সাদাত আবুল মাসুদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৈয়দ সাদাত আবুল মাসুদ
জন্ম(১৯১৫-০২-১৯)১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫
আজানগাছি, হাওড়া, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
মৃত্যু৩ জানুয়ারি ১৯৯১(1991-01-03) (বয়স ৭৫)
পেশাআইনজীবী, বিচারপতি
দাম্পত্য সঙ্গীতাহেরা মাসুদ
সন্তানসৈয়দ সাদাত আবুল মাসুম, সৈয়েদা আশিয়া কবীর, সৈয়দ সাদাত আবুল মুর্শিদ
পিতা-মাতাস্যার সৈয়দ নাসিম আলি (পিতা)
পুরস্কার পদ্মভূষণ (১৯৮৫)
ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার অনার (২০১২)

জাস্টিস সৈয়দ সাদাত আবুল মাসুদ (১৯ ফেব্রুয়ারি ১৮১৫ - ৩ জানুয়ারি ১৯৯১) ছিলেন একজন ভারতীয় আইনজীবী, বিচারক এবং কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, যিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসাবে অবসর নেন। [১] [২] তিনি কাসু ব্রহ্মানন্দ রেড্ডির নেতৃত্ব গঠিত চার সদস্যের ভারতের ষষ্ঠ অর্থ কমিশনের অন্যতম বাঙালি জজ সদস্য ছিলেন। [৩][৪] ২০১২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী হিসাবে ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার সম্মান প্রদান করে। [৫] ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দেভারত সরকার সমাজসেবার জন্য তাকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণে ভূষিত করে। [৬]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ সাদাত আবুল মাসুদের জন্ম ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার অধুনা হাওড়া জেলার আজানগাছি। পিতা অবিভক্ত বাংলার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার সৈয়দ নাসিম আলি। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে বৃত্তিসহ ম্যাট্রিক, ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স নিয়ে বি.এ এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে এম.এ পাশ করে ব্যরিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড যান। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পড়া শেষ না করে দেশে ফিরে আসেন এবং কলকাতায় আইন পড়া সমাপ্ত করেন। লন্ডনে হিটলার কর্তৃক বোমা বর্ষের জন্য ১৯৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দের ব্যারিস্টারি পরীক্ষা দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় এবং তার ফল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। [১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ব্যারিস্টারি পরীক্ষার ফল বের হবার আগেই তিনি এ.আর.পি'তে স্টাফ অফিসার পদে চাকরি নেন। ফল প্রকাশের পর চাকরি ছেড়ে কলকাতা হাইকোর্টে প্রাকটিশ শুরু করেন। এর পাশাপাশি তিনি ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সন্ধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি হাইকোর্টের জজ নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে দেড় মাস চীন ভ্রমণ করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বিশ্বভারতীর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। এরপর ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কাসু ব্রহ্মানন্দ রেড্ডির নেতৃত্বে চার সদস্যের অর্থ কমিশন গঠিত হলে আবুল মাসুদ বাঙালি জজ সদস্য হিসাবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচাপতি হয়ে ওই বছরেই অবসর গ্রহণ করেন।[১]

দেশ-বিদেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকায় নিকারাগুয়ার স্বাধীনতার জন্য যে কনফারেন্স হয় তার সভাপতিত্ব করেন। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে তিনি রাস্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়ে তিনি তিন বৎসর জেনিভায় অতিবাহিত করেন। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সিমলা ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজের সহ-সভাপতি হন।[১]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার সমাজসেবার জন্য তাকে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ প্রদান করে।[৬]
  • ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার ৪১ বৎসর আগে দেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য যে শতাধিক বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা প্রদান করে, তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। সম্মাননাটি তাকে মার্চ মাসে মরণোত্তর দেওয়া হয়। [৫]

ব্যক্তিগত জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

সৈয়দ সাদাত আবুল মাসুদ তাহেরা মাসুদকে বিবাহ করেন। তাদের এক কন্যা ও দুই পুত্র। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি হজ ব্রত সমান করেন এবং ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে জিয়ারত করেন। তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি কলকাতায় প্রয়াত হন। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৬৭, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "List of Recipients of Friends of Liberation War Honour on 27 March 2012" (পিডিএফ)। HCI Dhaka। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৬ 
  3. Virendra Kumar (১৯৭৫)। Committees and Commissions in India: 1947-1973। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 155–। আইএসবিএন 978-81-7022-209-5 
  4. "Finance Commission of India" (পিডিএফ)। Government of India। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৬ 
  5. "Foreign friends get honours for war role today"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-২৫ 
  6. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৬। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৬