সধবার একাদশী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সধবার একাদশী বাংলা গদ্য সাহিত্যের একটি আদি ও উতকৃষ্ট নিদর্শন। এটি একটি নাটক যা কি-না প্রহসন হিসেবে পরিগণিত। এর লেখক উনিশ শতকের বিশিষ্ট নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র

রচনা ও মঞ্চায়ন[সম্পাদনা]

নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মসূত্রে যখন তিনি ভারতের নদীয়াউড়িষ্যা এবং বাংলাদেশের ঢাকা এই ৩টি জেলার পোস্টাল বিভাগের ইন্সপেক্টিং পোস্ট মাস্টার হিসেবে নিযুক্ত তখন তিনি এ প্রহসনটি রচনা করেন। নাটকটি সর্বপ্রথম ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় কলকাতার বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটার দলের উদ্যোগে, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। দুজন নারী চরিত্র হল কুমুদিনী ও সৌদামিনী

কাঠামো[সম্পাদনা]

এটি একটি প্রহসনমূলক নাটক। নাটকটি নাতিদীর্ঘ। এতে তিনটি অঙ্ক রয়েছে। প্রথম অঙ্কে ২টি, দ্বিতীয় অঙ্কে ৪টি এবং তৃতীয় অঙ্কে ৩টি গর্ভাঙ্ক রয়েছে।

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

এ নাটকের মাধ্যমে তৎকালীন বঙ্গীয় সমাজের উচ্চশ্রেণীর ব্যক্তি বর্গের চাল-চরিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মদ্যপানের কুফল ফুটিয়ে তোলা এ নাটকের অন্যতম উদ্দেশ্য। মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে ততকালীন সমাজের বেশ্যাসক্তির বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মদপান এবং বেশ্যার কারণে সে সমসাময়িক সমাজে যে উচ্ছৃঙ্খলতা এবং নৈতিক অধঃপতন দেখা গিয়েছিল তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়েছে। উঠতি ধনী ব্যক্তিরা অর্থ ও বিত্তের জোড়ে বিজাতীয় সংস্কৃতিকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে যে অনাসৃষ্টি করে তারই একটি বিশ্বস্ত রূপ এই ‌‌সধবার একাদশী ।

কাহিনীবিন্যাস[সম্পাদনা]

অটল এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে ধনাঢ্য ব্যক্তির সন্তান। তার প্রচুর বন্ধু-বান্ধব। অন্তরঙ্গ বন্ধুরা তাকে কুপথে পরিচালিত করে। সে মদে আসক্ত হয় এবং বেশ্যা গমন শুরু করে। সে কাঞ্চন নামীয় একজন বেশ্যাকে স্বগৃহে রক্ষিতা হিসেবে রাখতে উদ্যত হয়। অটলের পিতা পুত্রের এহেন অনাচারে আপত্তি করেন। কিন্তু অটলের মা পুত্র হারানোর ভয়ে রক্ষিতার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করেন। অটলের বন্ধ-বান্ধব বিশেষ করে নিমচাঁদ এসব কর্মকাণ্ডে সোতসাহে সাহায্য করে। এক পর্যায়ে কাঞ্চন অটলকে পরিত্যাগ করে। অটলের বন্ধুরা মানুষের হাতে নিগৃহীত হয়।

ভাষা[সম্পাদনা]

এ নাটকটির ভাষা এর বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। পরিবেশের দাবী অনুযায়ী খিস্তি-খেউড়ের পর্যাপ্ত ব্যবহার দেখা যায়। বিভিন্ন সংলাপে রয়েছে কৌতুকাবহ। বাংলার মাঝে ইংরেজি বক্তব্যও লাগসই পুরে দেয়া হয়েছে।

আলোচনা[সম্পাদনা]

১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে ‌‌বেঙ্গল‌‌ পত্রিকায় প্রথম এ প্রহসনটির আলোচনা মুদ্রিত হয়। বেশ্যা ইত্যাদি বিষয়-বস্তুর জন্য এটি বিরূপ সমালোচনার শিকার হয়। তবে ততকালনি সমাজের উচ্ছৃঙ্খল দিকটি তুলে ধরার কারণে তা প্রশংসাও লাভ করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]