মুশায়রা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি মুশায়রায় গালিবের চিত্রায়ন

মুশায়রা (উর্দু: مشاعرہ‎, প্রতিবর্ণী. Mušā'ira‎) হল একটি কাব্যিক সম্মেলন। এটি একটি অনুষ্ঠান (যাকে মেহফিল, মুশায়রি বলা হয়) যেখানে কবিরা তাদের কাব্য পরিবেশন করতে সমবেত হন। মুশায়রা উত্তর ভারত, পাকিস্তান ও দাক্ষিণাত্য এবং বিশেষ করে হায়দ্রাবাদি মুসলমানদের সংস্কৃতির অংশ। এটি স্বাধীন আত্ম-প্রকাশের জন্য একটি ফোরাম বা সম্মেলন স্থান হিসাবে বিবেচিত।[১]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী; উর্দু শব্দ মুশায়রা একটি আরবি শব্দ "মুসা'আরা" থেকে এসেছে যার অর্থ "প্রিয় কবিতা"।[২]

কিছু কিংবদন্তী থেকে জানা যায় যে মুশায়রা প্রথম আয়োজন করেছিলেন আমির খসরু (১২৫৩-১৩২৫), আবার কিছু কিংবদন্তি এই অনুমানকে প্রত্যাখ্যান করে এবং দাবি করে যে যেটি আমির খসরু প্রবর্তন করেছিলেন সেটি কাওয়ালি ছিল কিন্তু মুশায়রা নয়।[৩]

কিছু অন্যান্য কিংবদন্তি অনুসারে, মুশায়রা ১৪ শতকে দাক্ষিণাত্যে বাহমানি সালতানাতের সময় উদ্ভূত হয়েছিল এবং ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ওয়ালি ডেক্কানি দিল্লিতে প্রবর্তন করেছিলেন, যেখানে তার আগমনের পরে তিনি একটি বিশাল জনসমাবেশের সামনে স্থানীয় দক্ষিণী ভাষায় (উর্দুর একটি বিশেষ প্রকার) তার কবিতার একটি সংকলন আবৃত্তি করেছিলেন। ততদিন পর্যন্ত দিল্লিতে স্থানীয়দের জন্য কোন কাব্যিক জনসমাবেশ ছিল না। কাব্যিক সমাবেশগুলি অভিজাত রাজদরবারে শুরু হত যেখানে অংশগ্রহণকারী কবিরা তাদের কবিতাগুলি শুধুমাত্র ফার্সি ভাষায় আবৃত্তি করতেন।[৩][৪]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

উদ্যোগের ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৭ শতকে যখন মুঘলরা তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল তখন উর্দু কবিতা চূড়ান্ত নির্ধারক অবস্থান নেয়। ভারতের প্রথম দিকের কিংবদন্তিরা মনে করতেন যে মানসিক চেতনার সমাবেশে শায়রি আবৃত্তি করা উচিত, যেখানে ভাষা বোঝার যথেষ্ট দক্ষতা থাকবে, যাতে, যা আবৃত্তি করা হবে তা উপভোগ করা, সমালোচনা করা এবং শেষ পর্যন্ত প্রশংসা করার ক্ষমতা থাকবে। সমাবেশটি যদিও রাজা ও তার মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে হত, কিন্তু তখন কথা হয়েছিল তার চেয়ে কিছুটা বড় সমাবেশ নিয়ে এটি হবে। তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে এটি উর্দু শায়রির বিকাশের দিকে নিয়ে যাবে, কারণ লোকেরা জনস্বার্থ এবং জনকল্যাণের দাবি অনুসারে ব্যবহারিক কবিতার ধারণা পেতে সক্ষম হবে।

বিকাশের ইতিহাস[সম্পাদনা]

কবিতা আবৃত্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপটি ছিল মুশায়রা বা কাব্যিক সম্মেলন স্থান। সেখানে কবিরা তাদের রচনাগুলি আগে থেকে সম্মত হওয়া একটি যথাযথ ছন্দোবদ্ধ আদর্শ অনুসারে তৈরি করে পড়ার জন্য জড়ো হতেন, এমনকি চিন্তার একটি নির্দিষ্ট উচ্চতাও পূরণ করা হত। প্রকৃত উদ্যোগটি ছিল কিংবদন্তিস্বরূপ, যা ১৮ শতকে মুঘল দরবারে উর্দু মুশায়রাকে চূড়ান্ত, নির্ণায়ক আকারে পৌঁছাতে সহায়তা করেছিল। কবিতা লেখার পাঠ গ্রহণকে ঘিরে একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল; এমনকি উর্দু শায়রি শেখা রাজপরিবারের জন্য সুরুচিসম্মত হয়ে ওঠে। ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন একজন দক্ষ কবি। তার অভ্যাস ছিল দরবারে কঠিন কাব্যিক কাজ দেওয়া, যেমন তাজমিনের কঠিন শিল্পকলা, যার থেকে তারাহি মুশায়রার বিকাশ হয়েছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Andhra Pradesh / Hyderabad News : Funny weekend in store for poetry lovers"The Hindu। ৯ ডিসেম্বর ২০০৫। ৭ সেপ্টেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. "MUSHAIRA | Meaning & Definition for UK English | Lexico.com"। ১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. Vasilyeva, Ludmila (২০১০)। "The Indian Mushairah: Traditions and modernity" (পিডিএফ)Columbia University: 6–8। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  4. Nawazish, Khawar (২৮ জুন ২০১৮)। "Tahqeeq Nama"Government College University, Lahore: 59–68। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১