ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Talim10 (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৫২, ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (Update of this movement)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

ভারতীয় পণ্য ও সেবা বর্জন
অবস্থান
প্রক্রিয়াসমূহবিক্ষোভ, বর্জন, সমাবেশ, সামাজিক আন্দোলন

ইন্ডিয়া আউট (ভারত বর্জন) ক্যাম্পেইন ২০২৪ সালে বাংলাদেশমালদ্বীপের সাধারণ জনগণ ভারতের প্রতি তাদের বিদ্বেষ প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু হয় যদিও কয়েকবছর পূর্বে থেকেই মালদ্বীপে এই আন্দোলন চলমান রয়েছে।[১] ভারত বিদ্বেষী এই আন্দোলন প্রাথমিকভাবে মালদ্বীপ শুরু হলেও এটি বাংলাদেশের বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্ডিয়া আউট নামক ক্যম্পেইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এটি আরম্ভ হয়।[২] এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণার মাধ্যমে অন্যান্য কিছু সংখ্যক দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনে সমর্থককারী জনগণ ভারতীয় পণ্য ও সেবা বয়কটের পক্ষে সমর্থন জানায়।[৩] ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মাঝে প্রায়শই ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক উদ্বেগ, ভারতের নীতি, অবিচারের অভিযোগ থেকে এই আন্দোলন তীব্রতা পায়।

পটভূমি

১৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ থেকে প্রথম ইন্ডিয়া আউট আন্দোলনের ডাক দেন আওয়ামী লীগ সরকারের হয়রানির শিকার হয়ে নির্বাসিত বাংলাদেশি চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্য[৪]

প্রিয় নাগরিকবৃন্দ,

আজ এক যুগান্তকারী সংগ্রামের সূচনা, বিজয়ের লড়াই শুরু করেছি। আমরা যেখানেই যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, আমাদের প্রত্যেককে এই স্মরণীয় প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। অটল সংকল্প এবং স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ আমাদের সম্মিলিত সংকল্প আমাদের বেঁধে রাখা শিকলকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে।

এটি কোনো গোপন অভিযান নয়; এটি একটি স্বচ্ছ যুদ্ধ যেখানে আমাদের শত্রুরা শক্তিহীন, তাদের অনিবার্য পরাজয় আমরা প্রত্যক্ষ করবে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে হতাশা ও যন্ত্রণায় নিমজ্জিত ছিলাম। এখনই সময় জেগে ওঠার, আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে ওদের পেছনে ছুঁড়ে ফেলে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের মাটি পুনরুদ্ধার করার।

আগামীকাল, আমরা আমাদের কৌশল, বিজয়ের রোডম্যাপ উন্মোচন করব। এই লড়াই সবার জন্য উন্মুক্ত, সর্বশক্তিমানের পতাকাতলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান। একসাথে, আমরা বিজয়ের দিকে অগ্রসর হব।

বাংলাদেশ জিন্দাবাদ!

বাংলাদেশে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়াআউট’ এবং ‘বয়কটইন্ডিয়ানপ্রোডাক্টস’ দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছেন আন্দোলনকারীরা এবং ভারতীয় পণ্য ও সেবা বর্জনের ডাক দিচ্ছেন।[৫] ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে এই প্রচারণা শুরু হয়। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে।

আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারত সরকারকে সেটা করার অনুরোধ করেছি।

— এ কে আব্দুল মোমেন

এ বক্তব্যে মন্তব্য করা হয় আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতের সহায়তা চেয়েছে।[৬] তার এ বক্তব্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। পরে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলনে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেককেই এই প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

মূলত নির্বাচনে ভারতের প্রভাবের অভিযোগ ছাড়াও বাংলাদেশের প্রতি ভারতের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা ও অনেক অভিযোগ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে, ২০১০ সাল থেকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে প্রায় ১,২৭৬ জন বাংলাদেশি নিহত এবং ১,১৮৩ জন আহত হয়েছেন।[৭] গার্ডিয়ানের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যার অভিযোগ আছে।[৮] ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়াও ৫৩টি আন্তঃসীমান্ত নদীর জন্য কয়েক দশকের পুরনো অমীমাংসিত পানিবণ্টন চুক্তি, যার সবগুলোই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফলে একাধিক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টির ফলস্বরূপ এই আন্দোলন গতি পায়।

ঘটনাক্রম

মালদ্বীপ

মালদ্বীপে গোয়ান্দা কার্যক্রম এই আন্দোলনের মূল কারন হিসাবে বিবেচিত হয়। ২০২১ সালে মালদ্বীপে ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন শুরু করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও মালের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মইজ্জু। ২০১৩ সালে প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের (পিপিএম) সভাপতি হওয়ার সময় থেকেই এই ভারত বিরোধী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়। ইব্রাহিম সোলিহ যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন তখন এই মনোভাব অনেকটা হ্রাস পায়, কিন্তু ২০২০ সালে এটি আবার তীব্রভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। [৯] এই আন্দোলনটি মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জিততে সাহায্য করার জন্য মোহাম্মদ মুইজুর নেতৃত্বে ভারত বিরোধী মনোভাব আরো তীব্রতা পায়।[১০] এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে মালদ্বীপ সরকারের মন্ত্রীদের অবমাননাকর মন্তব্য কূটনৈতিক সম্পর্ককে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।[১১]

বাংলাদেশ

মালদ্বীপের পরে বয়কট ভারত বা ইন্ডিয়া আউট নামে একটি কর্মসূচি শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে। ২০১৮ সালে সরকারি হয়রানির শিকার হয়ে নির্বাসিত বাংলাদেশি চিকিৎসক পিনাকী ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলনের মূল ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।[৭] আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "ইন্ডিয়া আউট" প্রচারণা বিরোধী দলগুলো চালাচ্ছে যারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে তাদের পতনের জন্য ভারতকে দোষারোপ করছে।[৭]

১৭ জানুয়ারি ২০২৪: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ একটি ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমে ভারত বিদ্বেষী এই আন্দোলন বিষয়ে প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয়।

২২ জানুয়ারি ২০২৪: ২২ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর গুলিতে মারা যান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একজন সদস্য। হত্যাকাণ্ডের তিনদিন পর বাংলাদেশের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।[১২] এই ঘটনার পরপর ভারত বিদ্বেষী আন্দোলন তীব্রভাবে সামনে আসে।

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, টুইটারে তখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০০ হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইট হয়েছে এই আন্দোলনের সমর্থনে।[১৩]

১১ মার্চ ২০২৪: ১১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত এই আন্দোলনের সমর্থনে প্রায় ২,৮৯,০০০ হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছে করা হয়েছে।

২০ মার্চ ২০২৪: ২০ মার্চ ২০২৪ তারিখে "ইন্ডিয়া আউট" ক্যাম্পেইনে সংহতি জানায় প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে ঢেউ দৃশ্যমান তাতে মনে হয় দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। সুতরাং জনগণের দল হিসেবে বিএনপি সহ ৬৩টি গণতন্ত্রকামী দল এবং দেশপ্রেমিক জনগণ ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করছে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "'India out': Maldives president eyes Middle East partners with early trips"আল জাজিরা ইংরেজি (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  2. org, Stratfor, Worldview। "Bangladesh: Opposition Advocates for 'India Out' Movement | RANE"Stratfor। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "'ভারতীয় পণ্য বয়কট' ও 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচারণা বাংলাদেশে দানা বাঁধছে যে কারণে"বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  4. "'India Out' campaign heats up in Bangladesh after lopsided election"Nikkei Asia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৬ 
  5. "Bangladesh's Opposition Launches"Firstpost (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৬ 
  6. "ভারতের 'সমর্থন চাওয়া' নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় বিএনপি"www-voabangla-com.cdn.ampproject.org। ২০২৩-১২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-২২ 
  7. Mahmud, Faisal। "'India Out' campaigns simmer in Bangladesh amid election fallout"Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  8. Adams, Brad (২০১১-০১-২৩)। "India's shoot-to-kill policy on the Bangladesh border"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  9. "The Maldives' 'India Out' Campaign"thediplomat.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  10. "নির্বাচনী বিপর্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশে 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচারণা গতি পাচ্ছে"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  11. Author, Guest (২০২৪-০১-১৫)। "Replicating Maldives, Bangladesh's Biggest Opposition Party, BNP Launches 'India Out' Movement"Latest Asian, Middle-East, EurAsian, Indian News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৬ 
  12. Channel24। "বাংলাদেশে যে কারণে দানা বাঁধছে 'ভারতীয় পণ্য বয়কট' ও 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচারণা"Channel 24 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫ 
  13. "India Out: After Maldives, Bangladesh sees campaign driven by hate, misinformation"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১৫