী ও ধনাঢ্য এক মেয়েকে বিয়ে করে নিজের উপাধী পরিবর্তন করেন। এ ছাড়া মহামাণিক্যের চতুর্থ পুরুষ প্রতাপ রায় চৌধুরী সুখাইড় পার্শ্ববর্তী রাজাপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে রাজাপুরে চলে যান। তিনি ধর্মান্তরিত হলেও জমিদারির অর্ধেক পান তিনি। পরে রাজাপুরের জমিদার হন তিনি।


জমিদারি প্রথা বিলোপের পর জমিদারের উত্তরাধিকাররা অর্থ সংকটে পড়ে যান এবং অন্য পেশায় কোন রকমে চলছে তাদের জীবন। জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য কিছু ধানের জমি এবং বাড়ির ২৫ একর জায়গা ব্যাতীত বাকী জায়গা-জমি চলে যায় সরকারের হাতে।


এই সুখাইড় জমিদার বাড়িতে যখন বিভিন্ন ধরনের রঙের আলোর বাতি ব্যবহার করা হতো তখন সুনামগঞ্জ মহুকুমার SDO বর্তমান (DC) অফিসে হারিকেন এর বাতি ঝোলানো থাকতো ভাবা যায় এই কথা, আজ সব অতীত। সুখাইড় জমিদার বাড়ির বিশাল হাওর জুড়েই এই রাজ্যের শাসন বিস্তৃত ছিলো।

পাকিস্তানী শাসন আমলে প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্সাল আইয়ুব খানের প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০   সালে পাস করার পর জমিদারী প্রথার বিলুপ্তি ঘটে,সুখাইড় জমিদার বাড়ি State কার্যকর হয় ১৯৫২ সালে।

জমিদার বংশ[সম্পাদনা]

সুখাইড় জমিদার বাড়ি, সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানা থেকে ১৮.২ কিলোমিটার দূরে, বৌলাই নদীর তীরে অবস্তিত। সুখাইড় জমিদার বাড়িকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস। ১৯২২সালের নানকার বিদ্রোহের সূত্রপাত এই জমিদার বাড়ি থেকেই। ১৬০০শতকের শেষ দিকে, এই দৃষ্টিনন্দন সুখাইড় জমিদার বাড়ি নির্মান করা হয়,জানা যায় মোঘল শাসন আমলে এই জমিদার বাড়ির স্থাপিত হয়। (প্রায়)৪০০শত বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়ি। এই জমিদার বাড়ির ৩টি অংশ এখনও টিকে আছে। তথ্যসূত্রে জানাযায় বংশধরদের নাম- মোহন চৌধুরী, বিমান চৌধুরী, বিধান চৌধুরী ও বিপ্রেশ চৌধুরী। বিশ্বনাথ রায় চৌধুরীর থেকে বংশ বিস্তৃত হয়েছে।

সুখাইড় জমিদার পরিবারের সর্বশেষ জমিদার শ্রী বিমল চন্দ্র রায় চৌধুরী (ছানাবাবু)। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ার পর, যুদ্ধ-বিদ্ধস্থ স্বাধীন বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলা ধর্মপাশা উপজেলার,সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন এর সাবেক চেয়ারম্যান।


আনুমানিক ১৯১৮ সালে জন্ম এবং মৃত্যু ২০০৪ সালে।

শাসন আমল[সম্পাদনা]

৩টি শাসন আমলের সুখাইড় জমিদার বাড়ি"

আনুমানিক এই শাসন আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সুখাইড় জমিদার বাড়ি।

  • মোঘল শাসন আমল(১৭০০-১৭৫৭)
  • ব্রিটিশ শাসন আমল (১৭৫৭-১৯৪৭)
  • পাকিস্তানী শাসন আমল (১৯৪৭-১৯৫২)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ, তৃতীয় ভাগ, পঞ্চম খণ্ড, দ্বিতীয় অধ্যায়, অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি; প্রকাশক: মোস্তফা সেলিম; উৎস প্রকাশন, ২০০৪, প্রবন্ধ-পরগনা সুখাইড় ৪০৯ পৃষ্ঠা
  2. dharmapasha.sunamganj.gov.bd[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]