রমণী গাভরু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রমণী গাভরু (রহমত বানু বেগম)
জন্মরমণী গাভরু
আনুমানিক ১৬৫৬
আসাম
দাম্পত্য সঙ্গীমহম্মদ আজম শাহ
রাজবংশআহোম (জন্মসূত্রে)
টিমুরিড (বিবাহসূত্রে)
পিতাজয়ধ্বজ সিংহ
মাতাপাখরি গাভরু
ধর্মইসলাম (বিবাহের আগে হিন্দু)

নাং রমণী গাভরু বা রহমত বানু বেগম (ফার্সি: رحمت بانو بیگم; জন্ম- আনুমানিক ১৬৫৬) আহোম চাওফা চুতাম্লা এবং পত্নী নাং পাখরি গাভরুর একমাত্র কন্যা, আহোম রাজ্যের রাজকুঁয়রী তথা মোগল সম্রাট মহম্মদ আজম শাহ-এর প্রথম পত্নী ছিলেন। সম্পর্কে তিনি লাচিত বরফুকন এবং লালুকসোলা বরফুকন-এর ভাগিনী। লালুকসোলা বরফুকন আজম শাহকে গুয়াহাটিতে করা ষড়যন্ত্রের বিরোধিতা করেছিলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জন্মসূত্রে রমণী গাভরু ছিলেন একজন আহোম কুঁয়রী। বাবা চাওফা চুতাম্লা এবং মা তামুলী কুঁয়রী পাখরি গাভরু।[১] তিনি নাংচেং গাভরু এবং মাইনা গাভরু নামেও পরিচিত ছিলেন।[২]

সম্পর্কে তিনি প্রসিদ্ধ আহোম প্রশাসক মোমাই তামুলী বরবরুয়া-এর ভাগিনী-নাতি এবং লাচিত বরফুকন এবং লালুকসোলা বরফুকন-এর ভাগিনী।[৩] এই দুজনে শরাইঘাটর যুদ্ধে অংশ নিয়ে রামসিংহ-এর অধীন মোগল সেনাকে পরাস্ত করে কামরূপ উদ্ধার করেছিলেন।

বিবাহ[সম্পাদনা]

যখন মীরজুমলা আসাম আক্রমণ করে জয়ধ্বজ সিংহকে পরাস্ত করেন তখন ১৬৬৩ সালে টিপামর ঘিলাখারী ঘাটে আহোম এবং মোগলদের সন্ধি হয়। সন্ধি মতে, জয়ধ্বজ সিংহ ছবছরের কন্যা রমণী গাভরু এবং টিপাম রাজার কন্যাকে মোগল হারেমে পাঠাতে মনস্থ করেন।[৪] মীরজুমলার মোগল বঙ্গের রজধানী ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পথে রোগে পড়ে মৃত্যু হয়। তখন ঢাকার সুবেদার শায়েস্তা খান তাঁকে কিছুদিন দেখাশুনা করেন বলে অনুমান করা হয়।[৫] এই মতে ১৬৬৩ সালের ১৫ জানুয়ারিতে রমণী গাভরু ঔরঙ্গজেব-এর সভায় উপস্থিত হন।[৬] তাঁকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার পর রহমত বানু বেগম নাম দেওয়া হয়।[৭] ১৬৬৮ সালের ১৩ মে'ত তাঁকে পাঁচ বছর বয়সে দিল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঔরংজেবের পুত্র মহম্মদ আজম শাহের সাথে (আজমতারা) ১,৮০,০০০ টাকার যৌতুকর সাথে বিয়ে দেওয়া হয়।[২][৮][৯]

১৬৭১ সালে নতুন আহোম স্বর্গদেউ চক্রধ্বজ সিংহ-এর সেনা সেনাপতি লাচিত বরফুকন-এর নেতৃত্বে শরাইঘাটর যুদ্ধে গুয়াহাটি উদ্ধার করেন।[১০]

কয়েক বছর পর লাচিতের ভাই লালুকসোলা বরফুকন গুয়াহাটিকে মোগলদের হাতে ছেড়ে দিয়ে এর বিনিময়ে রাজা হওয়ার ষড়যন্ত্র করেন। সেই সময় রমণী গাভরুর স্বামী আজমতারা বঙ্গের সুবেদার হয়েছিলেন। এই কথা রমণী গাভরু বেগম হওয়ার পর মামা লালুকসোলাকে চিঠি লিখে এমন প্রতারণা না করতে সাবধানবাণী দেন। অবশ্য লালুকসোলা রমণী গাভরুর এই সাবধানবাণী প্রত্যাখ্যান করেন।[১১]

ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

বুরঞ্জীসমূহে মোগলদের হাতে ছেড়ে দেয়া ছসড়া রমণী গাভরুর বিষয়ে বেশি তথ্য নেই। বুরঞ্জীবিদ সূর্যকুমার ভূঞা নতুন তথ্য এবং কল্পনার সহায়তা নিয়ে ১৯৫১ সালে "রমণী গাভরু" নামের একটি জীবনী প্রকাশ করেন।[১২]

ঢাকা-এর লালবাগ দুর্গের মধ্যে "পরী বিবির সমধি" নামের এক স্মারক আছে। একাংশ ইতিহাসবিদ এটি বঙ্গের সুবেদার শায়েস্তা খানের বড়ো কন্যা বিবি পরীর সমাধি বলেন। অন্য একাংশের মতে এটি রমণী গাভরুর সমাধি, এবং সেইজন্যই সমাধির স্থাপত্যে প্রাক্‌-মুসলিম শৈলী দেখতে পাওয়া যায়।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Neog, Maheswar (১৯৮৩)। Lachit Barphukan: The Victor of the Battle of Saraighat। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 28। 
  2. Pathak, Dayananda (২০০২)। Pickings from the Cottonian। Cotton College Centenary Celebration Committee, Cotton College। পৃষ্ঠা 102। 
  3. Bhattacharyya, Malaysankar; Anandagopal, Ghosh (১৯৮৯)। Studies in history and archaeology: a miscellany। Indian Institute of Oriental Studies and Research। পৃষ্ঠা 58। 
  4. Sarma, Anjali (১৯৯০)। Among the Luminaries in Assam: A Study of Assamese Biography। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 188। আইএসবিএন 978-8-170-99207-3 
  5. Barooah Pisharoty, Sangeeta (২৮ এপ্রিল ২০১৮)। "In Search of a Lost Ahom Princess"। The Wire। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  6. Sarkar, Jadunath (১৯৪৭)। Maasir-i-Alamgiri: A History of Emperor Aurangzib-Alamgir (reign 1658-1707 AD) of Saqi Mustad Khan। Royal Asiatic Society of Bengal, Calcutta। 
  7. Islamic Culture - Volumes 21-22। Islamic Culture Board। ১৯৭১। পৃষ্ঠা 112। 
  8. Bhuyan, Suryya Kumar (১৯৫৭)। Atan Buragohain and His Times: A History of Assam, from the Invasion of Nawab Mir Jumla in 1662-63, to the Termination of Assam-Mogul Conflicts in 1682। Lawyer's Book stall। পৃষ্ঠা 31। 
  9. Shashi, S. S. (১৯৯৬)। Encyclopaedia Indica: India, Pakistan, Bangladesh। Anmol Publications। পৃষ্ঠা 2078। আইএসবিএন 978-8-170-41859-7 
  10. Pathak 2008, পৃ. 12।
  11. Pathak 2008, পৃ. 13।
  12. Sarma, Anjali (১৯৯০)। "Among the Luminaries in Assam: A Study of Assamese Biography"। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 188। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]