শিশু পাচার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিশু পাচার হচ্ছে মানব পাচারের একটি দিক এবং জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী একজন শিশুকে অপহরণ করে দাসত্ব, জোরপূর্বক শ্রম এবং শোষণের উদ্দেশ্যে পাচার করে "নিয়োগ, স্থানান্তর, হস্তান্তর, আশ্রয়, এবং/অথবা প্রাপ্তি"।[১] :অনুচ্ছেদ ৩(গ) এই সংজ্ঞাটি একই নথির "ব্যক্তি পাচার" এর সংজ্ঞার তুলনায় যথেষ্ট বিস্তৃত।[১] :অনুচ্ছেদ ৩(ক) শিশুদের দত্তক নেওয়ার উদ্দেশ্যেও পাচার করা হতে পারে। যদিও শিশু পাচারের পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)- এর ধারণা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০ শিশু পাচার হয়।[২] ২০১২ সালে জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিস (ইউএনওডিসি) জানিয়েছে, তিন বছরের ব্যবধানে শিশু নির্যাতনের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশ হয়েছে।[৩] প্রতিবছর সারা বিশ্বের ৩,০০,০০০ শিশুকে অপহরণ করা হয় এবং মানব পাচারকারীরা এদের দাস হিসেবে বিক্রি করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা ১৭,০০০ মানুষের মধ্যে ২৮% শিশু। অর্থাৎ প্রতিদিন পাচার হয় প্রায় ১৩ জন শিশু।[৪] ২০১৪ সালে মানব পাচার বিরোধী সংগঠন থর্ন দ্বারা পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ক্রেইগলিস্টের মতো ইন্টারনেট সাইটগুলি প্রায়শই শিল্পের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনার সরঞ্জাম হিসাবে ব্যবহৃত হয় এবং জরিপকৃত শিশুদের ৭০ শতাংশ শিশু যৌন পাচারের উদ্দেশ্যে অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল।[৫] শিশু পাচারকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি গুরুতর অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, যা বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে বিদ্যমান এবং প্রায় সবগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। গবেষণায় দেখা যায়, গত এক দশকের মধ্যে জনসাধারণের কর্মকাণ্ডে নাটকীয় বৃদ্ধির কারণে এই অভ্যাসের বিস্তার ও প্রভাবের খবর আন্তর্জাতিকভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। সীমিত গবেষণায় এখনো শিশু পাচারের সমস্ত কারণ চিহ্নিত করা যায়নি, তবে দেখা যায় যে, দারিদ্র্যতা, মানবিক সংকট ও শিক্ষার অভাব শিশু পাচারের ক্ষেত্রে উচ্চ হারে অবদান রাখে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তাবিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে, যা চার ধরনের কর্মের মধ্যে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। যথা ব্যাপক সুরক্ষা, প্রতিরোধ, আইন প্রয়োগ এবং ভিকটিমকে সহায়তা।[৬][৭] শিশু পাচারের সাথে সম্পর্কিত প্রধান আন্তর্জাতিক নথি হচ্ছে- ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ, ১৯৯৯ সালে শিশুশ্রম কনভেনশনের আইএলও সবচেয়ে খারাপ দিক, এবং ২০০০ সালের জাতিসংঘের ব্যক্তি বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার রোধ, দমন ও শাস্তি দেওয়ার প্রটোকল।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

শিশু পাচার মোকাবেলায় প্রথম প্রধান আন্তর্জাতিক দলিল হচ্ছে, ২০০০ সালে জাতিসংঘের পালের্মো প্রোটোকলের অংশ, যার শিরোনাম হচ্ছে “প্রোটোকল টু প্রিভেনট, সাপ্রেস অ্যান্ড পানিশ ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস, এস্পেশালী উইমেন এন্ড চিল্ড্রেন”। এই নথির অনুচ্ছেদ ৩(ক) শিশু পাচারকে "শোষণের উদ্দেশ্যে একজন শিশুর নিয়োগ, স্থানান্তর, হস্তান্তর, আশ্রয় এবং/অথবা প্রাপ্তি" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে।[১] এখানে শিশু পাচারের সংজ্ঞা শুধুমাত্র পাচারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যা আন্তর্জাতিক এবং/অথবা সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলির সাথে জড়িত। এ সত্ত্বেও শিশু পাচার এখন সাধারণত এই প্যারামিটারগুলির বাইরেও বিশেষভাবে স্বীকৃত।[৮] আইএলও এই সংজ্ঞা প্রসারিত করে দাবি করে যে, আন্দোলন ও শোষণ শিশু পাচারের মূল দিক।[৮] এখানে ব্যবহৃত "শিশু" এর সংজ্ঞাটি হল, ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে তালিকাভুক্ত, যেখানে বলা হয়েছে, "একটি শিশু মানে ১৮ বছরের কম বয়সী প্রতিটি মানুষ। যদি না শিশুর জন্য প্রযোজ্য আইনের অধীনে প্রাপ্তবয়স্কতা আগে অর্জিত হয়।"[৯] এই সংজ্ঞায় বর্ণিত পার্থক্যটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কিছু দেশ "প্রাপ্তবয়স্কতার বয়স" ১৮ এর নিচে নির্ধারণ করতে বেছে নিয়ে তারা আইনগতভাবে শিশু পাচারকে বৈধ করে।[৮]

সম্পর্কিত আইনি দলিল[সম্পাদনা]

অনেক আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় দলিলসমূহ শিশুদের পাচারের সাথে জড়িত। তারা এই দলিলগুলি ব্যবহার করে আইনগতভাবে শিশু পাচারকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, যেমন এই চর্চায় জড়িত ও প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই আইনি উপকরণগুলি বিভিন্ন শর্তাবলী দ্বারা বলা হয়, যার মধ্যে রয়েছে সম্মেলন, প্রটোকল, স্মারকলিপি, যৌথ কর্ম, সুপারিশ এবং ঘোষণা। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দলিলগুলি নীচে দেয়া হলো-[৮]

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দলিল[সম্পাদনা]

জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও বিশেষ করে শিশুদের অধিকার রক্ষার প্রচেষ্টায় নিচের আইনি দলিলগুলি তৈরি করা হয়েছিল।

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮;[১০] এবং

শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯।[৯]

শ্রম ও অভিবাসন চুক্তি[সম্পাদনা]

শিশু পাচারে প্রায়ই শ্রম ও অভিবাসন বিভাগ উভয়ই জড়িত থাকে। যেমন, নিচের এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এমন উদাহরণগুলি স্পষ্ট করে যেখানে এই অনুশীলনগুলি অবৈধ।

আইএলও ন্যূনতম বয়স কনভেনশন, ১৯৭৩;[১১]

আইএলও ওয়ার্ল্ড ফর্মস অব চাইল্ড লেবার কনভেনশন, ১৯৯৯;[১২]

আইএলও শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপ সুপারিশ নং ১৯০, ১৯৯৯;[১৩]

আইএলও ফোর্সড লেবার কনভেনশন, ১৯৩০;[১৪]

আইএলও মাইগ্রেশন ফর এমপ্লয়মেন্ট কনভেনশন (সংশোধিত), ১৯৪৯;[১৫] এবং

সকল অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষায় জাতিসংঘের কনভেনশন, ১৯৯০[১৬]

পাচার-সংক্রান্ত দলিল[সম্পাদনা]

ব্যক্তি, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার রোধ, দমন ও শাস্তির প্রোটোকল, ২০০০;[১]

সুপারিশকৃত নীতি ও মানবাধিকার এবং মানব পাচার সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০০২;[১৭] এবং

আন্তঃদেশীয় দত্তক গ্রহণের বিষয়ে শিশুদের সুরক্ষা ও সহযোগিতার বিষয়ে হেগ কনভেনশন।

আঞ্চলিক দলিল[সম্পাদনা]

শিশু পাচার সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে দেশগুলিকে গাইড করার জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক দলিল তৈরি করা হয়েছে। নিচে কিছু প্রধান দলিলের নাম দেয়া হলো:[৮]

কাউন্সিল অব ইউরোপ কনভেনশন অন অ্যাকশন অন অ্যাকশন অন ট্রাফিকিং ইন হিউম্যান বিয়িংস (ট্রিটি সিরিজ নং ১৯৭), ২০০৫;

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও কাউন্সিলের সাথে যোগাযোগ, সিওএম (২০০৫) ৫১৪ চূড়ান্ত;

পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ব্যক্তি বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার মোকাবেলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা চুক্তি, ২০০৬; এবং

মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মেকং উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা চুক্তি (কমিট), ২০০৪।

জাতীয় আইন[সম্পাদনা]

যে আন্তর্জাতিক নীতিগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শিশু পাচার সংক্রান্ত জাতীয় আইনগুলি বিশ্বব্যাপী বিকশিত হতে থাকে। মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগ দ্বারা পাচারবিরোধী আইন সমালোচনামূলক হিসাবে প্রশংসিত হয়েছে। কারণ এটি নিশ্চিত করে যে, পাচারকারী ও পাচারের শিকার ব্যক্তিদের তাদের অবস্থা অনুযায়ী আচরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ "যদি পাচারকারীদের আদালতে অভিযুক্ত করতে অভিবাসন আইন ব্যবহার করা হয়, তবে প্রায়শই ভুক্তভোগীদেরও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিচার করা হয়। 'পাচারকারী' ও 'পাচারকৃত ব্যক্তি'র একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগ থাকলে তখন সম্ভবত ভুক্তভোগীর প্রতি সঠিক ব্যবহার করা যাবে।"[৮] শিশু পাচার সংক্রান্ত জাতীয় আইনের অস্তিত্ব পাচারের শিকার এবং/অথবা তাদের পরিবারকে উপযুক্ত নাগরিক হিসাবে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম করে।[৮]

শিশু পাচারের ধরন[সম্পাদনা]

এখানে জেনে রাখা দরকার যে, বিক্রীত সন্তানের অভিপ্রেত বা প্রকৃত ব্যবহার, সবসময় জানা যায় না। তবে কিছু ধরন সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-

জোরপূর্বক শ্রম[সম্পাদনা]

শিশু পাচারের উদ্দেশ্য প্রায়ই বাধ্যতামূলক শিশুশ্রম হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।[৮] শিশুশ্রম বলতে বিশেষভাবে একটি নির্ধারিত ন্যূনতম বয়সের শিশুদের বোঝায়, সাধারণত সর্বনিম্ন ১৪ বছর বয়সের শিশুকে কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।[১১] ইউনিসেফ অনুমান করে যে, উন্নয়নশীল দেশে ২০১১ সালে ৫-১৪ বছর বয়সী ১৫০ মিলিয়ন শিশু শিশুশ্রমে জড়িত ছিল।[১৮] এ ছাড়াও ইউনিসেফ বলেছে যে, বর্তমান হার ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ মিলিয়ন শিশু কাজ করতে বাধ্য হবে।[১৯] আইএলও রিপোর্ট করে যে, এই সংখ্যার মধ্যে ৬০% শিশুশ্রমিক কৃষিতে কাজ করে।[২০] একটি তুলনামূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আফ্রিকার সাব-সাহারান শহুরে ও গ্রামীণ অঞ্চলে গৃহস্থ শিশুশ্রমের হারের মধ্যে ৮৪.৩% শিশুশ্রমিক গ্রামীণ সেক্টরে কাজ করে। পাঁচ থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী ৯৯.৮% শিশু এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য যেকোন ধরনের শিশুশ্রমে নিয়োজিত।[২১] আইএলও আরও অনুমান করে যে, ১১৫ মিলিয়ন শিশু বিপজ্জনক কাজ যেমন যৌন বা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।[২০] সামগ্রিকভাবে বলা যায় যে, শিশুশ্রম অনেক ধরনের রূপ নিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে গার্হস্থ্য দাসত্ব, কৃষিতে কাজ, পরিষেবা এবং উৎপাদন শিল্প। বেশ কয়েকজন গবেষকের মতে, এছাড়াও অধিকাংশ শিশুকে সস্তা ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়। তাদের বাড়ি, খামার, কারখানা, রেস্তোরাঁ এবং আরও বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করানো হয়। শিশুরা সস্তা শ্রম দিয়ে অতিরিক্ত কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়, যা প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা করা সম্ভব নয়। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, ঘানার মাছ ধরার শিল্পে শিশুরা তাদের ছোট হাত দিয়ে সহজেই জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে নেওয়ার কাজ করে। এর ফলে তাদের সেবার বেশি চাহিদা রয়েছে এবং শিশুশ্রম ও শিশু পাচারের বর্তমান ফল হিসেবে রয়ে গেছে। পাচারকৃত শিশুরা যৌন শোষিত হতে পারে, সশস্ত্র বাহিনী ও মাদক ব্যবসায় ব্যবহৃত হতে পারে এবং শিশু ভিক্ষা শুরু করতে পারে।[৮] বৈশ্বিক প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে আইএলও অনুমান করে যে, ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালে শিশুশ্রমের ঘটনা ৩% হ্রাস পেয়েছিল; যা পূর্ববর্তী ২০০০-২০০৪ সালে আইএলও কর্তৃক প্রতিবেদনের বিপরীত শিশুশ্রমের ১০% হ্রাস ছিল।[২০] আইএলও দাবি করে যে, বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রম ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। তবে আফ্রিকার সাব-সাহারান ছাড়া। সেখানে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে একই রয়েছে। এই অঞ্চলে ৫-১৭ বছর বয়সী ৪ জন শিশুর মধ্যে ১ জন কাজ করে।[২০] ২০১৮ সালে ইউনিসেফ জানিয়েছে যে, মোট শিশুশ্রমের ৩১% পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত। এই অঞ্চলে ছয় থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী প্রতি ছয়টি শিশুর মধ্যে একজন কাজ করছে। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, আফ্রিকার সাব-সাহারানে ৪৩% শিশুশ্রম শিশু অভিবাসন ও পাচারের কারণে ঘটে।[২২] ১৫-১৭ বছর বয়সী শিশুশ্রমিকের সংখ্যায় আরেকটি প্রধান বৈশ্বিক প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে এই শিশুশ্রমিকদের সংখ্যা ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।[২০] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিস্ময়জনক ঘটনা ঘটেছে, ম্যাককেব ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ১৯৯০ এর দশকে গ্যাপ ও নাইকির মতো বিশাল কোম্পানিগুলি "সোয়েটশপ" শিল্প ব্যবহার করছিল যা পাচারকৃত শিশুদের তাদের পছন্দসই পণ্য তৈরি করতে ব্যবহার করত।[২৩] শিশুশ্রম কেলেঙ্কারির আরও তদন্তের পর জিএপি কোম্পানির কারখানায় বিপজ্জনক কাজের অবস্থা উন্মোচিত হয়। শিশুরা রান-ডাউন ও বিপজ্জনক কারখানায় কাজ করছিল, তারা অপব্যবহারের শিকার হয়েছিল এবং ন্যূনতম মজুরির চেয়ে অনেক কম বেতন পেয়েছিল। পরের বছরগুলোতে এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য অংশেও একই ধরনের কেলেঙ্কারী প্রকাশ পায়। এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের সদস্যরা ২০১১ সালে জাতিসংঘের "সুরক্ষা, সম্মান ও প্রতিকার" কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্পোরেট সিস্টেমে লঙ্ঘন করার সংখ্যা হ্রাসে চেষ্টা করেছিল। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির নির্দেশিকা, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার বিষয় থাকে। ১৬ জুন ২০১১ তারিখে মানবাধিকার কাউন্সিল কর্তৃক বিশ্লেষণ ১৭/৪ অনুমোদিত হয়। এ প্রতিবেদনে তিনটি মূল নীতির রূপরেখা দেওয়া হয়। ১) মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান, সুরক্ষা ও পরিপূরনের জন্য রাষ্ট্রের বিদ্যমান বাধ্যবাধকতা; ২) সমাজের বিশেষ অঙ্গ হিসেবে ব্যবসায়িক উদ্যোগের ভূমিকা, যা সমস্ত প্রযোজ্য আইন মেনে চলতে ও মানবাধিকারকে সম্মান করার জন্য প্রয়োজন; এবং ৩) অধিকার ও বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনীয়তা লঙ্ঘনের সময় উপযুক্ত ও কার্যকর প্রতিকারের সাথে মিলে যাওয়া। বিশ্লেষণে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সার্বজনীন বোঝাপড়া প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে এবং নির্দেশিকার নীতি লঙ্ঘনকারী সংস্থাগুলির জন্য শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও যাদের শ্রম লঙ্ঘন করা হয়েছিল তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি সম্পর্কিত গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল। তবুও ২০১৮ সালে দেখা গেছে যে, এখনও ২১৮ মিলিয়ন শিশু পূর্ণকালীন কাজ করছে, যার মধ্যে অনেকগুলি কারখানার মালিকদের দ্বারা উৎপাদন খরচ কমিয়ে নিচ্ছে।[২৪]

যৌন শোষণ[সম্পাদনা]

শিশু বিক্রয়ের ঐচ্ছিক প্রটোকল, শিশু পতিতাবৃত্তি এবং শিশু পর্নোগ্রাফি শিশু অধিকার সংক্রান্ত সম্মেলনের একটি প্রোটোকল, যা জাতিসংঘে ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।[২৫] মূলত, এই প্রটোকলটি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্যগুলিকে বাচ্চাদের বিক্রি, শিশু পতিতাবৃত্তি ও শিশু পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ করতে চায়।[২৫] আইএলওর মত অনুসারে, শিশুদের যৌন শোষণের মধ্যে নিম্নলিখিত সমস্ত অনুশীলন ও ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:[২৬] "মেয়ে ও ছেলেদের নগদ অর্থের বিনিময়ে যৌন কার্যকলাপে রাস্তায় বা বাড়ির ভিতরে (সাধারণত শিশু পতিতাবৃত্তি নামে পরিচিত) ব্যবহার করা হয়, যেমন পতিতালয়, ডিসকোথেক, ম্যাসাজ পার্লার, বার, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি।"

"যৌন ব্যবসার জন্য মেয়ে ও ছেলে এবং কিশোরদের পাচার" করা হয়;

"শিশু যৌন পর্যটন" বা পর্যটনে পতিতাবৃত্তি করা হয়;

"শিশুদের সাথে জড়িত পর্নোগ্রাফির উৎপাদন, প্রচার এবং বিতরণ" এবং

"যৌন শোতে শিশুদের ব্যবহার (পাবলিক বা প্রাইভেট)"।

যদিও এই প্রথাটির পরিমাপ তার অপরাধমূলক ও গোপন প্রকৃতির কারণে নির্ধারণ করা কঠিন। আইএলও অনুমান করে যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১.৮ মিলিয়ন শিশু যৌনতার জন্য পাচার হয়। ২০০৬ সালের ইউনিসেফের “স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন” রিপোর্ট করে যে, এই সংখ্যা ২ মিলিয়ন বলে।[২৭][২৮] আইএলও দেখেছে যে, নানা ধরনের শিশুশ্রমের সাথে জড়িত মেয়েরা (যেমন ঘরোয়া সেবা বা রাস্তার ভেন্ডিং) বাণিজ্যিকভাবে শিশু যৌন পাচারের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।[২৭] একইভাবে কেন্ডাল ও ফাঙ্ক ন্যায্যতা দেখায় যে, "১২ বছর বা তার কম বয়সী মেয়েরা কীভাবে পতিতাবৃত্তির মতো কাজে তাদের সম্ভাব্য ভূমিকার জন্য নমনীয় ও সহজেই প্রশিক্ষিত হয় এবং অর্থের বিনিময়ে কিছু ভোক্তাদের দ্বারা কুমারীত্বকে বেশি মূল্য দেওয়া হয়"।[২৯] আইএলও, গবেষক ইরিন কুনজে এবং ডিএম হিউজেসসহ বিভিন্ন উৎসও দাবি করে যে, ইন্টারনেটের বর্ধিত ব্যবহার ও প্রাপ্যতা পাচারকারীদের জন্য একটি প্রধান সম্পদ হিসাবে কাজ করে, যা শেষ পর্যন্ত শিশু যৌন পাচারের ঘটনা বাড়িয়েছে।[২৭][৩০][৩১] প্রকৃতপক্ষে ২০০৯ সালে ইলিনয় শেরিফ থমাস জে ডার্ট একটি শ্রেণীবদ্ধ বিশেষ অনলাইন ওয়েবসাইট ক্রেইগলিস্টের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন, তাতে বলা হয়েছিল যে, তারা বিশেষ করে শিশু পতিতাবৃত্তিতে "ভাতা" ও "সুবিধা" প্রদান করেছিল।[৩২][৩৩] জনসাধারণ ও আইনি চাপের প্রতিক্রিয়ায় ক্রেইগলিস্ট তার "প্রাপ্তবয়স্ক পরিষেবা" বিভাগে সমস্ত প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছিল।[৩৪]

সশস্ত্র বাহিনী[সম্পাদনা]

সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের সম্পৃক্ততার ঐচ্ছিক প্রটোকল শিশু অধিকার সংক্রান্ত কনভেনশনের একটি প্রোটোকল, যা জাতিসংঘে ২০০০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছিল।[৩৫] মূলত প্রটোকলে বলা হয়েছে যে, ১৮ বছরের কম বয়সী স্বেচ্ছাসেবীরা স্বেচ্ছায় সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দিতে পারলেও তাদের নিয়োগ দেওয়া যাবে না। প্রটোকলে লেখা আছে, "রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের যারা ১৮ বছর বয়সে পৌঁছায়নি তারা শত্রুতাতে সরাসরি অংশ নেবে না, তা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত সম্ভাব্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"[৩৫] তা সত্ত্বেও আইএলও অনুমান করে যে, বর্তমানে বিশ্বে "হাজার হাজার" মেয়ে ও ছেলে অন্তত ১৭টি দেশে সশস্ত্র বাহিনীতে জোরপূর্বক তালিকাভুক্ত রয়েছে।[৩৬] সশস্ত্র বাহিনীতে নিযুক্ত শিশুদেরকে তিনটি স্বতন্ত্র উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে:[৩৭][৩৮] ১) যুদ্ধে সরাসরি ভূমিকা (যুদ্ধের ভূমিকা) রাখা; ২) সহায়ক ভূমিকা (যেমন বার্তাবাহক বা গুপ্তচর হিসাবে); এবং ৩) রাজনৈতিক সুবিধার জন্য (যেমন প্রচারের উদ্দেশ্যে)। দ্য কোয়ালিশন টু স্টপ দ্য ইউজ অফ চাইল্ড সোলজার্স দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মেয়ে সৈন্যদের অবশ্যই স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত হতে হবে, কারণ তারা বিশেষ করে যৌন সহিংসতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।[৩৮] কনি ২০১২ আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল শিশু সৈন্যদের ঘটনা, যার লক্ষ্য ছিল উগান্ডার যুদ্ধাপরাধী জোসেফ কনিকে গ্রেপ্তার করা, যে হাজার হাজার শিশু সৈনিক ও যৌনদাসী পাচারের জন্য দায়ী ছিল।[৩৯]

মাদক ব্যবসা[সম্পাদনা]

বিশ্বের সব অঞ্চলে শিশুদের মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করা হয়।[৮] বিশেষ করে শিশুদের প্রায়শই মাদক বহনকারি বা পসারি হিসেবে শোষণের জন্য পাচার করা হয় ও তারপর মাদকদ্রব্য সেবনে 'অর্থ প্রদান' করা হয়, যাতে তারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং আরও অন্যান্য ফাঁদে পড়ে।[৮] মাদক চোরাচালানে অবৈধ ব্যবসার কারণে ধরা পড়া শিশুদের প্রায়ই অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাদের উদ্ধারের জন্য প্রায়ই আইনি সহায়তার প্রয়োজন হয়।[৮] যদিও বিশ্বব্যাপী এই অনুশীলনের ব্যাপকতা সম্পর্কে বিস্তারিত পরিসংখ্যান অজানা। তবে এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আইএলও সম্প্রতি হেরোইন ব্যবসায় আফগান শিশুদের ব্যবহার ও ব্রাজিলের মাদক ব্যবসায় শিশু জড়িত থাকার বিষয়ে তদন্ত করেছে।[৪০][৪১] গবেষক লুক ডাউডনি ব্রাজিলের রাজধানি রিও ডি জেনিরোতে মাদক ব্যবসায় শিশুদের নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন যে, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত শিশুরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে তারা হত্যায় লিপ্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।[৪২]

দত্তক গ্রহণ[সম্পাদনা]

দত্তক নেওয়ার উদ্দেশ্যে শিশুদের পাচার করা হতে পারে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দত্তক হিসাবে। এ ক্ষেত্রে শিশুদেরকে এতিমখানা থেকে সংগ্রহ করা হয় বা অপহরণ করা হয় অথবা পিতামাতাকে ঠকানো হয়, মিস্টি কথা দ্বারা প্রতারণা করা হয় বা হেফাজত ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।[৪৩][৪৪] অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, আন্তর্জাতিক দত্তক সংস্থাগুলি আন্তর্জাতিকভাবে দত্তক গ্রহণের ব্যবস্থা করে। তারা পিতামাতার কাছে উচ্চ খরচ প্রদান করে শিশুদের নিয়ে আসে।[৪৫][৪৬] “দ্য হেগ কনভেনশন অন দ্য প্রটেকশন অব চিল্ড্রেন এন্ড কোঅপরেটিং” ইন্টারকাউন্ট্রি অ্যাডপশন সংস্থার সাথে শিশু সংক্রান্ত ও তাদের সহযোগিতার সুরক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করে, যা এই ধরনের শোষণ থেকে শিশুদেরকে রক্ষা করে। আর এটা এই ধরনের অবৈধ আন্তঃদেশীয় দত্তক গ্রহণকে প্রতিরোধ কল্পে সহায়তা করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।

শিশু ভিক্ষাবৃত্তি[সম্পাদনা]

নাইজারে জোরপূর্বক শিশু ভিক্ষুক

জোরপূর্বক শিশু ভিক্ষা হচ্ছে এক ধরনের ভিক্ষা যেখানে আঠারো বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েরা মানসিক ও শারীরিক জবরদস্তির মাধ্যমে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়।[৪৭] “বাফেলো হিউম্যান রাইটস ল রিভিউ” দ্বারা “ভিক্ষা”কে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, "রাস্তায় দাতব্য হিসাবে অর্থ চাওয়ার কার্যকলাপকে" ভিক্ষা বলে।[৪৮] প্রমাণ আছে যে, শিশুদের পাচার করার পর জোর করে ভিক্ষা করানো হয়। সাম্প্রতিক ইউনিসেফের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপে পাচারের শিকারদের ১৩% কে জোরপূর্বক ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পাচার করা হয়েছে।[৪৮] জাতিসংঘের প্রটোকল নিশ্চিত করে যে, "শোষণের উদ্দেশ্যে শিশু নিয়োগ, স্থানান্তর, হস্তান্তর, আশ্রয় বা প্রাপ্তি 'ব্যক্তি পাচার' বলে বিবেচিত হবে, এমনকি যদি এটি উপ-অনুচ্ছেদ (ক) এ বর্ণিত কোনো উপায়ে জড়িত নাও হয় এই আর্টিকেলটি।"[৪৮] এই সংজ্ঞা অনুসারে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে কোন শহরের কেন্দ্রে পাচার হওয়া শিশুর প্রক্রিয়াটি তৃতীয় পক্ষ বা পরিবারের সদস্য দ্বারা প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা, তা জানা যায়নি।[৪৭] বিশ্বব্যাপী এই ধরনের পাচারের তীব্রতা স্বীকৃতি পেতে শুরু করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম), ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আইএলও, জাতিসংঘ ও অন্যদের মধ্যে এর যথার্থতার উপর জোর দিতে শুরু করেছে।[৪৮] ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পাচার রোধ ও মোকাবিলায় ব্রাসেলসে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করে যে, "মানুষকে পাচার করা একটি জঘন্য ও উদ্বেগজনক ঘটনা, যা জবরদস্তির মাধ্যমে যৌন শোষণ, দাসত্বের শর্তে শ্রম শোষণ, ভিক্ষাবৃত্তি ও কিশোর অপরাধের মাধ্যমে শোষণের পাশাপাশি ঘরোয়া দাসত্বকে চিহ্নিত করা হয়।"[৪৯] এই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিবারের সদস্যদের দ্বারা জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি আরোপ করা হয়।[৪৮] সংজ্ঞা অনুসারে শিশু ভিক্ষা আঠারো বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ঘটে, যদিও ইউনিসেফ কর্তৃক দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তির নজির পাওয়া গেছে।[৪৭] বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া, ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকায় এই ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনা রেকর্ড করেছে।[৫০] বেশিরভাগ গবেষণা যেমন ইউনিসেফের করা গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিক্ষার উদ্দেশ্যে মেয়েদের পাচারের চেয়ে ছেলেদের সম্ভাবনা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, যৌন শোষণের উদ্দেশ্যে পাচারের ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি বেশি।[৫১] আলবেনিয়ায় জোরপূর্বক ভিক্ষা করা একটি সাধারণ অভ্যাস, সেখানে ভুক্তভোগীদের ৭০ শতাংশই পুরুষ।[৪৮] যদিও এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নির্ধারণ করা কঠিন, তবে আইএলও সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে, কমপক্ষে ৬,০০,০০০ জন শিশু জোরপূর্বক ভিক্ষার সাথে জড়িত।[৫২] এ সমস্যাটি আরও অনেক বেশি বিস্তৃত হতে পারে। তবে চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শিশু ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য হয়েছে।[৫৩] এছাড়াও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্তৃক সেনেগালে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে, ভিক্ষার উদ্দেশ্যে সেনেগালে এবং প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ন্যূনতম ৫০,০০০ জন শিশু পাচার করা হয়েছে।[৫৪] অনেক দেশে ভিক্ষাবৃত্তি প্রায়শই পথশিশুদের আয়ের প্রধান উৎস। ইউনিসেফ পরিচালিত একটি চলমান গবেষণায় দেখা গেছে যে, জিম্বাবুয়ের রাস্তায় কাজ করা ৪৫.৭% শিশু ভিক্ষায় নিয়োজিত, যদিও জবরদস্তির মাধ্যমে তা হয়েছে কিনা তা জানার কোন উপায় নেই।[৫৫] মোট জনসংখ্যার মাঝে জোরপূর্বক ভিক্ষার সাথে জড়িত গ্যাং নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে ৫০০ বা তার বেশি।[৫৬]

ভিক্ষাবৃত্তির কারণ[সম্পাদনা]

জনসংখ্যার আধিক্য[সম্পাদনা]

গরীব ও দারিদ্রযুক্ত দেশগুলোতে জনসংখ্যার আধিক্য বেশি। দরিদ্র পরিবারগুলোতে সদস্য সংখ্যা বেশি হয়। ফলে পরিবারের অভাব নিরসনের জন্য শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হয়। যেমন বাংলাদেশ, মালদীপ, আলবেনিয়া, সেনেগাল, জিম্বাবুয়ে প্রভৃতি।

প্রেরণা[সম্পাদনা]

অনেক সময় পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে উৎসাহিত হয়ে ভিক্ষা করে।

অর্থনৈতিক কারণ[সম্পাদনা]

জোর করে ভিক্ষা করা একটি লাভজনক অনুশীলন যেখানে শোষকরা অর্থনৈতিক প্রণোদনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পাচার করা শিশুদের প্রধান চক্রগুলির ব্যবসায়িক কাঠামোকে একটি মাঝারি আকারের ব্যবসায়িক উদ্যোগের সাথে তুলনা করা হয়েছে।[৪৮] সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে শিশুদের ভিক্ষা করতে বাধ্য করা নেটওয়ার্কগুলি মুনাফার জন্য ৩০-৪০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করতে পারে।[৫৭] যদিও এ ক্ষেত্রে পারিবারিক নেটওয়ার্ক বিস্তৃত নয়। আলবেনিয়ায় পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি পরিবারের একাধিক শিশু ভিক্ষা করে দিনে পনেরো ইউরো পর্যন্ত উপার্জন করতে পারে, যা গড় জাতীয় একজন শিক্ষকের বেতনের চেয়ে বেশি।[৪৮] অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করে যে, এই আয় তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় অনেক পরিবার বিশ্বাস করে যে, বিদ্যমান ক্ষমতার অভাবের জন্য এটি সর্বোত্তম বিকল্প পথ। সামর্থের বাইরে ক্ষতি মানে, পর্যাপ্ত সম্পদের নিয়মিত অনুপস্থিতি যা সুযোগ সুবিধার জন্য কাজ করে এবং পরিবারের মধ্যে বংশানুক্রমে ভিক্ষাবৃত্তি পদ্ধতির জন্য দায়ী হতে পারে।[৫৭] ইউনিসেফের গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিক্ষাবৃত্তি বিশেষ করে এমন পরিবারগুলির মধ্যে প্রচলিত, যেখানে বাবা-মা কোনোভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, যার ফলে শিশুদের একমাত্র অর্থ প্রদানকারী হতে হয়।[৫৫]

রাজনৈতিক কারণ[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাংকের মতে, জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে। যেখানে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করার আইন খুবই কম এবং পাচার বন্ধে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ নেই।[৫০] জিম্বাবুয়েতে শিশু ভিক্ষা বিশেষভাবে পরিচিত। জাতিসংঘ জিম্বাবুয়ের শ্রম আইন ও শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশনের মধ্যে অনেক বৈপরীত্য নির্দেশ করে।[৫৫] ইন্দোনেশিয়ার মতো অনেক জাতির সংবিধানে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে আইন আছে, কিন্তু এই ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্য সাময়িকভাবে আটক রাখা হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া হয়, যা ভিক্ষাবৃত্তি মোকাবেলায় খুব কম কাজ করে।[৫৮]

সাংস্কৃতিক কারণ[সম্পাদনা]

বেশ কিছু সাংস্কৃতিক বিষয় ভিক্ষাবৃত্তিকে সমর্থন করে। ইউরোপে অনেক সংখ্যালঘু সংস্কৃতিতে ভিক্ষাবৃত্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে রোমা ও যাযাবর সম্প্রদায়ের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি জনপ্রিয়।[৪৮] তুরস্কে ভিক্ষুকদের পারিবারিক নেটওয়ার্কগুলি তিন প্রজন্ম ধরে নথিভুক্ত করা হয়, যা তাদের বেঁচে থাকার পরিকল্পনার মধ্যে গভীরভাবে জড়িত।[৫৯] এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, যদিও এগুলি সাংস্কৃতিকভাবে বদ্ধমূল চর্চা হতে পারে, তবুও পারিবারিক চাপের মাধ্যমে কিশোর ভিক্ষাবৃত্তি এখনও জোরপূর্বক ভিক্ষার আওতায় পড়ে।[৪৮] ভিক্ষার মাধ্যমে শোষণের উদ্দেশ্যে শিশুদের স্থান্তর করা হয়, চাই তা নিজের জন্য হোক বা না হোক, তা জাতিসংঘ দ্বারা বর্ণিত পাচারের একটি ধরন।[৪৮] আরেকটি সাংস্কৃতিক চর্চা হল, তাদের একজন সন্তানকে অপহরণ ও শোষণের মাধ্যমে পারিবারিক ঋণ সমাধান করা।[৬০]

সাধারণ অপব্যবহার[সম্পাদনা]

ইউনিসেফ দেখেছে যে, যেসব শিশু তৃতীয় পক্ষের কাছে ভিক্ষা করতে বাধ্য হয় তাদের পরিবার থেকে তাদেরকে প্রায়ই দূরে রাখা হয়, তাদের আয়ের সিংহভাগ তাদের শোষণকারীরা গ্রহণ করে, তারা অনিরাপদ কাজ করে, কষ্টদায়ক জীবনযাপন সহ্য করে এবং অনেক সময় অর্থ বৃদ্ধির জন্য অক্ষম হয়ে পড়ে।[৪৭][৫১] স্লামডগ মিলিয়নেয়ার ফিল্মের মতো শিশুদের অঙ্গহানি করার জনপ্রিয় প্রক্রিয়াটি প্রচলিত, বাফেলো হিউম্যান রাইটস ল রিভিউ অনুসারে, বিশেষ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের প্রায়ই ভিক্ষা করা অন্যান্য শিশুদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয়।[৪৮] অন্ধত্ব ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি ছাড়াও, মুনাফা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অন্যান্য শারীরিক অপব্যবহারের মধ্যে রয়েছে- শিশু বাচ্চার জিভে কাচা মরিচ লাগিয়ে কথায় বাধা দেয়া, কান্নার জন্য আফিমের ব্যবহার করা এবং জোরপূর্বক ইনজেকশন বা ওষুধ দিয়ে শিশুর শক্তি ও সতর্কতা বৃদ্ধি করা।[৪৭] পাচারকারী চক্রের নেতাদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত যে, খাদ্য, জল ও আলো ছাড়া ছোট কোষীয় ব্যক্তিদের আটকে রেখে ভুক্তভোগীদের দুর্বল করা যায় এবং এইভাবে ভিক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৫৬]

যেসব পরিস্থিতিতে শিশুভিক্ষাবৃত্তি হয়, সেগুলিতে সাধারণত শিশুদের যৌন নির্যাতন ও পুলিশের বর্বরতাসহ আরও শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতনের শিকার করা হয়ে থাকে।[৪৭] হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্তৃক সম্পন্ন হওয়া গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনের বেলা ভিক্ষার কাজ সম্পন্ন করার পর শিশুদের প্রায়ই যথাযথ আশ্রয়, পর্যাপ্ত খাবার, বাস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা পায় না।[৬১] এছাড়াও জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তির নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী চক্রগুলির অনেকেরই মাঝে মাদকের ব্যাপক সম্পৃক্ততা রয়েছে, এইভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিশুরা প্রায়ই মাদকাসক্তে পরিণত হয়, যাতে তারা তাদের শোষণকারীদের উপর আরো নির্ভরশীল হয়।[৪৭]

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব[সম্পাদনা]

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য হওয়া শিশুরা প্রাথমিকভাবে সামান্য শিক্ষা লাভ করে। কেননা শিশুরা দিনে ষোল ঘণ্টা রাস্তায় ভিক্ষা করে।[৪৮] দারিদ্র্য থেকে বাঁচার প্রধান পদ্ধতি হিসাবে শিশু ভিক্ষুকদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখে এবং বংশানুক্রমে অব্যাহত রাখার একটি চক্রীয় প্রক্রিয়ায় তাদেরকে জড়িত থাকতে দেখা যায়।[৪৭] ইউনিসেফ কর্তৃক পরিচালিত সাক্ষাৎকার দেখা যায়, যে শিশুরা ভিক্ষা করে তাদের ভবিষ্যতের জন্য খুব কম আশা থাকে এবং তারা বিশ্বাস করে না যে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।[৫৫] যেসব শিশুরা রাস্তায় কাজ করে তাদের সাধারণত অধিকার সম্পর্কে কম বা কোন জ্ঞান থাকে না। বিশেষ করে কিশোর ও পরবর্তীকালে প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে শোষণের জন্য তারা সংবেদনশীল থাকে।[৫৫] সচেতনতা ও তত্ত্বাবধানের অভাবে রাস্তায় ভিক্ষা করা অনেক শিশুর এইচআইভি সংক্রমণের অনেক বেশি উদাহরণ রয়েছে।[৫৫]

সমাধান[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক কর্ম[সম্পাদনা]

শোষককে শাস্তি দেয়া ও শিশুকে পুনর্বাসনের দিকে মনোনিবেশ করার সমস্যাটি সমাধান করার জন্য পাচার মোকাবেলায় একটি ভিকটিম কেন্দ্র গঠন করে মানবাধিকারে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির সর্বোত্তম সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে খ্যাতি রয়েছে। কিছু দেশ যারা এই পদ্ধতির উপর জোর দেয় তাদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি পাচারের শিকার ও সহিংসতা সুরক্ষা আইন ২০০০সহ নিশ্চিত করে যে, "গুরুতর পাচারের শিকারদের পাচার হওয়ার কারণে অনুপযুক্তভাবে কারাবন্দী করা হবে না, জরিমানা করা হবে না বা অবৈধ কাজের জন্য দণ্ডিত করা হবে না।" অন্যান্য সমর্থিত পদ্ধতি যেমন বাফেলো হিউম্যান রাইটস সেন্টার দ্বারা বর্ণিত তিনটি পিএসের উপর নির্ভর করে। সে তিনটি হলো সুরক্ষা, মামলা ও প্রতিরোধ।[৪৮] পাচার ও ভিক্ষা- উভয় বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে সুরক্ষা শুরু হয়। অনেক দেশের জন্য প্রথম ধাপ হল, ভিক্ষা ও পাচারকে অপরাধীকরণ করা।[৫৯] শোষিতের বদলে শোষককে শাস্তি দিয়ে পাচারকারীদের জন্য আরও বড় আইনি প্রভাবে মামলা চালানো উচিত বলে জ্ঞান করে।[৬২] পারিবারিক পাচারের শিকারদের ক্ষেত্রে এটি কঠিন হয়ে পড়ে। সার্বিক বিবেচনায় কেয়ার প্লেসমেন্টে পরিবর্তন ও প্রতিটি বাস্তুচ্যুত শিশুর কল্যাণে কঠোর নজরদারির প্রয়োজন হয়।[৪৭] অনেক সংস্থা নিশ্চিত করে যে, অনুদানকে নিরুৎসাহিত করা ও পরিষেবার উন্নতির মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সামগ্রিকভাবে শিশু ও পরিবারের বৃহত্তর ক্ষমতা থাকে।[৬১] যদিও সুপরিকল্পিতভাবে শিশু ভিক্ষুকদের অর্থ প্রদান করে, তারা এই অভ্যাসকে আরও লাভজনক করে তোলে এবং এই তহবিলগুলি শিশুর অপব্যবহারকারীর হাতে চলে দ্রুত আসে।[৬১]

সরকারি উদ্যোগ[সম্পাদনা]

সেনেগালে তালিবদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ব্যাপক আকারে হয়। সেখানে এই শোষণের অবসান ঘটাতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমত গ্রামীণ সমাজে কুরআন ভিত্তিক বিদ্যালয়ের প্রতি জোর দেয়া যাতে তারা নিজেদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে। শিক্ষার স্থান হিসাবে নিশ্চিত করার জন্য দেশের স্কুলগুলির উন্নত নিয়ন্ত্রনের দ্বারা পরিপূরক করা হয়। তারপরে পাচার ও শোষণমূলক ভিক্ষা নিষিদ্ধ করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলির বেশি প্রয়োগ করা হয়। অবশেষে, সিএসওর সাহায্যে উদ্ধারকৃত শিশুদের পুনর্বাসন সেবা প্রদান করা হয়, যাতে শিশুরা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিবৃত হয়।[৫০] জিম্বাবুয়ের নীতিতে শিশু সুরক্ষা ও দত্তক আইনে ষোল বছরের কম বয়সী সকল ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অভিযোজন করা হয়েছে, তবে সরকার স্বীকার করে যে, সম্পদের অভাব ও মূলধন অপর্যাপ্ত হওয়ায় ভিক্ষাবৃত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।[৫৫] বাংলাদেশে আনুমানিক ৭,০০,০০০ ভিক্ষুক রয়েছে, ২০০৯ সালে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করে একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, যদিও কর্মকর্তারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করেন।[৫৬] তবে পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, নীতিনির্ধারক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ সবার সম্মিলিত প্রয়াসই কেবল এই অমানবিক ভিক্ষাবৃত্তি থেকে শিশুদের রক্ষা করতে পারে।[৬৩] চীন জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ে একটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা শুধুমাত্র শিশু পাচারের উপর নজর দেয়। সম্প্রতি এ বিভাগ একটি হটলাইন চালু করে জনসাধারণের কাছে জোরপূর্বক ১১০ ডলার করে গ্রহণ করে। এ উদ্দেশ্যে যে, (১) যাতে সন্দেহজনক ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনাগুলি রিপোর্ট করার জন্য আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা আরও তদন্ত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে; (২) পুলিশ অভিভাবকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে; (৩) শিশুদের হেফাজতে নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া; এবং (৪) বাবা-মাকে ভিক্ষাবৃত্তির অবৈধতা ও বিপদ সম্পর্কে শিক্ষিত করা, যদিও তারা সন্তানের কর্মের জন্য দায়ী। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রণীত এই নীতি থেকে ৯,৩০০ জন শিশু পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।[৫৩] ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি এবং চরম দারিদ্র্য নিবারক কোনো কেন্দ্রীয় আইন নেই৷ আছে মুম্বাই ভিক্ষাবৃত্তি নিবারক আইন ১৯৫৯৷ এই আইনে তথাকথিত ভিখারিদের তিন থেকে দশ বছর পর্যন্ত বেগার-হোমে আটক রাখা যায়৷ ভারতের ২০টি রাজ্য এবং দুটি কেন্দ্র শাসিত রাজ্য এই আইনই মেনে চলছে৷ তার মধ্যে আছে রাজধানী দিল্লিও৷[৬৪]

এনজিওর উদ্যোগ[সম্পাদনা]

অনেক এনজিও জনসাধারণকে ভিক্ষার বিপদ সম্পর্কে অবহিত করার দিকে মনোনিবেশ করে আন্দোলন শুরু করেছে। সম্প্রতি ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "কিছু কিছু আচরণ যেমন শিশু ভিক্ষুকদের টাকা দেওয়াও পরোক্ষভাবে পাচারকারী ও নিয়ন্ত্রককে শিশুদের চাহিদা দিতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।"[৫১] থাইল্যান্ডের দ্য মিরর ফাউন্ডেশনের স্টপ চাইল্ড ভিক্ষাবৃত্তি প্রকল্প এমনই একটি সংস্থা যা চাহিদা দূর করার ওপর জোর দেয়। অনুদানের সম্ভাবনা কমাতে তাদের দেশের পাচার হওয়া কম্বোডিয়ানদের জোরপূর্বক ভিক্ষার বিষয়ে পথচারীদের শিক্ষিত করার দিকে তাদের উদ্যোগ নিবদ্ধ করে।[৬৫][৬৬] বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিবৃত করতে কাজ করে।

অন্যান্য পদ্ধতি[সম্পাদনা]

চীনে শিশুদের অপহরণ ও জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তিকে নিয়মিতভাবে নথিভুক্ত করা হয়। সেখানে একটি মাল্টি-মিডিয়া আন্দোলন শুরু হয়েছে।[৫৩] এখানে ৩,০০০ এরও বেশি শিশুর ছবি ব্লগে ব্যবহার করা হয়, যাদের পরিবার বিশ্বাস করে যে, ভিক্ষার উদ্দেশ্যেে এ শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে। শহুরের প্রধান কেন্দ্রে হাজার হাজার অনুগামী এই শিশুদের খোঁজ করে থাকেন। এই অভিযানটি অন্তত ছয়টি শিশুকে পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের পরিবারের সাথে পুনরায় মিলিত করতে সক্ষম করেছে।[৫৩] যেসব ক্ষেত্রে ভিক্ষাবৃত্তি ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) পরামর্শ দিয়েছে যে, ধর্মীয় নেতাদের বাহ্যিকভাবে এই প্রথার নিন্দা করা উচিত। তালিবদের জন্য ধর্মীয় নেতাদের কুরআন থেকে উদ্ধৃত প্যাসেজ ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। যেমন "আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জান্নাত ব্যতীত কিছু ভিক্ষা করবেন না" (সুরা নং-৮, আয়াত-২৩)। আয়াতটি ধর্মীয় ভিত্তিতে ভিক্ষাবৃত্তি অনুশীলন বন্ধ করতে সাহায্য করে।[৬৭] উপরন্তু, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীর (আইএসপি) মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যা শিশু পর্নোগ্রাফিসহ যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ট্র্যাক করতে সাহায্য করতে পারে।[৬৮]

নগদ অর্থে বিক্রয়ে অনুপ্রাণিত করা[সম্পাদনা]

প্রাচীন রোমের কিথ ব্র্যাডলির মতে, অগাস্টিন লিখেছিলেন যে, "সেখানে অভাবী বাবা-মা তাদের সন্তানদের বিক্রি করেছিল কারণ তাদের নগদ অর্থের প্রয়োজন ছিল।"[৬৯] সমসাময়িক নেপালে দরিদ্র পরিবারের পিতামাতারা তাদের সন্তানদের এতিমখানায় বিক্রি করে (অথবা কখনও কখনও তাদের বিনা পেমেন্টে হস্তান্তর করে)। তারপর অনাথ আশ্রম তাদের "এতিম" বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করে, এতিমখানার জন্য একটি আয় নিশ্চিত করে।[৭০]

পদ্ধতিসমূহ[সম্পাদনা]

সাধারণভাবে তিনটি পর্যায়ে শিশু পাচার ঘটে। তাহলো নিয়োগ, আন্দোলন ও শোষণ।[৮][১৭] নিয়োগ হচ্ছে, যখন একজন শিশু একজন নিয়োগকর্তা দ্বারা যোগাযোগ করা হয় অথবা কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি একজন নিয়োগকর্তার কাছে আসে।[৮] বিভিন্নভাবে নিয়োগ শুরু হয়, যেমন কিশোর-কিশোরীরা তাদের পরিবারে অবদান রাখার জন্য চাপে পড়ে বা শিশুদের অপহরণ করে বা পাচারের জন্য অপহরণ করে অথবা পরিবারগুলি একসঙ্গে পাচার করে হতে পারে।[৮] তারপর স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং/অথবা আন্তর্জাতিকভাবে- গাড়ি, ট্রেন, নৌকা বা পায়ে চলাচলসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের মাধ্যমে চলাচল করে।[৮] পরিশেষে শিশু পাচারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হল শোষণ করা, যার মাধ্যমে পাচারকারীরা অবৈধ মুনাফা অর্জনের জন্য শিশুদের সেবা ব্যবহার করে।[৮] জোর করে শ্রম, যৌন শোষণ ও শিশু ভিক্ষাসহ অন্যান্য প্রথাগুলির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের শোষণ হতে পারে।

সরবরাহ ও চাহিদা কাঠামো[সম্পাদনা]

সরবরাহ ও চাহিদার অর্থনৈতিক মডেল ব্যবহার করে প্রায়ই শিশু পাচারের ধারণা করা হয়।[১৭][৭১] বিশেষ করে যারা পাচার হয় তারা "সরবরাহ" গঠন করে, যখন পাচারকারীরা বা যারা শোষণ থেকে লাভবান হয় তারা "চাহিদা" প্রদান করে।[৮] দুই ধরনের চাহিদা সংজ্ঞায়িত করা হয়। যথা ভোক্তা চাহিদা ও প্রাপ্ত চাহিদা। ভোক্তাদের চাহিদা তৈরি হয় এমন ব্যক্তিদের দ্বারা যারা সক্রিয়ভাবে বা নিষ্ক্রিয়ভাবে পাচারকৃত শ্রমের পণ্য বা সেবা ক্রয় করে।[৮] এর একটি উদাহরণ হচ্ছে, একজন পর্যটক একটি টি-শার্ট কিনছে যা একটি পাচারকৃত শিশু তৈরি করেছে। অন্যদিকে প্রাপ্ত চাহিদা হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের দ্বারা উৎপন্ন হয়, যারা পাচারের অনুশীলন থেকে সরাসরি লাভ করে, যেমন পিম্পস বা দুর্নীতিগ্রস্ত কারখানার মালিকরা।[৮] গবেষক কেভিন বেলস মানব পাচারের ক্ষেত্রে এই অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রয়োগ ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছেন; তিনি দাবি করেন যে, কীভাবে পাচার শুরু হয় ও টিকে থাকে, তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য এটি কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রয়োজন।[৭২] গবেষক কেভিন বেলস পণ্ডিত এলিজাবেথ এম হুইটন, এডওয়ার্ড জে শাউয়ার এবং থমাস ভি গ্যালিসহ জোর দিয়েছেন যে, জাতীয় সরকারগুলিকে আরও সক্রিয়ভাবে এমন নীতিগুলি বাস্তবায়ন করতে হবে যা উভয় ধরনের চাহিদা হ্রাস করে, এইভাবে তারা পাচার নির্মূলের কাজ করে।[৭৩][৭৪]

সামাজিক প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

আইএলও ও ইউএন জিআইটিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা শিশু পাচারকে দারিদ্র্যের সাথে যুক্ত করেছে। তারা প্রতিবেদন করে যে, দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা শিশুদের পাচারের প্রতি দুর্বলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।[৮][৭৫][৭৬] যাইহোক ভিক্ষাবৃত্তির অনেক সামাজিক ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে দারিদ্র্যতা একটি, যা পাচারের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের নোট হিসাবে, "প্রায়শই শিশুরা একই সাথে বিভিন্ন ঝুঁকির কারণগুলি অনুভব করে এবং তাদের মধ্যে এটি ট্রিগার হিসাবে কাজ করতে পারে যা পাচারের ঘটনাকে গতিশীল করে। এটিকে কখনও কখনও 'দারিদ্র্য প্লাস' বলা হয়। এটা এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে দারিদ্র্য নিজেই একজন ব্যক্তির পাচারের দিকে পরিচালিত করে না, বরং সেখানে অসুস্থতার মতো 'প্লাস' ফ্যাক্টর দারিদ্র্যের সাথে মিলিত হয়ে দুর্বলতা বাড়ায়।"[৮][৭৭] ইউনিসেফ, ইউএনজিআইটি, উনা মারে এবং মাইক ডট্রিজসহ বেশ কয়েকজন গবেষকও দাবি করেছেন যে, শিশু পাচার সম্পর্কে সঠিক বোঝার জন্য অবশ্যই লিঙ্গ বৈষম্যের বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।[৮][৭৮][৭৯] বিশেষ করে অনেক দেশে মেয়েরা পাচারের ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে যৌন শোষণের জন্য পাচার হয়।[৮][৭৮] উপরন্তু এই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এবং গবেষকরা দাবি করেন যে, পাচার বিরোধী নীতিতে নারী ও পুরুষদের সমান কণ্ঠ দেওয়া শিশু পাচারের ঘটনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।[৭৮][৭৯] ইউরোপ জুড়ে গবেষণাগুলি এমন ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে, যা শিশুদের শোষণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে এবং শিশু পাচারের কারণ ও অবদানকারীর কারণ ব্যাখ্যা করে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রান্তিকতা, অকার্যকর পারিবারিক পটভূমি, অবহেলার অভিজ্ঞতা, পরিবারে বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অপব্যবহার বা সহিংসতা, শোষণমূলক সম্পর্ক, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্য, রাস্তায় বসবাস বা কাজ করার অভিজ্ঞতা, অনিশ্চিত ও অনিয়মিত অভিবাসন পরিস্থিতি, কাজ করার ও অর্থ উপার্জনের আকাঙ্ক্ষা, স্কুলে প্রবেশ বা থাকার সীমিত সুযোগ, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ বা নিয়মিত কর্মসংস্থান। যেহেতু সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জাতীয় সরকারের প্রচেষ্টা এই ঝুঁকিগুলির অনেকগুলি হ্রাস করতে পারে, তাই শিশু পাচার শুধুমাত্র অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে বিবেচিত হয় না, বরং একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর উন্নয়নের জন্য শিশুদের অধিকারকে কার্যকরভাবে সুরক্ষিত করার জাতীয় সরকারের ক্ষমতার দুর্বলতা নির্দেশ করে।[৮০][৮১][৮২]

শনাক্তকরণ[সম্পাদনা]

শিশু পাচারের জটিল সংজ্ঞা এবং জাতীয় আইন ও ব্যাখ্যার মধ্যে পার্থক্য পাচারের শিকার শিশুদের সনাক্তকরণকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ শিশু পাচার নিয়ে ইউরোপীয় বিতর্কে শিশু পাচারকে কীভাবে শোষণের অন্যান্য প্রসঙ্গ থেকে আলাদা করা যায়, অভিবাসীদের সামাজিক ডাম্পিং, শিশুদের বিক্রি এবং অভিবাসীদের চোরাচালান ব্যাপারে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে।[৮৩][৮৪] মানব চোরাচালানীরা আন্তর্জাতিক সীমান্তে অভিবাসীদের পরিবহনের জন্য শিশুদের শোষণ করতেও পরিচিত।[৮৫][৮৬] একবার একজন সম্ভাব্য শিকার হওয়া শিশু রাজ্য কর্তৃপক্ষের সংস্পর্শে এলে শিশুটিকে পাচারের শিকার হিসেবে চিহ্নিত করতে সময় লাগে। প্রক্রিয়াটি প্রায়শই সন্তানের গল্পের পুঙ্খানুপুঙ্খ উপলব্ধি থেকে উপকৃত হয়। যে শিশুটি আইনের সমস্যায় আছে, সে শিশুটির সম্পূর্ণ গল্প শুনলে সাহায্যকারী ও কর্মকর্তারা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে যে শিশুটি আসলে কোন অপরাধের শিকার (যেমন শোষণ বা অপব্যবহার বা পাচার)? প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার লজিক হলো, একজন শিশুর সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য আশ্রয় প্রক্রিয়া বা শিশুর সম্পূর্ণ গল্প শোনা দরকার, যা কেসকর্মীদের পাচারের ঘটনাগুলি সনাক্ত করতে সাহায্য করে। তবে শিশুরা কর্তৃপক্ষ ও নিযুক্ত শিশু কল্যাণ পেশাদারদের সাথে তাদের সম্পূর্ণ গল্প শেয়ার করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে। কিছু পরিষেবা প্রদানকারীরা দেখায় যে, সন্তানের সাথে বিশ্বাস স্থাপন ও স্থিতিশীল সম্পর্ক- শোষণ ও পাচারের অভিজ্ঞতা প্রকাশের জন্য উৎসাহিত করে, যা সনাক্ত করা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাস্ট বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা, কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সহায়তা প্রদান ও সহায়তা পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।[৮৭][৮৮][৮৯][৯০] শিশু পাচারের শিকারী চিহ্নিত ব্যক্তিরা বিশেষ সুরক্ষার অধিকারী নয়, বরং অপরাধের শিকার সকল শিশু আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে থাকে। এই সুরক্ষার মধ্যে রয়েছে অভিভাবকত্ব, আইনি সহায়তা ও প্রতিনিধিত্ব, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা, শারীরিক ও মানসিক পুনরুদ্ধারের জন্য সমর্থন, সামাজিক পুনর্গঠন, অভিবাসন স্থিতি নিয়মিতকরণ, ক্ষতিপূরণের অধিকার, একটি পক্ষ হিসাবে কাজ করার অধিকার, বা বাদী হওয়া, অবৈধ ফৌজদারি মামলা বা অপরাধমূলক কাজে শোষিত হয়ে পাচার হওয়া শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা হল 'শাস্তিবিহীন ধারা'। এর মানে হল, মানব পাচারসহ ফৌজদারি অপরাধের শিকার শিশুরা তাদের শিকার অবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত অপরাধের জন্য নিষেধাজ্ঞা বা মামলা থেকে রক্ষা করতে হবে।[৯১][৯২] শিশু অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ১৯ এবং ৩২-৩৬ অনুচ্ছেদে শিশুদের শোষণ নিষিদ্ধ করে, তা যে কোনো রূপে ও যে কোনো প্রেক্ষাপটে যে কোন শিশু যে সহিংসতা, শোষণ বা অপব্যবহারের মুখোমুখি হয় তাকে অপরাধের শিকার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে এবং সহযোগিতা, সুরক্ষা, সহায়তা, পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের পরিষেবা, ন্যায়বিচারের প্রবেশাধিকারসহ যথাযথ পদ্ধতিগত সুরক্ষার সাথে সম্পর্কিত অধিকার রাখে বা যেকোনো আইনি বা প্রশাসনিক কার্যক্রমে অধিকার ভোগ করে। আরও বলা হয়, শোষণের ঝুঁকিতে থাকা শিশুদেরকে চিহ্নিত করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, তাদের শোষণ বা ঝুঁকি থেকে সৃষ্ট অন্য কোন ক্ষতি রোধ করার জন্য তাদের সহায়তা ও সমর্থন করার অধিকার রয়েছে। পাচার করা শিশুদের শনাক্ত করতে অসুবিধা ও কনভেনশনের অধীনে প্রদত্ত সকল প্রকার শোষণ এবং প্রসঙ্গের বিরুদ্ধে বিস্তৃত সুরক্ষা বিবেচনা করে। শিশু অধিকার ভিত্তিক পদ্ধতিটি শোষণের শিকার বা অন্যান্য অপরাধ ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের সনাক্তকরণকে অগ্রাধিকার দেয়। পাচারের প্রেক্ষাপটে শোষণ হয় কি না? তা শিশু অধিকার ও সুরক্ষার প্রেক্ষাপটে গৌন বিষয়। এটি প্রাথমিকভাবে আইন প্রয়োগকারী তদন্ত ও প্রসিকিউশনের প্রতি আগ্রহী হতে পারে।[৮৩][৮৪]

ব্যাপকতা[সম্পাদনা]

প্রতি বছর পাচার হওয়া শিশুদের সংখ্যা সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য অনুমান পাওয়া মুশকিল। মূলত এই অভ্যাসের গোপন ও অপরাধমূলক প্রকৃতির কারণে[৮][৭৬] শিশু পাচার সংক্রান্ত অনুমান সংগ্রহ ও সংকলন করতে প্রায়ই বছর লেগে যায়। ফলস্বরূপ অপর্যাপ্ত তথ্য ও পুরানো উভয়ই মনে হতে পারে।[৮] তথ্য সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র এই কারণে জটিল যে, খুব কম দেশ শিশু পাচারের জাতীয় অনুমান প্রকাশ করে।[৮] ফলস্বরূপ উপলব্ধ পরিসংখ্যানগুলি সমস্যাটির প্রকৃত সুযোগকে অবমূল্যায়ন করার জন্য ব্যাপকভাবে চিন্তা করা হয়।[৮]

বিশ্বব্যাপী[সম্পাদনা]

বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে শিশু পাচারের আইন করা হয়েছে।[১][৯৩] এই অনুশীলনের ব্যাপকতা সম্পর্কে একটি বহুল ব্যবহৃত চিত্র আইএলও দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছে, যা অনুমান করে যে ১.২ মিলিয়ন শিশু প্রতি বছর পাচার হয়; এই অনুমানের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ পাচার।[৯৪]

আঞ্চলিক[সম্পাদনা]

আঞ্চলিকভাবে, আইএলও প্রতি বছর অঞ্চল অনুসারে শিশুদের পাচারের জন্য সংখ্যা অনুমান প্রদান করে।-[৯৪] যথা- এশিয়া/প্রশান্ত মহাসাগরে ২৫০,০০০ জন শিশু; ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানে ৫৫০,০০০ জন শিশু; আফ্রিকায় ২০০,০০০ জন শিশু; উত্তরণ অর্থনীতিতে ২০০,০০০ জন শিশু; এবং উন্নত/শিল্পায়িত অর্থনীতিতে অজানা হিসাবে গণনা করে। এ সংখ্যাগুলি নির্দেশ করে যে, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে শিশু পাচার সবচেয়ে বেশি ঘটে। শিশু পাচার উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। যদিও এটি উন্নত ও শিল্পোন্নত অর্থনীতিতেও ঘটে।[৮][৭৩] উল্লেখযোগ্যভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর "মানব পাচার" বিষয়ে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা বেশিরভাগ দেশে মানব ও শিশু পাচারের বিস্তারের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য প্রদান করে।[৭৩] ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া স্কুল অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক একটি গবেষণায় প্রকাশ করেছে যে, আনুমানিক ৩,০০,০০০ আমেরিকান শিশু যেকোনো সময় বাণিজ্যিক যৌন শোষণের ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

ইতিহাস (ইংল্যান্ড)[সম্পাদনা]

নৃবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পিয়েট মেনিফির মতে, ১৭ শতক ও ১৮ শতকের শেষের দিকে ব্রিটেনে দারিদ্র্যের মধ্যে পিতামাতা "তাদের সন্তানদের (প্রকৃতপক্ষে তাদের সন্তানদের পরিষেবাগুলিকে ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে) বিক্রি করেছিল"।[৯৫][৯৬] কোন নারী বিক্রির চেয়ে বিক্রয়ের প্রেরণাসমূহ বেশি অর্থনৈতিক বিষয় ছিল[৯৫] এবং সীমিত তথ্য থেকে দাম "মোটামুটি বেশি ছিল বলে মনে হয়"।[৯৫] বিক্রি হওয়া ছোট ছেলেদের মধ্যে অনেকেই চিমনি ঝাড়ার জন্য আরোহণ করছিল।[৯৫] সাধারণত পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে একজন মেয়ে শিশুকে বিক্রি করা হত। যেমন ভাতিজিকে বিক্রয় করার ঘটনা। আরেকটি ছিল একজন মহিলার গৃহকর্মীর কন্যাকে একজন পুরুষ বিক্রি করে, যিনি তার ব্যবসাও চালাতেন। কিছু শিশু চুরি করে বিক্রি করা হয়।[৯৫]

শিশু পাচারের কারণ[সম্পাদনা]

গবেষকদের গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, মূলত শিশু পাচারের কোন কারণ নেই। তবে একাধিক কারণ উচ্চ সংখ্যায় অবদান রাখে যেমন দারিদ্র্যতা, মানবিক সংকট ও শিক্ষার অভাব। এটি লক্ষ্য করাও গুরুত্বপূর্ণ যে, শিশুর স্থানান্তরটা স্বেচ্ছায় হতে পারে।

দারিদ্র্যতা[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাপী শিশু পাচারের প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা।[৯৭] প্রায়শই দরিদ্র পরিবারের বাবা-মা তাদের সন্তানের ভরণপোষণ করতে সক্ষম হয় না। এ আর্থিক সংকটের কারণে তাদের সন্তানদের শোষণ করে। পিতা-মাতার এই প্রভাব বাচ্চাদের ও তাদের পরিবারের জীবন বাঁচানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি নেওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।[৯৮] দারিদ্র্যের কারণে বাবা-মা তাদের সন্তানদের শিশু পাচারের জন্য মত প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত সবসময় অর্থ প্রণোদনার জন্য হয় না, বরং শিক্ষার অভাবের কারণে তারা বিশ্বাস করে যে, শিশুদের অন্যত্র স্থানান্তর করলে বা তাদের পালাতে সাহায্য করলে দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যতায় তাদের সন্তানরা সাহায্য করতে আরও সুযোগ পাবে।[৯৯] অনেক সময় দারিদ্র্যের ফলে শিশুরা এতিম হয়, তাদেরকে শিশু পাচারকারীদের হাতে ছেড়ে দেয়। পৃথিবীতে প্রায় ১২০ মিলিয়ন শিশু রাস্তায় বসবাস করছে বলে অনুমান করা হয় (আফ্রিকায় ৩০ মিলিয়ন, এশিয়ায় ৩০ মিলিয়ন এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ৬০ মিলিয়ন)।[১০০] এটা শিশুদের দুর্বল করে তোলে এবং পাচারের সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়।

মানবিক সংকট[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ২০-৩০% শিশু পাচার হয়।[১০১] এ অবস্থা ২০১৫ সালের ভূমিকম্প এবং ২০১০ সালের হাইতির ভূমিকম্পের পর দেখা গিয়েছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েরা বেশি করে যৌন পাচারের শিকার হয়, বিশেষ করে এই ধরনের এলাকায় ১৮ বছরের কম বয়সী ৩৩% জন মেয়ে পাচারের শিকার হয়।[১০১] এর কারণ হল, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর তাদের মানসিক দুর্বলতা ও আর্থিক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

শিক্ষার অভাব[সম্পাদনা]

শিক্ষা ও সাক্ষরতার অভাব পরিবারগুলিকে পাচারকারীদের কাছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। বাবা-মা প্রায়ই শিশু পাচারের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকেন এবং স্বেচ্ছায় তাদের সন্তানদের বিদায় করেন। এছাড়াও শিশুরা প্রায়ই তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় না এবং তাদের কোন অধিকার লঙ্ঘিত হয় সে সম্পর্কে বোঝার অভাব থাকে। শিশুদের অধিকার সম্পর্কে তাদের শিক্ষিত করার প্রয়োজন আছে, কারণ এটি তাদের হস্তচালিত দক্ষতায় হয় এবং শিল্পে জোরপূর্বক কাজ করার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে। শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে শিশুদের অবহিত করলে নিট ভর্তি এবং সমাপ্তির পর পাশের হারে গ্রেড বৃদ্ধি করে।[১০২]

স্বেচ্ছায় অভিবাসন[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে ১৫-২৪ বছর বয়সী যুব অভিবাসীরা মোট অভিবাসনের ১২% পূরণ করে।[১০৩] স্বেচ্চায় স্থান্তর হলে "শিশু পাচার" শব্দটি প্রায়ই অপব্যবহার করা হয়। "ইয়ুথ মাইগ্রেশন" বলতে বোঝায় যুবকরা অন্য কোথাও সুযোগ পাওয়ার জন্য ঘর ছেড়ে চলে যাওয়াকে। মানসম্মত শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অ্যাডভেঞ্চারের মতো সুযোগগুলি প্রায়ই গ্রামাঞ্চলে দুষ্প্রাপ্য। যে কারণে গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন প্রায়ই ঘটে। আইএলও জানিয়েছে যে, ২৭ মিলিয়ন যুবক আন্তর্জাতিক অভিবাসী হিসাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য তাদের মাতৃভুমি ছেড়ে চলে যায়।[১০৪] তরুণদের জন্য অভিবাসনকে নিরাপদ করার জন্য জাতিসংঘ তাদের নতুন উন্নয়ন লক্ষ্যে "স্থায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জনের জন্য অভিবাসনের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার" নীতি গ্রহণ করেছে, যা ২০৩০ সালে শেষ হবে।

প্রভাব[সম্পাদনা]

শিশু ও পরিবারের উপর প্রভাব[সম্পাদনা]

ইউএন জিআইএফটি এর মতে, শিশু পাচার ঘটনাটি, পাচার করা শিশু ও তাদের পরিবারের উপর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।[৮][১০৫] প্রথমত, পাচারের ফলে পাচার হওয়া শিশুর মৃত্যু বা স্থায়ীভাবে আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে।[৮] এ পাচারের ফলে এটি বিপজ্জনক "গতিবিধির" পর্যায় বা "শোষণ" পর্যায়ের নির্দিষ্ট দিক থেকে বিপজ্জনক কাজের পরিস্থিতির দিকে নিতে পারে। তদুপরি পাচারকৃত শিশুরা প্রায়ই স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়, যার ফলে তাদের গুরুতর আঘাত ও মৃত্যুর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।[৮] পাচারকৃত শিশুরাও প্রায়ই পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়; আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য তারা মারধর বা অনাহারে থাকতে পারে।[৮] এছাড়াও এই শিশুরা ঘন ঘন পদার্থ অপব্যবহারের সম্মুখীন হতে পারে; তাদেরকে "পেমেন্ট" হিসাবে ওষুধ দেওয়া হতে পারে অথবা তারা যাতে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং এভাবে তারা পাচারকারীর উপর নিশ্চিতভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।[৮] অন্যান্য অনেক ধরনের অপরাধের চেয়ে পাচারের শিকার শিশুরা যে আঘাত পায় তা প্রায়ই দীর্ঘায়িত ও পুনরাবৃত্তি হয়, যার ফলে গুরুতর মানসিক প্রভাব পড়ে।[১০৫] ইউএন জিআইএফটি রিপোর্ট করে যে, পাচারকৃত শিশুরা প্রায়শই অন্যান্য অবস্থার মধ্যে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভোগে।[১০৫] পরিবারের উপর প্রভাবগুলিও মারাত্মক। কিছু পরিবার বিশ্বাস করে যে, তাদের সন্তানদের কাজ খোঁজার জন্য অন্যত্র পাঠানো বা স্থানান্তর করার অনুমতি দিলে অতিরিক্ত আয় হবে। তবে বাস্তবে অনেক পরিবার তাদের পাচার হওয়া শিশুদের আর কখনও দেখতে পায় না।[৮] এছাড়াও ইউএন জিআইএফটি দেখেছে যে, পাচারের কিছু ধরন বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে যৌন শোষণ, পরিবারের জন্য "লজ্জা" নিয়ে আসে।[১০৫] এইভাবে দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে যেসব শিশু পাচার থেকে পালাতে সক্ষম হয় তারা তাদের পরিবারে ফিরে গেলে পরিবার তাদের প্রত্যাখ্যান করে, আবার কেউ কেউ তাদের বহিষ্কার করে।[১০৫]

সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব[সম্পাদনা]

শিশু পাচারও সম্প্রদায়ের উপর বড় প্রভাব ফেলতে দেখা গেছে। যদি একটি সম্প্রদায়ের একাধিক শিশু পাচার হয়ে যায়, তাহলে এর ফলে পাচারের মাধ্যমে সমগ্র সম্প্রদায় দূষিত হতে পারে বা এভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।[৮] সামাজিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ পাচারকৃত শিশু বিশেষ কিছু শিক্ষলাভ করার সুযোগ পায়না।[৮] এই শিক্ষার অভাবের ফলে, যেসব শিশু পাচার থেকে পালিয়ে যায় তারা পরবর্তী জীবনে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে না।[৮] তাছাড়াও পাচারকৃত মেয়েরা বিশেষ বাধার সম্মুখীন হয়, আর তা হলো, যদি সমাজ জানতে পারে যে, তারা পাচার হয়েছে এবং তাদের সাথে যৌন শোষণ করা হয়েছে। তা হলে তাদের বিয়ের সম্ভাবনা কমে যায়।[৮]

জাতির উপর প্রভাব[সম্পাদনা]

পাচারকৃত শিশুরা শিক্ষার অভাবে জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীল কর্মীদের বড় ক্ষতি হয়।[৮][১০৫] যেসব শিশুরা সফলভাবে তাদের পরিবারে ফিরে যেতে সক্ষম হয় তারা শিক্ষার অভাব ও শারীরিক অসুস্থতা এবং মানসিক আঘাতের কারণে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করে।[৮] এই পাচারকৃত শিশুদের পুনর্বাসনের সাথে বড় ধরনের খরচ জড়িত। সুতরাং তারা তাদের সম্প্রদায়গুলিতে পুনর্বাসন হলে যে কোন কাজে সফলভাবে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়।[৮] তদুপরি শিশু পাচারের চর্চা ক্রমাগত অপরাধমূলক কার্যকলাপ ও অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলির উপস্থিতি নির্দেশ করে, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদক ও সহিংসতার সাথেও জড়িত।[১০৫] সে জন্যই জাতিসংঘের জিআইএফটি শিশু পাচারকে জাতীয় ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকির উল্লেখযোগ্য সূচক হিসেবে উল্লেখ করেছে।[১০৫]

প্রস্তাবিত সমাধান[সম্পাদনা]

শিশু পাচারের সমাধান, বা "পাচার বিরোধী পদক্ষেপ", মোটামুটি চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।[৬] যথা- ১) ব্যাপক সুরক্ষা: "শিশু ও প্রাক্তন শিকারদের (পুনরায়) পাচার করতে বাধা দেয়া।" ২) প্রতিরোধ: "শিশু পাচারের অপরাধ এবং শোষণ যা এর শেষ পরিণতি।" ৩) আইন প্রয়োগ: "বিশেষ করে একটি শ্রম প্রেক্ষাপট ও শ্রম আইন এবং প্রবিধান সম্পর্কিত করা।" ৪) সুরক্ষা: "তাদের অভিযোগের সমাধান, পুনর্বাসন এবং তাকে/তাকে প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার দিকে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।"[৭] ৫) সম্ভাব্য পাচার হতে পারে এমন শিশুদের প্রতি ব্যাপক সুরক্ষা কার্যক্রম তৈরি করা, বিশেষ করে দুর্বল সম্প্রদায়ের মধ্যে শিশু পাচার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করা।[৬] এই ধরনের আউটরিচে দুর্বল পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে নীতিমালাও অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাতে তাদের সন্তানদের কর্মস্থলে পাঠানো ছাড়া তাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত বিকল্প কিছু পাওয়া যায়।[৬] এর উদাহরণ হল, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং শর্তাধীন নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা। আরেকটি বৃহত্তর ও বিস্তৃত সুরক্ষা কর্মসূচি হলো, যা জাতিসংঘ দ্বারা সহজেই অনুমোদিত হয়েছে। জিআইএফটি, আইএলও এবং ইউনিসেফ জেন্ডার সমতার সুবিধা প্রদান করে, বিশেষ করে ছেলেমেয়ে উভয়েরই সাশ্রয়ী মূল্যের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে।[৬][১০৫][১০৬] অন্যান্য ধরনের সুরক্ষা ও সম্পদ হল- সুবিধামত স্বাস্থসেবা, বিশুদ্ধ পানি, টেকসই পরিবেশ ও আর্থিক সাক্ষরতা প্রদান করা।[১০৭]

শিশু পাচারের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর আরেকটি উপায় হল- বিশ্বজুড়ে সম্প্রদায়গুলি এই পরিস্থিতিতে একটি সপ্তাহ উদযাপন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বজুড়ে ২০১২ সালে মানব পাচার সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর সাথে কমিউনিটি গ্রুপগুলি বিভিন্ন ইভেন্ট সংগঠিত করার পাশাপাশি গভীরভাবে তথ্য প্রদানের সভা করে থাকে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় গ্রুপভিত্তিক সহযোগিতা করে। সম্প্রদায় দ্বারা অনুষ্ঠিত ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে- চলচ্চিত্র প্রদর্শন, অতিথির বক্তব্য, বুথসহ আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে যা মানুষকে এই সমস্যার গুরুতরতা বুঝতে সাহায্য করে। আইসিইতে (হিউম্যান ট্রাফিকিং) ভুক্তভোগীদের জন্য একটি হেল্প লাইন রয়েছে এবং আইসিই ইন প্লেইন সাইট ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইউএসএ সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা পরিচালনা করে।

শিশু পাচারের প্রকৃত চর্চা মোকাবেলায় প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ড আরো বেশি মনোযোগী করে। বিশেষ করে আইনী কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাচারকারীদের আটকানো ও তাদের বিচারের লক্ষ্যে কাজ করা হয়।[৬][১৭] এর মধ্যে রয়েছে আইএলও'র আন্তর্জাতিক শ্রম মান গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা, নিরাপদ ও আইনগত অভিবাসন অনুশীলনের উন্নয়ন করা।[৬]

আইনের প্রয়োগ বলতে, পাচারকারীদের প্রকৃত বিচারকে বোঝায়। ইউনিসেফ বলছে যে, শিশু পাচারকারীদের সফল বিচার হচ্ছে একটি বার্তা পাঠানোর নিশ্চিত উপায়। এর মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দেযা যে, শিশু পাচার সহ্য করা হবে না।[৬] পাচারের তিনটি ধাপের যে কোন একটিতে পাচারকারীদের "ধরা" যেতে পারে: নিয়োগ, চলাচল এবং/অথবা শোষণ। পাচার বিরোধী আইন ও শিশুশ্রম আইন অবশ্যই যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ইউনিসেফ দ্বারা তৃণমূল পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার বিকাশেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা সম্প্রদায়গুলিকে অবিলম্বে শিশু পাচারের লক্ষণগুলি আইনি কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে সক্ষম করবে।[৬] কিছু নারী পাচার বিরোধী গোষ্ঠী (যেমন ইয়ং উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট প্রজেক্ট) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে কাজ করার বিরোধী, যেখানে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ভিকটিমের শোষণে ভূমিকা পালন করে।[১০৮] ২০১৬ সালের জুন মাসে, ওকল্যান্ডের ১৪ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, এক কিশোরী পতিতাকে কেন্দ্র করে তারা যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল, যার মধ্যে কয়েকজন ছিল নাবালিকা।[১০৯]

ভিকটিম সনাক্তকরণের মাধ্যমে প্রথমে সুরক্ষা শুরু হয়। শিশু পাচার আইনে "পাচারের শিকার" কি, তা বিশেষভাবে ও যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।[৬] পাচারের পরিস্থিতি থেকে শিশুদের সরিয়ে আনার জন্য, তাদের পরিবার বা অন্য উপযুক্ত পরিবেশে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আইনি প্রক্রিয়াগুলি অবশ্যই থাকতে হবে।[৬] ভিকটিমদের ব্যক্তিগত বা শারীরিক ও মানসিক পুনর্বাসনের সহায়ক ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। যেমন ট্রমা-অবহিত প্রোগ্রাম, শিক্ষা প্রতিরোধ প্রোগ্রাম, নেতৃত্বাধীন বেঁচে থাকা কেন্দ্র এবং অন্যান্য ভালো পুনরুদ্ধার ও কমিউনিটি ইন্টিগ্রেশন প্রোগ্রাম।[১১০] কিছু শিশুদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যুব-নির্দিষ্ট দুর্বলতা চ্যালেঞ্জের কারণ হতে পারে, যেমন গৃহহীনতা, পরিবারের অভাব, অবিশ্বাস, সামাজিকীকরণের অভাব, জোরপূর্বক সম্পর্ক, পদার্থের অপব্যবহার এবং শিক্ষার অভাব।[১১০] কিছু গবেষক অধিকারভিত্তিক উন্নয়নের পক্ষে কথা বলেন যে, যেখানে ভুক্তভোগী, উত্তরজীবি ও ঝুঁকিতে থাকা যুবকরা প্রকল্পের পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হওয়া উচিত এবং স্বায়ত্তশাসন ও নেতৃত্ব তৈরির জন্য অব্যাহতভাবে জড়িত থাকা প্রয়োজন।[১০৭] এটি পুনরুদ্ধারে বেশ দীর্ঘ সময় লাগতে পারে, কিন্তু ব্যক্তির সঠিক সমর্থন থাকার সাথে তারা একটি কার্যকরী জীবনের দিকে কাজ করতে পারে।[৬]

পরিশেষে বলা যায়, "ডাবল ভিকটিমাইজেশন" এড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্য কথায় নিশ্চিত করা হবে যে, পূর্বে পাচারকৃত শিশুদেরকে ভিকটিম বলা যাবে, তবে অপরাধী হিসেবে নয়।[৬] "ডাবল ভিকটিমাইজেশন" এর একটি উদাহরণ হবে, এমন একজন শিশু যাকে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যৌন শোষণের জন্য পাচার করা হয়েছিল; তারপর একবার পাচার থেকে মুক্ত হয়ে গেলে আবার অবৈধ অভিবাসী হওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। দ্য ইয়েন্ট ট্রাফিকিং প্রজেক্ট হল, শিশু পাচার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও শিশুদের সুরক্ষায় মানুষকে পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করার উদ্যোগ।[১১১] ইউনিসেফ শিশু শোষণ থেকে শিশুদের সাহায্য করার উপায় ও ঝুঁকির বিষয়গুলি মোকাবেলা করতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।[১১১] এর মধ্যে রয়েছে- ১) পিতামাতাকে একটি স্থায়ী মজুরি প্রদান করতে সাহায্য করা, যাতে শিশুরা পরিবারকে অর্থ সাহায্য করতে না হয়; ২) সহিংসতা ও অপব্যবহার রোধে আইন প্রণয়ন ও শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সরকার এবং অন্যদের তদবির করা; ৩) শিশুদের সঙ্গে কাজ করা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ ও পাচার বন্ধে সহায়তা করার জন্য পুলিশ এবং সীমান্ত কর্মকর্তাদের সহায়তা করা; এবং ৪) শিশুদেরকে শোষণের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে এমন সামাজিক নিয়মাবলী পরিবর্তন করতে সম্প্রদায় এবং সংস্থার সাথে কাজ করা।

প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

অনেক সংস্থা শিশু পাচারের সম্ভাব্য সমাধান প্রস্তাব করেছে। এই সংস্থাগুলি এ বিষয়ে অনুশীলন ও নীতিগুলি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, যা এটা নির্মূলের উদ্দেশ্যে কাজ করার জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে সবচেয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংস্থা হল- জাতিসংঘ, ইউনিসেফ, মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনারের কার্যালয়, মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের পরষ্ট্রর বিভাগ, ইসিপিএটি ইন্টারন্যাশনাল ও আন্তর্জাতিক বিচার বিভাগ।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Protocol to Prevent, Suppress and Punish Trafficking in Persons, Especially Women and Children" (পিডিএফ)। United Nations। ২০০০। এপ্রিল ২৪, ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১২ 
  2. "Child Trafficking – Essentials"ILO-IPEC। ২০১০। ১১ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২১ 
  3. "Child Trafficking Statistics"Ark of Hope for Children (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৬, ২০১৮ 
  4. "Human Trafficking Statistics"ERASE Child Trafficking (ইংরেজি ভাষায়)। জুলাই ২০, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৬, ২০১৮ 
  5. Couch, Robbie (জুলাই ২৫, ২০১৪)। "70 Percent of Child Sex Trafficking Victims Are Sold Online: Study"Huffington Post (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৬, ২০১৮ 
  6. ILO; UNICEF (২০০৯)। Training Manual to Fight Child Trafficking in Children for Labour, Sexual and Other Forms of Exploitation – Textbook 2: Action Against Child Trafficking at Policy and Outreach Levels (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Daw, Bianca। "Child Trafficking: Problems and Solutions" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. ড় ঢ় য় কক কখ কগ কঘ কঙ কচ ILO; UNICEF (২০০৯)। Training Manual to Fight Child Trafficking in Children for Labour, Sexual and Other Forms of Exploitation – Textbook 1: Understanding Child Trafficking (পিডিএফ)। সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১২ 
  9. "Convention on the Rights of the Child"। United Nations। ১৯৮৯। জুন ১১, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  10. "Universal Declaration of Human Rights"। United Nations। ১৯৪৮: 310–311। ডিওআই:10.1038/169310d0অবাধে প্রবেশযোগ্য। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১, ২০১২ 
  11. "Minimum Age Convention"। ILO। ১৯৭৩। আগস্ট ৩, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  12. "Worst Forms of Child Labour Convention"। ILO। ১৯৯৯। আগস্ট ২, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  13. "Worst Forms of Child Labor Recommendation No. 190"। ILO। ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  14. "Forced Labor Convention"। ILO। ১৯৩০। ডিসেম্বর ৫, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  15. "Migrant Workers Convention"। ILO। ১৯৪৯। মার্চ ২০, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  16. "Convention on the Rights of all Migrant Workers and Members of Their Families"। United Nations। ১৯৯০। নভেম্বর ১৯, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  17. "Recommended Principles and Guidelines on Human Rights and Human Trafficking" (পিডিএফ)। United Nations, Office of the High Commissioner for Human Rights। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  18. "State of the World's Children 2011: Adolescence, an Age of Opportunity" (পিডিএফ)। UNICEF। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  19. "Child labour"UNICEF। ২০১৯-১২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২১ 
  20. "Fast Facts on Child Labour" (পিডিএফ)। ILO। ২০১০। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  21. Adonteng-Kissi, Obed (অক্টোবর ২০১৮)। "Parental perceptions of child labour and human rights: A comparative study of rural and urban Ghana": 34–44। আইএসএসএন 0145-2134ডিওআই:10.1016/j.chiabu.2018.07.017পিএমআইডি 30041057 
  22. UNICEF (অক্টোবর ২০১৯)। "Child Labour"UNICEF data 
  23. McCabe, K.A. (২০০৮)। "In the Trafficking of Persons"। New York: Petter Lang। পৃষ্ঠা 81। 
  24. Ruggie, John (মার্চ ২১, ২০১১)। "Report of the Special Representative of the Secretary- General on the issue of human rights and transnational corporations and other business enterprises" (পিডিএফ) 
  25. "Optional Protocol on the Sale of Children, Child Prostitution and Child Pornography"। United Nations। ২০০০। মার্চ ১০, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  26. "Commercial Sexual Exploitation of Children"। ILO। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  27. "Commercial Sexual Exploitation of Children and Adolescents: The ILO's Response"। ILO। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  28. "The State of the World's Children: Excluded and Invisible"। UNICEF। ২০০৬। ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  29. Kendall ও Funk 2012
  30. Kunze, Erin I. (২০১০)। "Sex Trafficking Via the Internet: How International Agreements Address the Problem and Fail to Go Far Enough" (পিডিএফ)। 241-289। এপ্রিল ১১, ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  31. Hughes, D.M. (Spring ২০০০)। "The Internet and Sex Industries: Partners in Global Sexual Exploitation": 35–42। ডিওআই:10.1109/44.828562 
  32. "Illinois Sheriff Sues Craigslist Over Sex Ads"NPR। মার্চ ৬, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  33. "Illinois: Sheriff Sues Craigslist"The New York Times। মার্চ ৫, ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  34. Miller, Claire Cain (সেপ্টেম্বর ৪, ২০১০)। "Craigslist Blocks Access to 'Adult Services' Pages"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  35. "Optional Protocol on the Involvement of Children in Armed Conflict"। United Nations। ২০০০। মার্চ ৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  36. "Child Labour and Armed Conflict"। ILO। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১২, ২০১২ 
  37. "Children and Armed Conflict: A Guide to International Humanitarian and Human Rights Law" (পিডিএফ)। International Bureau for Children's Rights। ২০১০। আগস্ট ৬, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১১, ২০১২ 
  38. "Child Soldiers: Global Report" (পিডিএফ)। Coalition to Stop the Use of Child Soldiers। ২০০৮। মার্চ ৭, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১২, ২০১২ 
  39. "Warrant of Arrest unsealed against five LRA Commanders"International Criminal Court। অক্টোবর ১৪, ২০০৫। জুন ১৬, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২, ২০০৯ 
  40. "Afghan Children Ensnared in Heroin Trade with Iran"International Centre on Human Rights and Drug Policy। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১২। এপ্রিল ২৯, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৯, ২০১২ 
  41. "Brazil Children in Drug Trafficking: A Rapid Assessment" (পিডিএফ)। ILO। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৯, ২০১২ 
  42. Dowdney, Luke (২০০৩)। "Children of the Drug Trade" (পিডিএফ)। Viveiros de Castro Editora Ltda। ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  43. Emberger, E. Kay (জুলাই ১৮, ২০১৮)। "Separating Children of Immigrants and Unethical Adoptions"Psychology Today। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ 
  44. "'Everything... she unraveled to be a lie': Mum tricked into giving up daughter"NZ Herald। নভেম্বর ২৮, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯ 
  45. Siggins, Lorna (মার্চ ১৩, ২০১৭)। "'Possible interference' with birth certs at Tuam and Cork homes"The Irish Times। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৭, ২০১৭ 
  46. Grace, Robert (জুন ৪, ২০১৫)। "HSE raised concerns that thousands of Tuam babies may have been trafficked to the US"Galway Advertiser। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১৫ 
  47. Delap, Emily (২০০৯)। "Begging For Change: Research findings and recommendations on forced child begging in Albania/Greece, India, and Senegal"। Anti-Slavery International। 
  48. Cherneva, Iveta (২০১১)। "Human Trafficking For Begging"। LexisNexis Academic: Law Reviews: 25। 
  49. "Brussels Declaration on Preventing and Combating Trafficking" (পিডিএফ)। ২০০২। জুন ১৭, ২০১২ তারিখে মূলঅর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজন (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  50. "Social Development Notes: Conflict, Crime, and Violence" (পিডিএফ)। World Bank। ২০০৯। 
  51. "Action to Prevent Child Trafficking Report"। UNICEF। ২০০৬। 
  52. Craig 2010
  53. Pumin, Yin (ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১১)। "Saving Child Panhandlers": 18–19। 
  54. Wells 2010
  55. "Study On Street Children In Zimbabwe" (পিডিএফ)। UNICEF। ২০১১। ৩০ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২১ 
  56. Burke, Jason; Hammadi, Saad (জানুয়ারি ৯, ২০১১)। "Bangladesh Arrest Uncovers Evidence of Children Forced to Beg"। The Guardian। London। 
  57. Delap 2009
  58. Sullivan, Kevin (সেপ্টেম্বর ৭, ১৯৯৮)। "A Generation's Future Goes Begging"। The Washington Post। Jakarta, Indonesia। 
  59. Craig, Gary (২০১০)। Child Slavery Now। The Policy Press। 
  60. Sidner, Sarah (২০১১)। "Gang Profits from Maimed Child Beggars"CNN Freedom Project। ১৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০২১ 
  61. Wells, Matthew (২০১০)। "Off the Backs of the Children: Forced Begging and Other Abuses Against Talibes in Senegal"। New York: Human Rights Watch। 
  62. "Victims of Trafficking and Violence Protection Act of 2000"। United States। পৃষ্ঠা 1468। 
  63. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে সুশীল সমাজ ও করপোরেট খাতের ভূমিকা"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  64. Welle (www.dw.com), Deutsche। "'ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ নয়' | DW | 14.08.2018"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৩ 
  65. "The Mirror Art Group / Mirror Foundation"HumanTrafficking.org। জুলাই ১৩, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  66. Kred, Pak (জুন ৪, ২০১২)। "Children trafficked to sell flowers and beg"The New Humanitarian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ জুন ২, ২০১৯ 
  67. "Study on the Practice of Trafficking in Persons in Senegal"। USAID। ২০০৪। 
  68. McCabe, K.A. (২০০৮)। "The role of internet providers in cases of child pornography and child protection": 247–251। ডিওআই:10.1177/0894439307301438 
  69. Bradley 1994
  70. Williams, Evan (মার্চ ২৫, ২০১৪)। "Nepal's Orphan Trade"SBS Dateline। জুন ১, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  71. Feingold, David A. (২০০৫)। "Human Trafficking": 26–32। জেস্টোর 30048506 
  72. Bales, Kevin (১৯৯৯)। Disposable People: New Slavery in the Global Economy। University of California Press। 
  73. "Trafficking in Persons Report" (পিডিএফ)। U.S. Department of State। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  74. Wheaton, Elizabeth M.; Schauer, Edward J. (২০১০)। "Economics of Human Trafficking" (পিডিএফ): 114–141। ডিওআই:10.1111/j.1468-2435.2009.00592.xপিএমআইডি 20645472। এপ্রিল ২৭, ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১২, ২০১২ 
  75. "Poverty, Gender, and Human Trafficking in Sub-Saharan Africa: Rethinking Best Practices in Migration Management" (পিডিএফ)। UNESCO। ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১২ 
  76. Gozdziak, Elzbieta M. (২০০৮)। "On Challenges, Dilemmas, and Opportunities in Studying Trafficked Children"। Fondren Library: 903–923। জেস্টোর 25488246ডিওআই:10.1353/anq.0.0033 
  77. "Human Trafficking: A Brief Overview" (পিডিএফ)। World Bank। ডিসেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১২, ২০১২ 
  78. Dottridge, Mike (২০০২)। "Trafficking in Children in West and Central Africa"। 1: 38–42। জেস্টোর 4030680ডিওআই:10.1080/13552070215890 
  79. Murray, Una (২০০৩)। Good Practices: Gender Mainstreaming in Actions Against Child Labor। International Labour Organization। 
  80. Dottridge, Mike (ডিসেম্বর ২০০৮)। "Young People's Voices on Child Trafficking: Experiences from South Eastern Europe" (পিডিএফ)। UNICEF Innocenti Research Centre। 
  81. "Child Trafficking in Europe, A Broad Vision to Put Children First"। UNICEF Innocenti Research Centre। ২০০৮: 12–16। 
  82. "Children Speak Out, Trafficking risk and resilience in Southeast Europe"। Save the Children। ২০০৭: 20–29। 
  83. KMOP 2014
  84. UNICEF-IRC 2012
  85. Palmer, Wayne; Missbach, Antje (২০১৭)। "Trafficking within migrant smuggling operations: Are underage transporters 'victims' or 'perpetrators'?": 287–307। আইএসএসএন 0117-1968ডিওআই:10.1177/0117196817726627 
  86. Palmer, Wayne; Missbach, Antje (২০১৯)। "Bringing the ferrymen into the dock: underage Indonesians as 'people smugglers' in transporting asylum seekers and refugees to Australia" (ইংরেজি ভাষায়): 30–32। 
  87. "Trafficking in Human Beings: Identification of Potential and Presumed Victims, A Community Policing Approach"। Organization for Security and Co-operation in Europe। ২০১১। 
  88. "Guide to Identification of Possible Victims of Trafficking"। Norway: Coordination Unit for Victims of Trafficking। ২০০৮। 
  89. "Handbook for the identification of child victims of trafficking"। Sweden: National Board of Health and Welfare with UNICEF Sweden। 
  90. "Guidelines for identification of victims of trafficking"। Denmark: Danish Centre against Trafficking in Human Beings। 
  91. "Guidelines on the Protection of Child Victims of Trafficking, UNICEF Technical Notes"। UNICEF। ২০০৬। 
  92. "Resolution 2005/20: Guidelines on Justice in Matters involving Child Victims and Witnesses of Crime" (পিডিএফ)। United Nations Economic and Social Council। জুলাই ২২, ২০০৫। 
  93. "An Analytical Review 10 Years on from the Adoption of the UN Trafficking in Persons Protocol" (পিডিএফ)। Inter-Agency Coordination Group Against Trafficking in Persons (ICAT)। ২০১০। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১২ 
  94. "Every Child Counts: New Global Estimates on Child Labour"। ILO। ২০০২। এপ্রিল ২৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২ 
  95. Menefee 1981
  96. Menefee 1981: See note 4 for a quotation from Jackson's Oxford Journal. Oxford, Oxfordshire. August 12, 1797. p. 2.
  97. "Download Limit Exceeded"citeseerx.ist.psu.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯ 
  98. "What Fuels Human Trafficking?"UNICEF USA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-১৯ 
  99. OSCE। Addressing the Root Causes of Trafficking 
  100. "Street Children – Humanium"www.humanium.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৪ 
  101. Brülisauer, Manuela (ডিসেম্বর ২০১৫)। "Human Trafficking in Post-Earthquake Nepal, Impacts of the Disaster on Methods for Victim Recruitment" (পিডিএফ)। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২১ 
  102. Ruff, Jessinia (২০১৭-০৮-০৮)। "How educating children on their rights can prevent human trafficking"One Day's Wages (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৪ 
  103. United Nations (২০১৬)। "Youth and Migration" (পিডিএফ)United Nations Youth 
  104. "Labour migration (Labour migration)"www.ilo.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৪ 
  105. UN.GIFT (২০০৮)। "An Introduction to Human Trafficking: Vulnerability, Impact, and Action" (পিডিএফ)। United Nations Office on Drugs and Crime। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১২, ২০১২ 
  106. Pinheiro, Paulo Sergio (২০০৬)। "World Report on Violence against Children" (পিডিএফ)। আগস্ট ২৬, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২ 
  107. Brysk, Alison (২০১২)। "The Anti-slavery Movement: Making Rights Reality"From Human Trafficking to Human Rights: Reframing Contemporary Slavery (ইংরেজি ভাষায়)। University of Pennsylvania Press। আইএসবিএন 9780812205732 – Project Muse-এর মাধ্যমে। 
  108. Baker, C. (২০১৮)। Fighting the US Youth Sex Trade: Gender, Race, and Politics। Cambridge University Press। আইএসবিএন 9781108225045ডিওআই:10.1017/9781108225045 
  109. "Badge of Dishonor: Top Oakland Police Department Officials Looked Away as East Bay Cops Sexually Exploited and Trafficked a Teenager"East Bay Express। জুন ১৫, ২০১৬। 
  110. Greif, G.; Knight, C. (২০১৭)। Group Work with Populations At-Risk (4th সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 313–327। 
  111. "Child Trafficking"UNICEF USA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৭, ২০১৮