মুকুলোদ্‌গম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্যাকক্যারওমাইসিস সেরভিসিআই নামক ইস্ট মুকুলোদগমের মাধ্যমে প্রজনন করছে।

মুকুলোদগম বা অঙ্কুরোদগম বা কলিধারণ হলো এক ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতি যেখানে একটি জীব কুঁড়ি বা অঙ্কুর সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন জীবের জন্ম দেয়। এই কুঁড়িটি কোষ বিভাজনের ফলে জীবদেহের একটি নির্দিষ্ট স্থানে গজায়। উদাহরণস্বরূপ, ইস্ট (Yeast) কোষ থেকে যে ছোট্ট বাল্বের মতো অংশ বের হয় তাকেই কুঁড়ি বলা হয়। যেহেতু এটি একটি অযৌন প্রজনন পদ্ধতি, তাই নতুন জীবটি পূর্বের জীবের একটি প্রতিরূপ এবং মূল জীবের সাথে জিনগতভাবে অভিন্ন। হাইড্রার মতো জীব ইন্টারস্টিসিয়াল কোষ ব্যবহার করে মুকুল সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটায়।

হাইড্রার দেহের নিম্নাংশ বা মধ্যাংশের এপিডার্মিসের ইন্টারস্টিসিয়াল কোষসমূহ দ্রুত বিভাজিত হয়ে মুকুল সৃষ্টি করে। এরপর, এতে কর্ষিকা ও হাইপোস্টোমের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে মুকুল ও মাতৃ হাইড্রার মাঝে বৃত্তাকার খাঁজের সৃষ্টি হয়ে অপত্য হাইড্রা (মুকুল) মাতৃদেহ (মূল হাইড্রা) থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে।

অভ্যন্তরীণ অঙ্কুরোদগম বা এন্ডোডাইজেনি হলো একধরণের অমৈথুন জনন পদ্ধতি, যা প্রধানত টোক্সোপ্লাজমা গোন্ডাইয়ের মতো পরজীবীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি একটি অস্বাভাবিক জনন প্রক্রিয়া, যেখানে মাতৃকোষের ভিতরে দুটি অপত্য কোষের সৃষ্টি হয় এবং কোষ দুটি পৃথক হওয়ার পূর্বে মাতৃকোষকে গ্রাস করে ফেলে।[১]

এন্ডোপলিজেনি হলো অভ্যন্তরীণ কুঁড়িধারণের মাধ্যমে একসাথে একাধিক জীব তৈরির প্রক্রিয়া।

কোষীয় প্রজনন[সম্পাদনা]

কিছু কোষ মুকুলোদগমের মাধ্যমে অপ্রতিসমভাবে বিভাজিত হয়। যেমন স্যাকক্যারওমাইসিস সেরভিসিআই নামক ইস্ট, ইস্টের এই প্রজাতি বেকিং এবং ব্রিউইং এর কাজে ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ায় একটি মাতৃকোষ এবং একটি ছোট অপত্য কোষের সৃষ্টি হয়। ক্রায়ো-ইলেকট্রন টমোগ্রাফির মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াও মুকুলোদগমের মাধ্যমে বিভাজিত হয়।

প্রাণীজ প্রজনন[সম্পাদনা]

হাইড্রার দেহে দুটি মুকুলের সৃষ্টি হয়েছে।
হাইড্রার মুকুলোদগম: ১. অযৌন প্রজনন ২. মুকুল সৃষ্টি করছে ৩. অপত্য হাইড্রা বিকশিত হচ্ছে ৪. খাঁজের সুষ্টি হচ্ছে ৫. অপত্য হাইড্রা মাতৃ হাইড্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে ৬. মাতৃহাইড্রার প্রতিরূপ হাইড্রার জন্ম

কিছু বহুকোষী প্রাণীতে, মাতৃজীবের দেহের প্রস্থান্তকৃত অংশ থেকে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয়। যেসব প্রাণী মুকুলোদগমের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে তাদের মধ্যে রয়েছে প্রবাল, স্পঞ্জের কিছু প্রজাতি, কিছু এসিওল (যেমন কনভোলিউট্রিলোবা) এবং একাইনোডার্মাটার লার্ভা।

কলোনি বিভাজন[সম্পাদনা]

মৌমাছির কিছু প্রজাতির বংশবৃদ্ধি পদ্ধতিতে মুকুলোদগমের নজির রয়েছে, যেমন Apis dorsata (ডোরসাটা মৌমাছি)। এই প্রজাতির মৌমাছিতে মুকুলোদগম খুবই বিরল ঘটনা। কিন্তু এটি পরিলক্ষিত হয়েছে যখন একদল শ্রমিক মৌমাছি আদি আবাস ত্যাগ করে সাধারণত তার কাছাকাছিই একটি নতুন আবাস তৈরি করে।[২]

ভাইরাসবিদ্যা[সম্পাদনা]

ভাইরালজি বিজ্ঞানে, কুঁড়ি গঠন হলো এক ধরনের ভাইরাল বিসর্জন প্রক্রিয়া। এতে, আবরণযুক্ত ভাইরাসগুলো মাতৃ কোষের ঝিল্লি থেকে তাদের বহিঃআবরণ অর্জন করে। এই সময়, মাতৃ কোষের ঝিল্লি ফুলে উঠে ভাইরাস কণিকাকে (ভাইরিয়ন) বেষ্টন করে।

গাছের বংশবৃদ্ধি[সম্পাদনা]

কৃষি এবং উদ্যানকর্মে, কলম (grafting) এর একটি প্রক্রিয়া হলো "কলিকা সন্নিবেশন" (budding) যা একটি গাছের কলিকা (bud) অন্য গাছের কাণ্ডে স্থাপন করে নতুন গাছ তৈরি করাকে বোঝায়।[৩]

এই প্রক্রিয়ায়, একটি গাছের (ডোনার গাছ) থেকে একটি সুস্থ কলিকা (ডোনার কলিকা) কেটে নেওয়া হয় এবং অন্য একটি গাছের (স্টক গাছ) কাণ্ডে স্থাপন করা হয়। এই দুই গাছের কাণ্ডের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা হয়, যাতে তারা একসাথে বেড়ে ওঠে এবং একটি নতুন গাছ তৈরি করে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. James Desmond Smyth, Derek Wakelin (১৯৯৪)। Introduction to animal parasitology (3 সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 101–102। আইএসবিএন 0-521-42811-4 
  2. Oldroyd, B.P. (২০০০)। "Colony relatedness in aggregations of Apis dorsata Fabricius (Hymenoptera, Apidae)"। Insectes Sociaux47 (47): 94–95। এসটুসিআইডি 40346464ডিওআই:10.1007/s000400050015 
  3. "Budding Plant Propagation Technique"। plantpropagation.org। ২০২৩-০৬-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-৩১