ধর্মসাগর
| ধর্মসাগর | |
|---|---|
| অবস্থান | কুমিল্লা |
| স্থানাঙ্ক | ২৩°২৭′৫২″ উত্তর ৯১°১০′৪৬″ পূর্ব / ২৩.৪৬৪৪৪° উত্তর ৯১.১৭৯৪৪° পূর্ব |
| ধরন | কৃত্রিম জলাধার |
| অববাহিকার দেশসমূহ | বাংলাদেশ |
| সর্বাধিক দৈর্ঘ্য | ৩৭৫.৪৬ মিটার (১,২৩১.৮ ফুট) |
| সর্বাধিক প্রস্থ | ২৩৭.৪২ মিটার (৭৭৮.৯ ফুট) |
| পৃষ্ঠতল অঞ্চল | ২৩.১৮ একর (৯.৩৮ ha)[১] |
| বাসস্থান সময় | ৬০০ বছর পূর্বের |

ধর্মসাগর বাংলাদেশের কুমিল্লা মহানগরীর একটি ঐতিহ্যবাহী মানবসৃষ্ট জলাশয়। জলাধারটি ১৪৫৮ সালে তিপ্রা রাজ্যে রাজা ধর্ম মাণিক্য প্রথম খনন করেছিলেন। ধর্মসাগরের আয়তন ২৩.১৮ একর।[১][২] পুকুরের পশ্চিম পাশে নজরুলের স্মৃতিকেন্দ্র রয়েছে ।[৩] সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করে স্থানীয় বাসস্থানের সুবিধার্থে 'ধর্মসাগর' খনন হয়। এটি বাংলাদেশের নগর জল ঐতিহ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হয়। খননের পর থেকে, জলাশয়টি শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।[৪] বাংলাদেশের অন্যান্য প্রধান শহরগুলির মতো কুমিল্লা শহরের দ্রুত অপরিকল্পিত বৃদ্ধির কারণে শহরের আদিম শহুরে কাঠামো এবং পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে,একইসাথে জলশয়টির স্বাতন্ত্র ধরে রাখা কঠিন হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একটি স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে দিঘির পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করে আসছে।[৫]
ধর্মসাগরকে কুমিল্লা শহরের কেন্দ্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। শুরু থেকে, শহরের কেন্দ্রীয় বিনোদন অঞ্চলগুলি এই জলাশয়ের পূর্ব তীরের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা হয়েছিল, সময়ের মধ্যে এটিকে বিভক্ত করে একটি স্টেডিয়াম এবং কেন্দ্রীয় ঈদগাহে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। উত্তর তীরে শহরের বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন আছে। দিঘীর পশ্চিম পাড় ঘেঁষে চলমান হাঁটাপথ, শহরের একমাত্র খোলা জায়গা। যাইহোক, ব্যক্তিগত আবাসিক সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ তীর এবং কঠোর গণ গতায়ন অবরোধ; পাড়ের কাছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন জলাবদ্ধতার চরিত্রকে নষ্ট করেছে এর পেছনে নেতিবাচক জায়গা তৈরি করেছে।[৫]


ইতিহাস
[সম্পাদনা]
ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন।[১] এই অঞ্চলের মানুষের জলের কষ্ট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য।রাজমালা গ্রন্থ আনুসারে মহারাজা সুদীর্ঘ ৩২ বৎসর রাজত্ব করেন (১৪৩১-৬২ খ্রি:)।[৬] মহারাজা ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। ধর্মসাগর নিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে বহু উপাখ্যান ও উপকথা।[৬]
কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লা ভ্রমণে আসলে শচীন দেববর্মণের সাথে যেসকল জায়গায় সময় কাটাতেন তার মধ্যে ধর্মসাগর ও তার আশেপাশের এলাকা অন্যতম।[৭]
তাম্রলিপি
[সম্পাদনা]ধর্মসাগর উৎসর্গের সময় যে তাম্রলিপি প্রদান করা হয় তা নিন্মরূপ:-
- “চন্দ্র বংশেতে মহামাণিক্য নৃপবর, তানপুত্র শ্রী ধর্মমাণিক্য শশধর।
- তেরশ আশিশতকে সোমবার দিনে, শুক্লপক্ষ এয়োদশী মেষ সংক্রমনে।।
- তাম্রপত্রে লিখি দিলাম এসব বচন, আমা বংশ মারি যে বা হয় রাজন।
- তাহার দাসের দাস হইবেক আমি, আমা কীর্তি ব্রক্ষাবৃত্তি না লঙ্ঘিত তুমি।।”
- …(রাজমালা দ্বিতীয় লহর ৩য় পৃষ্ঠা)।[৬]
তাম্রলিপির মর্ম
- “চন্দ্র বংশোদ্ভব মহা মাণিক্যের সুধীপুত্র শশধর সদৃশ শ্রী শ্রী ধর্ম মাণিক্য ১৩৮০ মেষ সংক্রমনে (চৈত্র মাসের শেষ তারিখে) সোমবার শুক্ল এয়োদশী তিথিতে কৌতুকাদি তাষ্ট বিপ্রকে শষ্য-সমন্বিত ফল ও বৃক্ষাদি পূর্ণ উনত্রিশ দ্রোণ ভূমি দান করিলেন। আমার বংশ বিলুপ্ত হইলে যদি এই রাজ্য অন্যকোন ভূপতির হস্তগত হয়। তিনি এই বৃহ্মবৃত্তি লোপ না করিলে আমি তাহার দাসানুদাস হইব।”[৬]
বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]বর্তমানে ধর্মসাগরের আয়তন ২৩:১৮ একর।এটির পূর্বে কুমিল্লা স্টেডিয়াম ও কুমিল্লা জিলা স্কুল, দক্ষিণে কুমিল্লা মহিলা কলেজ, উত্তরে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যান ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অবস্থিত। কুমিল্লার শহরবাসীর নিকট এই দীঘিটি একটি বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।এখানে অবকাশ উদযাপনের নিমিত্ত প্রতিদিন বিপুল জন সমাগম হয়ে থাকে। এছাড়া সারাদেশেই ধর্মসাগরের প্রসিদ্ধি রয়েছে।
ধর্মসাগরের উত্তর কোণে রয়েছে রাণীর কুঠি, পৌরপার্ক। পূর্ব দিকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম, কুমিল্লা জিলা স্কুল, দক্ষিণ পাড়ে কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের পুরনো ক্যাম্পাস আর পশ্চিম পাড়ে দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা। স্থানীয় অধিবাসী ছাড়াও দিঘিটি দেখতে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। দিঘিপাড়ের সবুজ বড় বড় গাছের সারি ধর্মসাগরকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাছাড়াও শীতকালে ধর্মসাগরে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 মোঃ তুহীন মোল্লা (২০১২)। "ধর্মসাগর"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১। ওসিএলসি 883871743। ওএল 30677644M।
- ↑ "Dharma Sagar Dighi in Comilla"। Bangladesh Travel Guide। ৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "Translate works of Nazrul: PM"। দ্য ডেইলি স্টার। Dhaka। ২৬ মে ২০১২। ১৩ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ↑ ahmad, rafi (১৫ জুন ২০২১)। "Morphology of urban fabric around the Dighi"। sthapattya-o-nirman। ১৬ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 Ahmad, Rafi (২০২১)। Contemporary Approaches in Urbanism and Heritage Studies | Spatial Conservation Planning for Ecologically Critical Water Heritage: A Case Study of the Historic Dharmashagar Dighi, Cumilla, Bangladesh। Cinius Yayınları Publication। পৃ. ১৯৯–২০৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৬২৫-৭৪৭২-৩৮-৮।
- 1 2 3 4 সরকার, তাপস চন্দ্র। "ধর্মমাণিক্য বাহাদুরের অমরকীর্তি গাঁথা কুমিল্লার ঐতিহাসিক ধর্মসাগর"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "The life of a music maker"। দ্য ডেইলি স্টার। Dhaka। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১০ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "কুমিল্লা ধর্মসাগরের ইতিকথা"।