বিষয়বস্তুতে চলুন

ব্রহ্মগুপ্ত-ফিবোনাচ্চি অভেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বীজগণিতে আলোচিত ব্রহ্মগুপ্ত-ফিবোনাচ্চি অভেদটি,[][] দুটি বর্গসংখ্যার সমষ্টি নিয়ে গঠিত এরূপ দুটি সংখ্যার গুণফলকে অন্য আরেকভাবে দুটি বর্গসংখ্যার সমষ্টিরূপে প্রকাশ করে। একারণে, বর্গসংখ্যা দুটির সকল সমষ্টির সেট গুণের অধীনে বদ্ধ হয়ে থাকে। বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলে, এই অভেদটি যা বলে তা হলো:

উদাহরণস্বরূপ,

আলেক্সান্দ্রিয়ার ডায়োফ্যান্টাস প্রথম এই অভেদটির প্রমাণ দেওয়ায় এটি ডায়োফ্যান্টাস অভেদ নামেও পরিচিত।[][]

এটি অয়লারের চার-বর্গ অভেদের, উপরন্তু ল্যাগ্রাঞ্জের অভেদেরও একটি বিশেষ ক্ষেত্র।

ব্রহ্মগুপ্ত আরও সাধারণ একটি অভেদের প্রমাণ ও প্রয়োগ করে দেখান, যা নিম্নরূপ সমীকরণের সমতূল্য:

এটা থেকে দেখা যায় যে, যেকোনো নির্দিষ্ট A-এর জন্য x2 + Ay2 আকারের সমস্ত সংখ্যার সেট গুণের অধীনে বদ্ধ। সকল পূর্ণসংখ্যার পাশাপাশি সকল মূলদ সংখ্যার জন্য এই অভেদগুলো যুক্তিযুক্ত; আরও সাধারণভাবে বলা যায়, এগুলো যেকোনো বিনিময় বলয়ের (Commutative ring) জন্য সত্য। অভেদটির এই রূপান্তর চারটির প্রতিটিই সমীকরণের উভয় পক্ষের বহুপদীর সম্প্রসারণের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এছাড়া, b-কে −b-তে বদলে দিয়েও (1) নং সমীকরণ থেকে (2) নং সমীকরণ অথবা (2) নং সমীকরণ থেকে (1) নং সমীকরণ পাওয়া যায় এবং একইভাবে এটা (3) ও (4) নং-এর জন্যও করা যায়।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

অভেদটি খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে গ্রীক ভাষায় ডায়োফ্যান্টাসের লেখা অরিথমিতিকাতে (III, ১৯) প্রথম দেখা গিয়েছিল। ভারতীয় গণিতবিদজ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রহ্মগুপ্তের (৫৯৮-৬৬৮) হাতে এর পুনঃআবিষ্কার ঘটে, যিনি এটি ব্রহ্মগুপ্তের অভেদরূপে সাধারণীকরণ করেন। বর্তমানে যাকে পেল সমীকরণ বলা হচ্ছে, ব্রহ্মগুপ্ত তার সেই অনুসন্ধান বা গবেষণায় তার এই অভেদের প্রয়োগ করেন এবং ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্তের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল ফাজারী সংস্কৃত ভাষায় লোখা ব্রাহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি আরবিতে অনুবাদ করেন, পরবর্তীতে যা ১১২৬ সালে ল্যাটিনে ভাষান্তর করা হয়।[] ব্রহ্মগুপ্তের অভেদটি, ১২২৫ সালে পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিখকে উৎসর্গীকৃত ফিবোনাচ্চির লিব্যার কুয়াদরাতোরুম গ্রন্থটির মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপে পরিচিত হয়ে ওঠে। একারণে এটি প্রায়শই ফিবোনাচ্চির বলে চিহ্নিত হয়েছিল।

আনুষঙ্গিক অন্যান্য অভেদ

[সম্পাদনা]

অনুরূপ আর যেসব অভেদ রয়েছে তাদের মধ্যে আছে অয়লারের চার-বর্গ অভেদ যা কুইটারনিয়ন সম্পর্কিত এবং রয়েছে অক্টোনিয়ন থেকে প্রতিপাদিত ডিগেনের আট-বর্গ অভেদ যার সাথে বটের পর্যায়বৃত্তি উপপাদ্যের সংযোগ বিদ্যমান। এছাড়াও রয়েছে ফিস্টারের ষোল-বর্গ অভেদ, যদিও এখন আর সেটা দ্বিরৈখিক (bilinear) নয়।

এই অভেদগুলো কম্পোজিশন বীজগণিতে আলোচিত হুরভিৎসের উপপাদ্যের সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

জটিল সংখ্যার গুণ

[সম্পাদনা]

যদি a, b, c এবং d বাস্তব সংখ্যা হয়, তাহলে ব্রহ্মগুপ্ত-ফিবোনাচ্চি অভেদটি নিম্নোক্ত আকারের জটিল সংখ্যার পরম মানের গুণাত্মক ধর্মের (multiplicativity property) সমতূল্য হবে:

একে নিম্নোক্তভাবেও দেখানো যেতে পারে। ডান পক্ষকে সম্প্রসারিত করে এবং উভয়পক্ষকে বর্গ করলে গুণের ধর্ম এই সমীকরণের সমতূল্য হবে:

এবং পরম মানের সংজ্ঞানুসারে নিচের সমতূল্য সমীকরণে এর রূপান্তর ঘটবে:

Q(i) ফিল্ডে ফিল্ড নর্মটি যে গুণাত্মক হবে, এই ভাষায় এই অভেদটিকে যে ব্যাখ্যা করা যায়, সেই ব্যাপারটি, a, b, c এবং d চলকের মূলদ হওয়ার শর্তাধীনে, সমতূল্য একটি গণনা থেকে দেখা যায়; যেখানে নর্মটি হবে:

এবং গুণাত্মক (multiplicativity) গণনা হবে পূর্ববর্তী একটির অনুরূপ।

পেল সমীকরণে প্রয়োগ

[সম্পাদনা]

ব্রহ্মগুপ্ত মূলত x2 − Ay2 = 1 পেল সমীকরণের সমাধান বের করার কাজে তার আবিষ্কার ব্যবহার করেন। তিনি তার অভেদকে নিম্নোক্ত অতি সাধারণ আকারে প্রয়োগ করেন:

এইভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি x2 − Ay2 = k সমীকরণের সমাধান (x1y1k1) এবং (x2y2k2) ত্রয়ীগুলো গঠন করতে সক্ষম হন। এই ত্রয়ীগুলো হচ্ছে x2 − Ay2 = k এর সেইসব সমাধান, যেগুলোর মাধ্যমে তিনি নিচের নতুন ত্রয়ীটি বের করেন:

x2 − Ay2 = 1 এর জন্য একটি সমাধান থেকে শুরু করে অসীমতক পরিমাণে সমাধান বের করার একটি পদ্ধতিই যে কেবল এখান থেকে পাওয়া যায়, তা নয়, বরং এই ধরনের একটি সত্তাকে (ত্রয়ী?) k1k2 দ্বারা ভাগ করে পূর্ণসংখ্যাযুক্ত সমাধান কিংবা পূর্ণসংখ্যার কাছাকাছি সংখ্যাযুক্ত সমাধানও হামেশাই পাওয়া যাবে। ১১৫০ সালে দ্বিতীয় ভাস্কর পেল সমীকরণের সমাধানের জন্য চক্রবাল বিধি নামের যে সাধারণ নিয়মটি প্রদান করেন, সেটিও ছিল এই অভেদভিত্তিক।[]

পূর্ণসংখ্যাকে দুটি বর্গের সমষ্টিরূপে প্রকাশ

[সম্পাদনা]

দুটি বর্গের ফের্মা উপপাদ্যের সাথে যখন ব্রহ্মগুপ্ত-ফিবোনাচ্চি অভেদটি যুগপৎভাবে বা সংযুক্ত আকারে ব্যবহার করা হয়, তখন এই অভেদ থেকে এই প্রমাণটিই পাওয়া যায় যে, একটি বর্গসংখ্যার সাথে 4n + 1 আকারের যেকোনো সংখ্যার গুণফল হবে দুটি বর্গসংখ্যার সমষ্টির সমান।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Brahmagupta-Fibonacci Identity" 
  2. Marc Chamberland: Single Digits: In Praise of Small Numbers. Princeton University Press, 2015, আইএসবিএন ৯৭৮১৪০০৮৬৫৬৯৭, p. 60
  3. Stillwell 2002, পৃ. 76
  4. Daniel Shanks, Solved and unsolved problems in number theory, p.209, American Mathematical Society, Fourth edition 1993.
  5. Joseph 2000, পৃ. 306
  6. Stillwell 2002, পৃ. 72–76

গ্রন্থপঞ্জি ও বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]