শোকাবহ স্থান পর্যটন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুরাম্বি কারিগরি বিদ্যালয়, যেখানে রুয়ান্ডা গণহত্যার বহুসংখ্যক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এটি বর্তমানে একটি গণহত্যা জাদুঘর।
প্যারিসের ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র বর্তমানে শোকাবহ স্থান পর্যটনের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল। সুড়ঙ্গ ও কক্ষের জটিল সমবায়টির ছোট ছোট এলাকায় প্রায়ই পথপ্রদর্শদিত সফরের আয়োজন করা হয়।

শোকাবহ স্থান পর্যটন বলতে ঐতিহাসিকভাবে মৃত্যু (হত্যাগণহত্যা) ও বিয়োগান্ত ঘটনাসমূহের সাথে জড়িত স্থানগুলিতে পর্যটনকে বোঝায়। একে ইংরেজি পরিভাষায় "ডার্ক টুরিজম", "ব্ল্যাক টুরিজম", "থানাটোটুরিজম" (গ্রিক ধারণা থানাতোস-এর নামে) বা "গ্রিফ টুরিজম" নামে ডাকা হয়।[১] তবে কারও কারও মতে পর্যটকেরা শোকাবহ স্থানগুলিকে মৃত্যু ও যন্ত্রণার সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য নয়, বরং এগুলির ঐতিহাসিক মূল্যের জন্যই মূলত পরিদর্শন করে থাকে।[২][৩] যেমন ইহুদি গণহত্যা পর্যটন ক্ষেত্রে শোকাবহ স্থান পর্যটন ও ঐতিহ্যবাহী স্থান পর্যটন – উভয় দিকই পরিলক্ষিত হয়।[৪]

গবেষণা ক্ষেত্র[সম্পাদনা]

যদিও সাম্প্রতিক ও প্রাচীন মৃত্যুস্থল পরিদর্শনের দীর্ঘ ঐতিহ্য বিদ্যমান (যেমন রোমের কলোসিয়ামে দাসযোদ্ধাদের মল্লক্রীড়া স্মরণে ভ্রমণ, শিরশ্ছেদ দ্বারা জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড দর্শন, বা ভূগর্ভস্থ সমাধিক্ষেত্র দর্শন, ইত্যাদি), উচ্চশিক্ষায়তনিক ক্ষেত্রে আপেক্ষিকভাবে বেশ সাম্প্রতিককালেই এ বিষয়ে গবেষণা করা শুরু হয়। ভ্রমণকাহিনী লেখকেরা প্রথম এইসব মৃত্যুঘনিষ্ঠ স্থানগুলিতে তাদের পর্যটন নিয়ে লেখেন। পি জে ওরুর্ক ১৯৮৮ সালে ওয়ারশ’, মানাগুয়া ও বেলফাস্টে ভ্রমণ করেন ও সেগুলিকে "নরকে অবকাশ" নাম দেন।[৫] ক্রিস রোয়েক ১৯৯৩ সালে শোকাবহ স্থানে (ব্ল্যাক স্পট) পর্যটনের কথা উল্লেখ করেন।[৬]

শোকাবহ স্থান পর্যটনের গন্তব্যস্থল[সম্পাদনা]

শোকাবহ স্থান পর্যটন ক্ষেত্রের গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে আছে মধ্যযুগীয় দুর্গ, যুদ্ধক্ষেত্র, প্রাক্তন কারাগার, বন্দীশালা, ভূগর্ভস্থ কারাকক্ষ (ডানজন), প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট বিপর্যয়স্থল (যেমন পারমাণবিক বোমাবিধ্বস্ত হিরোশিমা[৭], পারমাণবিক বিপর্যয়ের শিকার চেরনোবিল[৮][৯][১০], ২০০১-এর ১১ই সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত নিউ ইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ভবনের ধ্বংসাবশেষ]][১১], ইত্যাদি) । এছাড়া হত্যা, গণহত্যা ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের স্থানগুলিও এর অন্তর্ভুক্ত, যেমন পোল্যান্ডের আউশভিৎস বন্দীশিবির,[১২] চীনের নানচিং গণহত্যা স্মারক হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বাইন উচ্চ বিদ্যালয় গণহত্যা, ক্যাম্বোডিয়ার তুওল স্লেং গণহত্যা জাদুঘর, দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু বিদ্রোহের স্থান, ইত্যাদি। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে মৃত্যু ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পর্যটকদের দর্শনের জন্য বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে, যেখানে কেউ মারা গেলে সাথে সাথে পর্যটকদের জন্য গাড়ি ও টিকিট কেনার ব্যবস্থা করা হয়।[১৩] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি গণহত্যা স্মারক জাদুঘরে (হলোকস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়াম) দর্শনার্থীরা জাদুঘরে ঘুরে ঘুরে তাদের লিঙ্গ ও বয়সের সাথে মিলে যায়, এমন একজন নিহত ইহুদি ব্যক্তির জীবন কেমন কেটেছিল, তা সম্পর্কে জানতে পারে।[১৪] কলম্বিয়াতে মেদেয়িন বাণিজ্যজোটের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পাবলো এস্কোবারের সাথে জড়িত স্থানগুলি শোকাবহ স্থান পরিদর্শনের আকর্ষণস্থলে পরিণত হয়েছে; দর্শনার্থীরা পাবলো-র ভাই রোবের্তো এস্কোবারের ব্যক্তিগত জাদুঘরে ও তার কারাগারটিকে (লা কাতেদ্রাল) ঘুরে দেখতে পারে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Foley, Malcolm; J. John Lennon (১৯৯৬)। "JFK and dark tourism: A fascination with assassination"। International Journal of Heritage Studies2 (4): 198–211। ডিওআই:10.1080/13527259608722175 
  2. Rami Khalil Isaac; Erdinç Çakmak (২০১৩)। "Understanding visitor's motivation at sites of death and disaster: the case of former transit camp Westerbork, the Netherlands"। Current Issues in Tourism17 (2): 1–16। এসটুসিআইডি 55027449ডিওআই:10.1080/13683500.2013.776021 
  3. Courtney C. Reed (এপ্রিল ২০০৭)। "Shedding Light on Dark Tourism"gonomad.com। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪ 
  4. Handayani, B., & George, B. P. (2017). DARK TOURISM AS QUASI-SUICIDE: ACase STUDY OF THE SEA OF TREES. GAZING AT DEATH, 95.
  5. O'Rourke, P. J. (১৯৮৯)। Holidays in Hellবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। London: Picador। আইএসবিএন 978-0330306836 
  6. Rojek, Chris (১৯৯৩)। Ways of Escape: Modern Transformations in Leisure and Travel। London: Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-0333475782। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪(P 142)The leisure forms constructed around black spots certainly give signs of repetition-compulsion and seeking the duplication of experience. (p170) The gravity and solemnity of Black Spots have been reduced by moves to make them more colorful and more spectacular than other sights on the tourist trail. For example, in 1987 the government of Thailand unveiled plans to restore the famous Death Railway … 
  7. "Hiroshima Peace Memorial Museum website"Hiroshima Peace Memorial Museum। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪ 
  8. "Chernobylzone"। chernobylpripyat.com। ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫ 
  9. "Chernobyl Tours"। Ukrainianweb.com। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪ 
  10. "Chernobyl tour, official provider of Chernobyl exclusion zone"। Chernobyl-TOUR। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  11. Jayson Blair (জুন ২৯, ২০০২)। "Tragedy turns to tourism at Ground Zero"2002 The Age Company Ltd। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১, ২০১৪ 
  12. "Memorial Museum Auschwitz Birkenau"Państwowe Muzeum Auschwitz-Birkenau w Oświęcimiu। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৪ 
  13. McLaren, Deborah (জুন ২০০৩)। Rethinking Tourism and Ecotravelবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন (2 সংস্করণ)। Kumarian Press। পৃষ্ঠা 48আইএসবিএন 978-1565491694। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৪One of the most disturbing phenomena in Bali is the commercialization of cremation ceremonies. 
  14. Stone, P (২০০৫)। "Dark Tourism Consumption – A call for research"। E-Review of Tourism Research2 (5): 109–117। contemporary society with its ...late capitalism broad defining features include an increased commercial ethic and commodification; a de-differentiation of time and space through global technological communication; and an introduction of anxiety and doubt over the project of modernity. 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]