বালকৃষ্ণ গয়াল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বালকৃষ্ণ গয়াল
জন্ম(১৯৩৫-১১-১৯)১৯ নভেম্বর ১৯৩৫
মৃত্যু২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮(2018-02-20) (বয়স ৮২)
কর্মজীবন১৯৬৬–২০১৮
আত্মীয়স্নেহলতা গয়াল (স্ত্রী) (মৃ.২০০৭)
রাহুল গয়াল (পুত্র)
অলকা ঝুনঝুনওয়ালা (কন্যা)
সন্ধ্যা মিটারসেন (কন্যা)
বর্ষা শেঠী (কন্যা)
মেডিকেল কর্মজীবন
পেশাহৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
বিশেষজ্ঞতাকার্ডিয়াক সার্জারি
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপদ্মশ্রী (১৯৮৪)
পদ্মভূষণ (১৯৯০)
পদ্মবিভূষণ (২০০৫)

বালকৃষ্ণ গয়াল (১৯ নভেম্বর ১৯৩৫ - ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮) [১][২] ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসা শিক্ষাবিদ।[৩] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের একজন অনারারি কনসালটেন্ট কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন। [৪]

ড. গয়াল ছিলেন 'বম্বে হসপিটাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স'- এর অনারারি ডিন এবং চিফ কার্ডিওলজিস্ট এবং জেজে গ্রুপ অফ হসপিটালস অ্যান্ড গ্র্যান্ট মেডিকেল কলেজ, মুম্বাইয়ের কার্ডিওলজির প্রাক্তন ডিরেক্টর-প্রফেসর ছিলেন । [২]

বালকৃষ্ণ গয়াল ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের রাজস্থানের জয়পুর জেলার সম্ভার লেক শহরে জন্মগ্রহণ করেন।

ড. গয়াল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজির একজন ভিজিটিং প্রফেসর এবং নিউ অরলিন্সের ওসনার হার্ট ইনস্টিটিউটের একজন ভিজিটিং কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন। রাজ্য সরকার তাঁকে গ্রান্ট মেডিক্যাল কলেজে কার্ডিওলজির ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করে। তিনি কয়েক বছর ধরে মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদ এবং সিনেটের সদস্য ছিলেন। তিনি ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ পরিষদ এবং ভারতের মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি হফকিন্স ইনস্টিটিউটের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

চিকিৎসা সেবা ও অবদান[সম্পাদনা]

ড. গয়াল ভারতের প্রথম ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট এবং মোবাইল করোনারি কেয়ার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি 'কার্ডিওলজি সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া', 'অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিশিয়ান', 'ন্যাশনাল সোসাইটি অফ প্রিভেনশন অফ হার্ট ডিজিজেস' এবং 'আমেরিকান কলেজ অফ চেস্ট ফিজিশিয়ান' সহ অনেক সংস্থার সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও, ভারতে পালস পোলিও অভিযান, 'ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি', 'ইন্দো-আমেরিকান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি', 'হার্ট ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া' , 'ইন্ডিয়ান কলেজ অফ কার্ডিওলজি', 'ধন্বন্তরী ফাউন্ডেশন' ইত্যাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি হিউস্টনের টেক্সাস হার্ট ইনস্টিটিউটের একজন পরামর্শক কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন পরামর্শক কার্ডিওলজিস্ট ছিলেন। এছাড়াও, তিনি মহারাষ্ট্রের গভর্নর, ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের চিকিৎসা উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ১৪ বছর ধরে মুম্বাইয়ের হফকিন ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার উদ্যোগে এখান হতে পরিচালিত পোলিও ভ্যাকসিনের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। উদ্যোগটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।

এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে গয়ালের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গয়াল কেবল ভারতে শত শত রোগীর জীবন রক্ষা করেননি, অনেক চিকিৎসককে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলেন এবং তারা দেশে বিদেশের বহু স্থানে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন।

গয়াল পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবায় ব্রতী ছিলেন। এতে তিনি ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ না করেই রোগীদের সেবা করেছেন।

ড.গয়াল হৃদরোগের উপসর্গ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ইংরাজীতে রচনা করেন 'হার্ট টক শীর্ষক একটি গ্রন্থ। গ্রন্থটি হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, কন্নড়, বাংলা ও উর্দু ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি ২০১৫ খ্রিস্টাব্দেই দু-লক্ষ গ্রন্থ বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

ড. বালকৃষ্ণ গয়াল ভারতের 'ন্যাশনাল একাডেমি অফ মেডিক্যাল সায়েন্স'-এর নির্বাচিত ফেলো ছিলেন। [৫] চিকিৎসায় অবদানের জন্য ভারত সরকার ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে পদ্মশ্রী, ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পদ্মভূষণ এবং ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করে। [৬]

২০০৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদের জন্য তার নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুম্বাই শহরের শেরিফ ছিলেন।[৩]

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

ড. বালকৃষ্ণ গয়াল স্নেহলতাকে বিবাহ করেন। স্নেহলতা ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তাদের চার সন্তানের তিন কন্যারা- অলকা ঝুনঝুনওয়ালা, সন্ধ্যা মিটারসেন, বর্ষা শেঠী এবং এক পুত্র রাহুল গয়াল।[৭]২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ড. গয়াল নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে আনা হলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [২]মুম্বাইয়ের বঙ্গঙ্গা শ্মশানে বুধবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

হৃদরোগে আক্রান্তদের সহায়তার জন্য মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ড. বি কে গয়াল হার্ট ফাউন্ডেশন নামক দাতব্য সেবা প্রতিষ্ঠান। [৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "A birthday sans celebrations"The Times of India। ১৯ নভেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৫-২২ 
  2. "Noted cardiologist B K Goyal dies in Mumbai"India Today। PTI। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-০৪ 
  3. "B.K.Goyal - Tribute to BK Goyal genealogy discussion"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৪ 
  4. "Mumbai: Renowned cardiologist B.K. Goyal passes away at 82"Free Press Journal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২৩ 
  5. "List of Fellows" (পিডিএফ)। National Academy of Medical Sciences। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৬ 
  6. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। পৃষ্ঠা 75, 88, 129। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  7. "Dr BK Goyal, cardiologist with 'clinical sixth sense' , is no more"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-১৪-  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  8. "http://www.drbkgoyal.com/about-foundation.html"।  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য);