ভাণ্ডারি (জাতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভাণ্ডারি
পশ্চিম ভারতে ভাণ্ডারি পুরুষ (আনুমানিক ১৮৫৫ - ১৮৬২)
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
প্রাথমিক জনসংখ্যা আছে:
ভাষা
মারাঠি এবং কোঙ্কনির বিভিন্ন উপভাষা
ধর্ম
হিন্দুধর্ম
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
কোঙ্কনি মানুষ

ভাণ্ডারি সম্প্রদায় ভারতের পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী একটি জাতি। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছিল "টডি টোকা" (তাড়ি বানানো)। তাঁরা গোয়া রাজ্যের বৃহত্তম বর্ণ গোষ্ঠী গঠন করেছেন। প্রতিবেদন অনুসারে তাঁরা এই রাজ্যের হিন্দু জনসংখ্যার ৩০% এরও বেশি, এবং সেখানে যে কোনো রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।[১][২] ভাণ্ডারিরা গোয়া এবং মহারাষ্ট্রে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

যদিও "ভাণ্ডারি" শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "মন্ধরালে" থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ "পানকারী", কিন্তু ভাণ্ডারি মানুষেরা এটি ভাণ্ডার থেকে উদ্ভূত শব্দ বলতে পছন্দ করেন, যার অর্থ কোষাগার, কারণ তাঁরা অতীতে কোষাগার প্রহরী ছিলেন।[৪]

ঐতিহ্যগতভাবে, তাঁদের পেশা ছিল তাল গাছ থেকে তাড়ি বার করা। ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে তাঁরা মারাঠা সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর পদাতিক সৈনিক ছিলেন। শিবাজীর সেনাবাহিনীতে বিখ্যাত "হেতকারি"রা ছিলেন ভাণ্ডারি। শিবাজীর সময়ে মায়নাক ভাণ্ডারি ছিলেন একজন প্রধান নৌসেনাপতি[৫]

ভাণ্ডারিরা বিভিন্ন উপ-জাতিতে বিভক্ত, তার মধ্যে আছে কিত্তে, হেতকারি, থালে এবং গাবাদ। ব্রিটিশ রাজের সময়, ভাণ্ডারিদের বিভিন্ন উপ-জাতির মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল এবং এই উপজাতিদের মধ্যে পার্থক্য সম্প্রদায়ের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই উপজাতির নেতারা তাঁদের স্বাধীন বর্ণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশ যুগের একজন ভাণ্ডারি লেখক বলেছেন যে তাঁরা ঐতিহ্যগতভাবে শিক্ষাদান এবং শেখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন এবং মন্দিরে বা কারও বাড়ির বাইরে সমস্ত বর্ণের জন্য স্কুল স্থাপনে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেছেন যে সম্প্রদায়ের শিক্ষার অভাবের জন্য ব্রাহ্মণদের দায়ী করা উচিত নয় কারণ ভাণ্ডারিরা ব্রিটিশ যুগে শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করেননি।[৪]

১৮৭৮ সালে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার একটি আইন পাস করে, যার বলে সরকার ভারতে তাদের মদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সর্বাধিক লাভ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এর ফলে বাজারে নিম্নমানের মদের প্রাচুর্য দেখা দিয়েছিল। প্রতিবাদে, ভাণ্ডারি সম্প্রদায় - যাদের ঐতিহ্যগত পেশা ছিল তাড়ি গাঁজন - সরকারকে তাড়ি সরবরাহ করতে অস্বীকার করে।[৬]

ইতিবাচক পদক্ষেপ[সম্পাদনা]

ভাণ্ডারিরা গোয়ার অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর (ওবিসি) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। এটি তাদের ভারতের ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রকল্পের অধীনে কিছু অধিকার প্রদান করে, যেমন সরকারি চাকরিতে পদ সংরক্ষণ এবং পেশা সহায়ক কলেজে ভর্তি।[৭] তারা মহারাষ্ট্রে ওবিসি হিসাবেও শ্রেণীবদ্ধ।[৩]

বর্ণের অবস্থা[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ আমলে, ১৯ শতকে, ভাণ্ডারিরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছিল কারণ তারা দ্বিজ বর্ণের অন্তর্গত ছিল না।[৮]

একজন ব্রাহ্মণ আবেদনকারী, এম আর বোদাস,[৯] চিত্রময় জগৎ (১৯২২) পত্রিকায় একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি ভাণ্ডারি জাতিকে শূদ্র বংশোদ্ভূত বলে মত প্রকাশ করেন। এই লেখাটি অন্য একটি নিবন্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, সেই নিবন্ধের লেখক দাবি করেছেন যে সম্প্রদায়টি মহাভারতের যুগ থেকে বিদ্যমান ছিল এবং ভাণ্ডারিরা মূলত রাজপুতানার ক্ষত্রিয়। তাঁরা জৈন ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তাঁদের পেশা ব্যবসা ছিল। লেখক সতীদাহজওহরকে তাঁদের ঐতিহ্যের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বোদাসের নিবন্ধটি ভাণ্ডারি সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছিল এবং সম্প্রদায়ের সদস্যরা সমস্যাটির সমাধানের জন্য ১৯২২ সালে মিলিত হয়েছিলেন।[৪] তুকারাম পড়ভাল, যিনি ভাণ্ডারি বর্ণের এবং জ্যোতিবা ফুলে-র একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, বলেছিলেন যে ক্ষত্রিয় মর্যাদার দাবি অনেক উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের মধ্যে প্রচলিত ছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে কে আসল ক্ষত্রিয় সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা ছিল না।[১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Treasurers of yore, now key to political fortune"The Times of India। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৩ 
  2. Scott C. Martin (১৬ ডিসেম্বর ২০১৪)। The SAGE Encyclopedia of Alcohol: Social, Cultural, and Historical Perspectives। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 1384–। আইএসবিএন 978-1-4833-3108-9 
  3. "List of Castes in Other Backward Class of Maharashtra"Maharashtra State OBC Finance and Development Corporation। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জুলাই ২০১৪ 
  4. Seshan, Radhika; Kumbhojkar, Shraddha (২০১৮)। Re-searching Transitions in Indian History। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 154–157। 
  5. Studies in Shivaji and His Times। Shivaji University। ১৯৮২। পৃষ্ঠা 211। 
  6. Mark Lawrence Schrad (২০২১)। Smashing the Liquor Machine: A Global History of Prohibition। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 204–। আইএসবিএন 978-0-19-084157-7 
  7. "Goa govt increases quota for OBCs in jobs to 27%"TNN। TOI। সংগ্রহের তারিখ ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  8. Paik, Shailaja (২০১৪)। Dalit Women's Education in Modern India: Double Discrimination। Taylor and Francis Group। পৃষ্ঠা 45। আইএসবিএন 978-0415493000 
  9. John R. McLane (৮ মার্চ ২০১৫)। Indian Nationalism and the Early Congress। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 266–। আইএসবিএন 978-1-4008-7023-3 
  10. O'Hanlon, Rosalind (২০০২)। Caste, Conflict and Ideology: Mahatma Jotirao Phule and Low Caste Protest in Nineteenth-Century Western India। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 43। আইএসবিএন 978-0-52152-308-0 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Ethnic and social groups of Goa and the Konkan