মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট
বাংলাদেশ সরকারের সীল

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছেন আইন প্রয়োগ ও বিচারিক দায়িত্বপালনকারী একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনি মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরনের পর বাংলাদেশে বর্তমানে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ ফৌজদারী অভিযোগ আমলে গ্রহণ ও বিচার করেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারার বিধান মোতাবেক তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে সংঘটিত যেকোনও অপরাধ আমলে নিতে পারেন।[১] ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে মেট্রোপলিটন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা উপসচিব এর সমান।[২][৩][৪]

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসনিক ক্ষেত্রে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনস্থ। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন করার জন্য যেকোনও আদেশ দিতে পারেন। পুলিশ তদন্ত সহ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের বিবরণ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা তার দ্বারা নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করে। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত।

ইতিহাস ও উৎপত্তি[সম্পাদনা]

২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পূর্বে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। [৫] পৃথকীকরণের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এর বিচারকগণ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নিয়োগ[সম্পাদনা]

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের[৬] ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। আইন মন্ত্রণালয় সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন ও বদলি করে থাকে।

ক্ষমতা ও এখতিয়ার[সম্পাদনা]

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড প্রদান করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)সি ধারা অনুযায়ী তিনি কোনো অভিযোগ ছাড়াই স্বত:প্রণোদিতভাবে যেকোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমল যোগ্য অপরাধের সংবাদ পেলে তাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেন। আমল অযোগ্য অপরাধ হলে সেটার জন্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয় এবং মেট্রোপলিটন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দিলে পুলিশ তদন্ত করতে পারে। অন্যদিকে, কেউ গুরুতর অভিযোগ নিয়ে আদালতে হাজির হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারা অনুযায়ী এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিতে পারেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুসারে অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে অপরাধ আমলে নিতে পারেন বা ২০২ ধারা মোতাবেক পুলিশ বা অন্য যে কাউকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। রিপোর্ট প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ধারায় অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারেন।

রিমান্ড[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সংবিধান এর ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপন করবে। তিনি গুরুতর বা সূত্রবিহীন অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক ১৫ দিন পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দিতে পারেন।

পদমর্যাদা[সম্পাদনা]

পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত।[৭] উল্লেখ্য, মেট্রোপলিটন এলাকার উল্লেখযোগ্য শীর্ষ কর্মকর্তাগণের মধ্যে মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৬, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৭, বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ২১, পুলিশ কমিশনারের পদক্রম ২২ এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) এর পদক্রম ২৪।[৮]

ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের সম্পর্ক[সম্পাদনা]

প্রত্যেক পুলিশ অফিসার সকল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে - এটা আইনগত বাধ্যবাধকতা। শুধু তাই নয়, কোনো পুলিশ অফিসার প্রকাশ্যে কোনো আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি কোনো ধরনের কটাক্ষ করতে পারবে না, এমনকি প্রকাশ হতে পারে এমন কোনো প্রতিবেদন বা দলিলে আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটদের কোনো ধরনের সমালোচনাও করতে পারবে না। (প্রবিধান ৩০, পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল)

তাছাড়া, পুলিশ আইনের ২৩ ধারাতে পুলিশ অফিসার কর্তৃক অবশ্য পালনীয় দায়িত্বসমূহের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। উক্ত ধারার বিধান অনুযায়ী অন্যান্য অনেক দায়িত্বের পাশাপাশি প্রত্যেক পুলিশ অফিসার শীঘ্রই ম্যাজিস্ট্রেটের সকল নির্দেশ মানতে এবং বাস্তবায়ন করতে আইনত বাধ্য।[৯]

আইনের সুস্পষ্ট বাধ্যবাধকতামূলক ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও কোনো পুলিশ অফিসার যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কোনো আদেশ বাস্তবায়ন না করে কিংবা করতে অনীহা প্রকাশ করে এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা যথাক্রমে পুলিশ আইনের ২৩ ধারা মতে নির্ধারিত পুলিশ কর্তৃক অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের লঙ্ঘন এবং পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল (পিআরবি) এর ৩০ প্রবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোনো পুলিশ অফিসার আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করলে, ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ পালন না করলে তার শাস্তির বিধান আছে পুলিশ আইনের ২৯ ধারায়।

কোনো পুলিশ অফিসার কর্তৃক কোনো অসদাচরণের অভিযোগ থাকলে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)সি ধারা মোতাবেক অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারেন। (প্রবিধান ২৫ক, পিআরবি)[১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ফৌজদারি কার্যবিধি" 
  2. "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান" 
  3. "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২২ 
  4. "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন" 
  5. "বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ" 
  6. "বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ" 
  7. "পদমর্যাদা ক্রম মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ" 
  8. "পদমর্যাদা ক্রমে জেলা জজের পদমর্যাদা ১৬ ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা ১৭ তে উন্নীত"। ১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০২২ 
  9. "পুলিশ আইন, ১৮৬১" 
  10. "পুলিশ রেগুলেশনস অব বেঙ্গল (পিআরবি), ১৯৪৩"। ২৮ নভেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০২২