কোষ বিভাজন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কোষ বিভাজন একটি মৌলিক ও অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবের দৈহিকবৃদ্ধি ও বংশ বৃদ্ধি ঘটে । যে প্রক্রিয়ায় জীব কোষের বিভক্তির মাধ্যমে একটি থেকে দুটি বা চারটি কোষের সৃষ্টি হয় তাকে কোষ বিভাজন বলে । কোষ বিভাজন সাধারণত বৃহত্তর কোষ চক্রের অংশ হিসাবে ঘটে। বিভাজনের ফলে সৃষ্ট নতুন কোষকে অপত্য কোষ (Daughter cell) এবং যে কোষটি বিভাজিত হয় তাকে মাতৃ কোষ (Mother cell) বলে। সুকেন্দ্রিক জীবে দুইরকম কোষ বিভাজন দেখা যায়; একটি হলো বর্ধনশীল কোষ বিভাজন, যেখানে বংশানুগতভাবে অপত্য কোষগুলো এবং মাতৃকোষ অভিন্ন (মাইটোসিস), অন্যটি হলো প্রজনন সংক্রান্ত কোষ বিভাজন, যেখানে অপত্য কোষগুলিতে ক্রোমোজোমের সংখ্যা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন করে (মিয়োসিস)।[১] কোষবিদ্যায় মাইটোসিস হলো কোষ চক্রের একটি অংশ, যেখানে প্রতিলিপি করা ক্রোমোজোমগুলি দুটি নতুন নিউক্লিয়াসে বিভক্ত হয়। এই কোষ বিভাজন জিনগতভাবে অভিন্ন কোষের জন্ম হয় যাদের ক্রোমোজোমের মোট সংখ্যা বজায় থাকে। সাধারণত মাইটোসিস (নিউক্লিয়াসের বিভাজন) এর পূর্বে ইন্টারফেজের এস পর্যায় (যখন ডিএনএ প্রতিলিপি হয়) হয় এবং এটির পরে টেলোফেজ এবং সাইটোকাইনেসিস(মাইটোসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় সাইটোপ্লাজমের বিভাজন) সম্পন্ন হয়; যখন একটি কোষের সাইটোপ্লাজম, অঙ্গাণু এবং কোষ ঝিল্লি বিভাজিত হয়ে নতুন সৃষ্ট কোষ দুটির মধ্যে প্রায় সমানভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। মাইটোসিসের বিভিন্ন ধাপগুলি একসাথে একটি প্রাণীর কোষ চক্রের মাইটোটিক (এম) পর্বকে সংজ্ঞায়িত করে। ওয়াল্টার ফ্লেমিং ১৮৮২ সালে সামুদ্রিক সালামান্ডার (Triturus maculosa) কোষে প্রথমবারের মতো কোষ বিভাজন লক্ষ্য করেন।

মানব দেহ একটি মাত্র কোষ থেকেই তৈরি হয় । জাইগোট থেকে কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ দেহ তৈরি হয়।

তিন ধরনের কোষ বিভাজন

কোষ বিভাজন ৩ প্রকার ।

  1. অ্যামাইটোসিস কোষ বিভাজন
  2. মাইটোসিস কোষ বিভাজন
  3. মিয়োসিস কোষ বিভাজন

[১]

অ্যামাইটোসিস[সম্পাদনা]

" যে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম কোনো জটিল মাধ্যমিক পর্যায় ছাড়াই সরাসরি বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য(শিশু) কোষের সৃষ্টি করে তাকে অ্যামাইটোসিস বা প্রত্যক্ষ কোষ বিভাজন বলে"।

প্রক্রিয়া:
অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই সরাসরি মাতৃকোষের বিভাজন ঘটে। এক্ষেএে নিউক্লিয়াসটি প্রত্যক্ষ সরাসরি দু ভাগে ভাগ হয়। নিউক্লিয়াসটি প্রথমে লম্বা হয় ও মাঋখানে ভাগ হয়ে নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়।পরে কোষটির মধ্যভাগে একটি চক্রাকার গর্ত ভেতরের দিকে ঢুকে গিয়ে পরিশেষে দু ভাগে ভাগ করে ফেলে।ফলে ১টি কোষ ২টি অপত্য কোষে(daughter cell) পরিণত হয়।প্রতিটি অপত্য কোষ ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে মাতৃকোষের আকৃতি লাভ করে।

প্রোক্যারিওটিক জীবে এ ধরনের বিভাজন দেখা যায় । এ ধরনের বিভাজনে কোন বিশেষ ধাপ ছাড়াই কোষ বিভাজিত হয়ে দুইটি অপত্য কোষ গঠন করে । সাধারনত নীলাভ সবুজ শৈবাল , ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি জীবে এ বিভাজন ঘটে থাকে ।

অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ার গুরুত্ব :
(১) scientist স্ট্রসবার্জার(১৮৯২)এর মতে, অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায়া থেকেই জটিল ও উন্নত কোষ বিভাজন পদ্ধতির উৎপওি হয়েছে।
(২) কোনো কোনো এককোষী জীবের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেএে এ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

মাইটোসিস[সম্পাদনা]

মাইটোসিস বহুকোষী জীবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বৃদ্ধির জন্য এবং জীর্ণ কোষগুলির প্রতিস্থাপনের জন্য নতুন কোষ সরবরাহ করে , যেমন ত্বকের কোষ। অনেক এককোষী জীব তাদের অযৌন প্রজননের প্রাথমিক উপায় হিসাবে মাইটোসিসের উপর নির্ভর করে।

মিয়োসিস[সম্পাদনা]

যে বিভাজনে নিউক্লিয়াস পরপর দুইবার ও ক্রোমোজোম একবার করে বিভক্ত হয়ে মাতৃকোষের ক্রোমোজোমের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোম যুক্ত চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি হয় তাকে মিয়োসিস বলে। উন্নত জীবের জনন মাতৃকোষে মায়োসিস হয়ে থাকে । দেহকোষে অথবা হ্যাপ্লয়েড কোষে মিয়োসিস হয়না । তবে নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদ (হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদে) এর জাইগোটে মায়োসিস হতে পারে। মায়োসিস বিভাজন দুটি প্রধান পর্বে বিভক্ত। যথাঃ

  • মিয়োসিস-১
  • মিয়োসিস-২

মিয়োসিস কেন হয়?

হ্যাপ্লয়েড (n) পুংজননকোষ ও স্ত্রী জননকোষের মিলনের ফলে সৃষ্ট জাইগােটটি ডিপ্লয়েড (2n)। এই জাইগােট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে প্রথমে ভ্রুণ এবং শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ জীবে পরিণত হয়। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ জীবের প্রতিটি কোষেই ডিপ্লয়েড (2n) সংখ্যক ক্রোমােজোম থাকে। নিষেকের আগেই যদি জননকোষগুলােতে ক্রোমােজোমের সংখ্যা অর্ধেক না হয়ে যায় তবে নতুন সৃষ্ট জাইগােটে ক্রোমােজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। যেহেতু ক্রোমােজোমই জীবের লক্ষণ নিয়ন্ত্রণকারী জিন বহন করে তাই ক্রোমােজোম সংখ্যা দ্বিগুণ হলে বংশধরদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটে যাবে। মিয়ােসিস হয় বলেই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় টিকে থাকতে পারে।

মিয়ােসিস কোথায় হয়?

নিম্নশ্রেণির জীব অর্থাৎ হ্যাপ্লয়েড (n) জীবের গ্যামেটও হ্যাপ্লয়েড। দুটি হ্যাপ্লয়েড গ্যামেটের মিলনে ডিপ্লয়েড (2n) জাইগােট-এর জন্ম হয়। কাজেই হ্যাপ্লয়েড জীবের ক্ষেত্রে প্রজাতির বৈশিষ্ট্য রক্ষার তাগিদে নিষেকের পর জাইগােটে মিয়ােসিস হয়।

উচ্চ শ্রেণির প্রাণী ও উদ্ভিদ সাধারণত ডিপ্লয়েড (2n)। ডিপ্লয়েড জীব থেকে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট সৃষ্টি হলেই নিষেকের পর পুনরায় ডিপ্লয়েড অবথার পুনরাবৃত্তি ঘটা সম্ভব। এজন্য ডিপ্লয়েড জীবের ক্ষেত্রে যৌন একক বা গ্যামেট সৃষ্টির পূর্বে জনন মাতৃকোষে মিয়ােসিস সংঘটিত হয়।

মিয়ােসিসকে হ্রাস বিভাজন বলে কেন?

মিয়ােসিস বিভাজনে নিউক্লিয়াসের দুবার কিন্তু ক্রোমােজোমের একবার বিভাজন ঘটে, তাই ক্রোমােজোমের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেকে পরিণত হয়।

মিয়ােসিসের বৈশিষ্ট্য

উত্তরঃ মিয়ােসিসের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ ১। জনন মাতৃকোষের নিউক্লিয়াসে মিয়োসিস ঘটে। ২। মিয়ােসিসের ফলে একটি নিউক্লিয়াস থেকে চারটি অপত্য নিউক্লিয়াসের জন্ম হয়। ৩। সমসংস্থ হােমোলগাস ক্রোমােজোমগুলাে জোড়ায় জোড়ায় মিলিত হয়ে বাইভ্যালেন্ট বা দ্বিযোজী ক্রোমােজোমের সৃষ্টি হয়। ৪। মিয়ােসিসে ক্রোমােজোমের একবার এবং নিউক্লিয়াসের দুবার বিভাজন ঘটে। ৫। অপত্য নিউক্লিয়াসের ক্রোমােজোম সংখ্যা মাতৃ-নিউক্লিয়াসের ক্রোমােজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়। ৬। কায়াজমা সৃষ্টি ও ক্রসিং ওভাড়ের ফলে নন-সিস্টার ক্রোমাটিডগুলোর মধ্যে অংশের বিনিময় ঘটে। ৭। মিয়ােসিসের ফলে নিউক্লিয়াসে নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে।[২]

ব্যাকটেরিয়ায় কোষ বিভাজন[সম্পাদনা]

ব্যাকটেরিয়া কোষ বিভাজন বাইনারি ফিশনের মাধ্যমে ঘটে। ডিভিসোম ব্যাকটিরিয়ার একটি প্রোটিন কমপ্লেক্স যা কোষ বিভাজন, বিভাজনের সময় অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের ঝিল্লি সংকোচন এবং বিভাগে পেপটাইডোগ্লাইক্যান (পিজি) সংশ্লেষণের জন্য দায়ী। প্রোটিনের মতো একটি টিউবুলিন, FtsZ কোষ বিভাজনের জন্য একটি সংকোচনের রিং গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Griffiths AJ (২০১২)। Introduction to genetic analysis (10th সংস্করণ)। New York: W.H. Freeman and Co। আইএসবিএন 9781429229432ওসিএলসি 698085201 
  2. ড মোহাম্মাদ আবুল হাসান, উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র , হাসান বুক হাউস, ঢাকা, জুন ২০১১, পৃষ্ঠা ১৬৬-১৮২।

টেমপ্লেট:কোষচক্র প্রোটিন