রঞ্জাবতী সরকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রঞ্জাবতী সরকার
জন্ম(১৯৬৩-০৩-২৯)২৯ মার্চ ১৯৬৩
নসুক্কা, নাইজেরিয়া
মৃত্যু২৩ অক্টোবর ১৯৯৯(1999-10-23) (বয়স ৩৬)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশানৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক
পরিচিতির কারণনবনৃত্য
পিতা-মাতাপার্বতীকুমার সরকার (পিতা)
মঞ্জুশ্রী চাকী সরকার (মাতা)
পুরস্কারশিরোমণি পুরস্কার (১৯৯০)
সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৪)

রঞ্জাবতী সরকার (২৯ মার্চ ১৯৬৩ – ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৯) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য-গবেষক [১] তিনি তার মাতার সৃষ্ট 'নবনৃত্য' নামের এক অনন্য সুন্দর সৃজনশীল নৃত্য ধারা অব্যাহত রাখেন তাদের ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ডান্সার্স গিল্ড - মৃত্তিকা নৃত্যসংস্থার মাধ্যমে মায়ের অসুস্থতার পর। [২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

রঞ্জাবতীর জন্ম ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মার্চ পিতার কর্মস্থল নাইজেরিয়ার নসুক্কা শহরে। [৩] পিতা পার্বতীকুমার সরকার ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং মাতা ছিলেন বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক মঞ্জুশ্রী চাকী সরকার। তিন বৎসর বয়স থেকে তিনি পিতার কর্মস্থল 'স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কে'র নিউ পলৎজ ক্যাম্পাসে বড়ো হয়ে ওঠেন এবং ক্যাম্পাসের স্কুলেই তার পড়াশোনা।[১] তবে ছোটবেলা থেকেই নাচের তালিম পান মায়ের কাছে। সেই সঙ্গে পিয়োনো বাজানো শিখে নেন। পরবর্তীতে অবশ্য কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরাজীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বি.এ ও এম.এ পাশ করেন এবং চারটি স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রেই নিজের কর্মজীবন তৈরি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি পরিবর্তে মায়ের ইচ্ছায় নৃত্যকে বেছে নেন। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট মায়ের সঙ্গে তাদের কলকাতার সল্টলেকের বাড়িতে নৃত্যসংস্থা- 'ড্যান্সার্স গিল্ড' গড়ে তোলেন এবং মায়ের পরিকল্পিত 'নবনৃত্য'-কে সার্থক করতে মায়ের নৃত্যসঙ্গিনী হন। [৪]ভরতনাট্যম, মণিপুরী, ছৌ ইত্যাদি নৃত্যে পারদর্শিতা অর্জন করেন গোবিন্দন কুট্টি, থাঙ্কমণি কুট্টি, খগেন্দ্রনাথ বর্মন প্রমুখের কাছে নাচ শেখেন। দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে রবীন্দ্র সংগীত শেখার পাশাপাশি, কলানিধি নারায়ণের কাছে অভিনয় করাও শেখেন। [১] মাঝে মধ্যেই গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য তাকে আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স স্ক্যান্ডিনেভিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেতে হত। [৩] বি.এ পরীক্ষার পরেই তিনি 'প্যান কালচারাল প্রোজেক্ট'-এ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্কলারশিপ লাভ করে যুক্তরাজ্যে যান।[৪] পরে এম.এ পাশের পর যান ফ্রান্সে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

রঞ্জাবতী মায়ের নৃত্যসঙ্গিনী হয়ে দেশে বিদেশে বহু কাজ করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ড্যান্স গ্রুপের অনুষ্ঠানে প্রভূত প্রসংশা লাভ করেন। ইউনেস্কোর বিশেষ নৃত্য প্রকল্প- সমকালীন ভারতীয় নৃত্য-এর দায়িত্ব নিয়ে টানা তিন বৎসর প্রকল্প পরিচালনার কাজে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়ে রঞ্জাবতী আন্তর্জাতিক পরিচিতি পান। দক্ষিণ এশিয়াদক্ষিণ আমেরিকার ভিন্ন ভিন্ন শিল্প সংস্থার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডারামে আমেরিকান ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের আন্তর্জাতিক কোরিওগ্রাফার কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'সাউথ এশিয়ান ড্যান্স ইউথ কোম্পানি' প্রতিষ্ঠা করেন, যা 'লন্ডন ড্যান্স অ্যান্ড পারফরম্যান্স এওয়ার্ড' লাভ করে। [৫]এছাড়াও বেশ কয়েকবার তিনি ভেনেজুয়েলাতে আমন্ত্রিত হন। পরে তিনি তার মায়ের অসুস্থতার কারণে ড্যান্সার্স গিল্ডের দায়িত্ব নেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সল্টলেকে দশ কাঠা জমি দিলে সেখানে সনাতন গুরুকূলের ধাঁচে গড়ে তোলেন মৃত্তিকা, যার উদ্বোধন হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এক বৃক্ষরোপনে। এরপর তিনি তার গ্রুপ নিয়ে যান ডেনমার্ক। সেখানে তিনি দেড় মাস ধরে পরিবেশন করেন স্বনির্মিত ও পরিকল্পিত কাসান্দ্রা, লা প্র সাভানা এবং গঙ্গাবতরণ[১]

রঞ্জাবতী কবিতা অবলম্বনে নাচের পরিকল্পনা করতেন। তিনি দিদাস বটুয়া নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। মায়ের উদ্ভাবিত নবনৃত্য'-এর উপর একটি বইও লেখেন। অমিতাভ চক্রবর্তীর পরিচালনায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত "কাল অভিরতি" নামের একটি ছবিতে অভিনয় করেন। একটি ফরাসি ভাষার ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। [১]

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

রঞ্জাবতী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় অধ্যাপক স্যমন্তক দাসকে বিবাহ করেন, কিন্তু তাদের বিবাহ বেশিদিন টেকেনি। [৬] রঞ্জাবতী ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের শারদোৎসবের সপ্তমী ও অষ্টমীতে মুম্বাইয়ের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাবাড়িতে "গঙ্গাবতরণ" শেষ নৃত্য প্রদর্শন করেন এবং তারপরই ২৩ অক্টোবর মুম্বাইতে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর দুদিন আগে এক ইমেলে এক বন্ধুকে লেখেন - "আমি নিজের মধ্যে অন্ধকার জগতের সাথে লড়াই করছি।" [৭] তার মৃত্যুর পর ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ঐশিকা চক্রবর্তীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় রঞ্জাবতীর নির্বাচিত রচনা—

  • সরকার, রঞ্জাবতী (২০০৮)। রঞ্জাবতী:এ ড্যান্সার অ্যান্ড হার ওয়ার্ল্ড - সিলেকটেড রাইটিংস অফ রঞ্জাবতী সরকার। থিম। আইএসবিএন 978-81-8601-762-3 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি – ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৩৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "Manjushree chaki Sarkar: মুগ্ধ নেহরু মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর গলায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৮ 
  3. "Obituary: Ranjabati Sircar"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০৬ 
  4. "রঞ্জাবতী সরকার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১১ 
  5. "Ranjabati Sircar, 36, Indian Choreographer"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৩ 
  6. "রঞ্জাবতীর মৃত্যু আজও রহস্য! তাঁর ব্যর্থ প্রেমিক উত্তীয়, প্রাক্তন স্বামী স্যমন্তকের মৃত্যুও কুয়াশায় মোড়া"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৩ 
  7. "Promising young performer Ranjabati Chaki Sircar from Calcutta commits suicide"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৩