ভূমিরূপবিদ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পৃথিবীর পৃষ্ঠভাগ, লাল বর্ণ অধিক উচ্চতার পরিমাপক।

ভূমিরূপবিদ্যা (প্রাচীন গ্রীক থেকে: γῆ, , "পৃথিবী"; μορφή, morphḗ, "গঠন"; এবং λόγος, lógos, "অধ্যয়ন") হচ্ছে পৃথিবীর তল বা এর কাছাকাছি স্থানে প্রাকৃতিক, রাসায়নিক বা জৈবিক প্রক্রিয়ায় গঠিত ভূমিস্থ বা জলস্থ বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব এবং বিবর্তনের বৈজ্ঞানিক আলোচনা। ভূমিরূপ বিশেষজ্ঞরা ভূমির বন্ধুরতা দেখতে কেন এমনটি দেখায় তা বুঝতে, ভুগঠনের ইতিহাস এবং গতিবিদ্যা বোঝার চেষ্টা করেন এবং এর প্রেক্ষিতে ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ, সরাসরি পরীক্ষণ এবং সংখ্যাসূচক মডেলিংয়ের সংমিশ্রন পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভূমিরূপ বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক ভূগোল, ভূতত্ত্ব, জিওডেসি, প্রকৌশল ভূতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, জলবায়ুবিদ্যা এবং ভূতাত্ত্বিক প্রকৌশল শাখাগুলির মধ্যে কাজ করেন। আগ্রহের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রের মধ্যে অনেকগুলি গবেষণা শৈলী এবং আগ্রহে অবদান রাখতে সক্ষম।

প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

ভূমিরূপ গঠন প্রক্রিয়া সাধারণতঃ তিনটি বিশেষ ধরনে ঘটে থাকে - (১) বিচূর্ণীভবন ও ক্ষয়ের দ্বারা কণার উদ্ভব; (২) সেসব বস্তুর পরিবহন এবং (৩) এটির অবশেষ অবক্ষেপন। নবীন ভূপৃষ্ঠে বায়ু, ঢেউ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, ক্ষয়, ভুমিতে পানি প্রবাহ, হিমবাহের কার্য, ভূগর্ভের পানির সরণ, অগ্ন্যুত্‌পাত প্রভৃতি ভাবে সংগঠিত হয়। অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে বরফ গঠন, লবণ-যৌগ, সমুদ্রের ভূমিতে স্রোতের কারণে পরিবর্তন, তররের পতন প্রভৃতি।

বায়ুবাহিত প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

উটাহ্‌-এর মোব এলাকায় বায়ু-ক্ষয়িত সুড়ঙ্গ।

বায়ুর শক্তি, বিশেষতঃ ভূমিকে আকৃতি দানের সক্ষমতাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয় ভূমিরূপ গঠনে। মরুভূমিতে শুষ্ক এলাকা গঠনে বায়ুর কার্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।[১]

জৈবিক প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

বিভার বাঁধ - জৈবিক ভূমিরূপ গঠনের একটি উত্‌কৃষ্ট উদাহরণ।

কোনো স্থানের জীবিত বস্তুসমূহের সাথে অত্রস্থানের ভূমির আন্তঃসম্পর্ক এর গঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে এবং এটি উক্ত এলাকার ভূমিরূপ গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মাপনী[সম্পাদনা]

বিভিন্ন স্থানিক ও অস্থায়ী মাপনীগুলিতে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া প্রাধান্য পায়। তদুপরি, যে প্রক্রিয়াগুলির উপর প্রক্রিয়াটি নিবিষ্ট হয় তার মাপনীগুলি জলবায়ু বা প্লেট সঞ্চরণের মতো প্রভাবক শক্তির পরিবর্তনের জন্য প্রতিক্রিয়াশীলতায় বা অন্যথায় ভূমিরূপ নির্ধারণ করতে পারে। এই ধারণাগুলি বর্তমানে ভূমিরূপ অধ্যয়নের চাবিকাঠি। ভুমিরূপ মাপনীগুলিকে শ্রেণিবদ্ধকরণে সহায়তা করার জন্য কিছু ভূমিরূপ বিশেষজ্ঞ নিম্নলিখিত বিভাগটি ব্যবহার করে থাকেন:

  • ১ম – মহাদেশ, মহাসাগরীয় অববাহিকা, জলবায়ু অঞ্চল (~১০,০০০,০০০ কিমি2)
  • ২য় – শিল্ড, উদাঃ বাল্টিক শিল্ড বা পর্বতমালা (~১,০০০,০০০ কিমি2)
  • ৩য় – বিচ্ছিন্ন সমুদ্র, সাহেল (~১০০,০০০ কিমি2)
  • ৪র্থ – ম্যাসিফ, উদাঃ ম্যাসিফ সেন্ট্রাল, বা, সম্পর্কিত ভূমিরূপগুলোর সংগঠন, উদাঃ, ওয়েল্ড (~১০,০০০ কিমি2)
  • ৫ম – নদী উপত্যকা, কটসওল্ডস্ (~১,০০০ কিমি2)
  • ৬ষ্ঠ – স্বতন্ত্র পর্বত বা আগ্নেয়গিরি, ক্ষুদ্র উপত্যকা (~১০০ কিমি2)
  • ৭ম – পাহড়ী ঢাল, নদী খাত, মোহনা (~১০ কিমি2)
  • ৮ম – গ্যালি, ছড়া (~১ কিমি2)
  • ৯ম – মিটার আকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ।

অন্যান্য বিষয়াবলীর সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

ভুমিরূপবিদ্যার সাথে আরও অসংখ্য বিভাগের ঘনিষ্ট আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। পললায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদার্থের অবক্ষেপন গুরুত্বপূর্ণ। বিচূর্নীভবন প্রক্রিয়ায় রাসয়নিক বা প্রাকৃতিকভাবে পদার্থের খন্ডিকরণ ঘটে এবং এগুলো স্থানচ্যূত হয় এবং পরবর্তীতে পুনরায় সঞ্চিত হয় যা ভুমিরূপবিদ্যার একটি অংশ হলেও তা মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদেরও আবশ্যকীয় গবেষণার ক্ষেত্র। পুরপ্রকৌশল এবং পরিবেশ প্রকৌশলীরা ক্ষয়চক্র এবং পলল সঞ্চারণের বিষয়ে আগ্রহী বিশেষতঃ খাল বা ঢালের স্থায়িত্ব, পরিবেশ দূষণ, পানির গুনাগুন, উপকূলীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে। হিমবাহ স্বল্প সময়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে উচ্চতর পার্বত্য এলাকা হতে ঢাল বরাবর সঞ্চারণের কারণে এবং এটিও ভুমিরূপের পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Leeder, M., 1999, Sedimentology and Sedimentary Basins, From Turbulence to Tectonics, Blackwell Science, 592 p. আইএসবিএন ০-৬৩২-০৪৯৭৬-৬.

অধিক পঠন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Physical geography topics টেমপ্লেট:Geologic Principles টেমপ্লেট:Geology