হোরাসনাম
হায়ারোগ্লিফিকে হোরাসনাম | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
Ḥr- ... Horus ... |
হোরাসনাম (ইংরেজি - Horusname) হল মিশরীয় ফারাওদের পাঁচধরনের নামের মধ্যে একটি। আদি ও পুরাতন রাজত্বের যুগে চতুর্থ রাজবংশের ফারাওদের পর্যন্ত মিশরের সম্রাটদের এই একধরনের নামই পাওয়া গিয়েছে।
বিবরণ
[সম্পাদনা]হোরাসনাম হল বাস্তবে একটি গৃহীত উপাধি। ফারাওরা হলেন আসলে স্বর্গের প্রধান দেবতা হোরাসের পার্থিব প্রতিনিধি - এই বিশ্বাস থেকেই এইধরনের নামের উৎপত্তি।[১] এক্ষেত্রে যে হায়ারোগ্লিফিক চিত্রগুলি দ্বারা ফারাও'এর নাম বোঝানো হয়, তা সাধারণভাবে একটি আয়তাকার রেখার মধ্যে অবস্থান করে। এর নিচের অংশে থাকে একটি সেরেখ, এক আয়তাকার অলঙ্করণ বিশেষ, যা প্রাসাদ ও রাজসভার চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর ফারাও'এর নামের উপর একটি বাজপাখির চিত্র অঙ্কিত থাকে, যা দেবতা হোরেসকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, পুরো চিত্রটির মানে দাঁড়ায় যে চিত্রলিপি দ্বারা চিহ্নিত নামের অধিকারী ব্যক্তি দেবতা হোরেসের প্রতিনিধি হিসেবে রাজসভায় (সেরেখ দ্বারা চিহ্নিত) রাজা হিসেবে অধিষ্ঠান করেন।[২] কিন্তু যেহেতু অনেক ফারাওই এইভাবে সেরেখের উপরে দেবতা হোরাসের চিহ্ন হিসেবে বাজপাখির চিত্র খোদাই করে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি, তাই আজকাল মিশরতত্ত্ববিদরা হোরাসনামের থেকে সেরেখ নামের উপরই বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন।[৩] তাছাড়া পুরাতন রাজত্বের শেষের দিক থেকে ফারাওরা যত বেশি নিজেদের দেবতা ওসিরিসকেন্দ্রিক মিথোলজির সাথে যুক্ত করে ফেলেন, হোরাসনামের চল ততই পরিত্যক্ত হয়।
উৎপত্তি ও ইতিহাস
[সম্পাদনা]এখনও পর্যন্ত মিশরের ফারাওদের যতধরনের রাজকীয় উপাধি আবিস্কৃত হয়েছে, হোরাসনাম নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে প্রাচীনতম। ৩৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দ্বিতীয় নাকাদা বা গেরজে সংস্কৃতির সময়েই তার উদ্ভবের সাক্ষ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। সেই সময় থেকে শুরু করে প্রথম রাজবংশের আমল পর্যন্ত আবিস্কৃত বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণাদির দ্বারা তার ক্রমবিকাশও চিহ্নিত হয়েছে। প্রথম দিকে এইধরনের চিত্রলিপিতে সেরেখগুলির সাথে ফারাও'এর কোনও ব্যক্তিনামের উল্লেখ থাকত না। তার পরের পর্যায়ে সেরেখগুলির পাশে এই ব্যক্তিনামের উল্লেখের চল হয়, যদিও তখনও সময়ে সময়ে দেখা গেছে ব্যক্তিনাম উহ্য থেকে গেছে। কখনও কখনও আবার সেরেখের উপরে কোনও হোরাস চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না, আবার কখনও দেখা যায়, হোরাসের পায়ের তলায় সেরেখটি উলটোভাবে চিত্রিত। ফারাও কা'র হোরাসনাম এই শেষোক্ত ধরনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।[৩] তৃতীয় নাকাদা সংস্কৃতির মধ্য ও শেষভাগ (৩২০০ - ৩০৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) থেকে দেখা যায় ফারাওরা সেরেখের মধ্যে তাদের ব্যক্তিনাম লিখতে শুরু করেছেন; প্রথম দিকের এইধরনের নামের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ফারাও কা ও দ্বিতীয় স্করপিয়নের আবিষ্কৃত হোরাসনাম। এঁদের সময় থেকেই সেরেখগুলি পরবর্তীকালের অনুরূপ হয়ে ওঠে।[১] তবে প্রথম রাজবংশের সময়কালীন কিছু নামের ক্ষেত্রে কিছু অদ্ভুত প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। ফারাও হোর-আহা, কা-আ ও রাণী মেরিৎ-নেইৎ'এর সমাধিস্থল থেকে বেশ কিছু কাদামাটির ফলক উদ্ধার হয়েছে, যেখানে ফারাও নারমের থেকে ফারাও কা পর্যন্ত সমস্ত ফারাও'এর হোরাসনাম লিপিবদ্ধ আছে, কিন্তু তাদের কোনওটির সাথেই কোনও সেরেখ নেই। এর সঠিক কারণ বোঝা সম্ভব হয়নি, তবে এর থেকে অনেকেই আন্দাজ করেন যে ফারাওদের নাম লেখার এই ঐতিহ্যটির মধ্যে আরও জটিলতা বিদ্যমান।[৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Rolf Gundlach: Horus in the Palace: The centre of State and Culture in pharaonic Egypt. In: Rolf Gundlach, John H. Taylor: Egyptian royal Residences: 4. Symposium zur Ägyptischen Königsideologie (4th edition, London 2004). Harrassowitz, Wiesbaden 2009, ISBN 978-3-447-05888-9, S. 45–68.
- ↑ Jürgen von Beckerath: Handbuch der ägyptischen Königsnamen. Münchner Ägyptologische Studien. Bd. 49. Philipp von Zabern, Mainz 1999, ISBN 3-8053-2591-6, S. 7-9.
- ↑ ক খ গ Laurel Bestock: The Development of Royal Funerary Cult at Abydos: Two Funerary Enclosures from the Reign of Aha (= Menes: Studien zur Kultur und Sprache der ägyptischen Frühzeit und des Alten Reiches, vol.6). Harrassowitz, Wiesbaden 2009, ISBN 3447058382, S. 6-10.