মুগা রেশম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুগা রেশম
ভৌগোলিক নির্দেশক
জাপির সাথে মুগা রেশমের মেখলা ও চাদর
বর্ণনাহলুদাভ সোনালি আভাময় ঝলমলে রঙ এবং চকচকে গঠনবিন্যাসের রেশম
ধরনহস্তশিল্প
অঞ্চলআসাম
দেশভারত
নথিবদ্ধ২০০৭
উপাদানরেশম

মুগা রেশম ভারতের আসাম রাজ্যের এক প্রকার বন্য রেশম বা সিল্ক যা ভৌগোলিক নির্দেশক[১] স্বীকৃতি পেয়েছে। চরম টেকসইতা বা স্থায়িত্ব, প্রাকৃতিক হলুদাভ সোনালি আভাময় ঝলমলে রঙ এবং চকচকে গঠনবিন্যাসের জন্য এই রেশম সুপরিচিত।[২][৩] পূর্বে এটি কেবল রাজা-রাণী এবং রাজবংশীয় ব্যক্তিবর্গের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল।[৪]

ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়, অসমীয়া রেশম পোকার লার্ভাকে সুগন্ধযুক্ত সোম ও সোঁয়ালু পাতা খাওয়ানো হয়। মুগা রেশমকে রাসায়নিকের সাহায্যে সাদা করার পরে রঙ করা হয়। এই রেশম হাত দিয়ে ধোয়া হয় এবং প্রতিবার ধোয়ার পরে এটির দীপ্তি বৃদ্ধি পায়।[৫] আসামের অন্যান্য রেশমের ন্যায় মুগা রেশমও শাড়ি, মেখলা এবং চাদরের মতো পণ্যগুলোতে ব্যবহৃত হয়। [২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আসামের রেশমগুটি চাষের শুরুর সময় এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায় নি। আসাম প্রাচীন কাল থেকেই উচ্চমানের রেশম উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত ছিল। রেশম উৎপাদনের পাশাপাশি ছিল বুননের কারুকাজ। এটি আসামে এমন পরিশীলিত হয়ে উঠেছিল যে তা সমগ্র ভারত এবং ভারতের বাইরেও পরিচিতি পেয়েছিল। অসমীয়া রেশমের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় সম্ভবত বাল্মীকির রামায়ণে কিষ্কিন্ধ্যা কান্ডে বলা হয়েছে যে কেউ পূর্বদিকে যেতে চাইলে তাকে প্রথমে মগধ, অঙ্গ, পুন্ড্র এবং পরে কোষ-করণম-ভূমি ("রেশমের গুটি পালনকারীদের দেশ") পেরিয়ে যেতে হয়।[৬][৭][৮][৯]

রেশম পোকার বিষয়ে জিনতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা যায় যে আসামের দুটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অসমীয়া রেশমের উদ্ভব হয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের গারো পাহাড় এবং অন্যটি ছিল প্রাচীন শুতীয়া রাজ্যের ঢাকুয়াখানা।

প্রথমে আসামের চারপাশের নারীরা রেশমের চাষ শুরু করেছিল এবং পরে কামরূপ এবং আহোম শাসনামলে সুয়ালকুচি নামে একটি নির্দিষ্ট জায়গার রেশমের পোশাক প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিল। কথিত আছে যে একাদশ শতাব্দীতে পাল বংশের রাজা ধর্মপাল সুয়ালকুচি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পশ্চিম আসামে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রায় ১১০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পালরা রাজত্ব করেছিল। ধর্মপাল ২৬ টি তাঁতি পরিবারকে বরপেটার তান্তিকুচি থেকে সুয়ালকুচিতে নিয়ে এসেছিলেন এবং বর্তমানের গুয়াহাটির নিকটে তাঁতিদের জন্য একটি গ্রাম তৈরি করেছিলেন।[১০] সেই সময়কালে রেশমকে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছিল এবং সুয়ালকুচিকে রেশম বুননের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছিল।

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

মুগা রেশম ২০০৭ সালে একটি সুরক্ষিত ভৌগোলিক ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে এবং ২০১৪ সালে ট্রেডমার্কের উদ্দেশ্যে একে একটি জিআই লোগো দেওয়া হয়েছিল। লোগোটি আসাম বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ কাউন্সিলে নিবন্ধিত হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সিল্ক বোর্ডকে মুগা রেশম পণ্যগুলো পরিদর্শন করার, সেগুলোর নির্ভেজালত্ব প্রমাণ করার এবং প্রযোজকদের জিআই লোগো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে।[১১] পাশাপাশি এই বোর্ডটি আসামের যোরহাটের কেন্দ্রীয় মুগা এরি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে মুগা রেশমসহ অন্যান্য অসমীয়া রেশম সংক্রান্ত গবেষণ, উন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের সাথেও জড়িত।[৫]

গবেষণা ও উৎপাদন[সম্পাদনা]

২০১৫ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকসের নাগরাজু গবেষণা দলের আদর্শ গুপ্ত কুমার মুগা রেশমের ফাইব্রোইনের সম্পূর্ণ ক্রম এবং প্রোটিন কাঠামোটি আবিষ্কার করেছিলেন, যেটি বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচারে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশিত হয়েছিল।[১২]

২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারতে মোট ১৫৮ টন মুগা রেশম উৎপাদিত হয়েছিল, যার মধ্যে ১৩৬ টনই উৎপাদিত হয়েছিল আসামে। একই সময়ে ভারতে রেশমের মোট ফলন ছিল ২৮,৭০৮ টন।[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "GI Registry India"Statewise Registration Details of GI Applications। Intellectual property India। ২৬ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ 
  2. "Muga Silk"। Central Silk Board, Ministry of Textiles, Government of India। ৩ জুলাই ২০১৪। ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ "Muga Silk" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে. Central Silk Board, Ministry of Textiles, Government of India. 3 July 2014. Retrieved 27 January 2016.
  3. Hyde, Nina (১৯৮৪)। "The Queen of Textiles": 14। 
  4. "Non-wood products from organisms associated with temperate broad-leaved trees"। Food and Agriculture Organization। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জানুয়ারি ২০১৬ 
  5. "CMER&TI"। CMER&TI। ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ 
  6. Sharma,S.K.,Discovery of North-East India, p.315.
  7. Deka, Phani. The Great Indian Corridor in the East, p.63.
  8. M, Mignonette. Society and Economy in North-east India, Volume 2", 2004, p.316.
  9. "Kautilya,Arthashatra,p.109,"and that which is the product of the country, Suvarnakudya, is as red as the sun, as soft as the surface of the gem, woven while the threads are very wet, and of uniform (chaturasra) or mixed texture (vyámisravána)."" (পিডিএফ)। ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 
  10. Trouble looms
  11. "Finally, muga gets GI logo"। The Telegraph, Calcutta। ২৮ এপ্রিল ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ 
  12. Adarsh Gupta. K। "Molecular architecture of silk fibroin of Indian golden silkmoth, Antheraea assama" 
  13. "CSB Annual Report 14-15" (পিডিএফ)Annual Report 2014–15। Central Silk Board, India। নভেম্বর ২০১৫। পৃষ্ঠা 5, 123। ৯ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১৬