মৃত্তিকা বলবিদ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিসার হেলানো মিনার – মাটির বিকৃতিজনিত কারণে সমস্যার একটি উদাহরণ।
মাটির বিভিন্ন স্তরের উদাহরণ। a) শীর্ষ মাটি এবং কোলুভিয়াম b) পরিপক্ক অবশিষ্ট মাটি c) অল্প বয়স্ক অবশিষ্ট মাটি d) পাথুরে শিলা।

মৃত্তিকা বলবিদ্যা (ইংরেজিঃ Soil Mechanics) মূলত পদার্থবিদ্যা ও ফলিত বলবিদ্যার একটি শাখা যা মৃত্তিকার আচরণ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে। এটি প্রচলিত ধারার ‘কঠিন বস্তুর বলবিদ্যা’ ও ‘প্রবাহী বলবিদ্যা’ থেকে এ জন্য স্বতন্ত্র- কারণ, মাটিতে কেবল কঠিন মাটির দানা বা কেবল তরল পদার্থ উপস্থিত থাকে না; বরং বিচিত্র ধরনের প্রবাহী পদার্থ (যেমনঃ বায়ুপানি) এবং কঠিন পদার্থ (যেমনঃ কাদা, পলি, বালি ও গ্র্যাভেল) উপস্থিত থাকে। পাশাপাশি, মাটিতে বিভিন্ন রকমের জৈবঅজৈব পদার্থ এবং অন্যান্য উপাদান থাকে। [১][২][৩][৪] মৃত্তিকা বলবিদ্যায় সমস্যা সমাধানকালে এ সব কিছুই বিবেচনায় নেয়া হয়। তাই, ‘মৃত্তিকা বলবিদ্যা’ এবং ‘শৈল বলবিদ্যা’ গতানুগতিক বলবিদ্যা থেকে স্বতন্ত্র। ভূ-কারিগরি প্রকৌশল (যা পুরকৌশলের একটি উপবিভাগ) এবং প্রকৌশলীয় ভূতত্ত্ববিদ্যা (যা কিনা ভূতত্ত্ববিদ্যার একটি উপবিভাগ) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে মৃত্তিকা বলবিদ্যার প্রয়োগ রয়েছে।  

ইতিহাস ও ক্রমবিকাশ[সম্পাদনা]

বলবিদ্যা বিজ্ঞানের একটি প্রাচীন শাখা হলেও মৃত্তিকা বলবিদ্যা শাখাটি অধুনা প্রতিষ্ঠিত। মৃত্তিকা বলবিদ্যার সূচনা ১৯২৫ সালে কার্ল তারজাঘির হাত ধরে। তিনি মাটির কণাগুলোর আচরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যায় বলবিদ্যার সফল প্রয়োগ করেন। ফলে, মৃত্তিকা বলবিদ্যা নামে বলবিদ্যার একটি স্বতন্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই কার্ল তারজাঘিকে মৃত্তিকা বলবিদ্যার জনক হিসেব অভিহিত করা হয়। কার্ল তারজাঘি কার্যকর পীড়নের মূলনীতিগুলো দাঁড় করান, এবং ব্যাখ্যা করেন যে, মাটির কৃন্তন শক্তিমাত্রা (Shear Strength) মূলত কার্যকর পীড়ন দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। তারজাঘির আবিষ্কৃত তত্ত্বের মধ্যে আরো আছে -- মাটির ভারবহন ক্ষমতা সংক্রান্ত তত্ত্ব, এবং কর্দমাক্ত মাটির দৃঢ়ীকরণের দরুন মাটির দেবে যাওয়ার ঘটনা পূর্বাভাস ব্যাখ্যা করার তত্ত্বাদি।

আলোচ্যসূচি[সম্পাদনা]

মৃত্তিকা বলবিদ্যার আলোচ্যসূচির তালিকা বেশ দীর্ঘ। শাস্ত্রটিতে যে বিষয়গুলোর পাঠ দেয়া হয় সেগুলো হচ্ছে মূলত- ভূমণ্ডলের মাটির গঠন ও উপাদান; কঠিন মাটি-তরল পানি-গ্যাসীয় বায়ুর আন্তসম্পর্কীয় ত্রিদশাচিত্র, কার্যকরী চাপ, ছিদ্রস্থ পানির চাপ, কৈশিকতা, মাটির শ্রেণিবিন্যাস, ভেদ্যতা, মাটির দৃঢ়ীকরণ, মাটির সংনমন, কৃন্তন শক্তিমাত্রা, মাটির দৃঢ়তা।  

প্রয়োগ [সম্পাদনা]

পাহাড়ি এলাকা ও নদী তীরবর্তী ঢালুর জমির ক্ষেত্রে ঢালের স্থিতিশীলতা রক্ষা, অনুভূমিক মৃত্তিকা চাপ, বুনিয়াদের ভার বহন ক্ষমতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক গবেষণা ও ব্যবহারিক প্রয়োগে মৃত্তিকা বলবিদ্যার রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mitchell, J.K., and Soga, K. (2005) Fundamentals of soil behavior, Third edition, John Wiley and Sons, Inc., আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪৭১-৪৬৩০২-৩
  2. Santamarina, J.C., Klein, K.A., & Fam, M.A. (২০০১)। Soils and Waves: Particulate Materials Behavior, Characterization and Process Monitoring। Wiley। আইএসবিএন 978-0-471-49058-6 .
  3. Powrie, W., Spon Press, 2004, Soil Mechanics – 2nd ed আইএসবিএন ০-৪১৫-৩১১৫৬-X
  4. A Guide to Soil Mechanics, Bolton, Malcolm, Macmillan Press, 1979. আইএসবিএন ০-৩৩৩-১৮৯৩১-০