যশোধরা বাগচি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যশোধরা বাগচি
চিত্র:JasodharaBagchiPic.jpg
জন্ম১৯৩৭
কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৯ জানুয়ারি ২০১৫(2015-01-09) (বয়স ৭৭–৭৮)
কলকাতা, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানপ্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা
সোমারভিল কলেজ, অক্সফোর্ড
নিউ হল, কেমব্রিজ

যশোধরা বাগচি (জন্ম ১৯৩৭ কলকাতা - ৯ই জানুয়ারী ২০১৫) ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় নারীবাদী অধ্যাপক, লেখক, সমালোচক এবং কর্মী।[১] তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ উইমেনস স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ছিলেন।[১] তাঁর বইয়ের মধ্যে রয়েছে লাভড অ্যাণ্ড আনলাভড: দ্য গার্ল চাইল্ড ইন দ্য ফ্যামিলি এবং দ্য ট্রমা অ্যাণ্ড ট্রায়াম্ফ: জেণ্ডার অ্যাণ্ড পার্টিশন ইন ইস্টার্ন ইণ্ডিয়া[২] তিনি নারী অধিকার সংগঠন সচেতনা প্রতিষ্ঠা করেন।[২]

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

যশোধরা বাগচির জন্ম ১৯৩৭ সালে[২] কলকাতায়। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত), অক্সফোর্ডের সোমারভিল কলেজ, এবং কেমব্রিজের নিউ হল -এ শিক্ষা লাভ করেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

যশোধরা বাগচি কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে ইংরেজি শেখানোর পর ১৯৬৪ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়ানো শুরু করেন।[১] তিনি ১৯৮৮ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের[১][৩] স্কুল অফ উইমেনস স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক হন। ১৯৯৭ সালে তাঁর অবসর গ্রহণের পর, তিনি স্কুল অফ উইমেনস স্টাডিজে একজন ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।[১]

যশোধরা বাগচি ১৯৮৩ সাল থেকে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং প্রথমদিকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বছরগুলিতে ইউজিসি বিশেষ সহায়তা কর্মসূচির সমন্বয় করেন, এটি পরে ইংরেজিতে উন্নত অধ্যয়নের কেন্দ্রে পরিণত হয়। তাঁর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে নারী অধ্যয়ন, নারীর লেখা, ১৯ শতকের ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্য, বাংলায় তথ্যবাদের শুরু, মাতৃত্ব এবং ভারত বিভাজন[২] সহ-সম্পাদক শুভরঞ্জন দাশগুপ্তের সাথে, তিনি ছিলেন প্রথম পণ্ডিতদের একজন, যিনি দেশভাগের সময় এবং পরে বাঙালি মহিলাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণা ও সংগ্রহ করেছিলেন।[৪]

তিনি বাংলা উইমেন রাইটার্স রিপ্রিন্ট সিরিজ শুরু করেন, যা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ উইমেনস স্টাডিজ, দ্বারা সম্পাদিত হয়।[২]

এই বিভাগে তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মী, অধ্যাপক সজনী মুখার্জি এবং সুপ্রিয়া চৌধুরী, ২০০২ সালে তাঁর জন্য একটি বিশিষ্ট স্মারক প্রকাশনার সম্পাদনা করেছেন, যার নাম: লিটারেচার অ্যাণ্ড জেণ্ডার: এসেজ ফর যশোধরা বাগচি। এতে অবদানকারীদের মধ্যে আছেন যশোধরা বাগচির শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, বন্ধু, প্রাক্তন ছাত্র এবং সহকর্মীরা। এঁদের মধ্যে আছেন পিটার ড্রঙ্ক, কিটি স্কুলার দত্ত, হিমানি বন্দ্যোপাধ্যায়, মালিনী ভট্টাচার্য, শীলা লাহিড়ী চৌধুরী, সুপ্রিয়া চৌধুরী, তনিকা সরকার, ভাস্বতী চক্রবর্তী এবং অদিতি দাশগুপ্ত।

অধ্যাপক বাগচি তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ইংরেজি বিভাগের সেমিনার এবং বক্তৃতায় নিয়মিত এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর কয়েক বছর তিনি এর বোর্ড অফ স্টাডিজের সদস্যও ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে, তিনি তাঁর কাজের জন্য এবং তাঁর ছাত্রদের প্রতি তাঁর অপরিসীম আত্মোৎসর্গের জন্য স্বীকৃত হয়েছিলেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে গবেষণার সংস্কৃতিকে উন্নীত করা তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসাবে বিবেচিত হয়।[৫]

২০১৪ সালে, কলকাতা বইমেলার আয়োজকরা তাঁর বই, পরিযায়ী নারী ও মানবাধিকার এর প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। তাঁর মেয়ে তিস্তা বাগচির মতে এই বইয়ের "বিতর্কিত" প্রকৃতির কারণে তারা এই কাজ করেছিল।[১]

অবসর গ্রহণের পর, তিনি ভারতে বেশ কয়েকটি সম্মেলনে যোগদান করেন এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন।[৫]

সক্রিয়তা[সম্পাদনা]

তিনি কলকাতার নারীবাদী সংগঠন সচেতনা[২] -র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ নারী কমিশনের[১] সভাপতি ছিলেন।[৬][৭]

২০১৪ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ হোক কলরব আন্দোলনে যশোধরা বাগচি তাঁর সমর্থন দেন। এই আন্দোলন হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন মহিলা ছাত্রীর শ্লীলতাহানির একটি ন্যায্য এবং অবিলম্বে তদন্ত চেয়ে। তিনি ধানতলায় মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের তদন্তের আহ্বান জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের পক্ষেও কথা বলেছেন।[৮]

তিনি পাঁচজন ইমেরিটাস অধ্যাপকদের একটি দলের মধ্যে ছিলেন যাঁরা তৎকালীন উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরী নাথ ত্রিপাঠীর সাথে দেখা করেছিলেন।[১]

মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

যশোধরা বাগচি ২০১৫ সালের ৯ই জানুয়ারি সকালে ৭৭ বছর বয়সে মারা যান।[২]

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পুনর্নবার সাথে যশোধরা বাগচি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ২০১৫ সাল থেকে তারা প্রতি বছর একটি যশোধরা বাগচি স্মরণ প্রোগ্রামের আয়োজন করে, যার মধ্যে তাঁর স্মরণে বক্তৃতাদানও রয়েছে।[৯] ২০১৯ সালে, যশোধরা বাগচির পরিবারের সহায়তায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যশোধরা বাগচি মেমোরিয়াল হার্ডশিপ ফাণ্ড স্থাপন করা হয়েছিল, বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত অসচ্ছলতার সময় সহায়তা করার জন্য।[১০]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

তিনি অর্থনীতিবিদ অমিয় কুমার বাগচিকে বিয়ে করেছিলেন।[২]

বই (লেখক, সম্পাদিত এবং সহ-সম্পাদিত)[সম্পাদনা]

  • ভিক্টোরিয়ান যুগে সাহিত্য, সমাজ এবং আদর্শ (সম্পাদিত খণ্ড), (১৯৯২)
  • ভারতীয় নারী: মিথ এবং বাস্তবতা (সম্পাদিত খণ্ড), (১৯৯৫)
  • লাভড অ্যাণ্ড আনলাভড: দ্য গার্ল চাইল্ড ইন দ্য ফ্যামিলি (জবা গুহ এবং পিয়ালী সেনগুপ্তের সাথে) (১৯৯৭)
  • জেম লাইক ফ্লেম: ওয়াল্টার প্যাটার অ্যাণ্ড দ্য ১৯থ সেঞ্চুরি প্যারাডাইম অফ মডার্নিটি (১৯৯৭)
  • থিংকিং সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইণ্ডিয়া: এসেজ ইন অনার অফ অ্যালিস থর্নার (কৃষ্ণ রাজ এবং সুজাতা প্যাটেলের সাথে সহ-সম্পাদিত) (২০০২)
  • দ্য ট্রমা অ্যাণ্ড ট্রায়াম্ফ: জেণ্ডার অ্যাণ্ড পার্টিশন ইন ইস্টার্ন ইণ্ডিয়া, ২ খণ্ড (শুভরঞ্জন দাশগুপ্তের সহ-সম্পাদিত) (২০০৩ খণ্ড ১, ২০০৯ খণ্ড ২)[১১]
  • পশ্চিমবঙ্গে নারীর পরিবর্তনশীল অবস্থা ১৯৭০-২০০০: সামনের চ্যালেঞ্জ (সম্পাদিত খণ্ড), (২০০৫)[১২]
  • ইনটেরোগেটিং মাদারহুড (২০১৬)[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Staff Reporter (১০ জানুয়ারি ২০১৫), "Jasodhara Bagchi is no more", The Hindu 
  2. TNN (জানুয়ারি ১০, ২০১৫)। "Jashodhara Bagchi passes away"Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  3. "School of Women's Studies, Jadaypur University"। এপ্রিল ৫, ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Roy, Rituparna (২০১৮)। "Partition in Bengal. Looking back after 70 Years"International Institute for Asian Studies। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  5. Chaudhuri, Supriya; Mukherji, Sajni (২০০২)। Literature and Gender: Essays for Jasodhara Bagchiআইএসবিএন 9788125022275 
  6. "West Bengal Commission of Women | » History" 
  7. Das, Manjulika (২০০৪)। "Women's groups in India call on men to take more active role in contraception": 476.9। ডিওআই:10.1136/bmj.329.7464.476-hপিএমআইডি 15331463পিএমসি 515233অবাধে প্রবেশযোগ্য। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  8. "Dhantala incident: six women molested and raped, says WBWC"ZeeNews। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  9. "Log In or Sign Up to View"www.facebook.com 
  10. "Abhijit Gupta"www.facebook.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০৩ 
  11. Chatterjee, Bhaskar (জানুয়ারি ৯, ২০০৬)। "MEMORIES OF A TRAGEDY"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  12. Sen, Benita (মে ২৪, ২০০৫)। "Towards an egalitarian world"Hindustan Times। PTI। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 
  13. Bhattacharya, Mihir (নভেম্বর ১০, ২০১৭)। "Rethinking motherhood"Frontline। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০২১ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]