পতিব্রতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাবিত্রীকে একজন আদর্শ পতিব্রতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এখানে তাকে মৃত্যুর দেবতা যমের হাত থেকে তার স্বামী সত্যবানের জীবন রক্ষা করাকে চিত্রিত করা হয়েছে।

পতিব্রতা (সংস্কৃত: पतिव्रता) হিন্দুধর্মে স্বামীর প্রতি সহধর্মিণীর বৈবাহিক বিশ্বস্ততা বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ। পতিব্রতা শব্দটি বিবাহিত সহধর্মিণীকে বোঝায়, যিনি তার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত ও কর্তব্যপরায়ণ।[১]

হিন্দুরা সাধারণত বিশ্বাস করে, যখন সহধর্মিণী তার স্বামীর প্রতি নিবেদিত থাকে ও তার প্রয়োজনগুলি পূরণ করে, তখন সে তার পরিবারে সমৃদ্ধি ও মঙ্গল নিয়ে আসে।

শব্দের ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

পতিব্রতা শব্দের আক্ষরিক অর্থ গুণী সহধর্মিণী যে তার স্বামীর প্রতি ভক্তিমান ও তার স্বামীর সুরক্ষার জন্য ব্ৰত করেন।

বিশ্বাস[সম্পাদনা]

পতিব্রতা তার স্বামীর কথা শোনে ও তার প্রয়োজন অনুসারে কাজ করে থাকে। পতিব্রতা তার স্বামীকে দুটি উপায়ে রক্ষা করে। তিনি তার তার কর্তব্য (ধর্ম) করতে উৎসাহিত করেন; এবং দেবতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও উপবাস করেন।[২]

সতী শব্দটি প্রায়শই পতিব্রতার প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সতী শব্দের অর্থ যিনি শারিরীক, মানসিক ও বাচিকগতভাবে তার পবিত্রতা (সত্ত্ব) রক্ষা করেন। শব্দটি এমন নারীকে বোঝাতেও ব্যবহৃত হয় যিনি তার মৃত স্বামীর সাথে চিতায় নিজের জীবন ত্যাগ করেন।[৩]

সাহিত্য[সম্পাদনা]

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর পাতিব্রত্য হিন্দু সাহিত্যে পুনরাবৃত্ত বিষয়বস্তু ও হিন্দু পুরাণের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে লক্ষণীয়। এটি এমন ধারণা যা সাধারণত শক্তিশালী হিসাবে বিবেচিত। একজন নারীর পাতিব্রত্য স্বামীকে অভিশাপ, মৃত্যু বা তার মঙ্গলকে হুমকির মুখে পতিত করে এমন অশুভ লক্ষণ থেকে রক্ষা করে।

মহাকাব্য রামায়ণে সীতাকে তার পতি রামের প্রতি পতিব্রতা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সীতা চৌদ্দ বছরের নির্বাসন অতিবাহিত করতে দ্বিধা করেন নি যে রামকে বনে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন করার জন্য সীতা তার সমস্ত পার্থিব সুখ ত্যাগ করেন। রাবণ যখন তাকে অপহরণ করে তখন তিনি কোন ভয় অনুভব করেন নি। তার বন্দিদশায়ও তার স্বামীর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। উত্তর কাণ্ডে, সাধারণ প্রজাদের দাবির কারণে যখন তাকে রামের কাছে তার সতীত্ব প্রমাণ করতে বলা হয় তখন তিনি অগ্নিপরীক্ষা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন নি।[৪]

মহাভারতের সাবিত্রী ও সত্যবানের কিংবদন্তি প্রায়শই পাতিব্রত্য ধারণার উদাহরণরূপে দেওয়ার হয়, যেখানে সাবিত্রী নামে এক রাজকন্যার তার স্বামী সত্যবানের প্রতি ভক্তি তাকে মৃত্যুর দেবতার কাছ থেকে তার পূর্বনির্ধারিত নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছিল।[৫]

ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে বলা হয়েছে,একসময় ঋষি মাণ্ডব্যকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চোর সাব্যস্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়। তখন শীলাবতী নামে এক পতিব্রতা স্ত্রীর স্বামী উগ্রশ্রবা তার প্রিয় বেশ্যার গৃহে যেতে চেয়েছিলেন। শীলাবতী তাকে বেশ্যার গৃহে নিয়ে যেতে রাজি হলেন। যখন দম্পতি মাণ্ডব্যের নিকট এলেন তখন পতিব্রতার স্বামীকে মাণ্ডব্য মুনি দোষী বলে মনে করলেন এবং পরবর্তী সূর্যোদয়ের আগে তাকে মৃত্যুর অভিশাপ দেন। আতঙ্কিত শীলাবতী তার পাতিব্রত্য প্রভাবে সূর্যদেবের নিয়মানুযায়ী পরদিন ভোরে উদয় হওয়া আটকে দিয়েছিলেন। যেহেতু সূর্য উদিত না হওয়ায় সার্বজনীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল, তাই দেবতারা অনসূয়ার কাছে আসেন। অনসূয়া শীলাবতীকে আবার সূর্যকে উদিত হতে রাজি করিয়েছিলেন।[৬]

ধর্মীয় অনুশীলন[সম্পাদনা]

বরলক্ষ্মী ব্রতম নামক হিন্দু ব্রতে দক্ষিণ ভারতের বিবাহিত হিন্দু নারীরা সমৃদ্ধবিবাহ ও তাদের স্বামীর সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করেন। করবা চৌথ হল উত্তর ভারতে অনুরূপ ব্রত। এটিতো নারীরা তাদের স্বামীর দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করে।[৭] সাবিত্রী ব্রত এমন ব্রত যা নারীদের দ্বারা নির্দিষ্ট অঞ্চলে তাদের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় করা হয়।[৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. www.wisdomlib.org (২০১৭-০৫-০১)। "Pativrata, Pativratā, Pati-vrata: 17 definitions"www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৭ 
  2. Sati, the Blessing and the Curse: The Burning of Wives in India, by John Stratton Hawley
  3. "The Pativrata"BAPS। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০২০ 
  4. Tripāṭhī, Candrabalī; Mani, Chandra Mauli (২০০৫)। The Evolution of Ideals of Womenhood in Indian Society (ইংরেজি ভাষায়)। Gyan Books। পৃষ্ঠা 126। আইএসবিএন 978-81-7835-425-5 
  5. Das, Sisir Kumar (২০০৫)। A History of Indian Literature: 1911-1956, struggle for freedom : triumph and tragedy (ইংরেজি ভাষায়)। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন 978-81-7201-798-9 
  6. Krishna, Nanditha (২০১৪-০৫-০১)। Sacred Animals of India (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। পৃষ্ঠা 140। আইএসবিএন 978-81-8475-182-6 
  7. Monger, George P. (২০১৩-০৪-০৯)। Marriage Customs of the World: An Encyclopedia of Dating Customs and Wedding Traditions, 2nd Edition [2 volumes] (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 399। আইএসবিএন 978-1-59884-664-5 
  8. Raman, Sita Anantha (২০০৯-০৬-০৮)। Women in India: A Social and Cultural History [2 volumes]: A Social and Cultural History (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 978-0-313-01440-6