পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা সরকারি এবং বেসরকারি উভয় তরফেই হয়ে থাকে। ব্রিটিশ যাজক এবং ভারতীয় সমাজ সংস্কারকদের হাত ধরে এতদঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির উন্নতি ঘটেছিল। পশ্চিমবঙ্গে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট ক্যালকাটা, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, শিবপুর, ভারতীয় বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থান, কলকাতা, রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, দুর্গাপুর, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি, কল্যাণী, ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
ভারতে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির উন্নয়নে কলকাতার একটা অগ্রণী ভূমিকা আছে। ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষা এসেছিল কলকাতার মাধ্যমে। যাজক ও সমাজ সংস্কারকদের দ্বারা অনেক স্কুল এবং কলেজের প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। উইলিয়াম জোন্স (ভাষাতাত্ত্বিক) ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাচ্যবিদ্যা প্রচারের জন্যে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজা রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শশিভূষণ চ্যাটার্জি, ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ এবং উইলিয়াম কেরি প্রমুখ কলকাতা শহরে আধুনিক স্কুল এবং কলেজ তৈরিতে নেতৃভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ-এর নাম পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্সি কলেজ নামকরণ করা হয়।
উইলিয়াম কেরি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে শ্রীরামপুর শহরে শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতের প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৮২৭ খ্রিস্টাব্দে চালু হয়েছিল, যখন এটা ডেনিশ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রাজকীয় সনদের দ্বারা সমিতিবদ্ধ হয়। যদিও এই প্রতিষ্ঠানের সনদ ছিল, তবুও এটা বাস্তবিকভাবে এটা আধুনিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। স্কটল্যান্ড চার্চের রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফ ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন এবং ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন। এই দুই প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে একীকরণ হয়ে যে নতুন সংস্থান গঠিত হয় তার নাম হল স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ইয়ং বেঙ্গল এবং বাংলার নবজাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। লা মার্টিনিয়ার কলকাতা ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জন বেথুন ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় বালিকাদের জন্যে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এমন একটা সময়ে যখন কিনা সমাজে নারী শিক্ষার নামে ভ্রূকুঞ্চিত হোত। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বেথুন কলেজ তাঁর দ্বারা তৈরি হয়েছিল।
স্যার হেনরি হাডিঞ্জের স্থাপিত বিদ্যালয়গুলি তেমন একটা সাফল্য না পাওয়ায় বিদ্যাসাগর নিজে উদ্যোগী হন।[২] পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে হাত দেন।[৩] বিদ্যাসাগর বিভিন্ন জেলায় মডেল স্কুল তৈরি করেন। এই জেলাগুলির মধ্যে ছিল নদীয়া, বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর।[৪] বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা পায় ১৮৫৯-এর ১লা এপ্রিল পাইকপাড়া রাজাদের প্রতিষ্ঠিত কাঁদির ইংরেজি-সংস্কৃত স্কুল।[৫]১৮৫৩-তে বিদ্যাসাগর স্বগ্রামে বালকদের জন্য একটি অবৈতনিক বিদ্যালয়ও স্থাপন করেছিলেন।[৬] নভেম্বর ১৮৫৭ থেকে মে,১৮৫৮-র মধ্যে বিদ্যাসাগর ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।[৭]
ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ নিজগ্রামে একটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু করেন। ছাত্রদের নৈতিক চরিত্র গঠনের জন্য তিনি বাংলা পদ্যে 'প্রতিজ্ঞা শতক' রচনা করেন।[৮] তিনি যখন যে বাড়িতে থাকতেন সেখানেই একটি বিদ্যালয় এবং একটি লাইব্রেরী গড়ে তুলতেন।[৯] তাঁর প্রতিষ্ঠিত পেট্রিয়টিক ইনস্টিটিউশনের দায়িত্ব তিনি তাঁর শিষ্য কালীপ্রসন্ন চক্রবর্তীর হাতে তুলে দেন।[১০] সুপ্রসিদ্ধ টাউন স্কুল, কলকাতা-র অন্যতম প্রাক্ রূপ এই পেট্রিয়টিক ইনস্টিটিউশন।[১১] তাঁর অন্যতম শিষ্য ভবতারণ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন ভারতী বিদ্যালয়।[১২] ১৮৯৩ সালের ১৯শে এপ্রিল মাতাজী তপস্বিনী মহারানী গঙ্গাবাঈ যে মহাকালী পাঠশালা প্রতিষ্ঠা করেন - তার পিছনেও মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ-এর অনুপ্রেরণা ছিল।[১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ London Missionary Society, সম্পাদক (১৮৬৯)। Fruits of Toil in the London Missionary Society। London: John Snow & Co.। পৃষ্ঠা 12। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৫৫।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৫৫।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৫৬–৫৭।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৫৭।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৫৭।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীব্রজেন্দ্রনাথ (১৩৫০)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ২৪৩।১ আপার সারকুলার রোড, কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ। পৃষ্ঠা ৬২।
- ↑ বসু, গোস্বামী, রাহা, অধ্যাপক শ্রীনির্মলকান্তি, অধ্যাপক ডঃ শ্রীকৃষ্ণপদ, ডাঃ শ্রীদীপেন (আগষ্ট ১৯৮১)। মহর্ষি নগেন্দ্র-স্মারক গ্রন্থ। অধ্যাপক শ্রীনির্মলকান্তি বসু [বিভাগীয় প্রধান, সংস্কৃত বিভাগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।] আহ্বায়ক, যুগাচার্য মহর্ষি নগেন্দ্র-মেমোরিয়াল কমিটি, ২বি, রামমোহন রায় রোড, কলকাতা - ৯। পৃষ্ঠা ৯৭।
- ↑ মুখোপাধ্যায়, রঘুপতি (ফেব্রুয়ারি ২০১২)। যুগাচার্য্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ। সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভা ও শ্রীশ্রী নগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশন, ২বি, রামমোহন রায় রোড, কলকাতা- ৯। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ মুখোপাধ্যায়, রঘুপতি (ফেব্রুয়ারি ২০১২)। যুগাচার্য্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ। সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভা ও শ্রীশ্রী নগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশন, ২বি, রামমোহন রায় রোড, কলকাতা- ৯। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ মুখোপাধ্যায়, রঘুপতি (ফেব্রুয়ারি ২০১২)। যুগাচার্য্য মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ। সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভা ও শ্রীশ্রী নগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশন, ২বি, রামমোহন রায় রোড, কলকাতা- ৯। পৃষ্ঠা ১২।
- ↑ Chatterjee, Jaba (২০২৩)। LIFE AND TEACHINGS OF MAHARSHI NAGENDRANATH। 2B Rammohan Roy Road, Kolkata 700009: Sanatan Dharma Pracharini Sabha (1891) Shree Shree Nagendra Math (1916) Nagendra Mission (2005)। পৃষ্ঠা 21।
- ↑ Sen Shastri, Prof. Tripurasankar (ডিসেম্বর ২০২০)। The Levitating Saint। Nagendra Mission, 2B Rammohan Roy Road, Kolkata-7000009। পৃষ্ঠা 29 – 30।