প্রিজম (জ্যামিতি)
এক নজরে প্রিজম
[সম্পাদনা]Set of uniform prisms | |
---|---|
(চিত্রে একটি ষড়ভুজাকৃতি প্রিজম দেখানো হলো) | |
ধরন (Type) | সমআকৃতির বহুতলক (Uniform Polyhedron) |
Conway polyhedron notation | Pn |
তল (Faces) | 2+n total: 2 {n} n {4} |
ধার (Edges) | 3n |
শীর্ষবিন্দু (Vertices | 2n |
Schläfli প্রতীক | {n}×{} or t{2, n} |
Coxeter diagram | |
Vertex configuration | 4.4.n |
Symmetry group | Dnh, [n,2], (*n22), order 4n |
Rotation group | Dn, [n,2]+, (n22), order 2n |
Dual polyhedron | bipyramids |
Properties | convex, semi-regular vertex-transitive |
n-ভুজাকৃতি প্রিজম net (এখানে n = 9) |
জ্যামিতির পরিভাষায় প্রিজম হল এক প্রকার ঘন বস্তু।
প্রিজম সম্পর্কিত সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]সংক্ষেপে, প্রিজম হলো এমন একটি ত্রিমাত্রিক আকৃতি যার অন্তত ২টি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত আছে এবং সমস্ত প্রান্তগুলি সমতল।
যদি দুটি ত্রিভুজাকৃতি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত থাকে এবং সমস্ত প্রান্তগুলি সমতল হয়
তাকে ত্রিভুজাকৃতি প্রিজম বলে। আর যদি দুটি বর্গাকৃতি অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত, চারটি আয়তকার অনুরূপ সমান্তরাল প্রান্ত এবং সমস্ত প্রান্তগুলো সমতল থাকে তাকে আয়তকার প্রিজম বলে।
বিস্তৃতভাবে, যে ঘনবস্তুর দুই প্রান্ত সর্বসম ও সমান্তরাল বহুভুজ দ্বারা আবদ্ধ এবং অন্যান্য তলগুলো সামান্তরিকক্ষেত্র, তাকে প্রিজম (Prism) বলে। প্রিজমের এই সর্বসম ও সমান্তরাল প্রান্তদ্বয়কে প্রিজমের ভুমি (Base) এবং অন্যান্য তলগুলোকে পার্শ্বতল (Faces) বলা হয়। প্রিজমের দুইটি তল অর্থাৎ একটি ভূমি ও একটি পার্শ্বতল অথবা দুইটি পার্শ্বতল পরস্পর যে রেখায় মিলিত হয় তাকে প্রিজমের একটি ধার (Edge) বলে। প্রিজমের তিনটি ধার পরস্পর যে বিন্দুতে মিলিত হয় তাকে শীর্ষবিন্দু (Vertex/Vertices) বলে।
আবার, যে প্রিজমের সবগুলো পার্শ্বতলই আয়তক্ষেত্র, তাকে খাড়া বা সমপ্রিজম (Right Prism) বলে এবং অন্য ক্ষেত্রে প্রিজমকে তীর্যক প্রিজম (Oblique Prism) বলে। বাস্তব ক্ষেত্রে লম্বপ্রিজমই বেশি ব্যবহার করা হয়।
প্রিজম সম্পর্কিত কতিপয় সূত্রাবলি
[সম্পাদনা]ক) প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল = 2 (ভূমির ক্ষেত্রফল) + পার্শ্বতলের ক্ষেত্রফল
তা
খ) আয়তন = ভূমির ক্ষেত্রফল × উচ্চতা
সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল
[সম্পাদনা]প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল (Surface area) হলো এর ভূমিদ্বয় ও পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি। এখানে উল্লেখ্য, ভূমিদ্বয় সর্বসম হওয়ায় একটি ভূমির ক্ষেত্রফলকে ২ দ্বারা গুণ করলেই এদের সমষ্টি পাওয়া যায়। এর সাথে পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি যোগ করলেই প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। আবার ভুমিদ্বয় সমান্তরাল হওয়ায় এদের মধ্যবর্তী দূরত্ব অর্থাৎ পার্শ্বতলগুলোর দৈর্ঘ্য তথা প্রিজমের উচ্চতা সব সময় সমান। ফলে ভূমির পরিসীমাকে উচ্চতা দ্বারা গুণ করলেই পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফলের সমষ্টি পাওয়া যায়।
প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফল = 2(ভূমির ক্ষেত্রফল) + পার্শ্বতলগুলোর ক্ষেত্রফল = 2(ভূমির ক্ষেত্রফল) + ভুমির পরিসীমা × উচ্চতা
প্রিজমের সমগ্রতলের ক্ষেত্রফলকে A দ্বারা, ভূমির ক্ষেত্রফলকে B বা AB দ্বারা, ভূমির পরিসীমাকে P এবং ভূমিদ্বয়ের মধ্যবর্তী লম্ব দূরত্ব তথা উচ্চতাকে h দ্বারা প্রকাশ করলে,
প্রিজমের আয়তন
[সম্পাদনা]যেকোনো প্রিজমের আয়তন হলো তার ভূমির ক্ষেত্রফল ও উচ্চতা তথা ভূমিদ্বয়ের মধ্যবর্তী লম্বদূরত্বের গুণফল।
প্রিজমের আয়তন = ভুমির ক্ষেত্রফল × উচ্চতা
প্রিজমের আয়তনকে V দ্বারা, ভূমির ক্ষেত্রফলকে B বা AB দ্বারা এবং উচ্চতাকে h দ্বারা প্রকাশ করলে,
আরও কিছু সাধারণ সূত্রাবলি
[সম্পাদনা]যেকোনো n-ভূজাকৃতি প্রিজমের ক্ষেত্রে,
i. প্রিজমের তল সংখ্যা (ভূমিসহ) =
ii. প্রিজমের শীর্ষবিন্দু সংখ্যা =
iii. প্রিজমের ধার সংখ্যা =
যেখানে, n হলো প্রিজমটির ভূমির বাহু সংখ্যা।
প্রিজমের নামকরণ
[সম্পাদনা]যেকোনো প্রিজমের ভুমির বাহুর সম সংখ্যক পার্শ্বতল থাকে। প্রিজমের ভুমির নামানুসারে প্রিজমের নাম করণ করা হয়। অর্থাৎ n সংখ্যক বাহু বা ভুজ বিশিষ্ট প্রিজমের নাম হবে, n-ভুজাকার প্রিজম বা n-ভুজাকৃতি প্রিজম (ইংরেজিতে n-gonal Prism)। যেমনঃ ত্রিভুজাকার প্রিজম (Triangular Prism), চতুর্ভুজাকার প্রিজম, পঞ্চভুজাকৃতি প্রিজম (Pentagonal Prism), ষড়ভুজাকৃতি প্রিজম (Hexagonal Prism) ইত্যাদি।
বর্ণনা
[সম্পাদনা]সবচেয়ে কম তল সমন্বিত লম্ব প্রিজমের ভুমিদ্বয় ত্রিকোণাকৃতি। অনেক সময় প্রিজম বলতে এরকম ত্রিকোণাকার লম্ব প্রিজম আকৃতির স্বচ্ছ বস্তু বোঝানো হয়, যা আলোকবিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত -এর উপর নিবন্ধের জন্য দেখুন প্রিজম (আলোকবিজ্ঞান)। প্রিজম হল বহুভুজ প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট সরল দণ্ড- পদার্থবিজ্ঞানে প্রিজম সাধারণতঃ প্রস্থের থেকে দৈর্ঘ্যে অনেক লম্বা- এর দুই প্রান্তের বিশেষ প্রয়োজন হয় না, তবে জ্যামিতিক ভাবে প্রিজম হতে হলে এই দণ্ডের প্রান্তদ্বয় হতে হবে সমান্তরাল। প্রিজমের পার্শ্বতলগুলির আকার সামন্তরিক, যা লম্ব-প্রিজমের ক্ষেত্রে আয়তক্ষেত্র। প্রিজমের প্রস্থচ্ছেদের আকৃতি তার ভুমি বা প্রান্তদ্বয়ের ন্যায় বহুভুজ। ত্রিকোণাকৃতির প্রিজমকে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রিজম বলে অভিহিত করলেও তার থেকে অনেক বেশি পরিচিত আরেকটি আকৃতির প্রিজম আমাদের চারিদিকে বিদ্যমান যার প্রস্থচ্ছেদ আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্রাকার। প্রায় সবরকম বাক্স, ইঁট, বই, ইত্যাদি এই আকৃতির। এবং এর প্রান্তদ্বয় বর্গক্ষেত্রাকার ও পার্শ্বতলগুলিও বর্গক্ষেত্রাকার হলে তা হল একটি ঘনক। প্রিজমের প্রান্তের বহুভুজের বাহুসংখ্যা বাড়িয়ে অসীম করলে প্রান্তের আকৃতি হবে বৃত্তাকার এবং সেক্ষেত্রে প্রিজমটি হয়ে যাবে চোঙা (cylinder) আকৃতির।