বাংলাদেশে দুর্নীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বাংলাদেশের দুর্নীতি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ এবং দেশ, একটি প্রতীকী চিত্র, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ, দুর্নীতি এবং পুলিশের উপর ভিত্তি করে

বাংলাদেশে দুর্নীতি হল দেশটির একটি চলমান সমস্যা, এছাড়াও দেশটি ২০০৫ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় পৃথিবীর তৎকালীন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে স্থান লাভ করে।

২০১১[১] এবং ২০১২ সালে[২] দেশটি তালিকার অবস্থানে যথাক্রমে ১২০ এবং ১৪৪ তম স্থান লাভ করে, যেখানে কোন দেশ নম্বরের দিক থেকে যত উপরের দিকে যাবে ততই বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে গণ্য হবে।

ভোগবাদী মানসিকতা এবং অনেক ক্ষেত্রে অভাব দুর্নীতির পেছনে দায়ী। তবে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায় ভোগবাদী মানসিকতাই দায়ী। বাংলাদেশে বর্তমানে সব শ্রেণির ব্যক্তিরাই ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। তবে উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা মূলত তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে গিয়ে ঘুষ গ্রহণকে তাদের অভ্যাসে পরিণত করে। মধ্যবিত্তরা ও নিম্নবিত্তরাও তাদের জীবনযাত্রা মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহণ করে থাকে। দেখা যায় যে প্রতি ক্ষেত্রেই মানুষ ঘুষ খেয়ে থাকে।

ক্ষেত্র অনুযায়ী দুর্নীতি[সম্পাদনা]

দুর্নীতির পরিণতি[সম্পাদনা]

বিশ্বের ১২৯ টি দেশে সমীক্ষার পর জার্মান প্রতিষ্ঠান 'বেরটেলসম্যান স্টিফটুং' তাদের রিপোর্টে বিশ্বের নতুন পাঁচ 'স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায়' বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করে।[৩] ২০১৯ সালের ৯ই জানুয়ারি যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে 'গণতান্ত্রিক' কিংবা 'ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক' দেশের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশের নাম, যা দেশটির চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টির জানান দেয়।[৪] ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির মতে, শুধুমাত্র ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার সমপরিমান অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।[৫] ২০১৯ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে আসবাব কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে ১৬৯ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলে।[৬] যেখানে প্রতিটি বালিশ কিনতে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৯৫৭ টাকা, প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার মজুরি ৭৬০ টাকা, কভারসহ কমফোর্টারের দাম ১৬৮০০ টাকা, এবং বিদেশি বিছানার চাদর কেনা হয়েছে ৫৯৩৬ টাকায়।[৭][৮] বালিশ কাণ্ডের পর দূর্নীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের একটি পর্দা ৩৭ লাখ টাকায় কেনা নিয়ে আবারো গণমাধ্যম সরব হয়।[৯] ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুর দিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় যে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নিয়ে ১৫ দিনে ১০০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।[১০] এদিকে সিলেটের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (এসএফসিএল) লোহার এক কেজি নাটের দাম কোটি টাকা এবং বল্টুর দাম অর্ধকোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়।[১১] সরকারি অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে এভাবে ক্রয়ের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে গেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়।[১২] প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে মারধর, ভোটকেন্দ্র দখলসহ সংঘাত আর সহিংসতার মধ্য দিয়ে ২০২১-এ দেশে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে মোট ১৩৫৯ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হন৷ বিনা ভোটে নির্বাচিত প্রায় সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী৷[১৩]

দুর্নীতির কারণসমূহ[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিভক্ত হওয়ার পর, বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বেসামরিক ও সামরিক সরকারের দ্বারা শাসিত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে দাঙ্গার ফলে শত শত লোক মারা যায় এবং ফ্রিডম হাউস দেশের "রাজনৈতিক অধিকারের" রেটিং ৩ থেকে ৪ এ পরিবর্তন করে (রেটিং ১ হলে অবস্থা ভালো এবং ৭-এর বেশি হলে খারাপ)। অত্যন্ত মারাত্মক রাজনৈতিক সহিংসতার আধুনিক ইতিহাসে এটি ছিল শুধুমাত্র একটি ঘটনা।[১৪]

বিশ্বব্যাপী আইনের শাসনের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ২০১১ সালে ২৮.৬ (০-১০০ স্কেলে) থেকে ২০১৩ সালে ২২.৭-এ নেমে আসে। বাংলাদেশে দূর্নীতির প্রধান কারণ হিসেবে এ আইনের শাসন না থাকা ও দূর্নীতিবাজদের বিচার না হওয়াকে দায়ী করা হয়।[১৫] এছাড়া নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রভাব ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে জবাবদিহিতার অভাবেকেও বাংলাদেশে দুর্নীতির উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা হয়।[১৬]

দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ[সম্পাদনা]

দুর্নীতি দমন কমিশন[সম্পাদনা]

দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত একটি কমিশন। এটি ২০০৪ সালের ৯ মে মাসের দুর্নীতি দমন আইন অনুসারে কার্যকর হয়েছে। একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। এ সংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে দেশে দুর্নীতি ও দুর্নীতিমূলক কাজ প্রতিরোধ করা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. * "Corruption Perceptions Index 2011"। Transparency International। ২৭ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩ 
  2. * "Corruption Perceptions Index 2012"। Transparency International। ২৮ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩ 
  3. "বিশ্বের নতুন পাঁচ 'স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায়' বাংলাদেশ"। বিবিসি বাংলা। ২৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  4. "ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সের গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ"। বিবিসি বাংলা। ১০ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  5. "অর্থ পাচার: বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলো যেভাবে"বিবিসি বাংলা। ২৯ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২২ 
  6. "'বালিশ-কাণ্ডে' রূপপুর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ১৩ জন গ্রেপ্তার"। প্রথম আলো। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  7. "বালিশ কাণ্ড : ঠিকাদার শাহাদাতের জামিন বাতিল চায় দুদক"। কালের কণ্ঠ। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  8. "১টি বালিশ ৫৯৫৭ টাকা, ভবনে উঠাতে ৭৬০ টাকা; তদন্ত কমিটি"। নয়া দিগন্ত। ১৯ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  9. "বালিশের পর ৩৭ লাখ টাকার পর্দা নিয়ে আলোচনা, সরকারি কেনা-কাটায় দুর্নীতি হয় কীভাবে?"। বিবিসি বাংলা। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  10. "সয়াবিন তেলের বাড়তি দাম নিয়ে ১৫ দিনে ১০০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর"বিবিসি বাংলা। ৯ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০২২ 
  11. "লোহা বা স্টিলের এক কেজি নাটের দাম ১ কোটি টাকা কিনলো শাহজালাল সার কারখানা"। sylnewsbd.com। ২০ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  12. "এবার সরকারি সার কারখানায় নাট-বল্টু কাণ্ডে তোলপাড় লোহার এক কেজি নাটের দাম কোটি টাকা, বল্টুর দাম অর্ধকোটি"দৈনিক ইনকিলাব। ২১ মার্চ ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  13. "বিনা ভোটে পাশ আর সহিংসতার ইউপি নির্বাচন"। ডয়চে ভেলে। ২৬ ডিসেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০২২ 
  14. "Bangladesh: Overview of corruption and anti-corruption with a focus on the health sector" (পিডিএফ)Transparency International 
  15. "দুর্নীতি বাড়ার কারণ জানালেন ইফতেখারুজ্জামান"NTV Online (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২০ 
  16. "দুর্নীতির নেপথ্যে রাজনীতি"Jugantor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২০