বিষয়বস্তুতে চলুন

মুস্তফা আক্কাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুস্তাফা আল আক্কাদ
চিত্র:Moustapha Akkad.gif
জন্ম(১৯৩০-০৭-০১)১ জুলাই ১৯৩০
মৃত্যু১১ নভেম্বর ২০০৫(2005-11-11) (বয়স ৭৫)
মৃত্যুর কারণ২০০৫ আম্মান বোমা হামলা
জাতীয়তা
  • সিরিয়
  • মার্কিন
মাতৃশিক্ষায়তনক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস অ্যাঞ্জেলেস
সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচলচ্চিত্র প্রযোজক, চলচ্চিত্র পরিচালক
কর্মজীবন১৯৭৬–২০০৫
পরিচিতির কারণহ্যালোইন চলচ্চিত্র সিরিজের প্রযোজক হিসেবে পরিচিত
দাম্পত্য সঙ্গী
  • প্যাট্রিসিয়া আল আক্কাদ ()
  • সুওহা আশা আল আক্কাদ
সন্তান৪ (এর মধ্যে মালেক আক্কাদ অন্তর্ভুক্ত)
আত্মীয়তারেক সালাহি

মুস্তাফা আল আক্কাদ (আরবি: مصطفى العقاد; ১ জুলাই ১৯৩০ – ১১ নভেম্বর ২০০৫) ছিলেন একজন সিরিয়ান-আমেরিকান চলচ্চিত্র প্রযোজকচলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি মূলত হ্যালোইন চলচ্চিত্র সিরিজের প্রযোজক হিসেবে এবং দ্য মেসেজলায়ন অব দ্য ডিজার্ট পরিচালনার জন্য সুপরিচিত।

২০০৫ সালের আম্মান বোমা হামলায় তিনি তাঁর কন্যা রিমা আল আক্কাদ মনলাসহ নিহত হন।[][]

তিনি টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব তারেক সালাহি-এর চাচাতো ভাই।

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

আল আক্কাদ ১৯৩০ সালের ১ জুলাই আলেপ্পো শহরে জন্মগ্রহণ করেন, যা তখন ফরাসি ম্যান্ডেট ফর সিরিয়া ও লেবাননের অংশ ছিল।[]

তিনি আলেপ্পো আমেরিকান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তাঁর পিতা, যিনি তখন একজন কাস্টমস অফিসার ছিলেন, তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনার শিক্ষা নিতে পাঠানোর সময় ২০০ ডলার ও একটি কোরআনের কপি দেন।

আল আক্কাদ ইউসিএলএ-তে চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনার ওপর পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি আরও তিন বছর ইউএসসি-তে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে পরিচালক স্যাম পেকিনপা-এর পরিচয় হয়।

পেকিনপা হলিউডে আল আক্কাদের পরামর্শদাতা হন এবং তাঁকে আলজেরিয়ার যুদ্ধ নিয়ে একটি চলচ্চিত্রের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ দেন—যদিও সে চলচ্চিত্রটি শেষ পর্যন্ত নির্মিত হয়নি। তবে পেকিনপা তাঁকে উৎসাহ দিতে থাকেন যতক্ষণ না তিনি সিবিএস-এ একজন প্রযোজক হিসেবে চাকরি পান।

পেশাজীবন

[সম্পাদনা]

১৯৭৬ সালে আল আক্কাদ মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অব গড (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৭ সালে দ্য মেসেজ নামে মুক্তি পায়) চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন। এতে অ্যান্থনি কুইনআইরিন পাপাস অভিনয় করেন। হলিউডে প্রতিকূলতা থাকায় তাঁকে মরক্কোতে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হয়।

চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় তিনি ইসলামী পণ্ডিতদের সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং ইসলাম ধর্ম ও মহানবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চিত্রায়ন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যথাসম্ভব সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। তিনি মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন পেলেও সৌদি আরবের মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ এটি প্রত্যাখ্যান করে। কুয়েত, লিবিয়ামরক্কো সরকার এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ অনুমোদন না দিলেও কুয়েত আর্থিক সহায়তা অব্যাহত রাখে, তবে অন্যান্য সহায়তা বন্ধ করে দেয়। মরক্কোর রাজা হাসান দ্বিতীয় চলচ্চিত্রটির জন্য পূর্ণ সমর্থন দেন।

চলচ্চিত্রটির নির্মাণে এক বছর সময় লাগে। আল আক্কাদ প্রথমে মরক্কোতে ছয় মাস শুটিং করেন, তবে সৌদি সরকারের চাপে মরক্কো সরকার চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরপর তিনি লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি-এর সহায়তা চান। গাদ্দাফি তাঁকে অবশিষ্ট ছয় মাসের শুটিং লিবিয়াতে করার অনুমতি দেন এবং অবশেষে চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ হয়।

আল আক্কাদ এই চলচ্চিত্রকে পশ্চিমা বিশ্ব ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেছিলেন। ১৯৭৬ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন:[]

আমি এই চলচ্চিত্রটি বানিয়েছি কারণ এটি আমার ব্যক্তিগত বিষয় ... আমি নিজে একজন মুসলিম, কিন্তু পশ্চিমে বেড়ে উঠেছি। তাই আমি অনুভব করেছি ইসলাম সম্পর্কে সত্য তুলে ধরা আমার দায়িত্ব। এটি এমন একটি ধর্ম যার অনুসারী ৭০০ মিলিয়ন, কিন্তু তা সম্পর্কে পশ্চিমে খুবই কম জানা হয়—যা আমাকে বিস্মিত করেছে। আমি ভেবেছিলাম এ ইতিহাস পশ্চিমে তুলে ধরার জন্য আমাকে গল্পটা বলতেই হবে।

১৯৭৮ সালে আল আক্কাদ স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র হ্যালোইন প্রযোজনা করে চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেন। তিনি প্রথম আটটি হ্যালোইন চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান প্রযোজক ছিলেন এবং একমাত্র প্রযোজক যিনি সবগুলোতেই যুক্ত ছিলেন। এই সিরিজটি অত্যন্ত লাভজনক ছিল এবং পরবর্তী ভৌতিক চলচ্চিত্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

১৯৮০ সালে তিনি লায়ন অব দ্য ডিজার্ট পরিচালনা করেন, যেখানে কুইন ও আইরিন পাপাসের পাশাপাশি অলিভার রিড, রড স্টাইগার এবং জন গিলগুড অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটি লিবিয়ার বাস্তব ইতিহাসনির্ভর বেদুইন নেতা ওমর মুখতার-কে নিয়ে, যিনি মুসোলিনির বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছিলেন। চলচ্চিত্রটি শুরুতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেলেও পরবর্তীকালে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। এতে লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির ৩৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ থাকায় পশ্চিমে কিছু নেতিবাচক প্রচার হয়, যা সম্ভবত বক্স অফিসে এর খারাপ ফলাফলের কারণ ছিল। চলচ্চিত্র সমালোচক ক্লিন্ট মরিস একে বর্ণনা করেন: "এটি একটি মহাকাব্যিক অ্যাডভেঞ্চার, যা মুস্তাফা আল আক্কাদের প্রযোজকজীবনের শীর্ষস্থানীয় কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হবে।"[]

১৯৮৫ সালে তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ট্রানকাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্মস গ্যালাক্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর সঙ্গে একটি সাতটি চলচ্চিত্র মুক্তির চুক্তি করে।[]

যুক্তরাজ্যে আল আক্কাদ একবার পাইনউড স্টুডিওস র‍্যাঙ্ক অর্গানাইজেশন থেকে কিনতে চেয়েছিলেন এবং টুইকেনহ্যাম-এ তাঁর একটি স্টুডিও ছিল।

মৃত্যুকালে তিনি সালাহউদ্দিন এবং ধর্মযুদ্ধ নিয়ে ৮০ মিলিয়ন ডলারের একটি চলচ্চিত্র তৈরির পরিকল্পনায় কাজ করছিলেন, যাতে সন কনারি অভিনয় করার কথা ছিল। ছবিটির জন্য তাঁর কাছে চিত্রনাট্য প্রস্তুত ছিল এবং এটি জর্ডানে চিত্রায়িত হওয়ার কথা ছিল। এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন:

সালাহউদ্দিন ইসলামকে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে। বর্তমানে ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম হিসেবে দেখা হয়। কারণ কয়েকজন সন্ত্রাসী মুসলমান, তাই পুরো ধর্মকেই এমনভাবে চিত্রিত করা হয়। অথচ প্রকৃত ধর্মযুদ্ধ যদি কিছু হয়ে থাকে, তা ছিল ক্রুসেড। কিন্তু কয়েকজন অভিযাত্রীর জন্য আপনি তো খ্রিস্টধর্মকে দোষারোপ করতে পারেন না। এটাই আমার বার্তা।[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

২০০৫ সালের আম্মান বোমা হামলায় আল আক্কাদ ও তাঁর ৩৪ বছর বয়সী কন্যা রিমা আক্কাদ মনলা নিহত হন।[] ৯ নভেম্বর তাঁরা দুজনেই গ্র্যান্ড হায়াত আম্মান হোটেলের লবিতে অবস্থান করছিলেন, তখন সেখানে একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। তাঁর কন্যা ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং আল আক্কাদ মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। দুই দিন পর, ১১ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁকে সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের আল-জাদিদা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[]

আল আক্কাদ মৃত্যুকালে রেখে যান তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী প্যাট্রিসিয়া আল আক্কাদ ও তাঁদের দুই পুত্র তারিক ও মালেক—যার মধ্যে মালেক হ্যালোইন চলচ্চিত্র সিরিজের বেশিরভাগ অংশের প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়াও তাঁর বর্তমান স্ত্রী সুওহা আসচা আল আক্কাদ এবং তাঁদের পুত্র জাদে বেঁচে ছিলেন।

উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

তাঁর জন্মস্থান আলেপ্পো শহরে মুস্তাফা আল আক্কাদকে সম্মান জানানো হয়। আলেপ্পো সিটি কাউন্সিল তাঁর নামে একটি বিদ্যালয় ও একটি সড়কের নামকরণ করেছে।

২০০৮ সালে বেইরুটের শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি সড়কের নামও মুস্তাফা আক্কাদের নামে রাখা হয়।

২০০৭ সালের হ্যালোইন রিমেক চলচ্চিত্রটি তাঁর স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়। এছাড়াও ২০১৮ সালের হ্যালোইন চলচ্চিত্রটি, যা ১৯৭৮ সালের মূল ছবির সরাসরি সিক্যুয়েল, সেটির শেষ ক্রেডিটেও আল আক্কাদকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

চলচ্চিত্র তালিকা

[সম্পাদনা]
মুস্তাফা আল আক্কাদের চলচ্চিত্র তালিকা
বছর শিরোনাম পরিচালক প্রযোজক উপস্থাপক মন্তব্য
১৯৭৬ দ্য মেসেজ হ্যাঁ হ্যাঁ না মুহাম্মদ, মেসেঞ্জার অব গড নামেও পরিচিত
১৯৭৮ হ্যালোইন না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৮০ লায়ন অব দ্য ডিজার্ট হ্যাঁ হ্যাঁ না
১৯৮১ হ্যালোইন II না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৮২ হ্যালোইন III: সিজন অব দ্য উইচ না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৮৫ অ্যাপয়েন্টমেন্ট উইথ ফিয়ার না হ্যাঁ (নির্বাহী) না
১৯৮৬ ফ্রি রাইড না হ্যাঁ (নির্বাহী) না
১৯৮৮ হ্যালোইন ৪: দ্য রিটার্ন অব মাইকেল মায়ার্স না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৮৯ হ্যালোইন ৫: দ্য রিভেঞ্জ অব মাইকেল মায়ার্স না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৯৫ হ্যালোইন: দ্য কার্স অব মাইকেল মায়ার্স না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
১৯৯৮ হ্যালোইন H20: ২০ ইয়ার্স লেটার না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ
২০০২ হ্যালোইন: রেজারেকশন না হ্যাঁ (নির্বাহী) হ্যাঁ

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. ""হলিউড প্রযোজক ও তাঁর কন্যা বোমা হামলায় নিহত""NBC News। ১১ নভেম্বর ২০০৫। ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ নভেম্বর ২০১৯ 
  2. জর্ডানের রাজা আব্দুল্লাহ দ্বিতীয়, Our Last Best Chance, নিউ ইয়র্ক: ভাইকিং প্রেস, ২০১১, পৃষ্ঠা ২৫১
  3. "মুস্তাফা আক্কাদ, ৭৫, যিনি ধর্মীয় ও ভৌতিক চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছিলেন, তিনি প্রয়াত"নিউ ইয়র্ক টাইমস। ১২ নভেম্বর ২০০৫। ২৫ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১০ 
  4. "Moustapha Akkad"The Washington Post। ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ 
  5. Film Threat, ৮ জুলাই ২০১০, ক্লিন্ট মরিস কর্তৃক রিভিউ
  6. "গ্যালাক্সি ট্রানকাস ফিচারগুলো পরিচালনা করবে"। ভ্যারাইটি। ২ অক্টোবর ১৯৮৫। পৃষ্ঠা 5। 
  7. বেভারলি, জেমস এ. (২০০৯)। Islamic Faith in America। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা ৫০। আইএসবিএন 978-1-4381-0254-2। ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১৮ 
  8. Resting Places: The Burial Sites of Over 14000 Famous Persons by Scott Wilson

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]