মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ – ৫ জানুয়ারি ২০১৪
যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ – ৪ জানুয়ারি ২০১৪
পূর্বসূরীআবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন
উত্তরসূরীমোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২১ মার্চ ১৯৪২
কৃষ্ণনগর, ঝিকরগাছা উপজেলা, যশোর জেলা, পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ রাজত্ব (বর্তমানে- বাংলাদেশ)
মৃত্যু৪ জানুয়ারি ২০১৭(2017-01-04) (বয়স ৭৪)
ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীমমতাজ হাবিব
সন্তানদুই কন্যা
পিতামাতাসেকেন্দার মোহাম্মদ মোসলেম,

আমেনা খাতুন

প্রাক্তন শিক্ষার্থীসরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ (২১ মার্চ ১৯৪২ – ৪ জানুয়ারি ২০১৭) ছিলেন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধা। তিনি সাবেক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী ও যশোর -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ছিলেন জাপান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, রাশিয়া ও ভারতে রাষ্ট্রদূত। ১৯৮৬ সালে তিনি সার্কের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১][২][৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ২১ মার্চ ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ ভারতের যশোরের ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সেকেন্দার মোহাম্মদ মোসলেম। মায়ের নাম মরহুমা আমেনা খাতুন। আট ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি।[৪][৩]

তার বড় ভাই মোস্তফা আনোয়ার মোহাম্মদ যুগ্মসচিব ছিলেন।[৫]

তিনি ১৯৬৮ সালে কুষ্টিয়ার মমতাজ হাবিবকে বিয়ে করেন, এই দম্পতীর দুই মেয়ে, বড় মেয়ে হৃদি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের বাসিন্দা এবং ছোট মেয়ে দিশা সোনাতা ঢাকায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায় কর্মরত।[৬]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৪৮ সালে গ্রামের বিদ্যালয়য়ে। ১৯৫৬ সালে ঝিকরগাছা হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে ১৯৬১ সালে অনার্স এবং ১৯৬২ সালে মাস্টার্স পাশ করেন।[৬]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদের কর্মজীবন শুরু ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে। ১৯৬৮ সালে তিনি নিয়োগ পান জাপানে পাকিস্তানের দূতাবাসে হিসেবে। ১৯৭০ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে হন দ্বিতীয় সচিব।[৫][৩]

মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে ইন্দোনেশিয়ায় পাকিস্তান দূতাবাসে দ্বিতীয় সচিবের দায়িত্ব পালন করা কালীন পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।[৬][৩]

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন ইন্দোনেশিয়া সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় তখন তিনি সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপনে ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭৪ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এবং উপমহাদেশ দফতরের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৯৭৬ সালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে তাকে বদলি করা হয়।[৬]

১৯৭৯ সালে তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের অল্টারনেট রিপ্রেজেন্টেটিভ (বিকল্প প্রতিনিধি) হিসাবে কাজ করেছিলেন।[৭][৪] ঐ বছরই তাকে ভারতে ডেপুটি হাইকমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়।[৭]

১৯৮২ সালে তিনি মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসে দূত হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে সার্কের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পান ১৯৯০ সালে।[৭][৬]

তিনি ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদে ১৯৯৬-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সরকারি চাকুরি থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান তিনি।[৬][৫][৭]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।[৬]

তিনি ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৮]

১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।[৬][৫][৯]

তিনি ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মুখ্য সদস্য এবং বাংলাদেশ-ইরান সংসদীয় মৈত্রী কমিটির সভাপতি ছিলেন।[৬]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ ৪ জানুয়ারি ২০১৭ সালে রাত সাতটা ৪০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[৫][১০][৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ আর নেই"দৈনিক প্রথম আলো। ৫ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭ 
  2. "সাবেক আইসিটি মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ আর নেই"দৈনিক ইত্তেফাক। ৪ জানুয়ারি ২০১৭। ৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০১৭ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব (৫ জানুয়ারি ২০১৭)। "সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ আর নেই"এনটিভি। ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৩ 
  4. "Ex-minister Mostafa Faruk passes away"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৮ 
  5. "সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ নেই"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৪ জানুয়ারি ২০১৭। ২২ অগাস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অগাস্ট ২০২৩ 
  6. "সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ আর নেই"জাগোনিউজ২৪.কম। ৫ জানুয়ারি ২০১৭। ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৩ 
  7. "সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ আর নেই"বাংলা ট্রিবিউন। ৪ জানুয়ারি ২০১৭। ২২ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০২৩ 
  8. "Make integrated efforts to tackle militancy"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ এপ্রিল ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৮ 
  9. "Former ICT minister Mostafa Faruque Mohammad passes away"bssnews.net (ইংরেজি ভাষায়)। BSS। ২০১৮-০৪-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৮ 
  10. "Ex-ICT minister Mostafa dies"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। BSS। ৫ জানুয়ারি ২০১৭। ১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৮