শাহ কামাল কোহাফাহ
শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ রহঃ | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১২৯১ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ১৩৮৫ খ্রিস্টাব্দ শাহারপাড়া, মোয়াজ্জমাবাদ (বর্তমান বাংলাদেশ) |
ধর্ম | ইসলাম |
সন্তান |
|
পিতামাতা |
|
মুসলিম নেতা | |
ভিত্তিক | সুনামগঞ্জ, সিলেট (প্রাথমিকভাবে মক্কা) |
কাজের মেয়াদ | ১৩ শতকের শুরু থেকে ১৩৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত |
পদ | রহস্যময়ী, জনহিতৈষী ও সমাজকর্মী - পীর |
হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) (আরবি: شاه كمال قحافة, ১২৯১–১৩৮৫) ছিলেন একজন জনহিতৈষী, পথিকৃৎ, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মী।
হযরত শাহ জালাল ইয়ামানী (রহঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ
[সম্পাদনা]হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) সিলেটে এসে সর্বপ্রথম হযরত শাহ জালাল ইয়ামানী (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তার আনুগত্য ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর ১২ জন সঙ্গীয় শিষ্য দর্বেশগনও হযরত শাহ জালাল ইয়ামানীর আনুগত্য ও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তারা সিলেট সহরস্থ দর্গাহ মহল্লায় কিছু দিন অধিষ্ঠান করার পরে, হযরত শাহ জালাল ইয়ামানী (রহঃ) এর নির্দেশে সুনামগঞ্জের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকার উদ্দেশ্যে বর্ষাকালে সুরমা নদীর শেখঘাট হতে ৩ খানা পাংশী বজরা নিয়ে নদী পথে যাত্রা আরম্ভ করেন। এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ধর্ম প্রচার।
সুনামগঞ্জ যাত্রা
[সম্পাদনা]হজরত শাহ্ কামাল কোহাফাহ্, তার স্ত্রী ও ১২ জন সঙ্গীয় শিষ্য দর্বেশগনকে সঙ্গে নিয়ে সুনামগঞ্জ সীমান্তে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন ১৩১৫ খিষ্টাব্দের জুন মাসে। প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে যাত্রা মৈয়ারচর বা মইরচর নামক স্থানে গিয়ে স্থগিত রাখা হয় এবং মৈয়ারচর এলাকাকে কেন্দ্র করে অনেক দিন তারা সেই অঞ্চলে ধর্ম প্রচার করেন। কিছু দিন এখানে অধিষ্ঠান করার পর, তারা যাত্রা পুনরায় শুরু করেন। তবে, বৈরী আবহাওয়ার জন্যে উত্তর মুখী যাত্রা বাতিল করে, পশ্চিম সম্মুখে অগ্রসর হতে থাকেন। তারা যে স্থানে আবার বিরতি নিলেন, সেই স্থানের নামকরণ হয় হজরত শাহ্ কামাল কোহাফাহ্ এর নামে, যা অধুনা কামাল বাজা়র এবং বিশ্বনাথ উপজেলার অন্তর্গত। কামাল বাজারে পৌছিয়ে তারা কিছু দিন সেখানে ধর্মের বাণী প্রচার করেন। অবশেষে, হজরত শাহ্ কামাল কোহাফাহ্ রত্নাং সাগরের তীরলগ্ন অঞ্চলে দ্বীপাকার এক উঁচু ভুমি (ক্ষুদ্র দ্বীপ) আবিষ্কার করে তীরগামী হন এবং সেথায় নঙর করিয়া থাকেন। পরবর্তীকালে সেই উঁচু ভূমিতে আস্তানা স্থাপন করেন। সেই ভূবাসন ক্রমান্বয়ে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়। হজরত শাহ্ কামাল কোহাফাহ্ এর নাম থেকে সেই গ্রামের নামকরণ হয় 'শাহারপাড়া'। সেকালে, সিলেট বিভাগের পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে এক বিশাল রত্নাকর ছিল। সেই রত্নাকরের তীরলগ্নে আলল-শিলা হইতে নব উদ্ভূত দ্বীপপুঞ্জ সৃষ্টি হয় এবং ধীরেধীরে সেই দ্বীপগুলো গ্রামে রূপান্তিত হয়।[১]
হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর মাজার-দর্গাহ
[সম্পাদনা]হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর মাজার-দর্গাহ অধুনা সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ৭নং সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের শাহারপাড়া গ্রামে বিদ্যমান। দর্গাহ সংলগ্ন মসজিদ, পান্থনিবাস, আবাসিক ভবন ও খানকাহ হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) ও তার শিষ্যগন দ্বারা নির্মিত হয়। পান্থনিবাস, আবাসিক ভবন ও খানকাহ অধিনালুপ্ত। হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) মাজা়রের পরিধির মধ্যে তার স্ত্রী ও পুত্রদের কবর সুরক্ষিত আছে। মাজা়রের সঙ্গলগ্ন মসজিদে শুধু ইবাদত-বন্দেগী করার অনুমতি আছে।[২]
উত্তরপুরুষ
[সম্পাদনা]হযরত শাহ্ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর উত্তরপুরুষ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের তিন-চারটি স্থানে বসত করিতেছেন। যথা, শাহারপাড়া, পাটলী আওরাঙ্গাবাদ ও দর্গাহ মহল্লাহ্ এলাকায় তারা বসতি স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের বাহিরে এই বংশের লোকজন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের পর তারা এই দেশগুলীতে স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন করেছেন।
হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর প্রথম পুত্র ছিলেন হযরত শাহ্ জালাল উদ্দিন কুরেশী (রহঃ), দ্বিতীয় পুত্র হযরত শাহ্ জামাল উদ্দীন কুরেশী (রহঃ) এবং তৃতীয় পুত্র হযরত শাহ্ মোয়াজ্জম উদ্দিন ওরফে রুকন উদ্দীন কুরেশী (রহঃ)।
প্রথম ছেলের বংশ নাই, দ্বিতীয় ছেলের অধঃস্থন বংশধর হলেন শাহারপাড়ার ছয় গোত্রের লোক।যথাক্রমে: ১। মোল্লাহ গোষ্টি ২। শাহজী গোষ্টি ৩। বগলা গোষ্টি ৪। সদরদী গোষ্টি ৫। শেখ বাহাদী গোষ্টি ৬। শেখ ফরিদ গোষ্টি
শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর ছোট ছেলে রুকনউদ্দীন ওরফে মোয়াজ্জম উদ্দীনের অধঃস্থন ছেলে বংশধর খাদিম গোষ্টি। এছাড়া শাহারপাড়ায় শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) অধঃস্থন মেয়ে বংশধর রয়েছে। অনেকে বৈবাহিক সুত্রে মায়ের অধিকারে শাহ কামাল রহঃ এর বংশধর।
উল্লেখ্য, হযরত শাহ কামাল উদ্দীন কোহাফাহ (রহঃ) এর নামের সাথে মিল রেখে, উপরে উল্লেখিত গুষ্টি ও বংশের লোকেরা নামের পিছনে কামালী লিখে থাকেন।[৩]
১২ জন সঙ্গীয় শিষ্য দর্বেশগন
[সম্পাদনা]যথাক্রমে উক্ত ১২ জন সঙ্গীয় শিষ্য দর্বেশগনের নামের তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- সৈয়দ শামসুদ্দিন – সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মোকামপাড়ায়।
- সৈয়দ তাজুদ্দিন – সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার তাজপুর গ্রামে।
- সৈয়দ বাহাউদ্দিন – সিলেট জেলার গোলাবগঞ্জ উপজেলার মুকান বাজারে।
- সৈয়দ রুকনুদ্দিন – মৌলবী বাজার জেলার কদম হাটিতে।
- শাহ্ জালালুদ্দিন – সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার কুসিপুর বা কুস্কীপুরে।
- সৈয়দ জিয়াউদ্দিন – সিলেট জেলার গোলাবগঞ্জ উপজেলার মুকান বাজারে।
- শাহ্ কালা মানিক – সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মণিহারা গ্রামে।
- শাহ্ কালু পীর – সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পীরেরগাঁয়ে।
- শাহ্ চান্দ – সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার চান্দভ্রাঙ্গ গারামে।
- শাহ্ শামসুদ্দিন বিহারী – সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর গ্রামে।
- শাহ্ দাওর বখশ খতিব – দাওরশাহী বা দাওরাই গ্রামে।
- শাহ্ ফৈজুল্লাহ – ফৈজী বা ফেজী গ্রামে।
এই সকল সুফী দরবেশগন শাহারপাড়াস্ত আস্তানা হতে ধর্মের বানী প্রচার করতেন। উহার ফলে, শাহারপাড়াই ইসলাম ধর্মের কেন্দ্রস্থল হয় এবং সমগ্র সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম ধর্ম এই শাহারপাড়া হইতে আস্তৃত হয়। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গাবর ও নিরেশ্বর সম্প্রদায়ের লোক জন এক ইশ্বরে আস্তা আনে।[৪]
শাহারপাড়া
[সম্পাদনা]শাহারপাড়া হলো সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি প্রাচীনতম গ্রাম। এই গ্রামের পরিধির মধ্যে ১৪টি পাড়া রয়েছে। সেগুলো হলো:
- মুল্লাহ বাড়ী
- শাহজী বাড়ী
- বগ্লার বাড়ী
- খান বাড়ী
- সৈয়দ বাড়ী
- শেখ ফরিদ পাড়া
- মিরপুর
- নুরাইনপুর
- কুরিকিয়ার
- লালারচর
- মুফতিরচর
- নোয়াগাঁও
- কামালশাহী
এই গ্রামে 'ক' একটি বৃহৎ দীঘি আছে। এর মধ্যে খান সাহেবের ও মীর সাহেবের দীঘি উল্লেখযোগ্য। তবে, রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে সেগুলোর পাহাড় ধসে ধ্বংসের ন্যায়। অনেকটা দীঘি ভরে গেছে এবং ভরানো হয়েছে। গ্রামের ঐতিহ্য অবহেলিত এবং ধ্বংসের মুখে।