সিনোসাইট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিনোসাইট, স্ফেরোফর্মা আর্কটিকা
সিনোসাইট, বট্রিডিয়াম

সিনোসাইট (ইংরেজি: Coenocyte, /ˈsnəˌst/) হল একটি বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ যা তাদের সাইটোকাইনেসিস ছাড়াই একাধিক নিউক্লীয় বিভাজনের ফলে হতে পারে। একটি সিনসাইটিয়ামের সাথে এর পার্থক্য হল যে, সিনসাইটিয়ামে কোষীয় একত্রীকরণের ফলে ভিতরে কোষগুলির ঝিল্লি দ্রবীভূত হয়ে বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ উৎপন্ন করে।[১] প্রাণী ভ্রূণবিদ্যায় সিনসাইটিয়াম শব্দটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের সিনোসাইটিক ব্লাস্টোডার্ম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।[২] একটি সিনোসাইটিক কলোনিকে সিনোবিয়াম (বহুবচন সিনোবিয়া) হিসাবে উল্লেখ করা হয়, এবং বেশিরভাগ সিনোবিয়া একটি স্বতন্ত্র সংখ্যক কোষ দ্বারা গঠিত, প্রায়শই দুটির একাধিক (৪, ৮, ইত্যাদি)।[৩]

গবেষণা থেকে জানা যায় যে সিনোবিয়াম গঠন কিছু প্রজাতির চারণ থেকে রক্ষা করতে পারে।[৪]

নামকরণ[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক শব্দভান্ডার বলে যে, ইংরেজি "Coenocyte" (cœnocyte) শব্দটি পেয়েছে নিও-ল্যাটিন থেকে, যার মধ্যে এটির কম্বিনিং ফর্ম, ' coeno-+ -cyte, প্রাচীন গ্রিক: κοινός ( koinós) = "সাধারণ" + κύτος (kýtos) = "বাক্স, অর্থাৎ কোষ")। œ এখানে ইংরেজির স্ট্রেস স্বরবর্ণ, যা উচ্চারণগতভাবে দীর্ঘ e এবং আগের c এর উচ্চারণ অনেক নরম। সাধারণত "see-no" উচ্চারণটি "coeno" দেখে বিভ্রান্তিকর লাগতে পারে।

শারীরতাত্ত্বিক উদাহরণ[সম্পাদনা]

প্রোটিস্টা[সম্পাদনা]

ডিপ্লোমোনাডদের মধ্যে, যেমন জিয়ার্ডিয়া, দুটি নিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ দেখা যায়।

সিলিয়েটদের কোষে দুটি নিউক্লিয়াস দেখা যায়: একটি ম্যাক্রোনিউক্লিয়াস ও একটি মাইক্রোনিউক্লিয়াস.

এপিকমপ্লেক্সান পরজীবীদের সাইজন্ট দশায় সিনোসাইট উৎপন্ন হয় (ছত্রাকের প্লাজমোডিয়াম সদৃশ)।

সিন্ডিনিয়ার (ডিনোফ্লাজেলেট) ট্রোফোন্ট পরজীবীতে দেখা যায়।

জেনোফাওফোরিয়া হল বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত বৃহদাকার কোষ, এবং গহন সমভূমিতে এদের সাধারণত দেখা যায়।

ছত্রাক[সম্পাদনা]

কিছু ছত্রাক (যেমন গ্লোমেলোমাইকটা, কাইট্রিডিওমাইকটা ও নিওকলিগোম্যাস্টিমাইকটা) সিনোসাইট মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত হতে পারে। একটি সিনোসাইট একটি সমন্বিত একক হিসাবে কাজ করে যা ফাঁক সংযোগের মাধ্যমে গঠনগত এবং কার্যকরীভাবে সংযুক্ত একাধিক কোষের সমন্বয়ে গঠিত। যেখানে হাইফাতে সেপ্টার অভাব থাকে তারা "অ্যাসেপ্টেট" বা "সিনোসাইটিক" নামে পরিচিত।

স্লাইম মোল্ড[সম্পাদনা]

উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

গুপ্তবীজী উদ্ভিদ-এর সস্য সিনোসাইট উৎপন্ন করে। এদের মুক্ত নিউক্লীয় সস্য (Free nuclear endosperm) বলে (যেমন নারকেলের জল)। বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্ন সংখ্যক নিউক্লিয়াসের সিনোসাইট দেখা যায়। সস্য নিউক্লিয়াস সিনোসাইট অবস্থা থেকে পরে বিভাজিত হতে শুরু করে।[৫]

শৈবাল[সম্পাদনা]

বিভিন্ন অসম্পর্কিত শৈবাল গ্রুপের মধ্যে সিনোসাইটিক কোষ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন, জ্যান্থোফাইসি (ভাউকেরিয়া), লাল শৈবাল (গ্রিফিথসিয়া) ও সবুজ শৈবাল[৬] (যেমন, কারার পর্বমধ্যের কোষ)।

নলাকার সবুজ শৈবাল ব্রায়োপসিডেলদের এবং কিছু ডেসিক্লাডেলদের গোটা অবিভেদিত দেহটি (থ্যালাস) একটি বহুনিউক্লিয়াসযুক্ত কোষ, যার দৈর্ঘ্য এক মিটারের বেশি হতে পারে (যেমন কলেরপা)।[৭] যদিও, কিছু ক্ষেত্রে, জননের সময় কোষের মাঝে দেওয়াল তৈরী হতে পারে।

সবুজ শৈবাল ক্ল্যাডোফোরেলদের সাইফোনোক্ল্যাডাস সজ্জা দেখে চিহ্নিত করা হয়, যার অর্থ, থ্যালাসটি অনেকগুলি সিনোসাইট দ্বারা গঠিত।

ক্ল্যাডোফোরালসের বিপরীতে যেখানে নিউক্লিয়াস নিয়মিত ব্যবধানে সাইটোপ্লাজমিক ডোমেনে সংগঠিত হয়, ব্রায়োপসিডেল শৈবালরা সাইটোপ্লাজম স্ট্রিমিং প্রদর্শন করে, যা দেহ জুড়ে অঙ্গাণু, প্রতিলিপি এবং পুষ্টির পরিবহন সক্ষম করে।[৬]

স্ফেরোপসিডেল বর্গের অন্তর্ভুক্ত কিছু মিষ্টি জলের শৈবালদের সিনোসাইট দেখা যায়। যেমন, সিনডেসমাস, হাইড্রোডিক্টিয়ন, পেডিয়াস্ট্রাম[৮][৯][১০]

অমেরুদণ্ডী প্রাণী[সম্পাদনা]

অনেক পোকামাকড়, যেমন ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার, ডিম পাড়ে যা প্রাথমিকভাবে "সিনসিটিয়াল" ব্লাস্টোডার্ম হিসাবে বিকাশ লাভ করে, অর্থাৎ ভ্রূণ-এর প্রথম দিকে অসম্পূর্ণ কোষ বিভাজন প্রদর্শন করে। নিউক্লিয়াসগুলি এস ফেজ (ডিএনএ প্রতিলিপি) অতিক্রম করে এবং সিস্টার ক্রোমাটিডগুলি আলাদা হয়ে যায় এবং হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের সম্পূর্ণ সেট ধারণকারী নিউক্লিয়াসে পুনরায় একত্রিত হয়, কিন্তু সাইটোকাইনেসিস ঘটে না। এইভাবে, নিউক্লিয়াস একটি সাধারণ সাইটোপ্লাজমিক স্পেসে সংখ্যাবৃদ্ধি করে।

অমেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রাথমিক ভ্রূণ "সিনসিটিয়াম" যেমন ড্রসোফিলা কোষের বিভেদনের "সিনসিটিয়াল" স্পেসিফিকেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিম্বাণু কোষের সাইটোপ্লাজমে স্থানীয় mRNA অণু থাকে যারা ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর বাইকয়েড এবং ন্যানোসকে এনকোড করে। বাইকয়েড প্রোটিন একটি গ্রেডিয়েন্টে প্রকাশ করা হয় যা প্রারম্ভিক ভ্রূণের পূর্বের প্রান্ত থেকে প্রসারিত হয়, যেখানে ন্যানোস প্রোটিনটি পশ্চাদ্ভাগের প্রান্তে ঘনীভূত হয়। প্রথমে, প্রাথমিক ভ্রূণের নিউক্লিয়াস দ্রুত এবং সুসংগতভাবে "সিনসিটিয়াল" ব্লাস্টোডার্মে বিভক্ত হয় এবং তারপর সাইটোপ্লাজমের মধ্য দিয়ে স্থানান্তরিত হয় এবং পেরিফেরির চারপাশে একটি একক স্তরে অবস্থান করে, ডিমের কেন্দ্রে শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক নিউক্লিয়াস রেখে যায়, যা কুসুম নিউক্লিয়াস হয়ে যাবে। ভ্রূণীয় অক্ষ বরাবর নিউক্লিয়াসের অবস্থান বিভিন্ন পরিমাণ বাইকয়েড, ন্যানোস এবং অন্যান্য মরফোজিন এর আপেক্ষিক এক্সপোজার নির্ধারণ করে। বেশি বাইকয়েড যুক্ত নিউক্লিয়াস জিন সক্রিয় করবে যা মাথা এবং বক্ষের গঠনে কোষের বিভেদনকে উৎসাহিত করে। নিউক্লিয়াস আরও ন্যানোসের সংস্পর্শে আসা জিনগুলিকে সক্রিয় করবে যা পেট এবং জনন কোষ এর মতো পশ্চাদ্ভাগের অঞ্চলগুলির বিভেদনের জন্য দায়ী। সম্মুখ-পশ্চাৎ অক্ষের (Dorso-ventral axis) স্পেসিফিকেশনের জন্য একই নীতিগুলি সত্য - ডিমের ভেন্ট্রাল দিকে ডরসাল নিউক্লীয় প্রোটিনের উচ্চ ঘনত্ব ভেন্ট্রাল দিকের ভাগ্য নির্দিষ্ট করে, যেখানে এর অনুপস্থিতি ডরসাল ভাগ্যকে নির্দেশ দেয়। নিউক্লিয়াস ডিমের ঝিল্লির নীচে একটি একক স্তরে অবস্থান করার পরে, ঝিল্লিটি ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে শুরু করে, এইভাবে নিউক্লিয়াসকে কোষীয় অংশে বিভক্ত করে; এই সময়ের মধ্যে, ডিমকে সেলুলার ব্লাস্টোডার্ম বলা হয়। মেরু কোষগুলি – জার্মলাইন অ্যানলেজ – হল প্রথম কোষ যা সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়।

প্যাথোলজিকাল উদাহরণ[সম্পাদনা]

কিছু মিউটেশন এবং নির্দিষ্ট কোষ চক্র নিয়ন্ত্রক জিনের সক্রিয়করণের ফলে ব্যাকটেরিয়া একাধিক ক্রোমোজোম সহ "ফিলামেন্ট-সদৃশ" কোষ গঠন করে কিন্তু কোষ বিভাজন ছাড়াই। এই প্রক্রিয়া বা ভুলগুলো সিনোসাইটের অনুরূপ কাঠামোর দিকে নিয়ে যেতে পারে, যদিও ব্যাকটেরিয়া নিউক্লিয়াস ধারণ করে না।

এই সত্যটি নির্দিষ্ট কৃত্রিম জীববিজ্ঞান অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে ব্যবহার করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, একটি জৈবভাবে বেড়ে ওঠা কংক্রিটের জন্য কোষ থেকে প্রাপ্ত ফাইবার তৈরি করতে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Daubenmire, R. F. (১৯৩৬)। "The Use of the Terms Coenocyte and Syncytium in Biology"। Science84 (2189): 533–34। ডিওআই:10.1126/science.84.2189.533পিএমআইডি 17806555বিবকোড:1936Sci....84..533D 
  2. Willmer, P. G. (১৯৯০)। Invertebrate Relationships: Patterns in Animal Evolution। Cambridge: Cambridge University Press 
  3. "coenobium"মেরিয়াম-ওয়েবস্টার ডিকশনারি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৯ 
  4. Lurling, M.; Beekman, W. (সেপ্টে ১৯৯৯)। "Grazer-induced defenses in scenedesmus (Chlorococcales; Chlorophyceae): coenobium and spine formation"। Phycologia (ইংরেজি ভাষায়)। United Kingdom, Lawrence: Allen Press Publishing Services। 38 (5): 368। আইএসএসএন 0031-8884ডিওআই:10.2216/i0031-8884-38-5-368.1প্রোকুয়েস্ট ১৯৮৫৯৯৫৫৬ 
  5. Lersten, N.R. (২০০৮)। Flowering Plant Embryology। Wiley। পৃষ্ঠা 153। আইএসবিএন 978-0-470-75267-8। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৬ 
  6. Mine, I.; Menzel, D.; Okuda, K. (২০০৮)। "Morphogenesis in giant-celled algae"। Int. Rev. Cell Mol. Biol.। International Review of Cell and Molecular Biology। 266: 37–83। আইএসবিএন 9780123743725ডিওআই:10.1016/S1937-6448(07)66002-Xপিএমআইডি 18544492 
  7. Umen, J. G. (১৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Green Algae and the Origins of Multicellularity in the Plant Kingdom"Cold Spring Harbor Perspectives in Biology6 (11): a016170। ডিওআই:10.1101/cshperspect.a016170পিএমআইডি 25324214পিএমসি 4413236অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  8. Higham, M. T.; Bisalputra, T. (অক্টোবর ১৯৭০)। "A further note on the surface structure of coenobium"। Canadian Journal of Botany48 (10): 1839–1841। ডিওআই:10.1139/b70-269 
  9. Marchant, J.; Pickett-Heaps, J. D. (১৯৭০)। "Ultrastructure and Differentiation of Hydrodictyon reticulatum"। Aust. J. Biol. Sci.23 (6): 1173–1186। ডিওআই:10.1071/BI9701173অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 5496220 
  10. Honda, Hisao (ডিসেম্বর ১৯৭৩)। "Pattern formation of the coenobial algae Pediastrum biwae Negoro"। Journal of Theoretical Biology42 (3): 461–481। hdl:2433/220120অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1016/0022-5193(73)90241-5পিএমআইডি 4766748বিবকোড:1973JThBi..42..461H 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]