কৃষিতত্ত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কৃষিতত্ত্ব হল খাদ্য, জ্বালানি, আঁশ, রাসায়নিক, বিনোদন বা ভূমি সংরক্ষণের জন্য কৃষিকাজের মাধ্যমে উদ্ভিদ উৎপাদন ও ব্যবহার করার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। কৃষিতত্ত্বে উদ্ভিদের বংশগতি, উদ্ভিদের দেহতত্ত্ব, আবহাওয়াবিজ্ঞান এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞানের গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। এটি জীববিজ্ঞান, রসায়ন, অর্থনীতি, বাস্তুবিদ্যা, ভূবিজ্ঞান এবং বংশাণুবিজ্ঞানের সমন্বিত প্রয়োগ। কৃষিতত্ত্বের পেশাদারদেরকে কৃষিবিদ বলা হয়।

উদ্ভিদ প্রজনন[সম্পাদনা]

একজন কৃষিবিদ একটি পরীক্ষামূলক তিসি খেতের মাঠ-পর্যায়ের নমুনা সংগ্রহ করছেন।

কৃষিতত্ত্বের এই বিষয়ের মধ্যে বিভিন্ন অবস্থার জন্য সেরা ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের কৃত্রিম নির্বাচন জড়িত থাকে। উদ্ভিদ প্রজনন ফসলের ফলন বাড়িয়েছে এবং ভুট্টা, সয়াবিন এবং গমসহ অসংখ্য ফসলের পুষ্টির মান উন্নত করেছে। এর ফলে নতুন ধরনের উদ্ভিদের বিকাশও ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, রাই এবং গমের আন্তঃপ্রজননের ট্রিটিকেল নামে একটি সংকর শস্য তৈরি করা হয়েছে। ট্রিটিকেলে রাই বা গমের চেয়ে বেশি ব্যবহারযোগ্য প্রোটিন থাকে। ফল ও সবজি উৎপাদন গবেষণার জন্যও কৃষিতত্ত্ব সহায়ক। উপরন্তু, টার্ফগ্রাস উন্নয়নের জন্য, উদ্ভিদের প্রজনন ব্যবহারের ফলে সার এবং জলের জোগান (প্রয়োজনীয়তা) এবং সেইসাথে টার্ফ-ধরনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পেয়েছে যা রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে।

জৈবপ্রযুক্তি[সম্পাদনা]

একজন কৃষিবিদ একটি উদ্ভিদের জিনোম ম্যাপিং করছেন

কৃষিবিদরা কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য বিকাশ এবং ত্বরান্বিত করতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করেন।[১] জৈবপ্রযুক্তি প্রায়শই একটি পরীক্ষাগারের ক্রিয়াকলাপ যাতে উদ্ভাবিত নতুন শস্যের জাতগুলির মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।

ফসলের ফলন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য ব্যতীত অন্যান্য অভিনব ব্যবহারের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে কৃষি জৈবপ্রযুক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে তৈলবীজ প্রধানত মার্জারিন এবং অন্যান্য ভোজ্য তেলের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এটি ডিটারজেন্ট, বিকল্প জ্বালানি এবং পেট্রোরাসায়নিকের জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে রূপান্তর করা যেতে পারে।

মৃত্তিকা বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

কৃষিবিদরা মাটিকে আরও উৎপাদনশীল এবং লাভজনক করার টেকসই উপায়গুলো নিয়ে গবেষণা করেন। তারা মাটির শ্রেণিবিভাগ করেন এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করতে মাটি বিশ্লেষণ করেন। বিশ্লেষণ করা সাধারণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং সালফারের যৌগ রয়েছে। দস্তা এবং বোরনের মতো বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জন্যও মাটির মূল্যায়ন করা হয়। আঞ্চলিক পরীক্ষাগারে জৈব পদার্থের শতকরা হার, অম্ল মৃত্তিকা এবং পুষ্টি ধারণ ক্ষমতা (ক্যাটায়ন বিনিময় ক্ষমতা) পরীক্ষা করা হয়। কৃষিবিদরা এই পরীক্ষাগারের রিপোর্টগুলোকে ব্যাখ্যা করেন এবং উদ্ভিদের সর্বোত্তম বৃদ্ধির জন্য মাটির পুষ্টি পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশ করেন।[২]

মাটি সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

উপরন্তু, কৃষিবিদরা মাটি সংরক্ষণ এবং বায়ু ও পানির মাধ্যমে [ক্ষয়ের] প্রভাব হ্রাস করার পদ্ধতি বিকাশ করেন। উদাহরণস্বরূপ, কনট্যুর লাঙল নামে পরিচিত একটি কৌশল মাটির ক্ষয় রোধ করতে এবং বৃষ্টিপাত সংরক্ষণ করতে ব্যবহার করা হয়। কৃষিবিজ্ঞানের গবেষকরা অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য মাটিকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উপায়গুলোও সন্ধান করেন। এই ধরনের সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে মানুষ ও পশুর মল নিষ্পত্তি, পানি দূষণ এবং মাটিতে আপদনাশক জমে থাকা, সেইসাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মাটি সংরক্ষণ যেমন ফসল উৎপাদনের পর নাড়া পোড়ানো। চারণভূমি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলির মধ্যে রয়েছে শূন্য-চাষ আবাদ, খাড়া ঢালে সীমারেখা বরাবর মাটি-বন্ধনকারী ঘাস রোপণ এবং ১ মিটার গভীরতার সীমানা নালা ব্যবহার করা।[৩]

কৃষিবাস্তুসংস্থান[সম্পাদনা]

কৃষিবাস্তুসংস্থান হল বাস্তুতন্ত্রগত এবং পরিবেশগত প্রয়োগের উপর জোর দিয়ে কৃষি ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা করা।[৪] এই বিষয়টি টেকসই কৃষি, জৈব কৃষি, এবং বিকল্প খাদ্য ব্যবস্থা এবং বিকল্প শস্য পদ্ধতির উন্নয়নের গবেষণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

তাত্ত্বিক গঠন[সম্পাদনা]

তাত্ত্বিক উৎপাদন বাস্তুতন্ত্র হল ফসলের বৃদ্ধির পরিমাণগত অধ্যয়ন। উদ্ভিদটিকে এক ধরনের জৈবিক কারখানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা আলো, কার্বন ডাই অক্সাইড, পানি এবং পুষ্টি উপাদানগুলিকে সংগ্রহযোগ্য পণ্যতে প্রক্রিয়াকরণ করে। বিবেচিত প্রধান পরামিতিগুলো হল তাপমাত্রা, সূর্যালোক, স্থায়ী ফসলের বায়োমাস, উদ্ভিদ উৎপাদন বন্টন, এবং পুষ্টি ও পানি সরবরাহ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Georgetown International Environmental Law Review
  2. Hoeft, Robert G. (২০০০)। Modern Corn and Soybean Production। MCSP Publications। পৃষ্ঠা 107 to 171। এএসআইএন B0006RLD8U 
  3. Arya, R. L.; Arya, S. (২০১৫-০১-০১)। Fundamentals of Agriculture (ICAR-NET, JRF, SRF, CSIR-NET, UPSC & IFS) (ইংরেজি ভাষায়)। Scientific Publishers। আইএসবিএন 978-93-86102-36-2 
  4. "Iowa State University: Undergraduate Program - Agroecology"। ৭ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]