লক্ষ্মণসেন
| অরিরাজ-মদনশঙ্কর পরমনরসিংহ বঙ্গপতি লক্ষ্মণ সেন | |
|---|---|
| বঙ্গের সম্রাট | |
| রাজত্ব | ১১৭৮ – ১২০৬ |
| পূর্বসূরি | বল্লাল সেন |
| উত্তরসূরি | বিশ্বরূপ সেন |
| দাম্পত্য সঙ্গী | তন্দ্রা দেবী[১] |
| বংশধর | মাধব সেন বিশ্বরূপ সেন কেশব সেন |
| প্রাসাদ | সেন রাজবংশ |
| পিতা | বল্লাল সেন |
| মাতা | রমা দেবী |
বঙ্গপতি লক্ষ্মণ সেন (১১৭৮-১২০৬ খ্রি:) মধ্যযুগীয় বাংলার সেন রাজবংশের চতুর্থ রাজা। তিনি বাঙালি ছিলেন। তিনি সেন বংশের সর্বশেষ সার্বভৌম ও বাংলার শেষ হিন্দু রাজা। তিনি ১১৭৮ হতে ১২০৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। তার পূর্বসূরী ছিলেন তার পিতা বল্লাল সেন। [২]তার মন্ত্রী ছিলেন হলায়ূধ। লক্ষ্মণ সেন তার রাজত্বকে কামরূপ (বর্তমানে অসম), কলিঙ্গ (বর্তমান উড়িষ্যা), কাশী,প্রয়াগরাজ এবং দিল্লী[৩][৪] পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে দিল্লী সালতানাতের তুর্কী সেনা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খলজীর বাহিনীর হাতে গৌড় আক্রান্ত হলে লক্ষণ সেন পূর্ব বঙ্গের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে তার পুত্ররা আরও কিছুদিন শাসন অব্যাহত রাখে।[৫] সাহিত্যেকর্মে তাঁর উৎসাহ ছিল। তিনি তার বাবা বল্লাল সেন ('দানসাগর' ও 'অদ্ভুতসাগর')-এর অসম্পূর্ণ গ্রন্থ ‘অদ্ভুত সাগর’ সমাপ্ত করেন।[৫] লক্ষণ সেন ১১১৯ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন এবং এই সালেই লক্ষণাব্দ বা লক্ষণ সম্বৎ প্রচলন করেন।[৬]
ধর্মীয় নীতি
[সম্পাদনা]মহারাজা লক্ষ্মণসেন একজন ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব ছিলেন । তিনি ভগবান বিষ্ণুর চতুর্থ অবতার উগ্রমাধব নৃসিংহ র উপাসনা করতেন । তাঁর উপাধি ছিল "পরম বৈষ্ণব", "পরম নরসিংহ" এবং "অরিরাজ-মাধবশঙ্কর" । তাঁর রাজসভায় কবি জয়দেব, বিখ্যাত বৈষ্ণব পদাবলী কাব্য "গীতগোবিন্দ" রচনা করেন । ধোয়ী এবং শ্রীধর দাসও তার রাজসভায় ছিলেন। যিনি সদুক্তিকর্ণামৃত নামক সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন।[৭] সেন রাজসভার রাজকীয় প্রতীক ছিল উগ্রমাধব এবং সৈন্যবাহিনীর যুদ্ধের স্লোগান ছিল "রাধামাধবয়োবর্জয়ন্তী"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
লক্ষ্মণ সেন এর সাম্রাজ্য বিস্তার
[সম্পাদনা]কামরূপ রাজ্য জয়
[সম্পাদনা]পিতামহ বিজয় সেন এর সেনাপতি হিসেবে খুব অল্প বয়সে লক্ষ্মণ সেন কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করেন । লক্ষ্মনের আক্রমণে কামরুপ রাজ্যের রাজা ভীত হয়ে লক্ষ্মসেনের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হন। ধারণা করা হয় যে, বিজয়সেন কামরুপের রাজাকে বিতাড়িত করেন । পরবর্তীতে রাজা লক্ষ্মণসেন কামরূপ রাজ্য সম্পূর্ণভাবে বিজয় সম্পন্ন করেন।[৫]
লক্ষ্মসেনের ভাওয়াল রাজ্য ও মাধাইনগর (মালদহ) লিপি থেকে জানা যায়-লক্ষ্মণসেন যৌবনে কলিঙ্গ দেশ বা উড়িষ্যা অভিযান পরিচালনা করেন। লক্ষ্মণসেন পিতামহ বিজয় সেনের সঙ্গে কলিঙ্গ অভিযানে অংশগ্রহণ করে সফল হন। পরবর্তীতে কলিঙ্গ দেশ সেন সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে ।[৫]
বিজয়সেন ইতঃপূর্বে উত্তর ভারতে নৌ-অভিযানের মাধ্যমে গাহড়বাল অভিযান করেছিলেন। সেন শাসনামলে গাহড়বাল রাজপুত রাজাদের সঙ্গে সেনদের সম্পর্ক ভালো ছিল না এবং প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ ছিল। লক্ষ্মনসেন গাহড়বাল রাজপুত রাজা জয়চন্দ্র সিংকে পরাজিত করে গয়া থেকে কনৌজ পর্যন্ত অঞ্চল নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন ।[৫]
স্থাপত্য নিদর্শন
[সম্পাদনা]- লকমা রাজবাড়ী - রাজা লক্ষ্মণসেন এটি নির্মাণ করেন।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "পাতা:জীবনীকোষ-ভারতীয় ঐতিহাসিক-পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪৫০ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০২১।
- ↑ Sen, Sailendra (২০১৩)। A Textbook of Medieval Indian History। Primus Books। পৃ. ৩৫-৩৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৯-৩৮০৬০-৭৩৪-৪।
- ↑ "পাতা:বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী (উত্তর ভারত) - জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস.pdf/২৭ - উইকিসংকলন একটি মুক্ত পাঠাগার"। bn.wikisource.org। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২১।
- ↑ "लक्ष्मण सेन | भारतकोश"। m.bharatdiscovery.org (হিন্দি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- 1 2 3 4 5 চিত্তরঞ্জন মিশ্র (২০১২)। "লক্ষ্মণসেন"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১। ওসিএলসি 883871743। ওএল 30677644M।
- ↑ "লক্ষণাব্দ"।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতিতে খালি অজানা প্যারামিটার রয়েছে:|3=(সাহায্য) - ↑ "সদুক্তিকর্ণামৃত - শ্রীধর দাস"। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস Sahityakatha.com। ৩০ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "বিলুপ্তির পথে 'লকমা রাজবাড়ি'"। চ্যানেল আই অনলাইন (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১।