বারকা খান
বারকা | |
---|---|
সোনালি সাম্রাজ্যের খান পশ্চিমা অর্ধেক (নীল সাম্রাজ্য) | |
রাজত্ব | ১২৫৭ – ১২৬৬ |
পূর্বসূরি | উলাগাছি |
উত্তরসূরি | মেঙ্গু-তেমুর |
জন্ম | ১২০৮ বুরখান খালদুন, মঙ্গোলিয়া |
মৃত্যু | ১২৬৬ কুরা নদী, আজারবাইজান |
বংশধর |
|
বংশ | বোরজিগিন |
পিতা | জোচি |
ধর্ম | ইসলাম |
বারকে খান (মৃত্যু:১২৬৬) (অথবা বিরকায়; মঙ্গোলীয়: Бэрх хаан, তাতার: Бәркә хан) ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি, একজন মোঙ্গল সেনাপতি এবং ১২৫৭–১২৬৬ পর্যন্ত গোল্ডেন হর্ড (মোঙ্গল সাম্রাজ্যের ভাগ) শাসক, যিনি নীল সাম্রাজ্য এবং সাদা সাম্রাজ্যের উপর শাসন করতে পেরেছিলেন। নীল সাম্রাজ্যে (পশ্চিম) তিনি তার ভাই বাতু খানের স্থলাভিষিক্ত হন এবং প্রথমবারের মতো মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি খানাতে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা করেন।[১] তিনি মিশরীয় মামলুকদের সাথে পারস্যে অবস্থিত আরেক মঙ্গোল খানাতে ইলখানাতের বিরুদ্ধে জোট করেছিলেন। বারকা তলুই গৃহযুদ্ধে আরিক বোকেকে সমর্থন করেছিলেন, কিন্তু যুদ্ধে তিনি সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করেননি কারণ তিনি তাঁর নিজের যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন।
জন্ম[সম্পাদনা]
বারকের জন্ম হয়েছিল চেঙ্গিস খানের জ্যেষ্ঠ পুত্র জোচির ঘরে। বারকের জন্মের বছর সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ঐকমত্য নেই। মামলুক রাষ্ট্রদূতরা ৬৬৩ হিজরিতে (১২৬৪/৬৫)) তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়ে তাকে ৫৬ বছর বয়সী বলে বর্ণনা করেছিলেন। এটি থেকে ১২০৭ এবং ১২০৯ এর মধ্যে কোনো সময় জন্ম হয় ধারণ করা হয়। তবে সমসাময়িক পার্সিয়ান কাল্পনিক জুজনানী দাবি করেছেন যে বারকের জন্ম খোয়ারিজমীয় মঙ্গোল বিজয়ের সময় হয়েছিল, যা ১২১৯ এবং ১২২১ এর মধ্যে হয়েছিল।[২]
পরবর্তী দাবিটি ইতিহাসবিদ জিন রিচার্ডের যুক্তি সমর্থন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল যে বারকের মা খোয়াজরমের দ্বিতীয় মুহাম্মদের বন্দী কন্যা খান-সুলতান (বা সুলতান খাতুন) ছিলেন। জোচি এবং খান-সুলতানের মধ্যকার বিয়েটি ১২২০ সালে হয়েছিল, যার ফলে বারকের জন্ম ১২২১ সালের চেয়ে বেশি আগে হওয়া সম্ভব নয়।[৩]
ইসলামে ধর্মান্তর[সম্পাদনা]
বারকে খান ১২৫২ সালে বুখারা শহরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি যখন সর-জেকে ছিলেন তখন বুখারার একটি কাফেলার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বারকা কাফেলা ভ্রমণকারীদের কথার দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন। তারপরে বারকা তার ভাই তুখ-তিমুরকেও ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করেছিলেন।
সোনালি সাম্রাজ্যের শাসন গ্রহণ[সম্পাদনা]
১২৫৫ সালে যখন বাতু মারা যায়। ১২৫৭ সালে বারকা নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণের আগে বাতুর পুত্র সারতাক খান এবং উলাগাচি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তাঁর শাসনামলে মঙ্গোলরা অবশেষে হালিচের ড্যানিয়েলোর বিদ্রোহকে পরাজিত করে এবং বুরুন্দাইয়ের নেতৃত্বে পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আক্রমণ করেছিল (লুবলিন, জাভিহস্ত, সান্দোমিয়ের, ক্রাকৌউ এবং বাইতম লুণ্ঠন করা হয়েছিল)। এছাড়াও ১২৬৫ সালে বুলগেরিয়া এবং বাইজেন্টাইন থ্রেসের বিরুদ্ধে একটি অভিযান হয়েছিলো। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মাইকেল এর পরে শ্রদ্ধা হিসাবে অনেক মূল্যবান কারিগরি ও বস্ত্র পাঠিয়েছিলেন।
বারকা–হালাকু যুদ্ধ[সম্পাদনা]
বারকা শীঘ্রই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়ে গেলেন। তাঁর ধর্মান্তরের ফলে নীল সাম্রাজ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছিল, যদিও তাদের মধ্যে তখনও পশু-পূজারী এবং বৌদ্ধ ছিল। হালাকুর বাগদাদ ধ্বংস এবং খলিফা আল-মুস্তা'সিমকে হত্যা করা বারকাকে ক্ষুব্ধ করেছিল। তিনি হালাকু খানকে মোকাবেলা করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। সিরিয়া ও মিশর দখলের হালাকুর উচ্চাভিলাষ বারকার স্ব-ধর্মীয় লোকদের হুমকিতে রেখেছিল।
মুসলিম ঐতিহাসিক রশিদ-আল-দীন হামাদানীর অনুযায়ী বারকা খান বাগদাদে আক্রমণের প্রতিবাদে তাঁর মঙ্গোল এবং মুসলিম প্রজাদের বলেছিলেন:
- "সে (হালাকু) মুসলিমদের সব শহর ধ্বংস করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সহায়তায় আমি তার কাছ থেকে সকল নির্দোষের রক্তের হিসাব আদায় করব।"
ফলাফল[সম্পাদনা]
হালাকু পুত্র আবাকা খানকে আক্রমণ করার জন্য বারকা কুড়া নদী পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২৬৬ থেকে ১২৬৭ এর মধ্যেই তিনি মারা যান। তার পরে তাঁর ভাইয়ের নাতি মেঙ্গু-তিমুর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।[৪] মামলুকদের সাথে জোটবদ্ধ থাকার এবং ইলখানাতের সাথে সংঘর্ষে জড়িত থাকার নীতি মেঙ্গু-তিমুর চালিয়ে যান। অনেক ইতিহাসবিদ[৫] একমত হয়েছেন যে হালাকুর বিরুদ্ধে বারকার হস্তক্ষেপ মক্কা এবং জেরুজালেমসহ অন্যান্য পবিত্র ভূমির বাগদাদের মতো ভাগ্য হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল।
পূর্বপুরুষগণ[সম্পাদনা]
ইয়েসুগেই বাঘাতুর | |||||||||||||||
চেঙ্গিস খান | |||||||||||||||
হোয়েলুন | |||||||||||||||
জোচি খান | |||||||||||||||
দেই সেইচেন | |||||||||||||||
বর্তে ঊজিন | |||||||||||||||
তাচ্চোতান | |||||||||||||||
বারকে খান | |||||||||||||||
সুলতান খাতুন | |||||||||||||||
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ Devin De Weese. Islamization and Native Religion in the Golden Horde, Penn State Press, Sep 1, 1994, আইএসবিএন ০-২৭১-০১০৭৩-৮ pg.3
- ↑ Jackson, Peter। The Mongols & the Islamic world : from conquest to conversion। New Haven। আইএসবিএন 978-0-300-22728-4। ওসিএলসি 980348050।
- ↑ Broadbridge, Anne F.,। Women and the making of the Mongol Empire। Cambridge। আইএসবিএন 978-1-108-42489-9। ওসিএলসি 1022078179।
- ↑ E.J. Brill's first encyclopaedia of Islam, 1913-1936, Volume 7 By Martijn Theodoor Houtsma, p. 708.
- ↑ Michael Pravdin, Lev Nicholaevich Gumilev, Reuven Amitai-Preiss, N. Kruchki
উৎস[সম্পাদনা]
- Amitai-Preiss, Reuven. The Mamluk-Ilkhanid War, 1998
- Chambers, James, The Devil's Horsemen: The Mongol Invasion of Europe
- Hildinger, Erik, Warriors of the Steppe: A Military History of Central Asia, 500 B.C. to A.D. 1700
- Morgan, David, The Mongols, আইএসবিএন ০-৬৩১-১৭৫৬৩-৬
- Nicolle, David, The Mongol Warlords Brockhampton Press, 1998.
- Reagan, Geoffry, The Guinness Book of Decisive Battles (Canopy Books, New York, 1992).
- Saunders, J. J., The History of the Mongol Conquests (London, Routledge & Kegan Paul, 1971).
- Soucek, Svatopluk. A History of Inner Asia, Cambridge, 2000.
- Vásáry, István, "'History and Legend' in Berke Khan's Conversion to Islam", in Aspects of Altaic Civilization, vol. III, ed. D. Sinor, Bloomington (IN), 1990, 230-252 (reprinted in: Idem, Turks, Tatars and Russians in the 13th-16th Centuries (Farnham, Alershot, 2007) (Variorum Collected Studies Series: CS884), XVII.)
বারকা খান বোরজিগিন বংশ (১২০৬–১৬৩৪) মৃত্যু: ১২৬৬
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী উলাগাছি |
সোনালি সাম্রাজ্যের খান ১২৫৭–১২৬৬ |
উত্তরসূরী মেঙ্গু-তেমুর |