দ্বিতীয় ক্রুসেড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দ্বিতীয় ক্রুসেড
মূল যুদ্ধ: ক্রুসেড এবং রিকনকোয়েস্টা

জিন কলম্বি এবং সেবাস্তিয়ান ম্যামেরট অঙ্কিত ইনাবের যুদ্ধ
তারিখ১১৪৫–১১৪৯
অবস্থান
ফলাফল
আনাতোলিয়া:
লিভান্ট:
    • মুসলমানদের বিজয়
      • জেনগি বাহিনীর বিজয়
ইবেরিয়া:
    • ক্রুসেডারদের বিজয়
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
  • পর্তুগিজ কর্তৃক লিসবন অধিগ্রহণ, কাতালানস কর্তৃক টেরাগোনা এবং টর্টোসা দখল
বিবাদমান পক্ষ


সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী


এডিসার পতন, মানচিত্রের ডানে দেখানো হয়েছে (১১৪০), দ্বিতীয় ক্রুসেডের সম্ভাব্য কারণ।

দ্বিতীয় ক্রুসেড (১১৪৫ - ১১৪৯) ইউরোপ থেকে ঘোষিত দ্বিতীয় প্রধান ধর্মযুদ্ধ । ১১৪৪ খ্রিষ্টাব্দে জেনগি বাহিনীর নিকট এডিসা অঙ্গরাজ্যের পতনের সূত্র ধরে শুরু হয় ২য় ধর্মযুদ্ধ । ১০৯৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ধর্মযুদ্ধ চলাকালে এডিসা অঙ্গরাজ্যের গোড়াপত্তন করেন জেরুজালেমের রাজা প্রথম বাল্ডুইন । রাজ্যটির প্রতিষ্ঠা সবার শুরুতে হলেও এটির পতনও হয় সবার শুরুতেই ।

দ্বিতীয় ধর্মযুদ্ধের ঘোষণা দেন পোপ ইউজিন ( তৃতীয় ) । এটিই প্রথম ধর্মযুদ্ধ যেখানে ফ্রান্সের রাজা সপ্তম লুই এবং জার্মানির রাজা তৃতীয় কনরাড একাধিক অভিজাত ইউরোপীয়দের সহায়তা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন । ইউরোপের এই দুই পরাক্রমশালী রাজ্যের বাহিনী আলাদাভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হতে থাকে । কিন্তু, আনাতোলিয়া রাজ্যের বাইজেন্টাইন অংশ অতিক্রমের সাথে সাথে তারা সেলজুক তুর্কদের কাছে আলাদাভাবে পরাজিত হয়। পশ্চিমা খ্রিষ্টানদের প্রধান উৎস , ডেউলির ইউডেস এবং সিরিয়াক খ্রিষ্টানদের ভাষ্যমতে , বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম ম্যানুয়েল কমনেনস-ই আনাতোলিয়ার নিকটে যোদ্ধাদের গতিরথ করেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তুর্কদের লেলিয়ে দেন । অবশ্য , ইউডেসের এই মন্তব্যকে অনেকেই বানোয়াট মনে করেন । প্রথমত, তিনি রাজ্যকে একটি বাধা মনে করতেন এবং দ্বিতীয়ত সেই সময়ে সম্রাট ম্যানুয়েলের কাছে এরকম কোন আক্রমণ করার মতো রাজনৈতিক কারণও ছিলো না । রাজা লুই এবং রাজা কনরাডের অবশিষ্ট সম্মিলিত বাহিনী জেরুজালেমে পৌছায় ১১৪৮ খ্রিষ্টাব্দে।

ব্যর্থ পরিকল্পনা তাদের কে পিছু হটতে বাধ্য করে । অবশেষে , যুদ্ধে মুসলমানদের জয় হয়।

তবে, এই যুদ্ধ দ্বাদশ শতাব্দীতে জেরুজালেমের পতন এবং তৃতীয় ধর্মযুদ্ধের বীজ রোপন করে যায় ।

পরাজয়ের চেতনা ছাড়িয়েও পবিত্র ভূমির এই ধর্মযুদ্ধ যোদ্ধাদের এক অনন্য জয়ের স্বাদ এনে দেয়। এর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১১৪৭ খ্রিস্টাব্দের লিসবন দখল যেখানে শুধুমাত্র ৭০০০ পর্তুগীজদের একটি ছোট সেনাদলকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ফ্লেমিশ , ফ্রিজিয়ান , ইংরেজ , নরম্যান , স্কটিশ , এবং জার্মানদের ১৩০০০ সৈন্য বিশিষ্ট বিশাল যৌথবাহিনী ইংল্যান্ড থেকে জাহাজে করে পবিত্র ভূমির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

পটভূমিঃ এডিসার পতন , প্রস্তুতি[সম্পাদনা]

এডেসার পতন[সম্পাদনা]

প্রথম ধর্মযুদ্ধ এবং ১১০১ সালে সংঘটিত ক্ষুদ্র যুদ্ধের পরে, প্রাচ্যে তিনটি ধর্মরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয় : জেরুজালেম রাষ্ট্র , অ্যান্টিওকের ক্ষুদ্ররাষ্ট্র , এডেসা অঙ্গরাজ্য। চতুর্থ , ত্রিপোলি কাউন্টি, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১১০৯ খ্রিষ্টাব্দে। এদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় , সর্বনিম্ন জনবহুল এবং সবচাইতে দুর্বল ছিল এডেসা ; এতোটাই যে ,আশেপাশের মুসলিম অধ্যুষিত অরটোকিডস, ড্যানিশমেন্ডস এবং সেলজুক তুর্কস দ্বারা শাসিত রাজ্যগুলি থেকে ঘন ঘন আক্রমণের শিকার হয়েছিল এটি। ১১০৪ খ্রিস্টাব্দে হারানের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে এডেসার তৎকালীন রাজা দ্বিতীয় বাল্ডউইন এবং কোর্টেনের ভবিষ্যত রাজা জোসেলিন বন্দী হন। বাল্ডউইন এবং জোসেলিন দুজনেই ১১২২ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয়বার বন্দী হয়েছিলেন। যদিও ১১২৫ খ্রিষ্টাব্দে আজাজের যুদ্ধে এডেসা কিছুটা পুনরুদ্ধার হয় কিন্তু অবশেষে ১১৩১ খ্রিষ্টাব্দের যুদ্ধে রাজা জোসেলিন নিহত হন। পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরি জোসেলিন দ্বিতীয়কে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে জোট গঠনে বাধ্য করা হয়েছিল , তবে ১১৪৩ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট জন দ্বিতীয় কমনেনাস এবং জেরুজালেমের রাজা আনজুর ফুলক মৃত্যুবরণ করেন। তবে, ত্রিপোলির রাজা এবং অ্যান্টিওকের রাজকুমারের সাথেও রাজা জোসেলিন বিরোধে জড়িয়ে পড়েন যা পরবর্তীতে এডেসা রাজ্যকে পুরোপুরিভাবে শক্তিশালী মিত্রশূন্য করে তোলে।

ইতিমধ্যে, ১১২৮ খ্রিষ্টাব্দে মসূলের সুলতান জেংগি সিরিয়ার ক্ষমতার চাবিকাঠি আলেপ্পো শহরকে নিজের দখলে নিয়ে নেন যা দামাস্কাস এবং মসূলের মাঝে প্রতিদ্বন্দিতার সৃষ্টি করে। ১১২৯ খ্রিষ্টাব্দে এই মহান নগরীর দ্বারপ্রান্তে বালডুইন পরজিত হন। পরবর্তীতে ১১৩৯ এবং ১১৪০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জেংগি এ শহর ঘেরাও করে নিলে দামাস্কাসের বুরিদ রাজবংশ রাজা ফুকের সাথে তাদের মৈত্রী স্থাপন করেন। এই জোটের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন ইতিহাসবিদ উসামা ইবনে মুনকির ।

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]