মিশরীয় চিত্রলিপি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Xqbot (আলোচনা | অবদান)
রোবট মুছে ফেলছে: ps:هیروغلیف পরিবর্তন সাধন করছে: fr:Hiéroglyphe égyptien; cosmetic changes
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
'''মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক''' ([[গ্রিক ভাষা|প্রাচীন গ্রিক]]: τὰ ἱερογλυφικά [γράμματα], {{lang-en|Hieroglyphic}}) বা বহুবচনে '''মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স''' হলো মিশরীয় লিপিবিশেষ। [[প্রাচীন মিশর|প্রাচীন মিশরে]] তিন ধরণের [[লিপি]] প্রচলিত ছিলো: হায়ারোগ্লিফিক (মিশরীয়), [[হায়রাটিক লিপি|হায়রাটিক]] এবং [[ডেমোটিক লিপি|ডেমোটিক]]। তিনটি লিপির নামই [[গ্রিক|গ্রিকদের]] দেয়া। হায়ারোগ্লিফিক লিপির [[প্রতীক|প্রতীককে]] বলা হয় "হায়ারোগ্লিফ" (Hieroglyph)।<ref name="HHK">{{cite book |author=ফরহাদ খান |title=হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী |origdate= |origyear=২০০৪ |origmonth=ফেব্রুয়ারি |url= |format=প্রিন্ট |accessdate=৯ |accessyear=২০১০ |accessmonth=জুন |edition=ফেব্রুয়ারি ২০০৫ |series= |date= |year= |month= |publisher=দিব্যপ্রকাশ |location=ঢাকা |language=বাংলা |isbn=984-483-179-2 |pages=২৭২ }}</ref>
'''মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক''' ([[গ্রিক ভাষা|প্রাচীন গ্রিক]]: τὰ ἱερογλυφικά [γράμματα], {{lang-en|Hieroglyphic}}) বা বহুবচনে '''মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স''' হলো মিশরীয় লিপিবিশেষ। [[প্রাচীন মিশর|প্রাচীন মিশরে]] তিন ধরণের [[লিপি]] প্রচলিত ছিলো: হায়ারোগ্লিফিক (মিশরীয়), [[হায়রাটিক লিপি|হায়রাটিক]] এবং [[ডেমোটিক লিপি|ডেমোটিক]]। তিনটি লিপির নামই [[গ্রিক|গ্রিকদের]] দেয়া। হায়ারোগ্লিফিক লিপির [[প্রতীক|প্রতীককে]] বলা হয় "হায়ারোগ্লিফ" (Hieroglyph)।<ref name="HHK">{{cite book |author=ফরহাদ খান |title=হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী |origdate= |origyear=২০০৪ |origmonth=ফেব্রুয়ারি |url= |format=প্রিন্ট |accessdate=৯ |accessyear=২০১০ |accessmonth=জুন |edition=ফেব্রুয়ারি ২০০৫ |series= |date= |year= |month= |publisher=দিব্যপ্রকাশ |location=ঢাকা |language=বাংলা |isbn=984-483-179-2 |pages=২৭২ }}</ref>


==শব্দগত তাৎপর্য==
== শব্দগত তাৎপর্য ==
[[গ্রিক]] "হায়ারোগ্লিফ" শব্দের অর্থ 'উৎকীর্ণ পবিত্র চিহ্ন'। গ্রিকরা যখন মিশর অধিকার করে তখন তাদের ধারণা হয় যে, যেহেতু পুরোহিতরা লিপিকরের দায়িত্ব পালন করেন, আর [[মন্দির|মন্দিরের]] গায়ে এই লিপি খোদাই করা রয়েছে,এই লিপি নিশ্চয়ই ধর্মীয়ভাবে কোনো পবিত্র লিপি।<ref name="HHK"/> গ্রিক 'হায়ারোগ্লুফিকোস' (hierogluphikos) থেকে পরবর্তি ল্যাটিন 'হায়ারোগ্লিফিকাস' (hieroglyphicus) হয়ে ফরাসি 'হায়রোগ্লিফিক'(hiéroglyphique) থেকে ইংরেজি 'হায়ারোগ্লিফিক' শব্দটি এসেছে। গ্রিক [[উপসর্গ]] 'হায়ারোস' (''hieros'') অর্থ 'পবিত্র', আর 'গ্লুফি' (''gluphē'') অর্থ 'খোদাই করা লেখা'।<ref>The American Heritage Dictionary; 3rd Edition; Version 3.6a; SoftKey International Inc.</ref>
[[গ্রিক]] "হায়ারোগ্লিফ" শব্দের অর্থ 'উৎকীর্ণ পবিত্র চিহ্ন'। গ্রিকরা যখন মিশর অধিকার করে তখন তাদের ধারণা হয় যে, যেহেতু পুরোহিতরা লিপিকরের দায়িত্ব পালন করেন, আর [[মন্দির|মন্দিরের]] গায়ে এই লিপি খোদাই করা রয়েছে,এই লিপি নিশ্চয়ই ধর্মীয়ভাবে কোনো পবিত্র লিপি।<ref name="HHK"/> গ্রিক 'হায়ারোগ্লুফিকোস' (hierogluphikos) থেকে পরবর্তি ল্যাটিন 'হায়ারোগ্লিফিকাস' (hieroglyphicus) হয়ে ফরাসি 'হায়রোগ্লিফিক'(hiéroglyphique) থেকে ইংরেজি 'হায়ারোগ্লিফিক' শব্দটি এসেছে। গ্রিক [[উপসর্গ]] 'হায়ারোস' (''hieros'') অর্থ 'পবিত্র', আর 'গ্লুফি' (''gluphē'') অর্থ 'খোদাই করা লেখা'।<ref>The American Heritage Dictionary; 3rd Edition; Version 3.6a; SoftKey International Inc.</ref>


==হায়ারোগ্লিফিকের বৈশিষ্ট্য==
== হায়ারোগ্লিফিকের বৈশিষ্ট্য ==
উদ্ভবের কাল থেকে বিলুপ্তির কাল পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফিক ছিলো [[শব্দলিপি]] ও [[অক্ষরলিপি]]নির্ভর। অক্ষরলিপি হিসেবে ছিলো প্রায় ২৪টি একক ব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু উহ্য কোনো এক স্বরধ্বনি। যেহেতু স্বরধ্বনির আলাদা অস্তিত্ব ছিলো না, তাই তার চিহ্নও ছিলো উহ্য। একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যেকোনো স্বরধ্বনিসহযোগে উচ্চারিত হতে পারতো, যেমন: ল্যাটিন ব্যঞ্জনধ্বনি m দিয়ে উদাহরণ দিলে ma, me, mi, mu ইত্যাদি। এছাড়া ছিলো প্রায় ৮০টির মতো দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থানে উহ্য থাকা যেকোনো স্বরধ্বনি। যেমন দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি tm দিয়ে উদাহরণ দিলে তার সাথে স্বরধ্বনি থাকতে পারে tama, tuma, tame, tima ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে। দ্বিব্যঞ্জনধ্বনির জন্য ছিলো একটিমাত্র চিহ্ন।<ref name="HHK"/>
উদ্ভবের কাল থেকে বিলুপ্তির কাল পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফিক ছিলো [[শব্দলিপি]] ও [[অক্ষরলিপি]]নির্ভর। অক্ষরলিপি হিসেবে ছিলো প্রায় ২৪টি একক ব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু উহ্য কোনো এক স্বরধ্বনি। যেহেতু স্বরধ্বনির আলাদা অস্তিত্ব ছিলো না, তাই তার চিহ্নও ছিলো উহ্য। একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যেকোনো স্বরধ্বনিসহযোগে উচ্চারিত হতে পারতো, যেমন: ল্যাটিন ব্যঞ্জনধ্বনি m দিয়ে উদাহরণ দিলে ma, me, mi, mu ইত্যাদি। এছাড়া ছিলো প্রায় ৮০টির মতো দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থানে উহ্য থাকা যেকোনো স্বরধ্বনি। যেমন দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি tm দিয়ে উদাহরণ দিলে তার সাথে স্বরধ্বনি থাকতে পারে tama, tuma, tame, tima ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে। দ্বিব্যঞ্জনধ্বনির জন্য ছিলো একটিমাত্র চিহ্ন।<ref name="HHK"/>


২৮ নং লাইন: ২৮ নং লাইন:
মিশরীয় লিখনপদ্ধতি চিত্রলিপি ও ভাবলিপির স্তর পেরিয়ে শব্দ ও অক্ষরলিপিতে পরিণত হলেও সংখ্যাবাচক চিহ্নের বেলায় তা ভাবলিপির স্তরেই থেকে যায়। এরকম অবস্থা এখনো যেমন রোমক সংখ্যাচিহ্নে দেখা যায়: I, II, III, IV, V ইত্যাদি। সংখ্যা খুব বড় হয়ে গেলে তা বোঝাতে জ্যামিতিক ধরণের চিহ্ন ব্যবহার করা হতো।<ref name="HHK"/>
মিশরীয় লিখনপদ্ধতি চিত্রলিপি ও ভাবলিপির স্তর পেরিয়ে শব্দ ও অক্ষরলিপিতে পরিণত হলেও সংখ্যাবাচক চিহ্নের বেলায় তা ভাবলিপির স্তরেই থেকে যায়। এরকম অবস্থা এখনো যেমন রোমক সংখ্যাচিহ্নে দেখা যায়: I, II, III, IV, V ইত্যাদি। সংখ্যা খুব বড় হয়ে গেলে তা বোঝাতে জ্যামিতিক ধরণের চিহ্ন ব্যবহার করা হতো।<ref name="HHK"/>


==ইতিহাস==
== ইতিহাস ==
মিশরীয় [[ফারাও]] [[মেনেস|মেনেসের]] রাজত্বকালে হায়ারোগ্লিফিক লিপির সৃষ্টি। [[চিত্রলিপি]] না হলেও মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক চিত্ররূপময়। এই লিপিতে সর্বশেষ [[৩৯৪]] খ্রিষ্টাব্দে [[ফিলি|ফিলিতে]] অবস্থিত দেবী [[আইসিস|আইসিসের]] মন্দিরের গায়ে লেখা হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর ষষ্ঠ শতকে আইসিসের মন্দিরে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে মিশরীয় লিপির দ্বীপশিখা নিভে যায়।<ref name="HHK"/>
মিশরীয় [[ফারাও]] [[মেনেস|মেনেসের]] রাজত্বকালে হায়ারোগ্লিফিক লিপির সৃষ্টি। [[চিত্রলিপি]] না হলেও মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক চিত্ররূপময়। এই লিপিতে সর্বশেষ [[৩৯৪]] খ্রিষ্টাব্দে [[ফিলি|ফিলিতে]] অবস্থিত দেবী [[আইসিস|আইসিসের]] মন্দিরের গায়ে লেখা হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর ষষ্ঠ শতকে আইসিসের মন্দিরে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে মিশরীয় লিপির দ্বীপশিখা নিভে যায়।<ref name="HHK"/>


==পাঠোদ্ধার==
== পাঠোদ্ধার ==
গ্রিকরা যখন মিশর দখল করে নেয়, তখন তাদের বিশ্বাস ছিলো হায়ারোগ্লিফিক পবিত্র লিপি। আর এই 'পবিত্রতা' কথাটা যতদিন কাজ করছিলো গবেষকদের মাথায়, ততদিন কোনো না কোনোভাবে ভুল পাঠোদ্ধার হচ্ছিলো এই লিপির। এতে আরো রহস্যমন্ডিত হচ্ছিলো মিশরীয় ইতিহাস। গ্রিক ঐতিহাসিক প্লুতার্ক ([[খ্রিষ্টপূর্ব ১২০]]-[[খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬]]) মিশরীয় লিপিকে ধর্মীয় পবিত্র বিষয়াদি লেখার লিপি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যদিও প্রায় তাঁর সমসাময়িক ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লিখিত বিষয়াদি ধর্মীয় ব্যাপার নয় এবং মূলত এর মধ্যে ছোটবড় যুদ্ধ, অবরোধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে বলে মনে করতেন। সেকালের আরেক ঐতিহাসিক হোরোপোল্লো তাঁর ''"হায়ারোগ্লিফিক"'' বইতে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কে প্রলুব্ধকর, অথচ ভ্রান্ত সমাধান তৈরি করে যান। সে সময়কার ইউরোপীয় গবেষকগণ অনেকটা অন্ধের মতোই হোরোপোল্লো'র ঐতিহাসিক বিবরণ আর হায়ারোগ্লিফিকের ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করেছিলেন, কেননা হোরোপোল্লো জাতিতে মিশরীয় ছিলেন। তিনি তাঁর বইতে অনেকগুলো হায়ারোগ্লিফের গ্রিক অনুবাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ছিলো আসলে ভুল, যা আঠারশ বছর পর ধরা পড়ে সত্যিকার পাঠোদ্ধারের পর। তাঁর এই গবেষণা-দুর্ঘটের মূল কারণ ছিলো তিনি তথ্যের সাথে বিপুল কল্পনা মিশিয়ে ছিলেন।<ref name="HHK"/>
গ্রিকরা যখন মিশর দখল করে নেয়, তখন তাদের বিশ্বাস ছিলো হায়ারোগ্লিফিক পবিত্র লিপি। আর এই 'পবিত্রতা' কথাটা যতদিন কাজ করছিলো গবেষকদের মাথায়, ততদিন কোনো না কোনোভাবে ভুল পাঠোদ্ধার হচ্ছিলো এই লিপির। এতে আরো রহস্যমন্ডিত হচ্ছিলো মিশরীয় ইতিহাস। গ্রিক ঐতিহাসিক প্লুতার্ক ([[খ্রিষ্টপূর্ব ১২০]]-[[খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬]]) মিশরীয় লিপিকে ধর্মীয় পবিত্র বিষয়াদি লেখার লিপি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যদিও প্রায় তাঁর সমসাময়িক ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লিখিত বিষয়াদি ধর্মীয় ব্যাপার নয় এবং মূলত এর মধ্যে ছোটবড় যুদ্ধ, অবরোধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে বলে মনে করতেন। সেকালের আরেক ঐতিহাসিক হোরোপোল্লো তাঁর ''"হায়ারোগ্লিফিক"'' বইতে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কে প্রলুব্ধকর, অথচ ভ্রান্ত সমাধান তৈরি করে যান। সে সময়কার ইউরোপীয় গবেষকগণ অনেকটা অন্ধের মতোই হোরোপোল্লো'র ঐতিহাসিক বিবরণ আর হায়ারোগ্লিফিকের ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করেছিলেন, কেননা হোরোপোল্লো জাতিতে মিশরীয় ছিলেন। তিনি তাঁর বইতে অনেকগুলো হায়ারোগ্লিফের গ্রিক অনুবাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ছিলো আসলে ভুল, যা আঠারশ বছর পর ধরা পড়ে সত্যিকার পাঠোদ্ধারের পর। তাঁর এই গবেষণা-দুর্ঘটের মূল কারণ ছিলো তিনি তথ্যের সাথে বিপুল কল্পনা মিশিয়ে ছিলেন।<ref name="HHK"/>


৩৮ নং লাইন: ৩৮ নং লাইন:
হায়ারোগ্লিফিকসহ অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আগের ভুল ধারণাগুলো ভাঙার শুরু অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। তখনই অনেক গবেষক হায়ারোগ্লিফিককে শব্দলিপি বলে সন্দেহ করতে থাকলেন। তখন গবেষকদের হাতে এলো উপবৃত্তাকার এক প্রকারের ফ্রেম, যার [[ফরাসি]] নাম কার্তুশ। তাঁরা ধারণা করলেন এগুলোতে হয়তো ফারাও অথবা তাঁদের পত্নিদের নাম লেখা থাকতে পারে। যোহান গেয়র্গ [[১৭৯৭]] খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর একটি বইয়ে এরকম অনেকগুলো কার্তুশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে জানান, সদৃশ কার্তুশগুলো একই ব্যক্তির নাম আর বৈসদৃশ কার্তুশগুলো ভিন্ন ভিন্ন নাম।<ref name="HHK"/>
হায়ারোগ্লিফিকসহ অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আগের ভুল ধারণাগুলো ভাঙার শুরু অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। তখনই অনেক গবেষক হায়ারোগ্লিফিককে শব্দলিপি বলে সন্দেহ করতে থাকলেন। তখন গবেষকদের হাতে এলো উপবৃত্তাকার এক প্রকারের ফ্রেম, যার [[ফরাসি]] নাম কার্তুশ। তাঁরা ধারণা করলেন এগুলোতে হয়তো ফারাও অথবা তাঁদের পত্নিদের নাম লেখা থাকতে পারে। যোহান গেয়র্গ [[১৭৯৭]] খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর একটি বইয়ে এরকম অনেকগুলো কার্তুশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে জানান, সদৃশ কার্তুশগুলো একই ব্যক্তির নাম আর বৈসদৃশ কার্তুশগুলো ভিন্ন ভিন্ন নাম।<ref name="HHK"/>


এরপর [[১৭৯৮]] খ্রিষ্টাব্দে [[নেপোলিয়ন]] [[প্রাচীন মিশর|মিশর]] আক্রমণ করেন এবং [[১৭৯৯]] খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সৈন্যরা বিখ্যাত [[রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট]] উদ্ধার করেন। রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট আসলে একটি শিলালিপি। এতে একই সাথে রয়েছে তিনটি স্তর ও তিন স্তরে তিন লিপি: প্রথম স্তরে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি, দ্বিতীয় স্তরে [[হায়রাটিক লিপি]], আর তৃতীয় স্তরে [[গ্রিক লিপি]]। কিন্তু লেখার [[ভাষা]] ছিলো দুটি: [[মিশরীয় ভাষা|মিশরীয়]] আর [[গ্রিক ভাষা|গ্রিক ভাষা]]। [[টলেমি রাজবংশ|টলেমি রাজবংশের]] রাজা [[পঞ্চম টলেমি]] [[এপিফানেস]] [[খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৬|১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে]] এক ফরমান জারি করেন, যা মিশরীয় পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে রোসেটা কৃষ্ণশিলাপটে উৎকীর্ণ হয়। এই দ্বিভাষিক ত্রিলিপি অংকিত শিলালিপিটিই খুলে দিয়েছিলো মিশরীয় লিপি ও ভাষা পঠনের দুয়ার।<ref name="HHK"/>
এরপর [[১৭৯৮]] খ্রিষ্টাব্দে [[নেপোলিয়ন]] [[প্রাচীন মিশর|মিশর]] আক্রমণ করেন এবং [[১৭৯৯]] খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সৈন্যরা বিখ্যাত [[রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট]] উদ্ধার করেন। রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট আসলে একটি শিলালিপি। এতে একই সাথে রয়েছে তিনটি স্তর ও তিন স্তরে তিন লিপি: প্রথম স্তরে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি, দ্বিতীয় স্তরে [[হায়রাটিক লিপি]], আর তৃতীয় স্তরে [[গ্রিক লিপি]]। কিন্তু লেখার [[ভাষা]] ছিলো দুটি: [[মিশরীয় ভাষা|মিশরীয়]] আর [[গ্রিক ভাষা]]। [[টলেমি রাজবংশ|টলেমি রাজবংশের]] রাজা [[পঞ্চম টলেমি]] [[এপিফানেস]] [[খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৬|১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে]] এক ফরমান জারি করেন, যা মিশরীয় পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে রোসেটা কৃষ্ণশিলাপটে উৎকীর্ণ হয়। এই দ্বিভাষিক ত্রিলিপি অংকিত শিলালিপিটিই খুলে দিয়েছিলো মিশরীয় লিপি ও ভাষা পঠনের দুয়ার।<ref name="HHK"/>


পরবর্তিতে হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করেন [[ফরাসি]] জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিয়ঁ এবং [[ব্রিটিশ]] [[পদার্থবিজ্ঞান|পদার্থবিদ]] টমাস ইয়ং।<ref name="HHK"/>
পরবর্তিতে হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করেন [[ফরাসি]] জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিয়ঁ এবং [[ব্রিটিশ]] [[পদার্থবিজ্ঞান|পদার্থবিদ]] টমাস ইয়ং।<ref name="HHK"/>


==বিবর্তন==
== বিবর্তন ==
হায়ারোগ্লিফিক লিপি সময়ে সময়ে বিবর্তনের ধারা পার করেছে। বিবর্তিত হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে তা [[হায়রাটিক লিপি|হায়রাটিক লিপির]] রূপ পরিগ্রহ করে, আর পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে তা [[ডেমোটিক লিপি|ডেমোটিক লিপির]] রূপ পরিগ্রহ করে।
হায়ারোগ্লিফিক লিপি সময়ে সময়ে বিবর্তনের ধারা পার করেছে। বিবর্তিত হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে তা [[হায়রাটিক লিপি|হায়রাটিক লিপির]] রূপ পরিগ্রহ করে, আর পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে তা [[ডেমোটিক লিপি|ডেমোটিক লিপির]] রূপ পরিগ্রহ করে।
=== হায়রাটিক লিপি ===
=== হায়রাটিক লিপি ===
৫২ নং লাইন: ৫২ নং লাইন:
[[খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০]] অব্দের দিকে প্রাচীন মিশরে ডেমোটিক লিপির উদ্ভব। এই লিপি হলো হায়ারোগ্লিফিক লিপির বিবর্তনের সর্বশেষ রূপ। চিত্রনির্ভর হায়ারোগ্লিফিক থেকে এই লিপি ধীরে ধীরে টানা টানা হাতের লেখার মতো রূপ ধারণ করে। হায়ারোগ্লিফিক, এমনকি হায়রাটিক লিপির চেয়েও দ্রুত লেখা যেতো এই লিপি দিয়ে।<ref name="HHK"/>
[[খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০]] অব্দের দিকে প্রাচীন মিশরে ডেমোটিক লিপির উদ্ভব। এই লিপি হলো হায়ারোগ্লিফিক লিপির বিবর্তনের সর্বশেষ রূপ। চিত্রনির্ভর হায়ারোগ্লিফিক থেকে এই লিপি ধীরে ধীরে টানা টানা হাতের লেখার মতো রূপ ধারণ করে। হায়ারোগ্লিফিক, এমনকি হায়রাটিক লিপির চেয়েও দ্রুত লেখা যেতো এই লিপি দিয়ে।<ref name="HHK"/>


==তথ্যসূত্র==
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist|2}}
{{reflist|2}}


==বহিঃসংযোগ==
== বহিঃসংযোগ ==
{{Commons category|Egyptian hieroglyphs}}
{{Commons category|Egyptian hieroglyphs}}
*[http://www.aldokkan.com/art/hieroglyphics.htm Ancient Egyptian Hieroglyphics - Aldokkan]
* [http://www.aldokkan.com/art/hieroglyphics.htm Ancient Egyptian Hieroglyphics - Aldokkan]
*[http://www.egyptologyforum.org/glyphs.html Glyphs and Grammars] ''Resources for those interested in learning hieroglyphs, compiled by Aayko Eyma.''
* [http://www.egyptologyforum.org/glyphs.html Glyphs and Grammars] ''Resources for those interested in learning hieroglyphs, compiled by Aayko Eyma.''
*[http://www.isidore-of-seville.com/hieroglyphs/ Hieroglyphics!] ''Annotated directory of popular and scholarly resources.''
* [http://www.isidore-of-seville.com/hieroglyphs/ Hieroglyphics!] ''Annotated directory of popular and scholarly resources.''
*[http://www.jimloy.com/hiero/e-dict.htm ''Egyptian Hieroglyphic Dictionary''] by [[Jim Loy]]
* [http://www.jimloy.com/hiero/e-dict.htm ''Egyptian Hieroglyphic Dictionary''] by [[Jim Loy]]
*[http://www.p22.com/products/hieroglyphic.html Hieroglyphic fonts''] by [[P22 type foundry]]
* [http://www.p22.com/products/hieroglyphic.html Hieroglyphic fonts''] by [[P22 type foundry]]
*[http://www.greatscott.com/hiero/ GreatScott.com's Hieroglyphs] ''Commercial (free intro)''
* [http://www.greatscott.com/hiero/ GreatScott.com's Hieroglyphs] ''Commercial (free intro)''
*[[mw:Extension:WikiHiero/Syntax|Wikimedia's hieroglyph writing codes]]
* [[mw:Extension:WikiHiero/Syntax|Wikimedia's hieroglyph writing codes]]
*[http://www.ancientegyptonline.co.uk Ancient Egypt Online: Sign list, tutorials and quizzes] ''A complete sign list, plus tutorials and quizzes''
* [http://www.ancientegyptonline.co.uk Ancient Egypt Online: Sign list, tutorials and quizzes] ''A complete sign list, plus tutorials and quizzes''
*[http://users.teilar.gr/~g1951d/ Unicode Fonts for Ancient Scripts] Ancient scripts free software fonts
* [http://users.teilar.gr/~g1951d/ Unicode Fonts for Ancient Scripts] Ancient scripts free software fonts




৭১ নং লাইন: ৭১ নং লাইন:
{{writing systems}}
{{writing systems}}


[[বিষয়শ্রেণী: লিখন পদ্ধতি]]
[[বিষয়শ্রেণী:লিখন পদ্ধতি]]
[[বিষয়শ্রেণী: লিপি]]
[[বিষয়শ্রেণী:লিপি]]
[[বিষয়শ্রেণী: ভাষাবিজ্ঞান]]
[[বিষয়শ্রেণী:ভাষাবিজ্ঞান]]


[[als:Ägyptische Hieroglyphen]]
[[als:Ägyptische Hieroglyphen]]
৮২ নং লাইন: ৮২ নং লাইন:
[[da:Egyptisk hieroglyf]]
[[da:Egyptisk hieroglyf]]
[[de:Ägyptische Hieroglyphen]]
[[de:Ägyptische Hieroglyphen]]
[[es:Jeroglífico]]
[[eo:Hieroglifoj]]
[[en:Egyptian hieroglyphs]]
[[en:Egyptian hieroglyphs]]
[[eo:Hieroglifoj]]
[[es:Jeroglífico]]
[[ext:Herogríficu]]
[[ext:Herogríficu]]
[[fa:هیروگلیف مصری]]
[[fa:هیروگلیف مصری]]
[[fr:Hiéroglyphe]]
[[fi:Hieroglyfit]]
[[fr:Hiéroglyphe égyptien]]
[[gv:Jalloo-ocklyn Egyptagh]]
[[gv:Jalloo-ocklyn Egyptagh]]
[[he:כתב חרטומים]]
[[hi:मिस्री चित्रलिपि]]
[[hi:मिस्री चित्रलिपि]]
[[id:Hieroglif Mesir]]
[[id:Hieroglif Mesir]]
[[it:Geroglifico]]
[[it:Geroglifico]]
[[ja:ヒエログリフ]]
[[he:כתב חרטומים]]
[[ka:ეგვიპტური იეროგლიფები]]
[[ka:ეგვიპტური იეროგლიფები]]
[[ku:Hiyeroglîfên misrî]]
[[ku:Hiyeroglîfên misrî]]
১০০ নং লাইন: ১০২ নং লাইন:
[[ms:Hieroglif Mesir]]
[[ms:Hieroglif Mesir]]
[[nl:Egyptische hiërogliefen]]
[[nl:Egyptische hiërogliefen]]
[[ja:ヒエログリフ]]
[[no:Hieroglyf]]
[[nn:Hieroglyf]]
[[nn:Hieroglyf]]
[[no:Hieroglyf]]
[[oc:Ieroglifs egipcians]]
[[oc:Ieroglifs egipcians]]
[[ps:هیروغلیف]]
[[pl:Hieroglify]]
[[pl:Hieroglify]]
[[pt:Hieróglifo]]
[[pt:Hieróglifo]]
১১২ নং লাইন: ১১২ নং লাইন:
[[sl:Hieroglif]]
[[sl:Hieroglif]]
[[sr:Египатски хијероглифи]]
[[sr:Египатски хијероглифи]]
[[fi:Hieroglyfit]]
[[sv:Hieroglyfer]]
[[sv:Hieroglyfer]]
[[th:เฮียโรกลิฟฟิก]]
[[th:เฮียโรกลิฟฟิก]]

০০:০৭, ১৪ জুলাই ২০১০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক
প্যাপিরাস অফ এ্যানির একটি অংশ, যাতে খোদিত হায়ারোগ্লিফ দেখা যাচ্ছে।
লিপির ধরন আবজাদ-এর (abjad) মতো ব্যবহার্য
সময়কালখ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ – ৪০০ খ্রিষ্টাব্দ
লেখার দিকডান-থেকে-বাম, বাম-থেকে-ডান উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
ভাষাসমূহমিশরীয় ভাষা
সম্পর্কিত লিপি
উদ্ভবের পদ্ধতি
(Proto-writing)
  • মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক
বংশধর পদ্ধতি
হায়রাটিক, ডেমোটিক, মোরয়িটিক (Meroitic), মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ বর্ণমালা
আইএসও ১৫৯২৪
আইএসও ১৫৯২৪Egyp, 050 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন, ​মিশরীয় চিত্রলিপি
ইউনিকোড
ইউনিকোড উপনাম
মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক
এই নিবন্ধে আধ্বব চিহ্ন রয়েছে। সঠিক রেন্ডারিং সমর্থন ছাড়া, আপনি হয়ত ইউনিকোড অক্ষরের বদলে জিজ্ঞাসা চিহ্ন, বাক্স বা অন্য কোনো চিহ্ন দেখবেন।

মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক (প্রাচীন গ্রিক: τὰ ἱερογλυφικά [γράμματα], ইংরেজি: Hieroglyphic) বা বহুবচনে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক্স হলো মিশরীয় লিপিবিশেষ। প্রাচীন মিশরে তিন ধরণের লিপি প্রচলিত ছিলো: হায়ারোগ্লিফিক (মিশরীয়), হায়রাটিক এবং ডেমোটিক। তিনটি লিপির নামই গ্রিকদের দেয়া। হায়ারোগ্লিফিক লিপির প্রতীককে বলা হয় "হায়ারোগ্লিফ" (Hieroglyph)।[১]

শব্দগত তাৎপর্য

গ্রিক "হায়ারোগ্লিফ" শব্দের অর্থ 'উৎকীর্ণ পবিত্র চিহ্ন'। গ্রিকরা যখন মিশর অধিকার করে তখন তাদের ধারণা হয় যে, যেহেতু পুরোহিতরা লিপিকরের দায়িত্ব পালন করেন, আর মন্দিরের গায়ে এই লিপি খোদাই করা রয়েছে,এই লিপি নিশ্চয়ই ধর্মীয়ভাবে কোনো পবিত্র লিপি।[১] গ্রিক 'হায়ারোগ্লুফিকোস' (hierogluphikos) থেকে পরবর্তি ল্যাটিন 'হায়ারোগ্লিফিকাস' (hieroglyphicus) হয়ে ফরাসি 'হায়রোগ্লিফিক'(hiéroglyphique) থেকে ইংরেজি 'হায়ারোগ্লিফিক' শব্দটি এসেছে। গ্রিক উপসর্গ 'হায়ারোস' (hieros) অর্থ 'পবিত্র', আর 'গ্লুফি' (gluphē) অর্থ 'খোদাই করা লেখা'।[২]

হায়ারোগ্লিফিকের বৈশিষ্ট্য

উদ্ভবের কাল থেকে বিলুপ্তির কাল পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফিক ছিলো শব্দলিপিঅক্ষরলিপিনির্ভর। অক্ষরলিপি হিসেবে ছিলো প্রায় ২৪টি একক ব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু উহ্য কোনো এক স্বরধ্বনি। যেহেতু স্বরধ্বনির আলাদা অস্তিত্ব ছিলো না, তাই তার চিহ্নও ছিলো উহ্য। একটি ব্যঞ্জনধ্বনি যেকোনো স্বরধ্বনিসহযোগে উচ্চারিত হতে পারতো, যেমন: ল্যাটিন ব্যঞ্জনধ্বনি m দিয়ে উদাহরণ দিলে ma, me, mi, mu ইত্যাদি। এছাড়া ছিলো প্রায় ৮০টির মতো দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন অবস্থানে উহ্য থাকা যেকোনো স্বরধ্বনি। যেমন দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি tm দিয়ে উদাহরণ দিলে তার সাথে স্বরধ্বনি থাকতে পারে tama, tuma, tame, tima ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে। দ্বিব্যঞ্জনধ্বনির জন্য ছিলো একটিমাত্র চিহ্ন।[১]

সাধারণভাবে প্রতিটি মিশরীয় শব্দের শুরু ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে। কিছু কিছু শব্দের শুরুতে অবশ্য স্বরধ্বনি রযেছে, যেমন: Amon, Osiris ইত্যাদি। কিছু ক্রিয়াপদের শব্দের শুরুতেও থাকে স্বরধ্বনি। তবে এগুলো থাকে ব্যঞ্জনধ্বনির হ্রস্ব উচ্চারণের ক্ষেত্রে এবং তাও উহ্য অবস্থায়। এভাবে হায়ারোগ্লিফিকের মাধ্যমে স্বরধ্বনি উহ্য রেখে শুধু ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে প্রকাশিত হতো একেকটি শব্দ। শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসারে মানুষ বুঝে নিতো কোথায় কোন স্বরধ্বনি বসিয়ে নিয়ে কোন মানেটা বুঝতে হবে। যেমন নেফারতিতির নাম লেখার সময় হায়ারোগ্লিফিকে লেখা হতো nfrtt -শ্রুতির ঐতিহ্য অনুসারে মিশরীয়রা স্বরধ্বনি বসিয়ে নিয়ে বুঝতো Nefertiti।[১]

কিছু কিছু ত্রিব্যঞ্জনধ্বনিবিশিষ্ট চিহ্নও ছিলো। এসব চিহ্ন ব্যবহার করা হতো বড় বড় শব্দের বেলায়। মিশরীয় লিপিকররাই মূলত লিখনপদ্ধতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী সাজাতেন অক্ষর, তবে ঐতিহ্যের ধারা তারা ঠিকই মানতেন। লিপিকররা ঠিক করতো লিপি কোথায় লেখা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে, লিপিমালা ডান না বাম, কোনদিক থেকে শুরু হবে। অর্থাৎ হায়ারোগ্লিফিক কখনও ডান থেকে বামে, কখনও বাম থেকে ডানে যেতো। কখনওবা উপর থেকে নিচে। আরেকটি পদ্ধতি ছিলো, যাকে বলা হয় 'হলাবর্ত পদ্ধতি', অনেকটা কৃষক যেমন করে জমিতে লাঙল দেন, তেমন করে ডান থেকে বামে, আবার বাম থেকে ডানে এমনিভাবে। তবে বোঝার পদ্ধতি হলো: মানুষ অথবা প্রাণীবাচক চিত্রের মুখ যেদিকে আছে অথবা হাত পা যেদিকে মুখ করে আছে, সেই দিকটাই হলো লিপি পঠনের শুরু আর তা এখন যেদিকেই যাক।[১]

হায়ারোগ্লিফিক লিপি চিত্রে ভরপুর। অবস্থান বুঝে এসব চিত্রে আবার অলঙ্করণও থাকতো। চিত্রগুলো হতো বাস্তবধর্মী। এছাড়া আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিলো হায়ারোগ্লিফিকের: নির্ধারক চিহ্নের ব্যবহার। এই চিহ্নগুলোও বাস্তবধর্মী। প্রতিটি ভাষায় সমস্বর অনেক শব্দ থাকে। বাংলায় যেমন আছে বাণ, বান; সমস্বর শব্দ হলেও অর্থ পৃথক। প্রাচীন মিশরীয় ভাষায় সমস্বর শব্দের সংখ্যা অনেক বেশি। যেমন মিশরীয় ভাষায় শুধু SS চিহ্নে লিখিত শব্দটির অর্থ "লিপিকর" এবং "দলিল" দুটোই। এখন কোথায় লিপিকর আর কোথায় দলিল বোঝাবে, তা ঠিক করে নির্ধারক চিহ্ন। SS-এর সাথে যখন একজন 'মানুষের ছবি' থাকে তখন তা বোঝায় 'লিপিকর', আর যখন SS-এর সাথে থাকে 'লেখার ফলক' বা 'লেখার পাতা', তখন তা বোঝায় 'দলিল'।[১]

মিশরীয় লিখনপদ্ধতি চিত্রলিপি ও ভাবলিপির স্তর পেরিয়ে শব্দ ও অক্ষরলিপিতে পরিণত হলেও সংখ্যাবাচক চিহ্নের বেলায় তা ভাবলিপির স্তরেই থেকে যায়। এরকম অবস্থা এখনো যেমন রোমক সংখ্যাচিহ্নে দেখা যায়: I, II, III, IV, V ইত্যাদি। সংখ্যা খুব বড় হয়ে গেলে তা বোঝাতে জ্যামিতিক ধরণের চিহ্ন ব্যবহার করা হতো।[১]

ইতিহাস

মিশরীয় ফারাও মেনেসের রাজত্বকালে হায়ারোগ্লিফিক লিপির সৃষ্টি। চিত্রলিপি না হলেও মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক চিত্ররূপময়। এই লিপিতে সর্বশেষ ৩৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিতে অবস্থিত দেবী আইসিসের মন্দিরের গায়ে লেখা হয়। হায়ারোগ্লিফিক লিপি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর ষষ্ঠ শতকে আইসিসের মন্দিরে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে মিশরীয় লিপির দ্বীপশিখা নিভে যায়।[১]

পাঠোদ্ধার

গ্রিকরা যখন মিশর দখল করে নেয়, তখন তাদের বিশ্বাস ছিলো হায়ারোগ্লিফিক পবিত্র লিপি। আর এই 'পবিত্রতা' কথাটা যতদিন কাজ করছিলো গবেষকদের মাথায়, ততদিন কোনো না কোনোভাবে ভুল পাঠোদ্ধার হচ্ছিলো এই লিপির। এতে আরো রহস্যমন্ডিত হচ্ছিলো মিশরীয় ইতিহাস। গ্রিক ঐতিহাসিক প্লুতার্ক (খ্রিষ্টপূর্ব ১২০-খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬) মিশরীয় লিপিকে ধর্মীয় পবিত্র বিষয়াদি লেখার লিপি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। যদিও প্রায় তাঁর সমসাময়িক ইহুদি ঐতিহাসিক যোসেফাস মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লিখিত বিষয়াদি ধর্মীয় ব্যাপার নয় এবং মূলত এর মধ্যে ছোটবড় যুদ্ধ, অবরোধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে বলে মনে করতেন। সেকালের আরেক ঐতিহাসিক হোরোপোল্লো তাঁর "হায়ারোগ্লিফিক" বইতে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার সম্পর্কে প্রলুব্ধকর, অথচ ভ্রান্ত সমাধান তৈরি করে যান। সে সময়কার ইউরোপীয় গবেষকগণ অনেকটা অন্ধের মতোই হোরোপোল্লো'র ঐতিহাসিক বিবরণ আর হায়ারোগ্লিফিকের ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করেছিলেন, কেননা হোরোপোল্লো জাতিতে মিশরীয় ছিলেন। তিনি তাঁর বইতে অনেকগুলো হায়ারোগ্লিফের গ্রিক অনুবাদ দিয়েছিলেন, কিন্তু সেগুলোর অধিকাংশই ছিলো আসলে ভুল, যা আঠারশ বছর পর ধরা পড়ে সত্যিকার পাঠোদ্ধারের পর। তাঁর এই গবেষণা-দুর্ঘটের মূল কারণ ছিলো তিনি তথ্যের সাথে বিপুল কল্পনা মিশিয়ে ছিলেন।[১]

তারপর এই লিপির পাঠোদ্ধারে এগিয়ে আসেন গণিত ও প্রাচ্যভাষার অধ্যাপক আথানিয়াস কির্শার। তিনি কপ্টিক ভাষাগ্রিক ভাষা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন যে, কপ্টিক ভাষা আসলে হায়ারোগ্লিফিকেরই বিবর্তিত রূপ। তাই তিনি কপ্টিক ভাষার মাধ্যমে হায়ারোগ্লিফিকের অনুবাদ করতে গেলেন। কিন্তু তিনিও বিশ্বাস করতেন এই ভাষা পবিত্র, আর তাতেই তিনি তাঁর অনুবাদকে ভুল পথে পরিচালিত করেছিলেন। তিনি শব্দলিপিকে ভাবলিপি ধরে নিয়ে ধর্মসংশ্লিষ্ট অনুবাদ দাঁড় করালেন একটি স্মৃতিস্তম্ভের গায়ের সাতটি হায়ারোগ্লিফিক চিহ্নকে।[১]

হায়ারোগ্লিফিকসহ অন্যান্য প্রাচীন মিশরীয় লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে আগের ভুল ধারণাগুলো ভাঙার শুরু অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে। তখনই অনেক গবেষক হায়ারোগ্লিফিককে শব্দলিপি বলে সন্দেহ করতে থাকলেন। তখন গবেষকদের হাতে এলো উপবৃত্তাকার এক প্রকারের ফ্রেম, যার ফরাসি নাম কার্তুশ। তাঁরা ধারণা করলেন এগুলোতে হয়তো ফারাও অথবা তাঁদের পত্নিদের নাম লেখা থাকতে পারে। যোহান গেয়র্গ ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর একটি বইয়ে এরকম অনেকগুলো কার্তুশের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য তুলে ধরে জানান, সদৃশ কার্তুশগুলো একই ব্যক্তির নাম আর বৈসদৃশ কার্তুশগুলো ভিন্ন ভিন্ন নাম।[১]

এরপর ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নেপোলিয়ন মিশর আক্রমণ করেন এবং ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সৈন্যরা বিখ্যাত রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট উদ্ধার করেন। রোসেটা কৃষ্ণশিলাপট আসলে একটি শিলালিপি। এতে একই সাথে রয়েছে তিনটি স্তর ও তিন স্তরে তিন লিপি: প্রথম স্তরে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি, দ্বিতীয় স্তরে হায়রাটিক লিপি, আর তৃতীয় স্তরে গ্রিক লিপি। কিন্তু লেখার ভাষা ছিলো দুটি: মিশরীয় আর গ্রিক ভাষাটলেমি রাজবংশের রাজা পঞ্চম টলেমি এপিফানেস ১৯৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এক ফরমান জারি করেন, যা মিশরীয় পুরোহিতদের তত্ত্বাবধানে রোসেটা কৃষ্ণশিলাপটে উৎকীর্ণ হয়। এই দ্বিভাষিক ত্রিলিপি অংকিত শিলালিপিটিই খুলে দিয়েছিলো মিশরীয় লিপি ও ভাষা পঠনের দুয়ার।[১]

পরবর্তিতে হায়ারোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করেন ফরাসি জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাঁপোলিয়ঁ এবং ব্রিটিশ পদার্থবিদ টমাস ইয়ং।[১]

বিবর্তন

হায়ারোগ্লিফিক লিপি সময়ে সময়ে বিবর্তনের ধারা পার করেছে। বিবর্তিত হয়ে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে তা হায়রাটিক লিপির রূপ পরিগ্রহ করে, আর পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এসে তা ডেমোটিক লিপির রূপ পরিগ্রহ করে।

হায়রাটিক লিপি

মূল নিবন্ধ: হায়রাটিক লিপি

হায়ারোগ্লিফিক লিপি বেশ কঠিন ছিলো আর এই উপলব্ধিতে খ্রিষ্টপূর্ব ২৭০০ অব্দের দিকে হায়ারোগ্লিফিক বিবর্তিত হয়ে জন্ম হয় হায়রাটিক লিপির[১]

ডেমোটিক লিপি

মূল নিবন্ধ: ডেমোটিক লিপি

খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দের দিকে প্রাচীন মিশরে ডেমোটিক লিপির উদ্ভব। এই লিপি হলো হায়ারোগ্লিফিক লিপির বিবর্তনের সর্বশেষ রূপ। চিত্রনির্ভর হায়ারোগ্লিফিক থেকে এই লিপি ধীরে ধীরে টানা টানা হাতের লেখার মতো রূপ ধারণ করে। হায়ারোগ্লিফিক, এমনকি হায়রাটিক লিপির চেয়েও দ্রুত লেখা যেতো এই লিপি দিয়ে।[১]

তথ্যসূত্র

  1. ফরহাদ খান। হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী (প্রিন্ট) (ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংস্করণ)। ঢাকা: দিব্যপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ২৭২। আইএসবিএন 984-483-179-2  অজানা প্যারামিটার |accessyear= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |accessmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য);
  2. The American Heritage Dictionary; 3rd Edition; Version 3.6a; SoftKey International Inc.

বহিঃসংযোগ