মিশরের তৃতীয় রাজবংশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিশরের তৃতীয় রাজবংশ
২৬৮৬ খ্রিস্টপূর্ব–২৬১৩ খ্রিস্টপূর্ব
সাকার‍্য জোসের পিরামিড
রাজধানীমেমফিস
প্রচলিত ভাষামিশরীয় ভাষা
ধর্ম
প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম
সরকারসম্পূর্ণ রাজতন্ত্র
ঐতিহাসিক যুগব্রোঞ্জ যুগ
• প্রতিষ্ঠা
২৬৮৬ খ্রিস্টপূর্ব
• বিলুপ্ত
২৬১৩ খ্রিস্টপূর্ব
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
মিশরের দ্বিতীয় রাজবংশ
মিশরের চতুর্থ রাজবংশ
আবাইদোস তালিকায় প্রাপ্ত তৃতীয় রাজবংশের ফারাওদের তালিকা

মিশরের তৃতীয় রাজবংশ (মোটামুটি ২৭০০ - ২৬২০ খ্রিস্টপুর্বাব্দ) হল মিশরের পুরাতন রাজত্বের প্রথম রাজবংশ। এই রাজবংশের সময়ে (এবং সমগ্র পুরাতন রাজত্ব হিসেবে চিহ্নিত সময়কালেই) মিশরের রাজধানী ছিল মেমফিস

নৃপতিবৃন্দ[সম্পাদনা]

সাক্কারায় ফারাও জোসেরের সমাধি মন্দির

তৃতীয় রাজবংশের ফারাওরা মোটামুটি ৭৫ - ৮০ বছর রাজত্ব করেন। ফারাও জোসের ছিলেন এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। দ্বিতীয় রাজবংশের শেষের দিকে সম্ভবত কিছু অশান্ত বছর ও গৃহযুদ্ধের শেষে মিশর তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়।[১] তুরিনে প্রাপ্ত ফারাওদের তালিকা এবং আবাইদোস তালিকা - দু' ক্ষেত্রেই এই রাজবংশের পাঁচজন রাজার উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু সাক্কারা শিলালিপি অনুসারে এই রাজবংশের ফারাও ছিলেন চারজন।

এখানে উল্লেখ্য যে সাক্কারা শিলালিপিতে প্রাপ্ত ফারাওদের নামগুলি সবই তাদের গৃহীত হোরাসনাম। নিচে তৃতীয় রাজবংশের ফারাওদের নাম,ক্রমপর্যায় ও রাজত্বের দৈর্ঘ্যের একটি সম্ভাব্য তালিকা দেওয়া হল। এই তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে রাজাদের ক্রমপর্যায়ের ক্ষেত্রে উইলকিনসন[২] ও তাদের রাজত্বের দৈর্ঘ্যর ক্ষেত্রে ডোডসন ও হিলটন[১] প্রদত্ত তথ্যকে অনুসরণ করা হয়েছে।

তৃতীয় রাজবংশের ফারাওরা
হোরাসনাম ব্যক্তিনাম রাজত্বের দৈর্ঘ্য সমাধি স্ত্রী
নেতিয়েরি-খেত জোসের ১৯ সাক্কারা হেতেফেরনেবতি
সেখেমখেত জোসেরতি সাক্কারা: পিরামিড জেসেরেতনেবতি
সানাখৎ নেবকা ১৯ আবাইদোস ?
খাবা তেতি জোয়ায়েত এল' আরিয়ান: লাইয়ার পিরামিড
অনিশ্চিত, কাহেদিয়েৎ ? হুনি ২৪ মেইদম ? জেফাতনেবতি
প্রথম মেরেসানখ

বিবরণ[সম্পাদনা]

মিশরে আদি রাজত্বের যুগ (প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজত্বকাল) শেষ হয়ে পুরাতন রাজত্বের যুগের সূচনা ঘটে তৃতীয় রাজবংশের রাজত্বকালেই (মোটামুটি ২৭০০ - ২৬২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। মূলত পিরামিডনির্মাণকেন্দ্রিক তৎপরতাকে কেন্দ্র করেই ঐতিহাসিকরা এই যুগবিভাজন করে থাকেন। নাহলে অনেক ঐতিহাসিকেরই মতে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের শাসনকালের সরাসরি ধারাবাহিকতাতেই তৃতীয় রাজবংশের শাসনকালকেও চিহ্নিত করা সম্ভব; কারণ রাজনৈতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এই দুই যুগের মিলের পরিমাণ সত্যিই চোখে পড়ার মতোই।[৩] তাছাড়া দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় রাজবংশের রাজত্বকালের উদ্ভবের ক্ষেত্রে এমনকী রাজবংশেরও তেমন কোনও পরিবর্তন হয়েছিল বলা যায় না, কারণ তৃতীয় রাজবংশের প্রথম রাজা উত্তরাধিকারসূত্রে সরাসরিই তার পূর্ববর্তী রাজবংশের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন।

কায়রোর মিশরীয় মিউজিয়ামে রক্ষিত ফারাও জোসেরের মূর্তি, সাক্কারা থেকে প্রাপ্ত

তবে তৃতীয় রাজবংশের রাজাদের ক্রমপর্যায় ও উত্তরাধিকার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটা মুশকিল অনুভূত হয় ; এর কারণ হল পরবর্তী সময়ে প্রাপ্ত তালিকাগুলিতে ফারাওদের জন্মসময়কালীন নামের যে বিবরণ পাওয়া যায়, তার সাথে এইসময়ের হোরাসনামগুলিকে প্রায়শই মেলানো সম্ভব হয় না। এইসময়ের যে পাঁচ থেকে ছয়জন রাজার হোরাসনাম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একমাত্র নেতিয়েরি-খেতকে ফারাও জোসের হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু তার উত্তরাধিকারী হিসেবে যে সেখেমখেত, খাবাসানাখৎ'এর নাম পাওয়া যায়, তাদের সঠিক পরিচয় নিয়ে এখনও সংশয় থেকে গেছে। তবে যতদূর সম্ভব এই তিনজনের মধ্যে একজন হলেন ফারাও নেবকা। এই রাজবংশের শেষ ফারাও হুনিকে সাধারণভাবে হোরাসনাম কাহেদিয়েৎ বলে মনে করা হয়, তবে এই চিহ্নিতকরণও পুরোপুরি সন্দেহাতীত নয়। এখনও পর্যন্ত যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে এই রাজবংশের রাজত্বকাল মোটামুটি ৭৫ - ৮০ বছর স্থায়ী ছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।[৪][৫]

সাক্কারায় ফারাও জোসের নির্মিত স্টেপ পিরামিড

ফারাও জোসের ছিলেন এই রাজবংশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজা। তার আমলেই সাক্কারায় সুবিখ্যাত স্টেপ পিরামিড সহ একাধিক প্রস্তরনির্মিত সৌধ নির্মিত হয়। মানবেতিহাসে এইধরনের সৌধের প্রথম নির্মাতা হিসেবে তার নাম উল্লেখ্য।[৬] এই রাজবংশের আমল প্রাচীন মিশরের প্রস্তরনির্মিত সৌধসমূহের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণকাল হিসেবেই চিহ্নিত। এইধরনের সুবিশাল নির্মাণকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত এবং সচল প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এই আমলের একজন প্রসিদ্ধ আমলা ছিলেন ইমহোটেপ; তিনি ছিলেন ফারাও'এর পরামর্শদাতা ও অন্যতম প্রধান নির্মাতা। তার খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে পরবর্তীকালে তিনি এমনকী দেবতা হিসেবেও পূজিত হতে শুরু করেন। ফারাও জোসেরের আমল থেকে পিরামিড ও অন্যান্য সৌধের গায়ে অলঙ্করণ ও প্রতিলিপি নির্মাণের ক্ষেত্রে যে ধরনের সূক্ষতা চোখে পড়ে, তা স্বাভাবিকভাবেই এই আমলকে পূর্ববর্তী আমলের থেকে পৃথক রূপে চিহ্নিত করে থাকে।

এই আমলের মিশরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এই যে, নীল নদের দুই তীরবর্তী পূর্ববর্তী নোমগুলি এইসময়েই তাদের স্বাধীন অস্তিত্ব হারিয়ে ফারাও'এর বশ্যতা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় ও তাদের পূর্ববর্তী স্বাধীন শাসকরা নিজ নিজ অঞ্চলে ফারাও'এর প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন বা কর সংগ্রাহকের ভূমিকা পালন করতে শুরু করেন। ফারাও এইসময় থেকেই দেবতা হিসেবে পূজিত হতে শুরু করেন। মিশরীয়দের ধারণা ছিল যে নীল নদে যে বার্ষিক বন্যা হয়, যা তাদের কৃষিকার্য ও ফসল উৎপাদনের জন্য ছিল অপরিহার্য, তা ফারাওই নিয়ন্ত্রণ করেন। মহাবিশ্বে সময় চক্রাকারে আবর্তিত হয়, পৃথিবীতে ঋতুচক্র তারই প্রতিফলন। ফারাও পৃথিবীতে এই সময়চক্রের স্থায়িত্ব ও সাম্যের নিয়ন্তা। তারা এইসময় নিজেদের দেবতাদের দ্বারা বিশেষভাবে চিহ্নিত ও নির্বাচিত মানবগোষ্ঠী বলেই মনে করত।[৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Dodson, Aidan & Hilton, Dyan. The Complete Royal Families of Ancient Egypt. Thames & Hudson, 2004. ISBN 9780500051283
  2. Toby A.H. Wilkinson. Early Dynastic Egypt, Routledge, 2001. ISBN 9780415186339
  3. Toby A. H. Wilkinson: Early Dynastic Egypt, New York 1999, S. 60–61.
  4. Michel Baud: The Old Kingdom. in: Allan S. Lloyd (Hrsg.): A Companion to Ancient Egypt, Blackwell Publishing, Malden und Oxford 2010, ISBN 9781405155984, S. 59–65.
  5. Stephan J. Seidlmayer: The Relative Chronology of dynasty 3. in: Erik Hornung, Rolf Krauss und David A. Warburton (Hrsg.): Ancient Egyptian Chronology, Leiden 2006, S. 116–123.
  6. Hermann A. Schlögl: Das Alte Ägypten: Geschichte und Kultur von der Frühzeit bis zu Kleopatra. Beck, München 2006, ISBN 3-406-54988-8, S. 82. (জার্মান)
  7. Herlin, Susan J. (2003). "Ancient African Civilizations to ca. 1500: Pharaonic Egypt to Ca. 800 BC". August 23, 2003. p. 27. সংগৃহীত ২৮ জুন, ২০১৮।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]