মাধব আশীষ
শ্রী মাধব আশীষ | |
---|---|
জন্ম | ২০ ফেব্রুয়ারী ১৯২০ এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড |
মৃত্যু | ১৩ এপ্রিল ১৯৯৭ মীর্টোলা, উত্তরাখণ্ড, ভারত | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | স্কটিশ-ভারতীয় |
অন্যান্য নাম | আলেক্সান্ডার ফিপস্ |
পেশা | কৃষিবিদ অধ্যাত্ববাদী রহস্যবাদী লেখক |
পরিচিতির কারণ | অধ্যাত্মবাদ কৃষি |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী |
শ্রী মাধব আশীষ (১৯২০-১৯৯৭) ছিলেন একজন স্কটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী , লেখক ও কৃষিবিদ। তিনি ভারতীয় কৃষি সেবায় তার অবদানের জন্য পরিচিত। [১] তিনি ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আলমোড়ার কাছে অবস্থিত মিরটোলা আশ্রমের প্রধান ছিলেন । [২] তিনি ভারতের কৃষি ও বাস্তুশাস্ত্রের বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। [৩] তিনি 'হোয়াট ইজ ম্যান?'[৪] , 'ম্যান দ্য মিজার্ অব অল থিংস্' , [৫] 'ম্যান, সন্ অব ম্যান [৬], অ্যান ওপেন উইন্ডো' নামক চারটি বই লিখেন । [৭] ভারত সরকার তাকে ভারতের কৃষি খাতে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী প্রদান করে। [৮]
জীবনী[সম্পাদনা]
শ্রী মাধব আশীষ আলেকজান্ডার ফিপস ২০ ফেব্রুয়ারী, ১৯২০ সালে এডিনবার্গে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা ছিলেন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন কর্নেল। তার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয় হোভ ও শেরবোর্নে । [১] পরে তিনি চেলসি পলিটেকনিকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করেন। পরে ডনকাস্টার এবং ব্রুকল্যান্ডস , সারে- তে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে , ফিপসকে কলকাতার দমদম বিমানবন্দরের কাছে একটি গ্লাইডার উৎপাদন ইউনিটে ভারতে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে তিনি সুপারমেরিন স্পিটফায়ার ইঞ্জিনের মেরামতের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। [১]
তাঁর জীবনের মোড় আসে ১৯৪৪ সালে ছুটির দিনগুলিতে, যখন তিনি তিরুবান্নামালাইতে রামন মহর্ষির শ্রীরামন আশ্রমে যাওয়ার সুযোগ পান এবং এই বিখ্যাত ভারতীয় সন্ন্যাসীর প্রভাবে আসেন। [৯]সেই বছর যুদ্ধ শেষ হলে তিনি তার আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে ভারতে থেকে যান। 'ভিলেজ লাইফ বাই দ্য গঙ্গা' গ্রন্থের লেখক এস্টার মারস্টনের সহায়তায় [১০] তিনি কুমায়ুন উপত্যকার আলমোড়া জেলার কাছে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত মীরটোলা আশ্রমে চলে আসেন । [৯]সেই থেকে,তিনি আশ্রমে ১৯২৯ সালে শ্রীযশোদা মাঈ (সম্পূর্ণ সন্ন্যাস নাম: শ্রীকৃষ্ণ সেবিকা শ্রীশ্রী যশোদা মাঈ বৈরাগিনী) (বিবাহিত নাম: মনিকা দেবী চক্রবর্তী,মনিকা রায়, ১৮৮২-১৯৪৪) এবং শ্রী কৃষ্ণ প্রেমের ( ১৮৯৮-১৯৬৫) সান্নিধ্যে বাস করতে শুরু করেন। [১১] ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার আশ্রমেই ছিলেন ।
ফিপস মীর্টোলা আশ্রমের জীবনধারার সাথে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নিরামিষাশী বৈষ্ণব সন্ন্যাসিতে পরিণত হন এবং ধ্যান অনুশীলন করেন। [২] পরবর্তীকালে তার নাম হয় মাধব আশীষ। ১৯৬৫ সালে আশ্রমের তৎকালীন পরিচালক শ্রীকৃষ্ণ প্রেম যখন মারা যান, তখন তিনি আশ্রমের প্রধান হন ও আমৃত্যু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার তত্ত্বাবধান করেন। [৯] তিনি পরিবেশগত সমস্যাগুলি সম্পর্কে গবেষণা করেন এবং কৃষি কৌশল নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন যা তিনি স্থানীয় কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে আশ্রমটি নিজস্ব কৃষি দুগ্ধ ও হাঁস-মুরগির খামার করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। [১২]এই অঞ্চলের স্কুলগুলিতে শিক্ষার বিষয় হিসাবে কৃষি চালু করতে তাঁর অবদান সরকারকে প্রভাবিত করেছিল বলেও জানা যায়। তিনি কৃষি [১৩] [১৪] ও বাস্তুসংস্থান সংরক্ষণের উপর বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন । তিনি কিছু বইও লিখেছেন যেমন, what is man,[৪] Man son of Man [৬] এবং An open window [৭] এবং শ্রী কৃষ্ণ প্রেমের সাথে যৌথভাবে সহ-লেখক হিসেবে 'Man the measure of all things' বইটি রচনা করেন। [৫] একজন সন্ন্যাসী জীবনে তিনি মীরটোলা আশ্রমের প্রধান হিসেবে সফল হন। [১] 'The measure of all things' বইটি শ্রী কৃষ্ণ প্রেম শুরু করেছিলেন এবং আশীষ এটি সম্পূর্ণ করেন। বইটিতে ভারতের থিওসফিক্যাল সোসাইটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হেলেনা ব্লাভাটস্কির জীবন ও সময় বর্ণনা আছে । [১৫]
কৃষি ও বাস্তুসংস্থানের সাথে জড়িত থাকার ফলস্বরূপ তিনি ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের বহু কমিটিতে সদস্যপদ লাভ করেন । কৃষিতে অবদানের সম্মানস্বরূপ ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রীতে ভূষিত করে। পাঁচ বছর পর, আশিস ১৩ এপ্রিল, ১৯৯৭-এ কিছু সময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরে মারা যান। তার মৃত্যুর পর আশ্রমের ভার তাঁর শিষ্য শ্রীদেব আশীষ গ্রহণ করেন । তিনি তাঁর পরামর্শদাতা শ্রী কৃষ্ণ প্রেমের জীবনী সম্পর্কিত একটি বই অসমাপ্ত রেখে যান। সেমুর বাডি গিন্সবার্গ নামক (জন্ম : আগস্ট ১৯৩৪ ) একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক শিশুদের পণ্যের খুচরা বিক্রেতা টয়স আর ইউ- এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর্টোলা সফরের সময় আশিসের সাথে অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। [১৬] মাধব আশীষের জীবনীমূলক বই 'গুরু বাই ইয়োর বেডসাইড: দ্য টিচিংস অফ আ মডার্ন সিয়ার' [১৭] সতীশ দত্ত পান্ডে (জন্ম 1930) প্রতিষ্ঠিত পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া পাবলিশার্স দ্বারা প্রকাশিত হয়। এতে মীরটোলা এবং এর আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ রয়েছে। [১৮]
গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]
- Sri Krishna Prem, Sri Madhava Ashish (১৯৬৯)। Man The Measure of All Things। Quest Books। পৃষ্ঠা 360। আইএসবিএন 978-0835600064।
- Sri Madhava Ashish (১৯৭০)। Man, Son of Man। Quest Books। পৃষ্ঠা 352। আইএসবিএন 978-0835601139।
- Madhava Ashish (২০০৭)। An Open Window। Penguin India। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 9780143100232।
- Madhava Ashish (২০১০)। What is Man?। Penguin India। পৃষ্ঠা 320। আইএসবিএন 9780143065746।
আরও দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ "Obituary: Sri Madhava Ashish"। Independent। ৬ মে ১৯৯৭। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ Seymour B. Ginsburg (২০০১)। In Search of the Unitive Vision: Letters Of Sri Madhava Ashish To An American Businessman, 1978–1997। New Paradigm Books। আইএসবিএন 1892138050। ২৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৩।
- ↑ "Sri Madhava Ashish"। Economic and Political Weekly। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ ক খ Madhava Ashish (২০১০)। What is Man?। Penguin India। পৃষ্ঠা 320। আইএসবিএন 9780143065746।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ Sri Krishna Prem, Sri Madhava Ashish (১৯৬৯)। Man The Measure of All Things। Quest Books। পৃষ্ঠা 360। আইএসবিএন 978-0835600064।
- ↑ ক খ Sri Madhava Ashish (১৯৭০)। Man, Son of Man। Quest Books। পৃষ্ঠা 352। আইএসবিএন 978-0835601139।
- ↑ ক খ Madhava Ashish (২০০৭)। An Open Window। Penguin India। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 9780143100232।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ক খ গ "Penguin India profile"। Penguin India। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Esther Merston (১৯৫০)। Village Life By the Ganges। Diocesan Press। পৃষ্ঠা 166। এএসআইএন B0000CP875।
- ↑ "Testament of faith"। The Hindu। ৬ ডিসেম্বর ২০০৫। ১৮ জুলাই ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ Madhava Ashish (১৯৮০)। "Agricultural Economy of Kumaon Hills"। Economic and Political Weekly। XV (19)।
- ↑ Madhava Ashish (১৯৯৩)। "Decentralised Management of Natural Resources in the UP Hills"। Economic and Political Weekly। XXVIII (35)।
- ↑ Madhava Ashish (১৯৭৯)। "Agricultural Economy of Kumaon Hills-Threat of Ecological Disaster"। Economic and Political Weekly। XIV (25)।
- ↑ "Man the Measure of All Things, Sri Krishna Prem and Sri Madhava Ashish Read More by Katinka Hesselink: http://www.allconsidering.com/2009/man-measure-all-things/"। Allconsidering.com। ৭ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৫।
|title=
এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য) - ↑ "Sy Ginsburg, USA"। Katinkahesselink। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৫।
- ↑ S. D. Pandey (২০০৩)। Guru by Your Bedside: The Teachings of a Modern Seer। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 276। আইএসবিএন 978-0143029540।
- ↑ "House of spirit"। The Hindu। ৪ মে ২০০৩। ১৮ জুলাই ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৫।
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]
- Sri Madhava Ashish (জানুয়ারি ১৯৭৯)। "The Value of Uncertainty" (পিডিএফ)। The American Theosophist।