মৃৎশিল্প (কারিগরি পেশা)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একজন কুমার মাটির পাত্র তৈরি করছেন - মোরেনা, ভারত

মৃৎশিল্প হলো বিশেষ এঁটেলমাটি বা কাদামাটি, চীনামাটি ইত্যাদির সাহায্যে হাড়ি-পাতিল ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করার শিল্প, যাতে বস্তুগুলো টেকসই ও মজবুত করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেন তাদেরকে কুম্ভকার বা চলিত বাংলায় কুমার এবং যে কর্মশালাতে তারা এগুলি তৈরি করেন তাকে কুম্ভশালা বা কুমারশালা বলা হয়। আমেরিকান সোসাইটি ফর টেস্টিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস (ASTM) কর্তৃক প্রদত্ত মৃৎশিল্পের সংজ্ঞা হল "কারিগরি, কাঠামোগত এবং পুনপ্রক্রিয়াজাত পণ্য ছাড়া সমস্ত কুম্ভকারের মাটির তৈরি পণ্য, যা কুম্ভকারের মাটি, কাদামাটি ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয়েছে।"[১] প্রত্নতত্ত্ববিদ্যায়, বিশেষ করে প্রাচীন এবং প্রাগৈতিহাসিক যুগের শুধুমাত্র পাত্র-কে মৃৎশিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং একই উপাদান দ্বারা তৈরি অন্যান্য গঠনকে টেরাকোটা বলা হয়। মৃৎশিল্পের কিছু সংজ্ঞা অনুযায়ী উপাদান হিসেবে কাদামাটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক।

রোমানিয়ার সেকারল্যান্ডে তৈরি মৃৎশিল্প বুদাপেস্টে বিক্রির জন্য

ইতিহাস[সম্পাদনা]

মৃৎশিল্প মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কারের একটি। নব্যপ্রস্তরযুগের চেক প্রজাতন্ত্রে গ্রাভেতিয়ান সভ্যতার ডলনে ভোসনিসের খ্রিস্টপূর্ব ২৯,০০০ - ২৫,০০০ অব্দের ভেনাসের প্রস্তরমূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে।[২] এবং চীনের জিয়াংঝিতে মাটির পাত্র আবিষ্কৃত হয়েছে যা প্রায় খ্রীস্টপূর্ব ১৮,০০০ অব্দের। নব্যপ্রস্তরযুগের প্রথমদিকের শিল্পকর্ম জাপানের জোমোন (খ্রিস্টপূর্ব ১০,৫০০),[৩] রাশিয়ার সর্ব পূর্বে (খ্রিস্টপূর্ব ১৪,০০০),[৪] সাব-সাহারান দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া গেছে।

বিবরণ[সম্পাদনা]

মৃৎশিল্পের ক্ষেত্রে প্রথমে কাদামাটিকে কাঙ্ক্ষিত রূপ দেয়া হয়। অতঃপর তা ভাটার আগুনে উচ্চ তাপমাত্রায় (৬০০ - ১৬০০°সে) পোড়ানো হয়। এতে বিক্রিয়া ঘটে বস্তুটির কাঠিন্য ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে স্থায়ী পরিবর্তন সাধন করে। বেশিরভাগ মৃৎশিল্প নিখুঁতভাবে কাজে লাগানো হয়, তবে অনেকগুলি চারুকলামূলক মৃৎশিল্প হিসাবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। পোড়ানোর পূর্বে বা পরেও বস্তুটিতে নকশা করা যেতে পারে।

নেপালে মাটির পাত্র (ঘালিয়া)
মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, বাংলাদেশ
নাইজারের বাউবনে মাটির পাত্র

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

কাদামাটি দিয়ে তৈরি মৃৎশিল্পকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়: মাটির পাত্র, পাথুরে পাত্রপোর্সেলিন। এসব তৈরির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধরনের কাদামাটির প্রয়োজন এবং উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো প্রয়োজন। এই তিন ধরনের জিনিসই প্রয়োজন অনুসারে মসৃণ কিংবা অমসৃণ করে বানানো হয়। বিভিন্ন শৈলীতে এদেরকে রঙ করা যেতে পারে। কখনো কখনো সমশ্রেণীভুক্ত পাত্র একই শৈলী ফুটিয়ে তোলে। ইসলামী শিল্পের fritware-এ কাদামাটি ব্যবহৃত হয় না; ফলে সেগুলো এর অন্তর্ভুক্ত নয়। ঐতিহাসিক মৃৎশিল্পকে দুভাগে ভাগ করা হয় - "চারুকলামূলক মৃৎশিল্প" (শৈল্পিক ছোঁয়ার পরিমাণ বেশি এবং সাধারণত গৃহস্থালী ব্যবহারের চেয়েও শোভাবর্ধনে বেশি ব্যবহৃত হয়) ও "কারিগরি মৃৎশিল্প" (সাধারণত ততটা নকশা করা থাকে না এবং গৃহস্থালী কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়)।

খ্রিস্টপূর্ব ৩য় সহস্রাব্দে চীনের লুংশান সংস্কৃতির নব্যপ্রস্তরযুগীয় মৃৎশিল্প

মাটির পাত্র[সম্পাদনা]

প্রথমদিকে সকল মৃৎশিল্প কাদামাটি থেকে তৈরি হয়েছিল; যা কম তাপমাত্রায় ভাটির আগুন বা খোলা চুল্লীর আগুনে পোড়ানো হত। সেগুলো হাতে তৈরি করা হতো এবং নকশা করা হতো না। সেগুলো সাধারণত ৬০০ °সে- ১২০০ °সে তাপমাত্রায় পোড়ানো হত [৫]। অবারিত বিস্কুট মাটির পাত্র ছিদ্রযুক্ত হওয়ার কারণে এটির তরল সংরক্ষণের জন্য বা টেবিলের পাত্র হিসাবে ব্যবহারের উপযোগিতা সীমিত। তবে মাটির পাত্র সেই নব্যপ্রস্তরযুগ থেকে এখনো বহমান। এটি বিভিন্ন ধরনের কাদামাটি দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে, যাদের মহিষের চামড়ার আগুনে পোড়ানো হলে তা লালচে বাদামী রঙ ধারণ করে। লালচে রঙের বস্তুগুলোকে টেরাকোটা বলা হয়।

প্রস্তরসামগ্রী[সম্পাদনা]

15th-century Japanese stoneware storage jar, with partial ash glaze

Stoneware হল এমন ধরনের মৃৎশিল্প যা তুলনামূলকভাবে উচ্চ তাপমাত্রায় (প্রায় ১,১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ১,২০০ সেলসিয়াস) ভাটিতে পোড়ানো হয় এবং অনেক দৃঢ় ও ছিদ্রহীন। [৬] অনেক আগে তন্ময় এর উন্নয়নকারী চীনারা পোর্সেলিন এবং একে একসঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার মৃৎশিল্প রূপে গণ্য করে। বিপরীতক্রমে ওয়াজ শুধুমাত্র মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে ইউরোপে তৈরি করা হত, কেননা ইউরোপীয় ভাটিগুলো কম কার্যক্ষম ছিল এবং সঠিক ধরনের কাদামাটি সহজলভ্য ছিল না। এটি নবজাগরণের পূর্ব পর্যন্ত জার্মানির বিশেষত্ব ছিল। [৭]

Stoneware বানানো তুলনামূলকভাবে কঠিন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেবিলে তুলনায় এটি রান্নাঘরে কিংবা সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ললিত জনোয়ার চীন, জাপান এবং পশ্চিমা দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এখনও তার উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। অনেক তৈজসপত্র বর্তমানে শিল্পের মর্যাদা পাচ্ছে।

চীনামাটি[সম্পাদনা]

Chantilly porcelain teapot, c. 1730, with chinoiserie decoration in overglaze enamels

পোর্সেলিন সাধারণত কেওলিনসমৃদ্ধ উপাদানকে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ °সে (২,২০০ থেকে ২,৬০০ °ফা) তাপমাত্রায় ভাটিতে পোড়ানোর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই তাপমাত্রা অন্যান্য ধরনের মৃৎশিল্পের তুলনায় অনেক বেশি এবং কোন ধরনের উপাদান প্রয়োজন তা বোঝার পাশাপাশি এ তাপমাত্রা অর্জন করা ব্যাপক সংগ্রামের ব্যাপার। অন্যান্য ধরনের মৃৎশিল্পের তুলনায় পোর্সেলিনের দৃঢ়তা, কাঠিন্য এবং ঈষদচ্ছতা মূলত কাচীভূতকরণ এবং উচ্চ তাপমাত্রায় খনিজ মিউলাইট গঠন করার কারণে হয়ে থাকে।

যদিও পোর্সেলিন সর্বপ্রথম চীনে তৈরি করা হয়েছিল, তবে চীনারা প্রথাগতভাবে একে আলাদা ধরন হিসেবে বিবেচনা করে না; বরং "নিম্ন-তাপমাত্রা"র মাটির পাত্রের বিপরীতে "উচ্চ-তাপমাত্রা"র মৃৎশিল্প রূপে গণ্য করে; যা এটি কখন সর্বপ্রথম তৈরি করা হয়েছিল- তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাং শাসনামলে (৬১৮-৯০৬ খ্রিস্টাব্দ) কিছু মাত্রায় ঈষদচ্ছতা এবং শুভ্রতা অর্জন করা হয়েছিল এবং যথেষ্ট পরিমাণে রপ্তানি করা হতো। বর্তমান স্তরের শুভ্রতা চতুর্দশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত ছিল না। উপযুক্ত পরিমাণে কেওলিন প্রাপ্তির পরে, ১৬শ শতাব্দীর শেষের দিকে কোরিয়ায় এবং জাপানেও পোর্সেলিন তৈরি করা হয়েছিল। অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এটি পূর্ব এশিয়ার বাইরে কার্যকরভাবে তৈরি করা হয় নি। [৮]

প্রস্তুতির ধাপ[সম্পাদনা]

নির্দিষ্ট আকার দেওয়ার পূর্বে কাদামাটিকে চটকানো হয় যাতে একটি সুষম আর্দ্রতা বজায় রাখে। কাদামাটির তালে আটকাপড়া বাতাস বের করে নিতে হয় একে বলা হয় "নির্বাতকরণ" এবং ভ্যাকুয়াম পাগ নামক যন্ত্র কিংবা হাতের সাহায্যে পাকানো হয়। পাকানোর মাধ্যমে সুষম আর্দ্রতাযুক্ত তাল পাওয়া যেতে পারে। চটকানো এবং নির্বায়ুকরণের পর কাদামাটির তালকে নির্দিষ্ট আকার প্রদান করা হয় এবং তাকে শুষ্ক ও আগুনে পোড়ানো হয়।

  • গ্রীনওয়্যার অদগ্ধ মাটির তালকে বোঝায়। পর্যাপ্ত আর্দ্রতায় এই পর্যায়ে তালের বেশিরভাগ প্লাস্টিকের আকারে থাকে (কারণ তারা নরম এবং নমনীয় থাকায় হাত দ্বারা সহজেই আকার পরিবর্তন করা যায়)।
  • চর্ম-কঠিন বলতে আংশিক শুকানো কাদামাটির তালকে বোঝায়। এই ধাপে মাটির তালের শুষ্কতা প্রায় ১৫% থাকে। এই পর্যায়ে কাদামাটি খুব দৃঢ় থাকে এবং শুধুমাত্র সামান্য পরিমাণে বাঁকানো যায়। এই পর্যায়ে মাটি নকশা করা হয় এবং হাত ব্যবহার করে সুক্ষ্মতা আনা হয়।
  • অস্থি-শুষ্ক বলতে প্রায় ০% আর্দ্রতাবিশিষ্ট অবস্থা বোঝানো হয়। এই পর্যায়ে বস্তুটি পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকে।
  • বিস্কুট (অথবা বিস্ক)[৯][১০] বলতে সেই কাদামাটির তালকে বোঝানো হয় যা যথাযথ আকার দেয়ার পর প্রথমবারের মতো পোড়ানো হয়েছে। এই পোড়ানোর ফলে কাদামাটি বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। মাটির তালের খনিজ উপাদানসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বস্তুর রঙ ইত্যাদি পরিবর্তিত হয়।
  • চাকচিক্য দহন কিছু মৃৎশিল্পের শেষ ধাপ।[১১] যেকোনো গ্লেজ বিস্ক অবস্থায় প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং বস্তুটি বেশ কয়েকটি উপায়ে সজ্জিত করা যায়। এরপরে গ্লেজটি গলতে থাকে এবং আস্তরণ সৃষ্টি করে।

কাদামাটি এবং খনিজ পদার্থ[সম্পাদনা]

ভারতে মৃৎশিল্পের জন্য কাদামাটি প্রস্তুতি

যে কোন প্রকার সজ্জা কিংবা নকশার নিচে মূল মাটির অংশটিকে মৃন্ময় বলা হয়। মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান কাদামাটি। কাদামাটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন কতিপয় বস্তু রয়েছে। এসব বস্তুর মধ্যে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে :নমনীয়তা-মৃন্ময়ের বিকৃতির প্রবণতা;পোড়ানোর পর পানিশোষণক্ষমতা;সংকোচনশীলতা - পানি অপসারণের পর সংকুচিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য। ভাটিতে পোড়ানো হলে বিভিন্ন কাদামাটি বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হয়। কিছু নির্দিষ্ট আকৃতি তৈরীর জন্য কাদামাটিকে অবশ্যই পূর্বপ্রস্তুত থাকতে হয়। কাদামাটিতে অবস্থিত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতির মাধ্যমে মৃৎশিল্পের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য উদ্ভব হয়। মৃৎশিল্প উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাদামাটি কখনো কখনো শুধুমাত্র কিছু ভৌগোলিক এলাকায় পাওয়া যায়; যার ফলে সে মৃৎশিল্প উক্ত এলাকার এক অনন্য স্থানীয় মৃৎশিল্প রূপে গণ্য হতে পারে। কাদামাটির খামিরের সঙ্গে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বাড়তি মিশ্রিত করা যেতে পারে। কাদামাটির একটি সাধারন খনিজ উপাদান হলো কেওলিনাইট। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে সেল সাফার যা মৃৎ ফ্লাক্স এর ন্যায় কাজ করে যা কাচি ভুতু করনের সময় মৃন্ময়ের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় নিচে মিছিলের জন্য ব্যবহৃত হয় এমন কিছু কাদামাটি উল্লেখ করা হলো [১২]

  • কেওলিন - চীনে সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত হওয়ায় কখনো কখনো একে চীনামাটিও বলা হয়। পোর্সেলিন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
  • বল মাটি - অত্যন্ত নমনীয় পাললিক কাদামাটি যাতে কিছু পরিমাণে জৈব উপাদান থাকে। নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য পোর্সেলিনের মৃন্ময়ে সামান্য কিছু পরিমাণে যোগ করা হয়।
  • অগ্নি মাটি - কেওলিনের তুলনায় সামান্য কিছু কম পরিমাণে ফ্লাক্স থাকে ;কিন্তু তবুও নমনীয়। এটি অত্যন্ত তাপ সহনীয় কাদামাটি যা অন্যান্য কাদামাটি সহযোগে পোড়ানো তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবহৃত হয় এবং প্রস্তরপাত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়
  • প্রস্তর মাটি- প্রস্তরপাত্র তৈরিতে উপযুক্ত। অগ্নি মাটিবল মাটির অনেক বৈশিষ্ট্য যেমন সূক্ষ্ম ধার ও তাপ সহনীয়তা ইত্যাদির ধারণ করে।
  • সাধারণ লাল মাটি যা সাধারণত ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ কোনো ক্ষেত্র ছাড়া এটি মৃৎশিল্পে ব্যবহৃত হয় না[১৩]
  • Bentonite অত্যন্ত নমনীয় একধরনের কাদামাটি। নমনীয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন্য কাদামাটির সঙ্গে সামান্য পরিমাণে মেশানো হয়।

প্রত্নতত্ত্ববিদ্যা[সম্পাদনা]

একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ চদলিক, পোল্যান্ডের একটি মধ্যযুগীয় শেরড পরিষ্কার করছেন

মৃৎশিল্পের ওপর গবেষণার মাধ্যমে সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অন্বেষণ করা যায় মৃৎশিল্প দীর্ঘস্থায়ী এবং খন্ড্য অন্তত ক্ষণস্থায়ী কিছু উপকরণ থেকে তৈরি একটি শিল্প যা তুলনামূলকভাবে বেশি দিন পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। অন্যান্য প্রমাণের মিলিয়ে মৃৎশিল্পের গবেষণা সংগঠন, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সমাজের সাংস্কৃতিক বিকাশের সহায়ক হয়। মৃৎপাত্রের গবেষণায় কোনো সংস্কৃতির দৈনিক জীবন, ধর্ম, সামাজিক সম্পর্ক, প্রতিবেশীদের প্রতি মনোভাব, তাদের নিজস্ব এলাকার সামাজিক মনোভাব বোঝা যায়।

মৃৎশিল্পের উপর ভিত্তি করে কালপঞ্জি প্রায় অশিক্ষিত সংস্কৃতির কাল নির্ধারণে পাশাপাশি ঐতিহাসিক সংস্কৃতির কাল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। নিউরন সক্রিয়নের মাধ্যমে উপাদান-শনাক্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাদামাটির উৎসস্থল এবং তাপীয় আলোক পরীক্ষার মাধ্যমে সর্বশেষ পোড়ানোর সময় সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়। প্রাগৈতিহাসিক মৃৎশিল্প পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, উচ্চতর তাপমাত্রায় পোড়ানোর সময় কাদামাটিতে অবস্থিত লোহা পৃথিবীর ঠিক ঐ মুহূর্তের চৌম্বক ভ্রামক নথিবদ্ধ করে রাখে।

উৎপাদনে পরিবেশের প্রভাব[সম্পাদনা]

মারামের কাউন্টিতে একজন কুমোর তার উপকরণ (রোমানিয়ান ও ইংরেজিতে) বর্ণনা করছেন
পাকিস্তানের পাঞ্জাবে মৃৎপাত্র

যদিও হাজার বছর ধরে মৃৎশিল্প উৎপাদনে পরিবেশের উপর প্রভাব ছিল, তবে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি এবং উৎপাদনের মাত্রা এই প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত - প্রথমত কর্মীদের ওপর প্রভাব এবং দ্বিতীয়তঃ সাধারণ পরিবেশের উপর প্রভাব। কর্মীদের উপর প্রভাবের ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক অভ্যন্তরীণ বাতাসের মান, শব্দের মাত্রা এবং সম্ভাব্য অত্যুজ্জ্বলতা। সাধারণ পরিবেশের উপর প্রভাবের ক্ষেত্রে নিয়ামক গুলো হল জ্বালানির ব্যবহার পানি দূষণ, বায়ু দূষণ এবং বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন।

ঐতিহাসিকভাবে "plumbism" (সীসার বিষাক্ততা) এসব মৃৎশিল্পে ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনছে। সর্বপ্রথম ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং ১৮৯৯ সালে যুক্তরাজ্য মৃৎশিল্প কর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষার ওপর আইন প্রণয়ন করে[১৪]। যদিও বর্তমানে মৃৎশিল্পকর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে;তবুও এটি অগ্রাহ্য করার মত নয়। অভ্যন্তরীণ বাতাসের কারণে কর্মীরা বায়ুমন্ডলীয় ধূলিকণা, কার্বন মনোক্সাইড এবং কিছু ভারী ধাতুর সংস্পর্শে আসতে পারেন। সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হলো দীর্ঘমেয়াদে ক্রিস্টালাইন সিলিকার সংস্পর্শে থাকার ফলে সিলিকোসিস রোগের সৃষ্টি হওয়া। যথাযথ বায়ু পরিচালন এই ঝুঁকি কমাতে পারেন এবং বায়ু পরিচালনার জন্য ১৮৯৯ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম আইন প্রণয়ন করা হয় [১৪]। সম্প্রতি ওকল্যান্ডের লেনী কলেজ এর এক গবেষণায় বলা হয় যে এসব ঝুঁকি সুপরিকল্পিত কারখানা নির্মাণের মাধ্যমে নির্মূল করা সম্ভব[১৫]

অন্যান্য ব্যবহার[সম্পাদনা]

ইংল্যান্ডের Stoke-on-Trent শহরটিতে ব্যাপকসংখ্যক মৃৎশিল্প কারখানা থাকায় একে "The Potteries" (মৃৎশিল্পালয়) বলা হয়। এটি আধুনিক যুগের প্রথম শিল্পের একটি শহর ছিল, যেখানে ১৭৮৫ সালের প্রথম দিকে, দুইশত মৃৎশিল্পনির্মাতারা ২০,০০০ শ্রমিক নিযুক্ত করেছিল[১৬]। একই কারণে এই শহরের সবচেয়ে বড় ফুটবল ক্লাবটি "The Potters" নামে পরিচিত[১৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. 'Standard Terminology Of Ceramic Whitewares And Related Products.' ASTM C 242–01 (2007.) ASTM International.
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Venus নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. Diamond, Jared (জুন ১৯৯৮)। "Japanese Roots"Discover। Discover Media LLC। ২০১০-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১০ 
  4. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; fareastrussia নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  5. "Art & Architecture Thesaurus Full Record Display (Getty Research)"www.getty.edu। ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৮ 
  6. Cooper (2010), p. 54
  7. Crabtree, Pamela, ed., Medieval Archaeology, Routledge Encyclopedias of the Middle Ages, 2013, Routledge, আইএসবিএন ১-১৩৫-৫৮২৯৮-X, 9781135582982, google books
  8. Cooper (2010), pp. 72–79, 160–79
  9. "The Fast Firing Of Biscuit Earthenware Hollow-Ware In a Single-Layer Tunnel Kiln." Salt D.L. Holmes W.H. RP737. Ceram Research.
  10. "New And Latest Biscuit Firing Technology". Porzellanfabriken Christian Seltmann GmbH. Ceram.Forum Int./Ber.DKG 87, No. 1/2, pp. E33–E34, E36. 2010
  11. "Whitewares: Production, Testing And Quality Control." W.Ryan & C.Radford. Pergamon Press. 1987
  12. Ruth M. Home, 'Ceramics for the Potter', Chas. A. Bennett Co., 1952
  13. Home, 1952, p. 16
  14. "Health Risks In A Victorian Pottery"। ২০১২-০৭-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৩ 
  15. Indoor air quality evaluation for the Butler Building Ceramics Laboratory, Laney College, Oakland, California, Earth Metrics Incorporated, Alameda County Schools Insurance Association, December, 1989
  16. Patterns of Labour - Work and Social Change in the Pottery Industry. Richard Whipp. Routlidge 1990
  17. "Stokecityfc.com"। Stokecityfc.com। ২০১০-০৫-১৩। ২০১০-০৮-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-০৪