বিদ্যা রাও (অভিনেত্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিদ্যা রাও
জন্ম
জাতীয়তাভারত ভারতীয়
পেশাঅভিনয়
কর্মজীবন১৯৬১- ২০০২
উল্লেখযোগ্য কর্ম
(চলচ্চিত্ৰ)- অরণ্য, ঘর সংসার, সারথি
দাম্পত্য সঙ্গীএম পি এন নায়ার
পিতা-মাতাগোপাল রাও (পিতা)
তনু রাও (মাতা)
পুরস্কারনাটসূর্য ফণী শর্মা পুরস্কার, জীবনজোরা সাধনার পুরস্কার, জ্যোতিরূপা

বিদ্যা রাও (ইংরেজী: Bidya Rao) একজন অসমীয়া এবং বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি বেশির ভাগ অসমীয়া ভাষায় নির্মিত ছবিই অভিনয় করেছেন। ডিব্রুগড়ে জন্ম নেওয়া বিদ্যা রাও বড় হয়েছেন কলকাতায়। মাত্র ছয় বছর বয়সে ডক্টর ভূপেন হাজারিকা পরিচালিত শকুন্তলা চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্রে অভিনয় করে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি বারোটি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ভ্ৰাম্যমাণ থিয়েটারেও অভিনয় করেছেন।[১]

বিদ্যা রাও ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় এবং ব্যবসায়িকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তিনি বিজু ফুকন, নিপন গোস্বামী এবং তপন দাস সহ অসমীয়া ছবির জগতে বেশ কয়েকজন নবীন ও প্রবীণ অভিনেতার সাথে অভিনয় করেছেন। 'প্রতিধ্বনি', 'অরণ্য', 'মানব আর দানব', 'ঘর সংসার', 'জীবন সুরভী', 'পূজা', 'হৃদয়ের আড়ালে', এবং 'আঙ্গিকর'-এর মতো অনেক ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। বিদ্যা রাওকে ডক্টর ভূপেন হাজারিকা, শিবপ্রসাদ ঠাকুর, সমরেন্দ্র নারায়ণ দেব, পুলক গগৈ এবং ডক্টর ভবেন্দ্রনাথ শইকীয়া-এর মতো বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দ্বারা পরিচালিত চলচ্চিত্রে বিভিন্ন রূপে দেখা গিয়েছিল।[২]

বিদ্যা রাও অসমীয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অবদানের জন্য আসামের একটি নেতৃস্থানীয় সংস্থা 'জ্যোতিরূপা' ও 'জীবনজোড়া সাধনার পুরস্কার' পেয়েছেন। তিনি আসাম সরকার কর্তৃক 'নটসূর্য ফণী শর্মা পুরস্কারে' ভূষিত হয়েছেন।

শৈশব[সম্পাদনা]

বিদ্যা রাও আসামের ডিব্রুগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা একজন অসমীয় এবং বাবা একজন মহারাষ্ট্রীয় নাগরিক ছিলেন। তিনি বড় হয়েছেন কলকাতায়। তিনি অসমীয়া চলচ্চিত্র 'শোন ময়না'র চলচ্চিত্র পরিবেশক ও প্রযোজক এমপিএন নায়ারকে বিয়ে করেন। নায়ারন একজন মালায়লাম মানুষ ছিলেন; গুয়াহাটিতে তার একটি ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশন অফিস ছিল। আসাম ও কেরালার মধ্যে প্রাকৃতিক সাদৃশ্যের কারণে নায়ারের অসমের প্রতি আকর্ষণ ছিল এবং তিনি আসামে ফিরে যেতে আগ্রহী ছিলেন। বিদ্যা রাও তার স্বামীর সাথে ১৯৮০ সালে গুয়াহাটিতে চলে আসেন।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

অসমীয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে[সম্পাদনা]

বিদ্যা রাও ১৯৬১ সালে ডক্টর ভূপেন হাজারিকা পরিচালিত শকুন্তলা চলচ্চিত্রে শিশু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। ১৯৬৫ সালে 'প্ৰতিধ্বনি' আর ১৯৬৬ সালে 'লটিঘটি'ত অভিনয় করেন। 'লোটিঘাটি' ছবিতে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এই দুটি ছবিও প্রযোজনা করেছিলেন ডক্টর ভূপেন হাজারিকা। [২]

১৯৭১ সালে রাও সমরেন্দ্র নারায়ণ দেব-এর 'অরণ্য' চলচ্চিত্রে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে রজত কামাল জিতেছে। ছবিটি ব্যবসায়ীভাবে লাভজনক হয়েছিল। ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন বিজু ফুকন। বিদ্যা রাও অভিনীত ছবির গান 'শিলে শিলে ঠেকা খালে' দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল। ছবিটিকে রাও-এর ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সর্বোপরি, তিনি বেশ কয়েকটি অসমীয় ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন।[২]

বিদ্যা রাও-এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল শিবপ্রসাদ ঠাকুর পরিচালিত 'ঘর সংসার' এবং 'মন-মন্দির'। দুটি ছবিতেই নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে রাওকে। ছবি দুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পায়। রাও-এর জীবনের আরেকটি স্মরণীয় ছবি ছিল পুলক গগৈ পরিচালিত অসমীয়া ছবি 'সেন্দুর'। তপন দাস ছোটবেলায় বিদ্যা রাও অভিনীত 'সংগ্রাম', 'মুকুতা' এবং 'অরণ্য'-এর মতো ছবি দেখেছিলেন। তাই প্রথমে অভিনেত্রীর সঙ্গে 'রোমান্টিক জুটি' হিসেবে অভিনয় করতে একটু বিব্রত হয়েছিলেন। পরে পরিচালক পুলক গগৈ-এর উৎসাহ এবং বিদ্যা রাও-এর সহযোগিতা তাঁর বিব্রতকর অবস্থা দূর করে।[২]

আসামের গল্পকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং লেখক ডঃ ভবেন্দ্রনাথ শইকীয়া পরিচালিত 'সারথি'-তে বিদ্যা রাও একটি ব্যতিক্রমী ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে ছবিটি ৩৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অসমীয়া চলচ্চিত্রের জন্য সিলভার লোটাস জিতেছে।[৩]

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে[সম্পাদনা]

বিদ্যা রাও বারোটি বাংলা ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন। তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, অনুপ কুমার সেন, সত্য ব্যানার্জি এবং রবি ঘোষের মতো অভিনেতাদের সাথে কাজ করেছেন।[২]

টেলিভিশনের জগতে[সম্পাদনা]

গুয়াহাটি দূরদৰ্শন কেন্দ্ৰর দ্বারা সম্প্ৰচারিত হওয়া ধারাবাহিকত বিদ্যা রাও অভিনয় করেছে। অংশ নিয়েছিলেন সন্ধ্যাতরা, বিষবাষ্প, ১৪ আগষ্ট, আকাশী লতার রং, সীমা আদি টিভি সিরিয়ালে প্ৰযোজনা করেছিলেন।[৪]

ভ্রাম্যমান থিয়েটারে[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালে বিদ্যা রাও কহিনুর থিয়েটারের মঞ্চে অভিনয় করেছিলেন। একই বছরে তিনি মহাভারতে দ্রৌপদীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২]

প্রযোজক হিসাবে[সম্পাদনা]

বিদ্যা রাও অসমীয়া চলচ্চিত্র ময়নাজান প্রযোজনা করেন। তার স্বামী এমপিএন নায়ার ছিলেন 'পুত্র ময়না' ছবির অন্যতম প্রযোজক।[২]

চলচ্চিত্রপঞ্জি[সম্পাদনা]

বিদ্যা রাও বেশ কিছু অসমীয়া চলচ্চিত্রে প্রধান বা সহায়ক ভূমিকার পাশাপাশি প্রায় ২০টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[৫][১][৪]

সাল ছবির নাম ভাষা বিবরণ
১৯৬১ শকুন্তলা (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া শিশু চরিত্ৰ
১৯৬৪ প্ৰতিধ্বনি অসমীয়া
১৯৬৬ লটিঘটি অসমীয়া বিজয় শঙ্করের বিপরীতে তিনি নায়িকা। ১৯৬৫ জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র।
১৯৬৮ সংগ্ৰাম অসমীয়া
১৯৬৯ চিকমিক বিজুলী অসমীয়া
১৯৭০ অপৰাজেয় (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া সহযোগী অভিনেত্ৰী
১৯৭০ মুকুতা (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া প্রথম অসমীয়া ছবি ১০০ দিন পার করেছে।
১৯৭১ মানব আরো দানব অসমীয়া
১৯৭১ অরণ্য (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া নায়িকা। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত।
১৯৭৭ সোণমা অসমীয়া
১৯৭৮ নিয়তি অসমীয়া
১৯৮০ আজলী নবৌ অসমীয়া একজন নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। এটি ২৫ সপ্তাহ ধরে প্রেক্ষাগৃহে চলা প্রথম অসমীয়া চলচ্চিত্র
১৯৮০ মইনাজান অসমীয়া নায়িকা। ময়না চরিত্রে
১৯৮১ মানসী অসমীয়া
১৯৮৩ শ্ৰী শ্ৰী মা কামাখ্যা (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া নায়িকা
১৯৮৩ ঘর সংসাৰ (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া নায়িকা
১৯৮৪ সেন্দূর (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া নায়িকা
১৯৮৪ নয়নমণি অসমীয়া
১৯৮৪ জীবন সুরভি অসমীয়া নায়িকা
১৯৮৫ পূজা (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া
১৯৮৫ মন মন্দির অসমীয়া
১৯৮৭ প্ৰতিদান (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া
১৯৮৭ জেতুকী (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া
১৯৯১ প্ৰেম জনমে জনমে অসমীয়া
১৯৯২ সারথি (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয়
১৯৯৫ উৰ্বশী (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া
১৯৯৬ রাগ-বিরাগ অসমীয়া
২০০২ জোনাকী মন অসমীয়া
২০০২ প্ৰেম আরো প্ৰেম অসমীয়া
২০১২ তুলা আরো তেজা (চলচ্চিত্ৰ) অসমীয়া
২০১২ সমীরণ বড়ুয়া অসমীয়া অতিথি শিল্পী
১৯৬৬ পরী বাংলা
১৯৬৬ দোল গোবিন্দের কড়চা বাংলা
১৯৬৮ তিন অধ্যায় বাংলা
১৯৬৯ শেষ থেকে শুরু বাংলা
১৯৭৩ অগ্নি ভ্ৰমর বাংলা
১৯৭৩ বন পলাশীর পদাবলী বাংলা
১৯৭৩ নতুন দিনের আলো বাংলা
১৯৮৩ চেনা অচেনা বাংলা

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • বিদ্যা রাও ২০১৮ সালে আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের নলবাড়ি জেলা কমিটি দ্বারা 'পৰিবেশ্য কলালৈ' (Performing Art) তার আজীবন অবদানের জন্য ভাবেন বড়ুয়া পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল। পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে নগদ ১০,০০০ টাকা, একটি সম্মাননাপত্র এবং একটি চালেং-চাদর।[৬]
  • তিনি আঞ্চলিক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) নির্বাচন কমিটির জুরি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪]
  • জীবনজোরা সাধনার পুরস্কার, জ্যোতিরূপা।[২]
  • অসমীয়া চলচ্চিত্ৰর প্ৰথমগরাকী অভিনেত্ৰী আইদেউ সন্দিকৈর স্মরণে এই পুরস্কার।
  • নাটসূর্য ফণী শর্মা পুরস্কার, আসাম সরকার।
  • প্রাগ সিনে পুরস্কার।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Dramatis Persona - Personality- Vidya Rao"। সংগ্রহের তারিখ 27-09-2019  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. ভাগৱতী, কমল কুমাৰ (৪ জুলাই, ২০২১)। "অসমৰ জনপ্ৰিয় নায়িকা বিদ্যা ৰাও"। গুৱাহাটী। দৈনিক অসম। পৃষ্ঠা দেওবৰীয়া পৰিপূৰিকা, পৃষ্ঠা ৪। সংগ্রহের তারিখ 4 July 2021  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. "39th national Film Festival, Page 52, 147" (পিডিএফ)। ১৯৯২। 
  4. "https://www.imphaltimes.com/news/item/14954-vidya-rao-to-attend-guwahati-press-club-program"। 9-7-2019। সংগ্রহের তারিখ 29-09-2019  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য); |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  5. "Bidya Rao- Actress, Supporting Actress"। সংগ্রহের তারিখ 28-09-2019  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. "Bhaben Baruah Award to be conferred on Bidya Rao"। 2018। 2018-08-08 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 29-09-2019  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)