ফারাক্কা সেতু
ফারাক্কা সেতু | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৪°৪৮′০১″ উত্তর ৮৭°৫৬′১০″ পূর্ব / ২৪.৮০০২০১° উত্তর ৮৭.৯৩৬০৬১° পূর্ব |
বহন করে | সবরকম যানবাহন চলাচলের উপযোগী ৪ টি লেন[১] |
অতিক্রম করে | গঙ্গা নদী[১] |
স্থান | ফারাক্কা-লক্ষ্মীপুর, পশ্চিমবঙ্গ[১] |
অন্য নাম | ফারাক্কা ব্রিজ |
রক্ষণাবেক্ষক | ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ |
বৈশিষ্ট্য | |
নকশা | গার্ডার সেতু[১] |
মোট দৈর্ঘ্য | ৫.৪৬৮ কিলোমিটার (১৭,৯৪০ ফু)[১] |
প্রস্থ | ২৫ মিটার (৮২ ফু)[২] |
লেনের সংখ্যা | ৪[২][৩] |
ইতিহাস | |
নির্মাণকারী | আরকেইসি প্রজেক্টস |
নির্মাণ শুরু | ১ জানুয়ারি ২০১৯ |
নির্মাণ শেষ | ২০২১-২০২২ (আনুমানিক) |
নির্মাণ ব্যয় | ₹৫২১ কোটি |
পরিসংখ্যান | |
দৈনিক চলাচল | যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন |
অবস্থান | |
ফারাক্কা সেতু হ'ল ফারাক্কা বাঁধ থেকে ৫০০ মিটার ভাটিতে[৪] অবস্থিত একটি চার লেনযুক্ত নির্মাণাধীন সড়ক সেতু।[১] এই সেতুটি ফারাক্কা বাঁধের যানজট হ্রাস করতে নির্মিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হবে। মূল সেতু এবং সংযোগ সেতু'সহ সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৫.৪৬৮ কিলোমিটার।[১] সেতুটির নির্মাণ শেষ হলে এটি হবে জলভাগের উপরে নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম সেতু এবং ভারতের দীর্ঘতম সেতুগুলির মধ্যে একটি। সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ₹৫২১ কোটি টাকা।[১] ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু। আরকেইসি প্রজেক্টস সংস্থাটি চিনা সংস্থা 'কুইংডাও কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং'-এর সঙ্গে মিলিত ভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে।[১] নির্মাণকারী সংস্থাকে সেতু নির্মাণের জন্য তিন বছরের সময় সীমা দেওয়া হয়েছে।[৪]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের সঙ্গে দক্ষিণ অংশের একমাত্র সংযোগ পথ হল ফারাক্কা বাঁধ। এই সেতুটি ১৯৭৫ সালে চালু হয়।[৫] বর্তমানে এই সেতুটি ২ লেন বিশিষ্ট, কিন্তু সেতু দ্বারা বহন করা ১২ নং জাতীয় সড়ক ৪ লেন বিশিষ্ট। এর জন্য সেতুতে যানজট দেখা যায় সব সময়। ২০১২ সালের ‘সেন্ট্রাল রোড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, “সেই সময় সারাদিনে গড়ে প্রায় ১২ হাজার লরি যাতায়াত করত ফরাক্কা ব্রিজ দিয়ে। আগে সেই সংখ্যাটা ছিল দিনে মাত্র তিন হাজার। এছাড়াও অন্যান্য গাড়ি যাতায়াত করে। ফলে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সেতুটি দুর্বল হয়ে পরেছে।”[৬] ফরাক্কা ব্যারাজের সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনীয়ার রাজেশ কুমার সিংহ জানান, দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের একমাত্র সেতু হওয়ায় যানবাহনের চাপে ব্যারাজের ক্ষতি হচ্ছিল।[৫] এই কারণে উত্তর বঙ্গ ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে সংযোগের জন্য একটি নতুন সড়ক সেতুর প্রয়োজন দেখা দেয়।
প্রাক-নির্মাণ কাজ
[সম্পাদনা]২০১৬ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় সেতুটি তৈরির ছাড়পত্র মেলে।[৫] দু’দফায় টেন্ডারের পর একটি বিদেশি সংস্থাকে কাজের বরাত দেওয়া হয় ২০১৮ সালের শুরুতে।[৫] ৪ টি লেনের এই সেতুটিতে দুটি পৃথক পথ রয়েছে। প্রতিটি পথ চওড়ায় ১২.৫ মিটার এবং মূল সেতুটি লম্বায় ২.৪৬৮ কিলোমিটার।[৫] দু’দিকে সংযোগ সড়ক আরও তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। সেতুটির মোট ৫.৪৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ।[৫] এই সেতুতে কোনও রেলপথ থাকবে না।
নির্মাণ কাজ
[সম্পাদনা]২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে নির্মাণ সংস্থা 'আরকেইসি প্রজেক্টস' সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। গঙ্গার উত্তর তীরে মালদা জেলার লক্ষ্মীপুরের দিক থেকে এবং দক্ষিণ তীরে মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার দিক থেকে সেতুর স্তম্ভ নির্মাণের জন্য কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেতুর ১ নং ও ২ নং স্তম্ভের উপরে সেতুর গার্ডার স্থাপনের সময়ে সেতুর স্তম্ভ ভেঙে পরে।[৭]
দুর্ঘটনা
[সম্পাদনা]১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে, রবিবার সন্ধ্যায় নির্মীয়মাণ ফারাক্কা সেতুর ১ ও ২ নং স্তম্ভের মধ্যে গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছিল। সে সময় সেতুর গার্ডার ভেঙে পরে।[৮][৯] দুর্ঘটনায় ১ প্রকৌশলী'সহ ২ জনের মৃত্যু হয়।[১০][১১][১২] যদিও স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হকের দাবি, দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু।[৭] আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে খবর। পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীদের বিশাল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে। প্রথম পর্যায়ে মোট সাত জন শ্রমিককে উদ্ধার করা হয় এবং আহত অবস্থায় তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।[১৩]
দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থাকে এই সেতু নির্মাণের বরাদ দেওয়া হয়েছিল। নির্মাণ সংস্থার কোনও ত্রুটি ছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখার কথা বলা হয়। নির্মাণের যে কাঁচামাল সরবরাহ হচ্ছিল, সেখানেও কোনও ত্রুটি থেকে গিয়েছিল কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখার কথা বলে পুলিশ।[১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "RKEC bags ₹ 520 cr bridge project in West Bengal" (English ভাষায়)। www.thehindubusinessline.com। ১৯ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "NHAI/WB/DPRFarakka/418(B)/2017" (English ভাষায়)। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ Abhijit Sinha (২২ নভেম্বর ২০১৬)। "Tender out for new bridge at Farakka" (English ভাষায়)। Siliguri: www.telegraphindia.com। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ কলকাতা প্রতিনিধি (৬ ডিসেম্বর ২০১৮)। "পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় ফারাক্কা সেতু নির্মিত হচ্ছে"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ "উজান গাঙে মিলল নয়া ফরাক্কার ছাড়পত্র"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "সংস্কার হবে ফরাক্কা ব্রিজের, পাশে তৈরি হচ্ছে নতুন সেতুও"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "ভেঙে পড়ল ফারাক্কা ব্যারেজের নির্মীয়মাণ সেতু, মৃত অন্তত ২"। এই সময়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "West Bengal: 1 dead after portion of under-construction bridge collapses in Malda"। www.indiatoday.in। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "কাজ শুরুর দেড় বছরের মধ্যেই ফরাক্কায় ভাঙল নির্মীয়মাণ সেতু, মৃত ২ শ্রমিক"। bengali.news18.com। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "2 killed, 7 injured after girder of under-construction bridge collapses in West Bengal"। timesofindia.indiatimes.com। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "West Bengal: 2 Dead, Over 5 Injured After Part of Under-construction Bridge Collapses in Malda"। www.india.com। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Two killed, seven injured after girder of under-construction bridge collapses in Bengal"। www.newindianexpress.com। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ "হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল ফরাক্কা ব্রিজের নির্মীয়মাণ অংশ! ধ্বংসস্তূপে জখম অন্তত সাত শ্রমিক"। দ্য ওয়াল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০।