ব্রহ্মা (তারামণ্ডল)
তারামণ্ডল | |
![]() | |
সংক্ষিপ্ত রূপ | Aur[১] |
---|---|
জেনিটিভ | Aurigae |
উচ্চারণ |
|
প্রতীকবাদ | রথী/সারথি |
বিষুবাংশ | ০৪ঘ ৩৭মি ৫৪.৪২৯৩সে– ০৭ঘ ৩০মি ৫৬.১৮৯৯সে[৩] ঘণ্টা |
বিষুবলম্ব | ৫৬.১৬৪৮৩৩১°–২৭.৮৯১৩১১৬°[৩]° |
আয়তন | ৬৫৭[৪] বর্গডিগ্রি (২১শ) |
প্রধান তারা | ৫, ৮ |
বায়ার/ফ্ল্যামস্টিড তারাসমূহ | ৬৫ |
বহির্গ্রহবিশিষ্ট তারা | ৭ |
৩.০০m-এর অধিক তারা উজ্জ্বল | ৪ |
১০.০০ pc (৩২.৬২ ly) মধ্যে তারা | ২ |
উজ্জ্বলতম তারা | ব্রহ্মহৃদয় (α Aur) (০.০৮m) |
নিকটতম তারা | কিউওয়াই অর[৫] (২০.৭৪ ly, ৬.৩৬ pc) |
মেসিয়ার বস্তু | ৩[৬] |
উল্কাবৃষ্টি | |
সীমান্তবর্তী তারামণ্ডল | |
+৯০° ও −৪০° অক্ষাংশের মাঝে দৃশ্যমান। ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের গোড়া মাসে রাত ৯ টায় সবচেয়ে ভাল দেখায়। |
ব্রহ্মা (লাতিন: Auriga; অরিগা) হল আধুনিক ৮৮টি তারামণ্ডলের অন্যতম; দ্বিতীয় শতাব্দীর জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি কর্তৃক তালিকাভুক্ত ৪৮টি তারামণ্ডলেরও অন্যতম এটি। এটি খ-বিষুবের উত্তর দিকে অবস্থিত। ব্রহ্মা তারামণ্ডলের লাতিন নাম অরিগা শব্দটির অর্থ ‘রথী’ বা ‘সারথি’, যার সঙ্গে এরিকথোনিয়াস ও মার্টিলাস সহ বিভিন্ন পৌরাণিক সত্ত্বার সম্পর্ক বিদ্যমান। উত্তর গোলার্ধে শীতকালের সন্ধ্যায় পাঁচটি অন্য তারামণ্ডলের (যেগুলিতে শীতকালীন ষটকোণ তারকোচ্ছ্বাসে স্থিত তারাগুলি অবস্থিত) সঙ্গে ব্রহ্মা তারামণ্ডলটিও সর্বাপেক্ষা সহজলক্ষ্য হয়ে ওঠে। এটির উত্তরমুখী ক্রান্তির জন্য ব্রহ্মা তারামণ্ডলটিকে -৩৪° দক্ষিণ পর্যন্তই মাত্র সম্পূর্ণ দেখা যায়, আরও দক্ষিণের পর্যবেক্ষকদের কাছে এটি অংশত বা সম্পূর্ণত দিগন্তরেখার নিচে থাকে। ৬৫৭ বর্গ ডিগ্রি ক্ষেত্র-বিশিষ্ট ব্রহ্মা একটি বিশাল তারামণ্ডল। এটির আকার বৃহত্তম তারামণ্ডল হাইড্রার অর্ধেক।
ব্রহ্মা তারামণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারাটি হল ব্রহ্মহৃদয়। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম তারাগুলির মধ্যে এটি ব্যতিক্রমী ধরনের একটি বহু-নক্ষত্র জগৎ। বেটা অরিগি হল এই তারামণ্ডলের একটি কৌতুহলোদ্দীপক বিষম তারা; অন্যদিকে এপসাইলন অরিগি একটি প্রায় গ্রস্থ যুগ্ম তারা, যার পর্যায়কাল ব্যতিক্রমী রকমের দীর্ঘ। এই দুই তারাই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। শীতকালীন আকাশগঙ্গার কাছে অবস্থিত হওয়ায় ব্রহ্মা তারামণ্ডলের সীমানার মধ্যে অনেকগুলি উজ্জ্বল মুক্ত স্তবক রয়েছে। যার মধ্যে এম৩৬, এম৩৭ ও এম৩৮ অপেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে পর্যবেক্ষণের জনপ্রিয় বস্তু। এছাড়া এই তারামণ্ডলের মধ্যে একটি সহজলক্ষ্য নীহারিকা রয়েছে। এটি হল জ্বলন্ত তারা নীহারিকা, যেটি বিষম তারা এই অরিগির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
চীনা পুরাণে ব্রহ্মা তারামণ্ডলের তারাগুলি বিভিন্ন তারামণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। যার মধ্যে মহাজাগতিক সম্রাটদের রথসমূহের নামাঙ্কিত তারামণ্ডলগুলির অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল আধুনিক তারামণ্ডলটির উজ্জ্বলতম তারাগুলি। অরিগিডস, জেটা অরিগিডস, ডেল্টা অরিগিডস ও প্রকল্পিত আইয়োটা অরিগিডসের রশ্মিবিকিরণকারী অংশটি ব্রহ্মা তারামণ্ডলের ক্ষেত্রভুক্ত।
ইতিহাস ও পুরাণকথা
[সম্পাদনা]ব্রহ্মা তারামণ্ডলের অন্তর্গত তারাগুলির প্রথম নথিবদ্ধ উল্লেখ পাওয়া যায় মেসোপটেমিয়ায়। প্রাচীন মেসোপটেমীয়রা এটিকে GAM নামে একটি তারামণ্ডল হিসেবে উল্লেখ করেছিল, যার অর্থ ছিল খঞ্জর বা রাখাল বালকদের ব্যবহৃত ছড়ি। যদিও এটির মাধ্যমে সম্ভবত শুধুমাত্র ব্রহ্মহৃদয় (আলফা অরিগি) অথবা সামগ্রিকভাবে আধুনিক তারামণ্ডলটিকে বোঝাত। মুল.আপিন-এ এই তারামণ্ডল ধারণাটির বিকল্প নাম ছিল গামলাম বা মুল.গাম। ব্রহ্মার ছড়িটিকে একটি ছাগলের পাল বা মেষপালকের ছড়ির প্রতীক হিসেবে দেখা হত। আধুনিক তারামণ্ডলটির অধিকাংশ তারা দিয়েই এই তারামণ্ডলটির ধারণা করা হয়েছিল; এলনাথ ছাড়া সকল উজ্জ্বল তারাই প্রথাগতভাবে বৃষ বা ব্রহ্মা উভয় তারামণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে বেদুইন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যে সব তারামণ্ডল কল্পনা করেন সেগুলি ছিল পশুর দলের আকারবিশিষ্ট এবং সেই সব তারামণ্ডলে প্রত্যেকটি তারা ছিল একটি করে পশুর প্রতীক। ব্রহ্মা তারামণ্ডলের তারাগুলি ছিল ছাগলের পালের প্রতীক, যে প্রতীকতত্ত্বটি গ্রিক পুরাণেও প্রচলিত ছিল।[৮] ছাগলের রূপকল্পটি গ্রিক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রথাতেও গৃহীত হয়েছিল, যদিও পরবর্তীকালে এটি যুক্ত হয় মেষপালক-সহ এক রথী বা সারথির সঙ্গে।[৯]
গ্রিক পুরাণে ব্রহ্মা তারামণ্ডলটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে পৌরাণিক গ্রিক নায়ক এরিকথোনিয়াসের সঙ্গে। ইনি ছিলেন হেফাস্টাসের পাতাললোকীয় পুত্র এবং দেবী আথিনা কর্তৃক পালিত। সাধারণভাবে এরিকথোনিয়াসকে চতুরাশ্ববাহিত রথ কোয়াড্রিগার আবিষ্কর্তা মনে করা হয়। এই রথ তিনি ব্যবহার করেছিলেন অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারী অ্যাম্ফিকটিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। এই যুদ্ধে জয়লাভ করেই এরিকথোনিয়াস এথেন্সের রাজা হয়েছিলেন।[১০][১১] এরিকথোনিয়াস রথটি তৈরি করেছিলেন সূর্যের রথের আদলে, যে কারণে জিউস এরিকথোনিয়াসকে স্বর্গে স্থান দেন।[১২] এই এথেন্সীয় নায়ক এরপর নিজেকে উৎসর্গ করে দেন আথিনার পূজায় এবং তার অল্পকাল পরেই জিউস উদ্ভাবনপটুতা ও বীরোচিত ক্রিয়াকলাপের জন্য এরিকথোনিয়াসকে স্থান দেন রাতের আকাশে।[১৩]

ব্রহ্মা তারামণ্ডলটিকে যদিও কখনও কখনও হার্মিসের পুত্র তথা ওয়েনোমাউসের সারথি মার্টিলাসের রূপেও বর্ণনা করা হয়।[১১] তারামণ্ডলটির চিত্রায়ন থেকে ব্রহ্মা তারামণ্ডলের সঙ্গে মার্টিলাসের সম্পর্কের সমর্থন পাওয়া যায়। এই ছবিগুলিতে রথটিকে খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী, মার্টিলাসের রথটি ওয়েনোমাউসের কন্যা হিপ্পোডেমিয়ার হৃদয় জয় করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। মার্টিলাস হিপ্পোডেমিয়ার সফল প্রণয়ী পেলোপসকে হিপ্পোডেমিয়ার হৃদয় জয় করতে সাহায্য করলেও পেলোপস কর্তৃক নিহত হন। মৃত্যুর পর তিনি পিতা হার্মিস কর্তৃক আকাশে স্থান অর্জন করেন। ব্রহ্মা তারামণ্ডলটির অপর গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র থিসিয়াসের পুত্র হিপ্পোলিটাসেরও সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছিল। নিজের সৎ-মা ফেড্রার প্রণয়-প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তিনি এথেন্স থেকে বহিষ্কৃত হন। ফলশ্রুতিতে ফেড্রা আত্মহত্যা করেন। রথের দুর্ঘটনায় হিপ্পোলিটাস নিহত হলেও আসক্লেপিয়াস কর্তৃক তিনি পুনর্জীবন লাভ করেন।[১২][১৪] ব্রহ্মা তারামণ্ডলটির নির্দিষ্ট প্রতীকতত্ত্বটি যাই হোক না কেন, সম্ভবত প্রাচীন গ্রিকেরা এই তারামণ্ডলটির কল্পনা করেছিল তাদের সমাজে রথের গুরুত্বটিকে স্মরণীয় করে রাখতে।[১৫]
গ্রিক পুরাণে ঘটনাচক্রে ব্রহ্মা তারামণ্ডলটিকে মেডিয়ার ভ্রাতার প্রত্যঙ্গ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে। জেসন ও আর্গোনাটদের উপাখ্যানে পাওয়া যায়, আর্গোনাটদের গৃহে প্রত্যাবর্তনকালে মেডিয়া তার ভাইকে হত্যা করে তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্নভিন্ন করে কিছুটা সমুদ্রে ছুঁড়ে মারে। এটিই গ্রিক পুরাণে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের প্রতীক। প্রতিটি তারা মেডিয়ার ভাইয়ের ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যঙ্গের প্রতীক।[১৬]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]সূত্রনির্দেশ
[সম্পাদনা]- ↑ রাসেল ১৯২২, পৃ. ৪৬৯।
- ↑ পাসাকোফ ২০০৬।
- ↑ ক খ আইএইউ, দ্য কনস্টেলেশনস, অরিগা।
- ↑ রিডপাথ, কনস্টেলেশনস।
- ↑ রেকনস, দ্য ১০০ নিয়ারেস্ট স্টার সিস্টেমস।
- ↑ বাকিক ১৯৯৫, পৃ. ৫৪।
- ↑ বাকিক ১৯৯৫, পৃ. ২৬।
- ↑ রজারস, মেসোপটেমিয়ান ট্র্যাডিশনস ১৯৯৮।
- ↑ রজারস, মেডিটারেনিয়ান ট্র্যাডিশনস ১৯৯৮।
- ↑ মুর ও টিরিয়ন ১৯৯৭, পৃ. ১৩০–১৩১।
- ↑ ক খ রিডপাথ ও টিরিয়ন ২০০৯, পৃ. ৬৭।
- ↑ ক খ রিডপাথ, স্টার টেলস অরিগা।
- ↑ ক্রুপ ২০০৭।
- ↑ স্টাল ১৯৮৮, পৃ. ৭৯।
- ↑ উইন্টারবার্ন ২০০৯, পৃ. ১৩১।
- ↑ স্টাল ১৯৮৮, পৃ. ১০৯।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]