ফ্রিদা এস মিলার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফ্রিদা এস মিলার
জন্ম
ফ্রিদা সেগেলকে মিলার

(১৮৯০-০৪-১৬)১৬ এপ্রিল ১৮৯০
মৃত্যু২১ জুলাই ১৯৭৩(1973-07-21) (বয়স ৮৩)
ম্যানহাটান, নিউইয়র্ক
জাতীয়তামার্কিন
পেশাসরকারি প্রশাসক, শ্রম এবং নারী অধিকার কর্মী
কর্মজীবন১৯১৬ – ১৯৬৭

ফ্রিদা এস মিলার (১৬ই এপ্রিল, ১৮৯০ - ২১শে জুলাই, ১৯৭৩) একজন আমেরিকান শ্রম কর্মী, সরকারী প্রশাসক এবং নারী অধিকার কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৩৮ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কের শিল্প কমিশনার এবং ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা ব্যুরোর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত, তিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সাথে নারীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৬০-এর দশকে, তিনি জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসাবে বিভিন্ন ক্ষমতায় কাজ করেছিলেন যা নারী ও শিশুদের সমস্যাগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ফ্রিদা সেগেলকে মিলার ১৮৯০ সালের ১৬ই এপ্রিল, উইসকনসিনের লা ক্রসে এর্না (বিবাহপূর্ব সেগেলকে) এবং জেমস গর্ডন মিলারের কাছে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন আইনজীবী।[১] মিলারের বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর মা মারা যান[২] এবং তাঁর তের বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। লা ক্রসে, তিনি তাঁর বোন এলসির সাথে বড় হয়ে ওঠেন। তাঁদের মানুষ করেন দাদু-দিদা চার্লস এবং অগাস্টা সেগেলকে।[১][৩] তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করার পর, তিনি ডাউনার কলেজে যোগ দেন, ১৯১১ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক অধ্যয়ন করেন, পরের চার বছরে তিনি অর্থনীতি, আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানে গবেষণা করেন।[১] কিন্তু ডিগ্রি পাননি।[৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯১৬ সালে, মিলার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন একজন গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ ক'রে এবং এরপর তিনি পেনসিলভানিয়ার ব্রাইন মাওর কলেজে সামাজিক অর্থনীতি শিক্ষা দেন। ১৯১৭ সালে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তিনি ফিলাডেলফিয়া উইমেনস ট্রেড ইউনিয়ন লীগে কাজ করেন, একটি কলেজের আয়োজন করেন এবং ১৯২৩ সাল পর্যন্ত অর্থনীতির পাঠদান করেন।[১] প্রায় একই সময়ে, পলিন নিউম্যানের সাথে তাঁর দেখা হয়, নিউম্যান একজন শ্রমিক সংগঠক যিনি তখন ফিলাডেলফিয়ায় মহিলা ট্রেড ইউনিয়ন লীগের সাথে কাজ করতে এসেছিলেন। এই দুই মহিলা পরে সারাজীবনের সম্পর্কে আবদ্ধ হন এবং এক বছরের মধ্যে একসাথে থাকতে শুরু করেন।[৪] মহিলারা ভোট দেওয়ার অধিকার জেতার পর, কৃষক-লেবার পার্টির টিকিটে ফ্রিদা মিলার ইউনাইটেড স্টেটস হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস- এর প্রার্থী হন।[৫] যদিও তিনি জিততে পারেননি, কিন্তু ১৯২০ সালের নির্বাচনে তিনি ২৫,০০০ ভোট পেয়েছিলেন।[৩][৬] ১৯২২ সালে ফ্রিদা মিলারের সাথে একজন বিবাহিত পুরুষ চার্লস কুটজের সাথে সম্পর্ক হয় এবং ফ্রিদা গর্ভবতী হয়ে পড়েন। সন্তানকে (ভবিষ্যত এলিজাবেথ বার্গার (১৯২৩-২০১৩), এক সময় লেডি ওয়েন),[৭][৮] বড় করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং মিলারের সুনাম রক্ষার জন্য তিনি এবং নিউম্যান মিলে একটি গল্প উদ্ভাবন করেছিলেন যে তাঁরা বিদেশে একটি শিশুকে দত্তক নিয়েছেন।[৯] তাঁদের এই গল্পকে সত্যি হিসেবে প্রমাণ করার জন্য, দুজন ১৯২৩ সালে ভিয়েনায় ওয়ার্কিং উইমেনের আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন এবং শিশুটি বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছিল।[১০] [১১] তাঁরা ফিলাডেলফিয়ায় ফিরে আসেননি, বরং নিউইয়র্ক সিটির গ্রিনউইচ গ্রামে চলে যান, যেখানে নিউম্যান ইন্টারন্যাশনাল লেডিস গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (আইএলজিডব্লিউইউ) এ শিক্ষা পরিচালক হিসেবে একটি পদ গ্রহণ করেন।[৪] মিলার শীঘ্রই কাজ খুঁজে পান, জয়েন্ট বোর্ড অফ স্যানিটারি কন্ট্রোলের পরিদর্শক হিসাবে।[১২]

মহিলা ট্রেড ইউনিয়ন লীগের সাথে তাঁদের অধিভুক্তির মাধ্যমে তাঁরা যে বন্ধুদের বৃত্ত তৈরি করেছিলেন তাঁরা হলেন এলিজাবেথ ক্রিস্টম্যান, মেরি ড্রেইয়ার, ফ্রান্সেস পারকিন্স, এলেনর রুজভেল্ট, রোজ স্নাইডারম্যান, মাউড সোয়ার্টজ[১৩] ১৯২৮ সালে, নিউইয়র্ক স্টেটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমিশনার পারকিন্স, মিলারকে ব্যুরো অফ উইমেন ইন ইণ্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেন[১৪] এবং তিনি পরবর্তী বেশ কয়েক বছর নারী ও শিশুদের জন্য একটি ন্যূনতম মজুরি আইন তৈরি করার জন্য আইন প্রণয়নের কাজ করেন, যা ১৯৯৩ সালে পাস হয়।[৩] ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট যখন রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হন, তখন তিনি পার্কিনসকে তাঁর সাথে ওয়াশিংটনে নিয়ে যান,[১৫] এবং তিনি মিলারকে ১৯৩৬ সালে লীগ অফ নেশনস -এর একটি সংস্থা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত করার জন্য নিজের প্রভাব ব্যবহার করেন। . প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট তাঁকে আইএলও-এর আন্তঃআমেরিকান আঞ্চলিক সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নিযুক্ত করেন এবং তিনি নির্বাহী বোর্ডে নারী কর্মীদের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[১৬] ১৯৩৮ সালে, ফ্রিদা মিলারকে গভর্নর হার্বার্ট এইচ. লেহম্যান রাজ্য শিল্প কমিশনার হিসাবে পদটি পূরণ করার জন্য নিযুক্ত করেন,[১] তিনি এলমার এফ. অ্যাণ্ড্রুজের স্থলাভিষিক্ত হন। কমিশনার হিসাবে তাঁর মেয়াদকালে, ফ্রিদা মিলার রাজ্যের বেকারত্ব বীমা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলেন এবং চাকরির নিয়োগের উন্নতি করতে এবং মহামন্দার দ্বারা সৃষ্ট বেকারত্ব সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিষেবা পুনর্গঠন করেছিলেন। এক বছরের মধ্যে, তাঁর সংস্কার রাজ্যে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ শতাংশ বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করেছিল।[১][১৬]

১৯৪২ সালে লেহম্যানের গভর্নরশিপ শেষ হলে, ফ্রিদা মিলার কমিশনার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং যুক্তরাজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন জি উইনান্টের শ্রম বিষয়ক বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করতে যান।[১৬] ১৯৪৪ সালে, যখন মেরি অ্যান্ডারসন ইউনাইটেড স্টেটস উইমেনস ব্যুরো থেকে অবসর নেন, তিনি মিলারকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত করেন।[১৭] পরিচালক হিসাবে তাঁর প্রধান মনোযোগ ছিল মহিলাদের জন্য সমান বেতন এবং চাকরির সুযোগের উন্নতি করার জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করা। যুদ্ধ শেষ হলে, যুদ্ধশিল্পে নিয়োজিত নারীরা তাদের চাকরি হারায়, যার ফলে বৃহৎ আকারের বেকারত্ব তৈরি হয় এবং নারীদেরকে প্রাথমিকভাবে কেরানি এবং সেবা-সম্পর্কিত পদে স্বল্প বেতনের চাকরিতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি চাপ সৃষ্টি হয়। ১৯৪৫ সালে একটি শ্রম উপদেষ্টা কমিটি তৈরি ক'রে, ফ্রিদা মিলার হয়েছিলেন মহিলা ব্যুরোর প্রথম পরিচালক, যিনি শ্রম সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে মাসিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য ইউনিয়ন মহিলাদের আমন্ত্রণ জানান।[১৬] মহিলারা যে কম বেতন এবং দুর্বল অবস্থার মধ্যে শ্রম করছেন, সে সম্পর্কে সচেতনতা আনতে ফ্রিদা মিলার মহিলাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে শুধুমাত্র যৌথ দর কষাকষি পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত হবেনা, কারণ অনেক মহিলার চাকরি ইউনিয়নের অধীনে আসেনি। মহিলারা যে সমস্ত পেশায় কাজ করেন তার জন্য মজুরি উন্নত করতে ইউনিয়ন নেতৃত্বকে বিধায়কদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেছিলেন।[১৮] তিনি উদ্ভাবনী সমাধানেরও প্রস্তাব করেছিলেন, যেমন চাকরি অনুযায়ী বেতনের হার স্থাপন। এটি লিঙ্গ বৈষম্যের মতো বাইরের কারণের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য দূর করবে।[১৯] সুপারিশগুলি আংশিকভাবে সফল হয়েছিল, কারণ তাঁর মেয়াদে ছয়টি রাজ্য সমান বেতনের আইন অনুমোদন করেছিল, যদিও মহিলা ব্যুরো যে সমস্ত সুরক্ষা চেয়েছিল রাজ্যগুলি তার সব পূরণ করেনি। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে বিশটি রাজ্য সমান বেতনের জন্য সীমিত নীতি গ্রহণ করেছিল, কিন্তু প্রচেষ্টাগুলি পর্যাপ্ত ছিলনা এবং উকিলরা জাতীয় আইন প্রণয়নের জন্য চাপ দিতে থাকে।[২০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. The New York Times 1973
  2. Franzen 1996, পৃ. xxiv।
  3. Webber 1979
  4. Orleck 2009
  5. The Philadelphia Inquirer 1920, পৃ. 7।
  6. The Harrisburg Telegraph 1920, পৃ. 27।
  7. "Elisabeth Burger Obituary"। ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  8. "Burger, Elisabeth, 1923–2013. Papers of Elisabeth Burger, 1880–2013 (inclusive), 1940–2000 (bulk): A Finding Aid"Harvard University Library। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  9. Orleck 1995, পৃ. 145।
  10. Orleck 1995, পৃ. 144।
  11. Cobble 2011, পৃ. 54।
  12. Orleck 1995, পৃ. 146।
  13. Orleck 1995, পৃ. 8, 151–154।
  14. Orleck 1995, পৃ. 150।
  15. Orleck 1995, পৃ. 151।
  16. Sicherman ও Green 1980, পৃ. 479।
  17. Franzen 1996, পৃ. 110।
  18. Cobble 2011, পৃ. 94।
  19. Cobble 2011, পৃ. 99।
  20. Cobble 2011, পৃ. 105–106।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Cobble, Dorothy Sue (২০১১)। The Other Women's Movement: Workplace Justice and Social Rights in Modern America। Princeton, New Jersey: Princeton University Pressআইএসবিএন 978-1-4008-4086-1 
  • Webber, Donna E. (আগস্ট ১৯৭৯)। "Papers of Frieda S. Miller, 1909-1973 (inclusive), 1929-1967 (bulk): A Finding Aid"Online Archival Search Information System। Cambridge, Massachusetts: Schlesinger Library, Radcliffe Institute, Harvard University। Call No.: A-37। ৩ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  • "Frieda S. Miller, Labor Official For the State and Nation, Dead"The New York Times। New York City, New York। জুলাই ২২, ১৯৭৩। ৯ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮ 
  • "State Casts 1,218,215 Votes for Harding (pt 1)"। Harrisburg, Pennsylvania: The Harrisburg Telegraph। নভেম্বর ২৬, ১৯২০। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮Newspapers.com-এর মাধ্যমে।  উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারযুক্ত প্রকাশনা - বিনামূল্যে পড়া যাবে and "State Announces Official Count (pt 2)"। Harrisburg, Pennsylvania: The Harrisburg Telegraph। নভেম্বর ২৬, ১৯২০। পৃষ্ঠা 27। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮Newspapers.com-এর মাধ্যমে।  উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারযুক্ত প্রকাশনা - বিনামূল্যে পড়া যাবে
  • "Woman Candidate for Congress"The Philadelphia Inquirer। Philadelphia, Pennsylvania। আগস্ট ২৫, ১৯২০। পৃষ্ঠা 7। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০১৮Newspapers.com-এর মাধ্যমে।  উন্মুক্ত প্রবেশাধিকারযুক্ত প্রকাশনা - বিনামূল্যে পড়া যাবে