শাম্মা জৈন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শাম্মা জৈন
গ্রীসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
জুন ২০১৭ - অক্টোবর ২০১৯
পানামা, কোস্টা রিকা এবং নিকারাগুয়াতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
মে ২০১৪ – জুন ২০১৭
আইভেরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, সিরিয়া লিয়ন এবং গিনিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত
কাজের মেয়াদ
আগস্ট ২০০৮ – আগস্ট ২০১১
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মজম্মু, জম্মু ও কাশ্মীর
জাতীয়তাভারতীয়
সন্তানএক ছেলে
জীবিকাকূটনীতিক

শাম্মা জৈন (জন্ম ১৯৫৯ সালে) একজন বরিষ্ঠ ভারতীয় কূটনীতিবিদ, তিনি ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত গ্রীসে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ছিলেন।[১] এরপূর্বে, তিনি পানামা, কোস্টা রিকা এবং নিকারাগুয়াতে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।[২] ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং গিনিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছেন।[৩] এছাড়াও তিনি ইতালির রোমে ডেপুটি চীফ মিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক কাউন্সিলর এবং ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর ভারতীয় স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

শাম্মা জৈন জম্মু ও কাশ্মীরের জম্মুতে জন্মগ্রহণ করেন। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ এর জন্য তিনি চ্যান্সেলরের স্বর্ণ পদক লাভ করেন। তিনি দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনশাস্ত্র ও রাজনীতি এদুটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪] তিনি মর্যাদাপূর্ণ ইউজিসি ফেলোশিপ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৮৩ সালে, জৈন, ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবায় তার কূটনৈতিক কর্মজীবন শুরু করেন।[৫] পানামাতে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার পূর্বে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী নীতি সম্পর্কিত সকল বিষয় এবং নিউ দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারনের পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগও তার তত্ত্বাবধানে ছিল।[৬] রাষ্ট্রদূত জৈন ভারতের অতি পুরাতন বৈদেশিক নীতিমালা বিষয়ক চিন্তাধারার সংগঠন, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্সের যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[৭]

ইতালির রোমে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত শাম্মা জৈন (ডান থেকে দ্বিতীয়)

ইতালির রোমে ভারতীয় দূতাবাসে জৈন মিশনের ডেপুটি চীফ ছিলেন। [৮] তিনি প্যারিসে ইউনেস্কোর ভারতীয় প্রতিনিধিদের প্রধান সচিব হিসাবে কাজ করেছেন এবং ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে, ভারতের দূতাবাসে, তিনি রাজনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের কাজের দায়িত্বে ছিলেন।[৯]

২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফিলিপাইনের ম্যানিলার ডেপুটি চীফ মিশন এবং চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। [১০] এর আগে তিনি, সাউথ এশিয়া অঞ্চলে ভারতের নীতি বিষয়াবলীর অগ্রগতির সাধনের জন্য সার্কের পরিচালক ছিলেন। রাষ্ট্রদূত জৈন তুরস্কআর্জেন্টিনায় কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৯ সালে জৈন লাইবেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রারম্ভিক বক্তা ছিলেন, যেখানে তিনি ডক্টর অফ লেটারস (অনারিস কসা) ডিগ্রি লাভ করেন।[১১] তিনি ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির ২০০৯ স্নাতকোত্তর ক্লাসের প্রারম্ভিক বক্তার দায়িত্ব পালন করেন। তার একটি ছেলে রয়েছে, যার নাম ঈশান।

আইভরি কোস্টের রাষ্ট্রদূত[সম্পাদনা]

আগস্ট ২০০৮ সালে, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং গিনি এই তিনটি দেশকে একযোগে স্বীকৃতিস্বরূপ জৈনকে আইভরি কোস্টে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার কর্মজীবনের সময় পশ্চিম আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি নাটকীয় প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল। এই ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলো পশ্চিম আফ্রিকার সাথে ভারতের বাণিজ্যকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে।[১২]

ভারতের পক্ষে পশ্চিম আফ্রিকায় তার এই প্রচেষ্টা পশ্চিম আফ্রিকান দেশসমূহের অর্থনৈতিক সমাজের সাথে সম্পর্ককে আরো মজবুত করে এবং তেল ও গ্যাস, শিক্ষা, ফার্মাসিউটিক্যালস, খনির ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে পশ্চিম আফ্রিকার সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করতে সহায়তা করে। আইভরি কোস্টে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি আফ্রিকার সাথে ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতার একটি প্রধান লক্ষ্য। তিনি আফ্রিকা জুড়ে একশত পেশাদার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পক্ষে পরামর্শ দেন, যার জন্য ভারত ৭০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল।[১২] সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী শশী থারুরের সঙ্গে তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী আসনের জন্য লাইবেরিয়াদের সমর্থন আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন। [১৩]

২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, রাষ্ট্রদূত জৈন ও ভারতীয় বৈদেশিক বিষয়ক মন্ত্রী ভায়ালার রাভি, লাইবেরিয়াতে এক কূটনৈতিক সফরকালে, একটি গাড়ি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। এটি ঘটে, যখন একটি দ্রুতগামী ড্রাইভার, মনরোভিয়াতে তাদের গাড়ীতে সজোরে ধাক্কা দেয়। লাইবেরিয়ার রাষ্ট্রপতি এলেন জনসন সারলিফ দুর্ঘটনা স্থান পরিদর্শনে যান এবং আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আইভরি কোস্টের অ্যাবিজানে বিমান যোগে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।[১৪]

আইভরিয়ান গৃহযুদ্ধ[সম্পাদনা]

মার্চ ২০১১ সালে, আইভরি কোস্টের দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধের সময়, প্রচন্ড বড় বিপদের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, শাম্মা জৈন আইভরি কোস্টে অবস্থারত ভারতীয় নাগরিকদের দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি দেখাশোনা করেন [১৫] এটির কারণে ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে লরেন্ট বাগবো এবং ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারীর জন্য ভোট দিয়েছিল।[১৬] আবিজানের কূটনৈতিক এলাকায় যেখানে তার বাসভবন ছিল, সেখানে ভারী বন্দুকযুদ্ধ ও বিস্ফোরণের সময়, ভারতীয় কয়েকশত নাগরিকের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রদূত সেখানেই থেকে যান।

২০১১ সালের ৮ই এপ্রিল, যখন আবিজানে কোকোডির বাসভবনে সশস্ত্র ভাড়াটেরা আক্রমণ করে, তখন ফরাসি সেনারা জৈনকে উদ্ধার করে। তিনি নিজের যে বাড়ীতে আটকা পড়েছিলেন, তা ছিল বাগবোর রাষ্ট্রপতির ভবন ঘেঁষা। রাজধানীর এই অঞ্চলটিতে, দুই বিরুদ্ধ শক্তি বাগবো এবং আলাসানে ওউটারার মধ্যে, সবচেয়ে জোরালো যুদ্ধ হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত জৈন, তার বাসভবনে বহু সময় আটকে থাকার পর, জাতিসংঘ ও ফরাসি যৌথবাহিনী এক সাহসী অভিযান করে তাকে উদ্ধার করে এবং আবিজানের বাইরে একটি ফরাসি সামরিক বেসে তাকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Shamma Jain appointed Indian envoy to Greece"Business Standard। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৭ 
  2. "CII Interactive Session"Confederation of Indian Industry। ১৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪ 
  3. "Embassy of India in Ivory Coast"। Ministry of External Affairs। ১৮ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ 
  4. "Center for African Studies" (পিডিএফ)। JNU। ১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪ 
  5. "Shamma Jain appointed as the next Ambassador of India to Panama"। Ministry of External Affairs। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪ 
  6. "MEA Organization" (পিডিএফ)। Ministry of External Affairs। ১৭ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪ 
  7. "MEA Moves its Men, Post-Haste"Indian Express। ১৪ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০১৪ 
  8. "Shamma Jain appointed next Ambassador to Cote d'Ivoire"। UNI। ২০০৮। ২৩ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮ 
  9. "Conseil Exécutif – 140th Session" (PDF)। UNESCO। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ 
  10. "ASEAN Regional Forum on Counter-Terrorism" (পিডিএফ)ASEAN। ২০০৮। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০০৮ 
  11. "Liberia: UL Releases Itinerary For Its 87th Graduation Indian Envoy To Serve As Commencement Speaker"। allAfrica.com। ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০০৯ 
  12. "Government initiatives aiding India-West Africa trade surge"Business Standard। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৪ 
  13. "Visiting Indian Minister of State and Liberian President Hold Bilateral Talks"। Government of Liberia। ১৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৪ 
  14. "Ravi to be discharged from Cote d'Ivoire hospital in few days"Zee News। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৪ 
  15. "66 Indians evacuated from Cote d'Ivoire"। Yahoo News। ১৭ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৪ 
  16. "UN forces rescue Indian envoy to Ivory Coast"। CNN-IBN। ১০ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১৪