যতিচিহ্ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বিরাম চিহ্ন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সাধারণ বিরামচিহ্ন

যতিচিহ্ন, বিরামচিহ্ন বা ছেদচিহ্ন হল সেইসব সাংকেতিক চিহ্ন যেগুলো ব্যবহার করে বাক্যের বিভিন্ন ভাব, যেমন: জিজ্ঞাসা, বিস্ময়, সমাপ্তি ইত্যাদি সার্থকভাবে প্রকাশের মাধ্যমে বাক্যের অর্থ সুস্পষ্ট করা হয়।[১] বাংলা ভাষায় ২০টির মতো যতিচিহ্ন রয়েছে। এদের মধ্যে বাক্যশেষে ব্যবহার্য যতিচিহ্ন ৪টি; বাক্যের ভিতরে ব্যবহার্য ১০টি এবং বাক্যের আগে পরে ব্যবহার্য ৬টি।[১]

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত যতিচিহ্নসমূহ[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষায় নিম্নলিখিত যতিচিহ্নসমূহ ব্যবহৃত হয়:

যতিচিহ্নের নাম আকৃতি বিরতি কাল
কমা বা পাদচ্ছেদ , ১ (এক) বলতে যে সময় প্রয়োজন।
সেমিকোলন ; ১ বলার দ্বিগুণ সময়।
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ এক সেকেন্ড।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন ?
বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন !
কোলন :
ড্যাশ
কোলন ড্যাশ :-
হাইফেন - থামার প্রয়োজন নেই।
ইলেক বা লোপ চিহ্ন
একক উদ্ধৃতি চিহ্ন ' ' 'এক' উচ্চরণে যে সময় লাগে।
যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন “ ”
ব্র্যাকেট (বন্ধনি চিহ্ন) ( )
{ }
[ ]
থামার প্রয়োজন নেই।
ধাতু দ্যোতক চিহ্ন
পরবর্তী রূপবোধক চিহ্ন <
পূর্ববর্তী রূপবোধক চিহ্ন >
সমান চিহ্ন =
বর্জন চিহ্ন ...
সংক্ষেপণ চিহ্ন .
বিকল্প চিহ্ন /

যতি বা ছেদ চিহ্নের ব্যবহার[সম্পাদনা]

কমা বা পাদচ্ছেদ (,)[সম্পাদনা]

  • বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন— সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
  • পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া সবগুলোর পরই কমা বসবে। যেমন— সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য একই মালিকার পুষ্প।
  • সম্বোধনের পর কমা বসবে। যেমন— রশিদ, এদিকে এসো।
  • বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য কমা বসে। যেমন: তুমি যাবে, না যাবে না? সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
  • জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খন্ডবাক্যের পর কমা বসে। যেমন: কাল যে লোকটি এসেছিল,সে আমার পূর্বপরিচিত।
  • উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসবে। যেমন: সাহেব বললেন, “ছুটি পাবেন না।”
  • মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে। যেমন— ১৬ই পৌষ, বুধবার, ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ।
  • বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পর কমা বসে। যেমন: ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা-১০০০।
  • নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসে। যেমন: ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক, এম. এ., পিএইচ. ডি।

সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (;)[সম্পাদনা]

কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে। যেমন: আরাফি এসেছিল; কিন্তু খাবার খায়নি।

দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)[সম্পাদনা]

বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়।

প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)[সম্পাদনা]

বাক্যে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে।

বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!)[সম্পাদনা]

  • হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে এ চিহ্নটি বসে।
  • সম্বোধন পদের পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হতো; কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা বসে।

কোলন (:)[সম্পাদনা]

একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে কোলন ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে উদাহরণ বোঝাতেও কোলন বহুল ব্যবহৃত।[১]

ড্যাশ (—)[সম্পাদনা]

যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস বসে। এ ছাড়াও এক বাক্যের সঙ্গে অন্য বাক্যের সংমিশ্রণে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কোলনড্যাশ (:-)[সম্পাদনা]

উদাহরণ বোঝাতে আগে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হত। বর্তমানে উদাহরণ বোঝাতে শুধু কোলন বহুল ব্যবহৃত।

হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)[সম্পাদনা]

সমাসবদ্ধ পদগুলোকে আলাদা করে দেখানোর জন্য হাইফেন(-) ব্যবহৃত হয়।

ইলেক বা লোপচিহ্ন (')[সম্পাদনা]

কোনো বিলুপ্ত বর্ণের পরিবর্তে লোপ চিহ্ন বসে।

একক উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন (' ')[সম্পাদনা]

বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অর্ন্তভুক্ত করতে হয়।[১]

যুগল উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন (" ")[সম্পাদনা]

যদি উদ্ধৃতির ভেতরে আরেকটি উদ্ধৃতি থাকে তখন প্রথমটির ক্ষেত্রে দুই উদ্ধৃতি চিহ্ন এবং ভেতরের উদ্ধৃতির জন্য এক উদ্ধৃতি চিহ্ন হবে।[১] এছাড়াও প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতার নামের ক্ষেত্রেও যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

বন্ধনী চিহ্ন[সম্পাদনা]

বন্ধনি চিহ্ন তিন প্রকার। যেমন:

  • প্রথম বা বক্র বন্ধনী ( )
  • দ্বিতীয় বা গুম্ফ বন্ধনী { }
  • তৃতীয় বা সরল বন্ধনী [ ]

মূলত গণিত শাস্ত্রে এগুলো ব্যবহৃত হলেও বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে প্রথম বন্ধনী ব্যবহৃত হয়। এখানে থামার কোন প্রয়োজন নেই।

বিকল্প চিহ্ন (/)[সম্পাদনা]

কোন শব্দ যখন অন্য একটি শব্দের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহার করার সময় যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তখন ঐ চিহ্নকে বিকল্প চিহ্ন বলা হয়। এছাড়াও “অথবা” শব্দের পরিবর্তে বিকল্প (/) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন: “সময়মত সালাত/নামাজ আদায় করুন।” এখানে সালাতের পরিবর্তে নামাজ শব্দটিও ব্যবহার করা যাবে।

প্রয়োজনীয়তা[সম্পাদনা]

আমরা যখন কথা বলি তখন সবগুলো বাক্য একযোগে না বলে থেমে থেমে বলি। অনেক সময় আবেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বাক্য লিখে প্রকাশ করার সময় বিরতি ও আবেগ নির্দেশ করতে যতিচিহ্নের প্রয়োজন হয়। বাক্যে যতিচিহ্নের অশুদ্ধ ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষে অর্থবিকৃতি ঘটাতে পারে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মামুদ, হায়াৎ (২০১৫) [প্রথমপ্রকাশ ১৯৯২]। বাংলা লেখার নিয়মকানুন। ঢাকা: প্রতীক। পৃষ্ঠা ১২০–১৪০। আইএসবিএন 984 446 045 X