ভাক্কম আব্দুল খাদের

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভাক্কম আব্দুল খাদের
জন্ম(১৯১৭-০৫-২৫)২৫ মে ১৯১৭
ভাক্কম, তিরুবনন্তপুরম, ত্রাভাঙ্কোর
মৃত্যু১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩(1943-09-10) (বয়স ২৬)
মৃত্যুর কারণফাঁসি
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাসুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের এক সৈনিক
পিতা-মাতা
  • ভাভাকুঞ্জু (পিতা)
  • উম্মু সালমা (মাতা)

ভাক্কম আব্দুল খাদের (২৫ মে ১৯১৭ - ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩) ছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় বিপ্লবী এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী তথা আজাদ হিন্দ ফৌজের একজন সৈনিক।[১]  ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ সেন্ট্রাল জেলে সত্যেন বর্ধন , আনন্দন এবং ফৌজা সিং-এর সঙ্গে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।  সকলেই বন্দে মাতরম গানে দেশমাতৃকার বন্দনায় আর বন্দে মাতরম স্লোগান তুলে ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন। [২]আবদুল খাদের নিজেই স্লোগান তুলেছিলেন "নেতাজি সুভাষ বাবু কি জয়! ব্রিটিশ সরকার নিপাত যাক! ভারতের জয় হোক!"। [৩]

প্রারম্ভিক জীবন এবং কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আবদুল খাদের ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে তিরুবনন্তপুরম জেলার ভাক্কমে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম ভাভাকুঞ্জু এবং মাতা উম্মু সালমা। স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে শ্রী নারায়ণ গুরু প্রতিষ্ঠিত শ্রী নারায়ণ বিলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন। স্কুলে শৈশবের দিনগুলিতে খাদের একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন।[৪] ছাত্রবস্থাতেই খাদের সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশাত্মবোধক গানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেন। মহাত্মা গান্ধী কেরালা সফরের সময়, তার ট্রেন কাদাক্কাভুর রেলস্টেশনে পৌঁছালে, তিনি অত্যন্ত ভিড়ের মাঝে গান্ধীজিকে মাল্যদান করেন।[৫] ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ২১ বৎসর বয়সে, তার পিতার নির্দেশে মালয়েশিয়ায় চলে যান এবং সেখানে তিনি গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশল বিভাগে যোগ দেন। পরে কিন্তু জাতীয়তাবোধ উদ্দীপ্ত খাদের মালয়েশিয়ায় ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স লীগ তথা ভারতীয় স্বাধীনতা লীগে যোগ দেন এবং একজন বিপ্লবী নেতা হয়ে ওঠেন। মালয়েশিয়ায় ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স লীগকে সহযোগকারী কেরালা মুসলিমদের সংগঠন, কেরালা মুসলিম ইউনিয়নের সেক্রেটারিও হন। পরবর্তীতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মি তথা আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেন।[৬] সেখানকার পেনাং-এ অবস্থিত ফ্রি স্কুলে (অধুনা পেনাং মিউজিয়াম) ভারতীয় স্বরাজ ইনস্টিটিউটে তার প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি সেনাদলের একজন কয়ার স্কোয়াডের সদস্য হন।[৭]

বিপ্লবী কার্যক্রম[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যর টালমাটাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে আন্দোলন ঘটানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়। সেই বিপ্লব সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ২০ জন বিপ্লবীকে চারটি দলে বিভক্ত করে ভারতে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দলের পাঁচজনের অন্যতম ছিলেন খাদের। প্রথম দল কালিকটে পৌঁছায় এবং দ্বিতীয় দলের সঙ্গে খাদের সাবমেরিন করে কাথিয়াওয়াড় উপকূলে পৌঁছান। দুর্ভাগ্যবশত নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানোর আগেই তীরের কয়েকজন লোক পুলিশকে সংবাদ পাঠায়। ছোট রাবার বোটে তীরে অবতরণের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই খাদের ও তার সহযোদ্ধারা গ্রেফতার হন।

বিচার ও সাজা[সম্পাদনা]

আব্দুল খালেক, সত্যেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন, ফৌজা সিং এবং আনন্দন সহ স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের গ্রেফতার করে তাদের মাদ্রাজের ফোর্ট সেন্ট জর্জে বন্দি করা হয়। এমনকি তাদের মাদ্রাজ ফোর্টে নির্যাতন করা হয়েছিল যাতে ভারতে প্রবেশের তাদের পরিকল্পনা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমস্ত গোপনীয়তা জানানো হয়।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগদান ও ষড়যন্ত্রের জন্যে তাদের বিচার শুরু হয় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ। ১ এপ্রিল, ১৯৪৩ আরো চারজন বিপ্লবীর সাথে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়। ফাঁসির আগের দিন পরিজনদের লেখেন -

(ইংরেজি)

«My dear father, my kind mother, my dear brothers and sisters, I am bidding farewell to you forever. My humble death would occur before 6 am tomorrow. You will be pleased when you come to know from eyewitnesses how boldly and happily did I go the gallows. You will certainly be proud too..."»

(বাংলা)

«আমার প্রিয় বাবা, আমার দয়ালু মা, আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমি আপনাদের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিচ্ছি। আমার আত্মত্যাগ আগামীকাল সকাল ছয় টার আগে ঘটবে। যখন আপনারা প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানবেন কত সাহস আর আনন্দে আমি ফাঁসি কাঠে গিয়েছি, আপনারাও নিশ্চয়ই গর্বিত হবেন।»

ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মির সৈন্য আব্দুল খাদের এবং তার তিন সহযোদ্ধা সত্যেন বর্ধন , ফৌজা সিং এবং আনন্দনকে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে মাদ্রাজ পেনিটেনশিয়ারিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় মধ্যরাত বারোটায়। ফাঁসির আগের প্রায় পুরো রাত জেল বন্দে মাতরম গানে মুখরিত হয়েছিল। অত্যন্ত সাহসের সাথে, আব্দুল খাদের, সত্যেন বর্ধন, ফৌজা সিং এবং আনন্দন, মাতৃভূমির জয়গানে, বন্দে মাতরম স্লোগানে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন। আবদুল খাদের নিজেই স্লোগান তুলেছিলেন 'নেতাজি সুভাষ বাবু কি জয়! বৃটিশ সরকারের নিপাত যাক! ভারতের জয় হোক! [৮]

আবদুল খাদের, সত্যেন্দ্র বর্ধন, ফৌজা সিং এবং আনন্দনের শহীদ হওয়ার বার্তা ভারতের প্রতিটি কোণে পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট এই শহীদদের ভস্মে ভারত তার স্বাধীনতা অর্জন করতে বেশি সময় নেয়নি।[৯] তাদের স্মৃতিতে ত্রাভাঙ্কোরে একটি ছোট স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Unsung Heros Detail, Vakkom Abdul Khader"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৮ 
  2. ঘোষ, কালীচরণ (১৯৬০)। THE ROLL OF HONOUR। বিদ্যাভারতী,কলকাতা। 
  3. "മായ്ച്ചുകളഞ്ഞ വാക്ക്"ManoramaOnline। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২১ 
  4. Dutta, Pradip Kumar। "Revolutionary Abdul Khader of Vakkom"The Asian Age (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২০ 
  5. "The little explored haven at Anchuthengu near Thiruvananthapuram"www.onmanorama.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২০ 
  6. Chopra, Pran Nath (২০১৩)। Who's Who of Indian Martyrs, Vol. 1। Public Resource। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Govt. of India। আইএসবিএন 978-81-230-1757-0 
  7. ഡെസ്ക്, വെബ്। "വക്കം അബ്ദുൽ ഖാദർ: സ്വാതന്ത്ര്യസമര ചരിത്രത്തിലെ രക്തപുഷ്പം"Madhyamam (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২০ 
  8. "Abdul Khader – INA Army – Freedom Fighter – Martyr" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২০ 
  9. "The little explored haven at Anchuthengu near Thiruvananthapuram"www.onmanorama.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২১ 
  10. "India 1998 Vakkom Abdul Khader Phila-1624 Cancelled Folder"Phil India Stamps (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-২১