মুহাম্মদ আজিজ খান (ব্যবসায়ী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মুহাম্মদ আজিজ খান (ব‍্যবসায়ী) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মুহাম্মদ আজিজ খান
জন্ম১৯৫৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
মাতৃশিক্ষায়তনব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাব‍্যবসায়ী
পরিচিতির কারণপ্রতিষ্ঠাতা, সামিট গ্রুপ
উপাধিচেয়ারম্যান, সামিট গ্রুপ
দাম্পত্য সঙ্গীআঞ্জুমান আজিজ খান
সন্তান৩ (মেয়ে)

মুহাম্মদ আজিজ খান (জন্ম ১৯৫৫) একজন ধনাঢ্য বাংলাদেশী ব‍্যবসায়ী যিনি সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান। সামিট গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি, যার বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বিদ্যুতের প্রায় ২০ শতাংশ উৎপাদন করে।[২][৩][৪] তার নেতৃত্বে সামিট গ্রুপ শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ‍্যুৎ উৎপাদন করে আসছে। তাছাড়া জ্বালানি বাণিজ্য, বন্দর, টেলিযোগাযোগ, আতিথেয়তা এবং রিয়েল এস্টেট জুড়ে বিনিয়োগের সাথে একটি বৈচিত্রপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সামিট গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করেছে। [৪]

আজিজ খানের নেতৃত্বে সামিট গ্রুপ বিশ্বের অনেক বহুজাতিক সংস্থার সাথে অংশীদারত্ব গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে অন‍্যতম জিই, আইএফসি এবং ওয়ার্সেসিলা[৫] তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন।[৬] এছাড়া ও তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ৩ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন।

মুহাম্মদ আজিজ খান, তার স্ত্রী এবং তিনজন পরিবারের সদস্যকে আইসিআইজে দ্বারা নামকরণ করা হয়েছে, যাতে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে ছয়টি অফশোর কোম্পানি পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

আজিজ খান একজন সেনা কর্মকর্তার ছেলে।[১] একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তার প্রথম পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছিল, তার বন্ধুর সঙ্গে, যিনি তার বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আমদানি ব‍্যাবসার সঙ্গে নিযুক্ত হতে বাধ্য হন। তখন ১৮ বছর বয়সী আজিজ খান ১৯৭৩ সালে পিতার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার করে বিনিয়োগ করেছিলেন।[৭]

১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব‍্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আই.বি.এ) থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।[১][৮]

পেশা[সম্পাদনা]

আজিজ খান নেতৃত্বে, সামিট গ্রুপ ১৯৯৮ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করে, যা খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে পরিচিত।[৯]

ওশেন কনটেইনার্স লিমিটেড, সামিট গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী অফ-ডক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা এখন সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টস লিমিটেড নামে পরিচিত। বর্তমানে দেশের ৩০% রপ্তানি এবং দেশের আমদানি খাতের ১০% এই প্রতিষ্ঠান করে থাকে।

সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড প্রথমবারের মতো দেশীয় টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করে যা ফাইবার অপ্টিক্সকে বাংলাদেশের ৭০% কভার করে এবং বাংলাদেশকে, ভারতমায়ানমারের সাথে স্থায়ী ফাইবার অপটিক্সের মাধ্যমে সংযুক্ত করে।[৯]

আই.পি.সি.ও লিমিটেড, সামিট গ্রুপের একটি আতিথেয়তা এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। তারা একটি পাঁচ তারকা, একটি তিন তারকা হোটেল, একটি কনভেনশন হল এবং ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে ১০০০ টি দোকান নির্মাণ করছে।

২০১১ সালে, খান বাংলাদেশে ৩২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য জিইই এর সাথে একটি যৌথ উদ্যোগে নেন। সেখানে তিনি সামিট গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। এই যৌথ উদ্যোগে বিশ্বব্যাংকের $ ১১২ এবং nbsp; মিলিয়ন ডলার সহ $ ৩২৭ মিলিয়ন ডলারের অর্থ তহবিল গঠন করা হয়।[১০]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

২০১৬ সালের এপ্রিলে, পানামা পেপার্স-এ মুহাম্মদ আজিজ খান, উনার স্ত্রী আঞ্জুম আজিজ খান, কন্যা আয়েশা আজিজ খান, ভাই জাফর উমায়েদ খান এবং ভাতিজা ফয়সাল করিম খান এর নাম পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় যে তাদের নামে সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে ছয়টি অফশোর কোম্পানি পরিচালনা করা হচ্ছিল যার অধিকাংশ ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত।[১১][১২]

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থ পাচার ও কর প্রতারণার জন্য মুহাম্মদ আজিজ খান সহ বাংলাদেশের ২৫ জন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের উপর অনুসন্ধান শুরু করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে।


বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে সামিট গ্রুপ যে এত বেশি ব্যবসা বাণিজ্য করছে সেটা সরকারের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতার কারণেই সম্ভব বলে অনেকে মনে করেন। মুহাম্মদ আজিজ খানের একজন ভাই অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক খান আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী।


[১৩]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ আজিজ খান সিঙ্গাপুরের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি আঞ্জুমান আজিজ খান এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। তাদের তিনজন কন্যাসন্তান রয়েছেন যাদের নাম আয়েশা, আদিবা ও আজিজা।[২] আয়েশা খান হচ্ছেন সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের সিইও।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Forbes profile: Muhammed Aziz Khan & family"Forbes। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৮ 
  2. "Muhammed Aziz Khan"Summitgroupbd.com। ১৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  3. "Muhammed Aziz Khan | International Economic Forum of the Americas"Forum-americas.org। ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  4. "Summit plans to raise funds from Singapore bourse"The Daily Star। ১৫ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৬ 
  5. Summit Group (২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫), Video Profile: Muhammed Aziz Khan, Chairman, Summit, সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  6. Khan, Sharier (২০ ডিসেম্বর ২০১০)। "Summit assured of $2b financing"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৬ 
  7. "The infrastructure trailblazer"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৬ 
  8. "Introducing the Directors"Summit Power। ২৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬ 
  9. "Muhammed Aziz Khan | International Economic Forum of the Americas"forum-americas.org। ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  10. "Summit Power gets finance for GE joint venture"Reuters। ৩০ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৬ 
  11. "Bangladeshis not outside Panama Papers"The Daily Observer। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৬ 
  12. "25 Bangladeshis in money-laundering list"Newsbangladesh.com। ৬ এপ্রিল ২০১৬। ১০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬ 
  13. "NBR probing into Bangladeshi names on Panama Papers"Banglanews24.com। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৬